নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৩২ পৃষ্ঠায় খড়, ৩৩ পৃষ্ঠায় অাগুন

টোকন ঠাকুর

কবিতা গল্প লিখি, ছবি আঁকি-বানাই, একাএকা গান গাই...

টোকন ঠাকুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন লিখি তা বলতে হবে, কেন?

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫৬

কেন লিখি তা বলতে হবে, কেন?

মনে হয় কোনো ভাবনাই নেই, ভেবে কী আর কবিতা হয়? ভেবে যেমন প্রেম হয় না, ভেবে কবিতাও হয় না। ভেবে স্বপ্ন দেখা যায় না। স্বপ্ন আবছাআব, কবিতাও তাই, প্রেমও অজ্ঞাতে আসে। যখন আসে, ঠেকানো যায় না। হুড়মুড় করে আসে। মুড়মুড় করে আসে। ফুরফুর করে আসে।গুড় গুড় করে অাসে। ভুরভুর করে অাসে। কিম্বা, দূর দূর করে আসে। দূর দূর করে করে হয়তো অামারই নিকটে চলে আসে। নিকটে কী, এক্কেবারে ঘাড়ের ওপরে, একদম মাথায় চলে আসে। মাথা থেকে খাতায় নেমে আসে। খাতা থেকে ছাপা হতে কাগজে চলে যায়, তখন সেই কবিতা পড়ে তোমার চোখ, কবিতা তোমাকেও পড়ে। কবিতা বুঝে নিতে চায়, তুমি কেমন আছ, তুমি কেমন নেই, তোমার কেমন থাকা উচিৎ, না থাকা উচিৎ...কিম্বা জীবনে উচিৎ বলে কাউকে কিছু বাৎলে দেওয়ার অাছেই নাকি কিছু?
এরই ফাঁকে অামি টের পেয়ে যাই, তুমিও টের পেয়ে যাও, কবিতাটা কেমন হয়েছে? কবিতাটা তোমার কোথায় জায়গা পেল! তোমার বুকে, না বিছানায়, নাকি তোমার বালিশের পাশে? তোমার মনে কবিতাটা থাকবে তো? কবিতা তোমার মনেই বা থাকবে কী করে? তোমার মনই তো তোমার সঙ্গে থাকে না। তোমার মন কোথায় থাকে? তুমিই বা কোথায় থাকো? তুমি আর তোমার মন কি দুই অধ্যায়? আমি আর আমার মনও কি তাই? এত যে মন মন বলে হাটবাজার হয়ে যাচ্ছে, মন্ময় এক সাধু কিন্তু উল্টো জিগ্যাসা করে ফেললেন, একদিন, বললেন, মন আবার কি? কোথায় থাকে, কোথায় পাওয়া যায়?
মনের খবর জানিনে। তাই নিজের খবর জানিনে। তাই তোমার খবরও অজানা থেকে যায়। কে তুমি, কে তুমি? কে আমি কে আমি? মনে হয়, তুমি-আমি কেউ না। কেবল ঢেউ দেখা যায়, ঢেউ তীরে এসে দোল খায়। দূরের ঢেউকে সামুদ্রিক শাদা-অশ্ব-ফেনার মতো লাগে। দেখতে পাই, সালভাদর দালি সাঁতার কাটছেন বা কেলি করছেন সেই সামুদ্রিক শাদা ঘোড়ার সঙ্গে। শুনতে পাই, অটোমেটিক বেজে উঠছে সময়, এই সময়টাই কি সব? তবে কি তোমার-আমার প্রকৃত ডাকনামই সময়? এই সময়কে ডাকলেই তুমি-আমি ডাক শুনতে পাব!
মনে হয়, কবিতাকে ডাকলেও ডাক শুনতে পাব। না-হয় কবিতাকে ডেকেই দ্যাখো না!

০২.
শীতকাল। ভীষণ কুয়াশার রাত। যশোর রেলস্টেশন। যাব খুলনা। সে-সময় একজন বৃদ্ধ অামার দিকে একটু এগিয়ে বললেন, ’বাবা, অন্তরনগর ট্রেন কহন আসপি?’
বৃদ্ধের লোকাল একসেন্ট আমাকে ভাবাল। বললাম, ’যাবেন কনে?’
বৃদ্ধ জানান, ’ঈশ্বরদী।’
নিরীশ্বর যুক্তিতর্কে মানুষ অামি, ভাবলাম, ’ঈশ্বর...র...র...দী তাহলে কোন দিকে?’
সেই ট্রেন এসেছিল কি না, হয়তো এসেছিল, যার অপেক্ষায় ছিলেন বৃদ্ধ লোকটি, সেই শীতরাতে। পরে, সেই বৃদ্ধের মুখের বচন 'অন্তরনগর ট্রেন' শব্দবন্ধেই অামার প্রথম কবিতার বইটির নাম হয়ে গেল, 'অন্তরনগর ট্রেন ও অন্যান্য হুইসেল'। কোথা থেকে যে কী হয়, কোথায় যে যাই, না-যাই, ঠিক-ঠিকানা নেই।

০৩.
এবার একটু স্মৃতিকথা বলি তবে? একদিন, সারাদিন বসেছিলাম অনন্তপুর ফেরিঘাটে, ফেরি অাসতে দেরি দেখে ঢুঃঁ দিয়েছি রহস্যপুর মানসিক ও শারীরিক হাসপাতালে। সেখানে শুধুই নার্স, ডাক্তার নেই। রোগী বলতে রাজ্যের অসুখি পুরুষ, নার্সের সেবা নিতে তারা রহস্যপুর হাসপাতালে শুশ্রুষা নিতে এসেছে। অামিও কি পুরুষ নই? বহুবছরের নির্ঘুম, অসুখি নই? অামারও কি নার্সের হাত পেতে ইচ্ছে করে না কপালে?
কবিতাকে নার্সের শুশ্রুষার চেয়ে বেশি জরুরি মনে হয়নি। কিম্বা এরকমও হতে পারে, কবি এক চির-অসুখি রোগীর নাম, তাই তার শুশ্রুষা একান্ত জরুরি। একটি ভালোলাগা কবিতাকেও কখনো কখনো একজন নার্স ভেবে ফেলেছি। কী উল্টোপাল্টা ভাবনা! ভাবনার অাগামাথা নেই। মানুষ মনে মনে যা ভাবে, তার কি অাগামাথা থাকে অাসলে?

০৪
কিছুদিন আগেও, নিউ এলিফ্যান্ট রোডে, অামার বাসার কাছাকাছি এলাকায় ফুটপাতে এক পাগলিকে দেখতাম। সঙ্গে একটা শিশু এবং পেটেও তার আরেকটি, হি অর শি ইজ কামিংসুন। একদিন দেখলাম, ফুটপাতের ওপরেই, কয়েকজন মহিলা কাপড় দিয়ে ঘিরে ছোট্ট আড়াল তৈরি করেছে। মহিলারা পার্শ্ববর্তী কয়েকটি বাসার কাজের বুয়া। আমি এগিয়ে যেতইে, একজন মহিলা বললেন, ’ বিটা ছাওয়াল এদিক আসে ক্যা?’ আমি তবু কাছে যাই এবং দেখি যে, সেই পাগলির বাচ্চা হচ্ছে, ফুটপাতে, আকাশের নিচে। কাজের বুয়ারাই তার ডাক্তার-নার্স-ধাত্রী। ফুটপাতের ওপরেই একটা কাপড় বিছানো, সন্তান প্রসবা সেই পাগলিকে একটা কাপড়ের ওপরে শোয়ানো হয়েছে, আর তার সেই শিশু বাচ্চাটা পাশেই বসে প্যা প্যা করে কাঁদছে। আমি যাচ্ছিলাম ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের কার্যালয়ে, ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির ভিডিও ফিল্ম নির্মাণ কর্মশালার একটি সেশন-ক্লাস কনভার্সেশনে। ফেরার পথে আবার সেই প্রসবা পাগলিকে দেখলাম। এতক্ষণে বুয়া-ধাত্রী, বুয়া-নার্স, বুয়া-ডাক্তাররা চলে গেছেন। পাগলি বসে আছে তার দুটি বাচ্চা শিশু নিয়ে, যার একটি বাচ্চা জন্মেছে ঘণ্টাখানেক আগেই। আমি ফের কাছে গেলাম। পাগলির মুখে হাসি। পাগলিকে বললাম, ’কী? টাকাপয়সা লাগবে?’ বলেই আমি তাকে পাঁচশো টাকার একটা নোট দিতে চাইলাম? পাগলি বিশ টাকার একটি নোট দেখিয়ে বলল, ’টাকা তো আছে’।
আমি পাগলিকে পাঁচশো টাকার নোটটা দিয়ে চলে এলাম। কিছুদিন পর আবার দেখা পেলাম পাগলিকে। দেখি, তার কোলে নতুন বাচ্চাটি। বললাম, ’বড় বাচ্চাটি কই?’
পাগলির উত্তর, ’গ্রামে গেছিলাম, ওইটা পুকুরের পানিতে পইড়া ডুইব্বা মরছে।’
তারপর পাগলিকে বেশ কিছুদিন আর দেখি না। আবার দেখলাম একদিন তাকে, বাংলামোটর মোড়ে। দেখি, সেই কোলের বাচ্চাটিও নেই। বললাম, ’বাচ্চা কই?’ পাগলি বলল, ’মইরা গেছে।’
আমি এই পাগলি ও তার বাচ্চাদের নিয়ে ভেবেছি। কোনোদিন কিছু লিখতে পারিনি। কবিতা কী লেখা যায়, পাগলি ও তার বাচ্চাদের নিয়ে? কে তার বাচ্চার পিতা? সে কোথায়? পাগলি কোথায়? কবিতা কোথায়? ভাবপুঞ্জ-শব্দ-বাক্য কোথায়?
কবিতা ভাবনা নিয়ে কিছু লিখতে বসে, কেন তবে পাগলির কথা লেখা?
তাহলে কার কথা লিখব? ক্লিওপেট্টার কথা? শকুন্তলার কথা? ওফেলিয়ার কথা? নোবেল প্রাইজ পাওয়া কোনো নেত্রীর কথা লিখব? ওবামার বউ মিশেলের কথা লিখব? নাকি সেই প্রজাপতিটার কথা লিখব, যাকে আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি বন-বনান্তরে, ভিড়ের মধ্যে, নির্জনা নদীর ধারে?
আচ্ছা, লিখব না হয় প্রজাপতির ডানায় কত ছন্দ-মাত্রা-চিত্রকল্প।
অার কেন লিখি? কেন লিখি তা অাপনাকে বলতে হবে কেন?


২৯ অাগষ্ট, ২০১৫

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: মুগ্ধতা রেখে গেলাম :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.