![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজপুত্তুর: চরিত্র ০১: সিনথী হয়ে গেল পুপেদি
মাসখানেকের টানা রিহার্সেল করা হয়েছিল 'রাজপুত্তুর'এর জন্যে। ভাস্বর দা বাদে সব্বাই-ই ক্যামেরার সামনে নতুন। পুপেদি চরিত্রের জন্যে যে মেয়েটিকে ফাইনাল ধরে নিয়ে রিহার্সেল পিরিয়ড চলল মাসখানেকের, ওর জন্যে ঝুমার ডিজাইনে দক্ষিণ শ্যামপুর টালিবাড়িওয়ালিদের 'দেশাল' ফ্যাক্টরি থেকে সাত সেট পেটিকোট-ব্লাউজ-শাড়িও এসে গেল। এছাড়াও, নিজের সংগ্রহে থাকা কিছু কস্টিউমও যোগ করল পোশাক পরিকল্পক ও ডিজাইনার ঝুমা। কস্টিউম-রিহার্সেলও শুরু হলো। বাট অাই ফিল ইট, ফুটফুটে সেই সুন্দর মেয়েটির অ্যাক্টিং ঠিক পুপে চরিত্রের সঙ্গে যাচ্ছিল না। শুটিংয়ের ৪ দিন অাগে অামার এই অবস্থা মনে হলো। তখন, কী করি কি করি ভাব! সরয়ারকে একটা ফোন দিলাম। বললাম, একটা মেয়ে দে। ও বলল, বয়স কি? লুক ক তো। হাসি-হাসি, না স্যাডি? বললাম, ধর এমন একটা মেয়ে,...অাচ্ছা, দেখতিছি। প্রডাকশনের সবাই তখন মেয়ে খুঁজতে ব্যস্ত। এ মেলে তো ও মেলে না। ভরসা পাই না।
কিন্তু তখন শ্যুটিং বকি ৪ দিন। যাকে পাব, এতদিন রিহার্সেলে ফাইনাল হয়ে যাওয়া মেয়েটির জন্যে তৈরি হয়ে অাসা পোশাক তার জন্যে ঠিকঠাক হবে তো? নাকি অাবার টাইম যাবে! ৪ দিন বাকি। মন্ত্রণালয়ের চাপ, বাপ রে বাপ। খুব দুঃশ্চিন্তা ছিল। কখন পাব, কাকে পাব? কে হবে পুপেদি, রথীন্দ্রনাথের পালিতা কন্যা, কবির নাতনী?
অার...অামি টিভি দেখি না প্রায় ২০ বছর, অামার বাসায় টিভি নেইও। ফলে, সহকারিরা যখন বলছিল, একে নিতে পারেন-ওকে নিতে পারেন, ওই সিরিয়ালে ও ভালো অ্যাক্টিং করছে, অামি ওদের বলেছি, টিভি থেকে চোখ সরাও। শ্যুটিং হবে ৪ দিন পর। অডিশন চলছে সারাদিন। বেশ কিছু মেয়েকে ক্যাম্প অফিসে অামার সামনে অানা হলো। টিন টিন বয়সের মেয়েগুলো। দশা একটাই, কথাবার্তা বা অ্যাক্টিংএর টোনে মনে হয় শুধু মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনী ভাষায় স্বতস্ফূর্ত, কিন্তু 'ড়বীন্দ্রনাথ অামি একদম পড়িনি।' ভাবলাম, সরকারি রাজস্বের অর্থের দায়বদ্ধতা না থাকলে 'না-হয় ড়বীন্দ্রনাথ' মেনেই নিরীক্ষাপ্রবণ প্রডাকশন করার ঝুঁকি নিতে পারতাম। যাই হোক। তাছাড়া অামিও তথাগত ধ্রুপদে যাব না। তাই বলে বাঙালি টিন মেয়ের মুখে ড়বীন্দ্রনাথও নেওয়া যায় নাকি! তার ওপর পুপে! শতবর্ষ অাগের কোনো উঠতি-যুবতী, রক্তকরবীর নন্দিনী কিম্বা রথিনের পালিতা কন্যা। ন্যুনতম একটা পার্সেপশন তার থাকাই দরকার। ৮ বছরের নিচে বয়স ১৬ টা বাচ্চা-কাচ্চা (মা-বাবাসহ) টোটাল ইউনিট নিয়ে শালবনে যাব, ঢাকার বাইরে। হরি, অস্টাদশী পুপে কোথায় পাই?
হঠাৎ, মনে হলো, ও মনে হয় পারবে। মনোমনিটরে দেখতে পেলাম, ওই যে, 'অারশিনগর' দলের প্রডাকশন শহীদুল জহিরের এপিক-উপন্যাস 'সে রাতে পূর্ণিমা ছিল'তে ছিল মেয়েটি। প্রডাকশনকালিন মনে হওয়া মানেই তো তা হয়ে যাওয়া। ফোন দিলাম 'সে রাতে পূর্ণিমা ছিল'র নির্দেশক রেজা অারিফকে। বললাম, ওই মেয়েটি মনে হয় পুপেদি ক্যারেক্টরটা পারবে। পরদিন যে মেয়েটি এলো, নাম সিনথী, সিনথীই তখন নিজ যোগ্যতায় অামাদের প্রয়োজনীয় চরিত্র পুপেদি হয়ে গেল। অাগে যে মেয়েটির শারীরিক মাপে পোশাক বানানো হয়েছিল, তাও মিলে গেল সিনথীর সঙ্গে। যদিও তখন, অারেকটু সময় দরকার ছিল, তবু, যদিও তখন, অারো এক অন্যমাত্রায় মনোযোগের কর্মতরঙ্গ মেলেনি, তবু, তবু সিনথী শেষাবধি পেরেছে। বাট অাই ফিল, মনোযোগী সিনথীর জার্নি দীর্ঘ।
নিশ্চিত, নির্দেশক রেজা অারিফ অামার ভাষাটি বুঝেছিলেন। তাঁর বা তাঁদের ছাত্রী সিনথী পরদিন এলো। পুপেদি চরিত্রে দুদিন রিহার্সেল হলো। মনে হলো, ও পারবে। অামি বলামাত্রই কোনো কথা ছাড়াই সিনথী অামাদের টিমের সঙ্গে চলল গাজীপুরের দিকে, রাজনীতিবিদ তাজউদ্দিনের বাড়িতে, শালবনের গভীরে। ৪/৫ দিনের জন্যে। সিনথী বলল, 'স্যার অামাকে বলেছেন, তোমাকে যা করতে বলে, মনোযোগ দিয়ে করবে।' এই ভালোবাসা-অাস্থার জায়গাটি কীভাবে যে হলো, কারণ, এই জীবনে রেজা অারিফের সঙ্গে অামার একদিনও কোনো অাড্ডা-টাড্ডা হয়নি। তবে অামি 'সে রাতে পূর্ণিমা ছিল' একাধিক শো দেখেছি, অারো দেখব। শো'র পরে দুএকবার অামাদের ফোনে কথা হয়েছে। প্রডাকশনটা নিয়ে একটা লেখাও তৈরি করার ইচ্ছে অাছে মনের মধ্যে।
যাই হোক, সিনথীকে 'রাজপুত্তুর'এর পুপেদি চরিত্রে নিতে পারা গেল। ও স্টুডেন্ট, নাটক ও নাট্যকলা ডিসিপ্লিনে। সঙ্গত, রেজা অারিফকে শুভেচ্ছা।
পোস্টার নকশা: ধ্রুব এষ
অালোকচিত্র: হোসেইন অাতাহার
©somewhere in net ltd.