![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন কৃষকের ছেলে, এই হাতে হাল চালাই, এই হাতেই কলম চালাই আবার এই হাতেই কীবোর্ড চালাই। সবকিছুই করার প্রচেষ্টা আমার মধ্যে রয়েছে।
আমার নাম মুক্তা । আপনারা বলেন তো আমি ছেলে না মেয়ে ? হ্যাঁ আপনি ঠিক ধরেছেন আমি একজন ছেলে । আমার জন্মের আগে আমার নানী স্বপ্নে দেখেছিলেন তার একটা নাতনি হয়েছে, সবাই তাকে মুক্তা বলে ডাকছে । নানী ঠিক করলেন তার নাতি বা নাতনি যা ই হোক তার নাম হবে মুক্তা । তারপর থেকেই আমি মুক্তা, আমার অবশ্য একটা হিমালয় সাইজের নাম আছে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী । আমার নাম শুনে ভাবছেন আমি খুব ধনী ঘরের সন্তান, আপনার ধারনা ভূল । আমার বাবা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক । তাঁর মুখে সবসময় নীতি বাক্য । তিঁনি সবাইকে তার ছাত্র মনে করতেন। আমাদের সংসারের তখন মোটামুটি ভালই অবস্থা ছিল। বাবার একটা বসত বাড়ি ছিল। দু-চার বিঘা জমি ছিল। বেশ ভালই কাটছিল আমাদের জীবন। আমার মা বাবা ছিলেন দুজনেই শিক্ষিত। আমার মা প্রচুর বই পড়তেন । শরৎ বাবুর বই পড়ে চখের জল ফেলানো ছিল তার প্রতিদিনের অভ্যাস।
যথা সময়ে আমি বাবার স্কুলে ভর্তি হলাম। আমি তখন ক্লাস ফাইভে। সামনে বৃত্তি পরীক্ষা । বাবা তো নাওয়া খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন, সকল মনোযোগ তার ছেলের দিকে। এক এক করে পরীক্ষার দিনটি চলে আসলো। খুব ভোরে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে বাবার হাত ধরে রওনা দিলাম। দুরুদুরু বুকে হলে প্রবেশ করলাম, প্রশ্ন পাবার পর দেখলাম সব গুলোই পারব। খুব ভাল পরীক্ষা দিলাম। স্কুল থেকে বের হতেই দেখি বাবা আমার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কয়টা ভূল করেছিস?’ আমি বললাম, ‘জানিনা।’
আবার বাবার হাত ধরেই বাড়ি ফিরছিলাম। তাঁর পান খাওয়ার অভ্যাস ছিল। আমাকে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে ওপাশে গেলেন পান আনতে। সেই যে গেলেন আর ফিরলেন না। চলন্ত একটা ট্রাকের ধাক্কায় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিল, ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলাম, কিন্তু কোন আনন্দ আমাকে স্পর্শ করতে পারল না, পেলাম কেবল হতাশা আর বাবা হারানোর বেদনা। পরীক্ষা দিতে গিয়ে বাবার মৃত্যুর কারণে আমার মধ্যে একটা পরীক্ষা ভীতির জন্ম হয়। কেবল মনে হতো বাবার মৃত্যুর জন্য আমি ও আমার পরীক্ষা দায়ী। বাবার মৃত্যুর পর চাচারা আমাদের সকল আবাদি জমি দখল করে নিলেন। বাবা হারা হবার পর জমিহারা হলাম। আমি, মা আর ছোট ভাই বোনদের নিয়ে পড়লাম ভীষণ বিপদে। ঘরে কোন খাবার নেই, নেই কোন আয়ের উৎস। দিনে একবেলা খাবার পেতাম, সেটাও যথেষ্ট না। অনেক কষ্টে মা একটা চাকুরি পেলেন । মায়ের বেতন ও আমার বৃত্তির টাকা দিয়ে কোনমতে দিন পার করতে লাগলাম। পাশের হাই স্কুলে ভর্তি হলাম । কয়েকদিন ক্লাস করতেই সবার নিকট পরিচিত হয়ে উঠলাম । নতুন স্কুলে অনেক নতুন বন্ধু পেলাম, কিন্তু তাদের সাথে কেন যেন ফ্রী হতে পারতাম না। সবসময় নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম। আর পরীক্ষায় সব সময় প্রথম হতাম। সেকেন্ড বয় আমার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো দূরের কথা অনেক কম মার্কস পেত। আমার ছোট ভাই বোন আমার মত ছিল না তারা ছিল ঠিক আমার উল্টা। ভাইয়ের নাম ছিল মুহিব আর বোনের নাম ছিল মিষ্টি । অষ্টম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষার শেষ দিন, অংক পরীক্ষা । অংক আমার অতান্ত প্রিয় সাবজেক্ট। খুব ভাল হল, ১০০% উত্তর দিলাম। পরীক্ষা শেষ করে খুশী মনে বাড়িতে এসে থমকে গেলাম। বেশ জটলা আমাদের বাড়িতে। গিয়ে দেখি মুহিবের পা ভেঙ্গে গেছে । এই ঘটনার পর আমার পরীক্ষা ভীতিটা আরও বেড়ে যাই । আমার কেবল মনে হতো পরীক্ষা দিতে গেলেই কোন দুর্ঘটনা ঘটবে। প্রতিবার শেষ পরীক্ষার দিনে কোন না কোন ঝামেলা হতো। মনকে বোঝাতাম এর সাথে আমার পরীক্ষার কোন সম্পর্ক নেই।
ক্লাস এইটে স্যার দের অনেক অনুরোধ উপেক্ষা করে বৃত্তি পরীক্ষা দিলাম না। কারন সেই পরীক্ষা ভীতি। ক্লাস নাইনে উঠলাম, বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শুরু করলাম কিন্তু সেই পরীক্ষার ভয়টা মন থেকে কোন ভাবে দূর করতে পারলাম না। প্রথম সাময়িকী পরীক্ষা দিলাম কোন প্রকের অঘটন ছাড়া। কিছুটা আশ্চর্য হলাম। এভাবে এস.এস.সি পরীক্ষা চলে আসলো। কিন্তু আর কোন সমস্যা হল না। বরাবরেই মতই খুব ভাল প্রস্তুতি, চোখ বন্ধ করলে পুরা বই দেখতে পাই। প্রথমে ইংরেজি পরীক্ষা খুব ভাল দিলাম। একে একে পরীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে । অঘটনটা ঘটল শেষ পরীক্ষার দিন, উচ্চতর গনিত পরীক্ষা, পরীক্ষা শেষ করে বাসায় গিয়ে দেখি আমার মিষ্টি বোনটি আর নেই। নিথর হতে পড়ে আছে তার দেহ। পেটটা অনেক ফুলে গেছে, লাল টকটকে মুখটি কাল হয়ে গেছে। যে বোন সবসময় তার চোখের কাছে থাকত, ঝর্ণার মতো খিলখিল করে হাসত, যার চলা ও বলার ধরন ছিল খরস্রোতা নদীর মতো। সেই আদরের বোনটি আজ আর নেই, মনে হল আমার কলিজাটা ফেটে যাবে, বুক চিরে কান্না বের হয়ে এল। বোনটা আমার পানিতে ডুবে মারা গেছে, গেছিল পুকুরে গোসল করতে আর ফিরল লাশ হয়ে। আমার যে কি অবস্থা হয়েছিল আমি বলে বোঝাতে পারব না। আমার মা অনেক ধৈর্যশীল মহিলা ছিলেন, মিষ্টির মৃত্যুর ব্যাপারটা সবার আগে তিনি সামলে উঠলেন, আর মুহিবও নিজকে সামলে নিল কেবল পারলাম না আমি। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হতে লাগল। কেবল মনে হতে লাগল এ সব কিছুর মূলে রয়েছি আমি এবং আমার পরীক্ষা।
এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিল, আনতে গেলাম না, দুই দিন পর স্কুলের জামাল স্যার এসে জানিয়ে গেলেন যে আমি গোল্ডেন এ+ পেয়েছি। কিন্তু কি হবে এই অতি ভাল রেজাল্ট দিয়ে? এটা কি পারবে আমার বোনকে ফিরিয়ে দিতে?
যা হোক মায়ের চাপাচাপিতে কলেজে ভর্তি হলাম। কোন সরকারী কলেজে না বাড়ির পাশের ছোট কলেজটিতে । ক্লাস টেস্ট গুলা কখনো দিতাম না, কোন প্রকার কোচিং সেন্টারে পড়তাম না কেবলমাত্র পরীক্ষা দেয়ার ভয়ে। এইচ এস সি পরীক্ষা শুরু হল। আবার এই ব্যাপারটা রিপিট হল শেষ পরীক্ষার দিনে। এবার মুহিব, সিঁড়িতে পা পিছলে পড়ে গিয়ে ঘাড়ে আঘাত পেয়ে কোমাতে চলে গেছে। ব্যাপারগুলো কাকতালীয় হোক আর যা ই হোক কেন হচ্ছে বা হয়েছে তার কোন ব্যাখ্যা নেই। পুরোপুরি পড়াশোনা ছেড়ে দিলাম, আম্মা অনেক বোঝালেন কিন্তু আর কোথাও ভর্তি হলাম না। পরীক্ষার কথা মনে আসলেই বাবা, মিষ্টি ও মুহিবের মুখগুলো ভেসে উঠে। একবছর পর মায়ের অনেক অনুরোধের পর রুয়েটে অ্যাডমিশন টেস্ট দিলাম, চান্স পেলাম ‘ইইই’ তে। আজ শেষ সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা। আমি কি করবো পরীক্ষা দিব না দিবনা? আমি জানিনা, আমি ভাবতে পারছিনা।
উৎসর্গ- আমার স্কুলের অংকের শিক্ষক মোঃ সেরাজুল ইসলাম স্যার কে। যাঁর লাঠি দিয়ে পেটানোর শব্দ এখনও শুনতে পাই।
[ এই গল্পটি লিখেছিলাম এস এস সি পরীক্ষার পর রেজাল্টের অপেক্ষায় থাকাকালীন সময়ে। কোন প্রকার এডিটিং ছাড়া আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। ]
রিপোস্ট করলাম।
©আহমেদ সজীব আমান।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৮
তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১২
জাতির মামু বলেছেন: এক গল্প কবার দিবেন? নতুন গল্প কই??????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????
০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪০
তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: কি করমু কউ? কিসসু করার নাই!
৩| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:২৮
শায়মা বলেছেন: অনেক সুন্দর!!
০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫
তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: কেমন আছেন আপুনি?
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৩
সায়েম মুন বলেছেন: অনেক ভাল লিখেছেন।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩৯
তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
৫| ১১ ই জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৮
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ++++++++++++
১২ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:০২
তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৩২
কাজের পুলা বলেছেন: অন্যরকম একটি গল্প।
ভাল লাগল।