![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন কৃষকের ছেলে, এই হাতে হাল চালাই, এই হাতেই কলম চালাই আবার এই হাতেই কীবোর্ড চালাই। সবকিছুই করার প্রচেষ্টা আমার মধ্যে রয়েছে।
- সখিনা, কি করতাছ?
- কমু না। হি হি হি।
- কইবানা ক্যান, আমি না তুমার স্বামী?
- আফনের লাইগা একটা জিনিস তোয়ার করতাছি।
- কি জিনিষ? কও না।
- অহন কমু না, সারপিরাইজ দিমু আফনারে।
- সারপিরাইজ! এইডা আবার কি? এইডা দিয়া আমি কি করমু?
- এইডা হইল ইংরেজি, রেশমা আমারে শিখাইছে। হেই অনেক ইংরেজি জানে। সারপিরাইজ হইল কাওরে আগে থেইকা কুনু কিছু না কইয়া কিছু উপহার দেয়া। বুঝলেন?
- ওরে আমার শিখখিত বৌ রে! তা কি বানাবা একটু কও না।
- উঁহু কমু না সকাল বেলা দেখপেন অহন ঘুমান।
শরীফ গজগজ করতে করতে ঘুমাতে গেল। তার বৌটা কত না খাটুনি করে তার জন্য। পুরো সংসারটা চালায় সে সারাদিন গার্মেন্টসে কাজ করে এসেও থেমে থাকে না এটা ওটা করতেও থাকে, রান্না বান্না করে। হাতে সেলায় করে জামা বানায়। আজ একবছর ধরে শরীফ কোন কাজ করতে পারে না। আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। একদিন এক বিল্ডিঙের নির্মাণ কাজে গিয়ে দুতলার উপর থেকে সে পড়ে যায়। সেখানে হারায় তার পাদুটো। তারপর সখিনাই এ সংসারের হাল ধরেছে। বেতন ভালই পাই পাঁচ হাজার, আবার ওভারটাইম করলেও ভালই পাই। দুজনের খাবার খরচ বাড়ি ভাড়া বাদে সামান্য কিছু বাঁচে সেটা অতি যত্নে সখিনা টিনের একটা ট্রাঙ্কে ভরে রাখে। সে জমা করে তার সন্তানের জন্য। অতি অভাব না হলে এই টাকাতে হাত দেয় না সে। দুমাস আগে শরীফের প্রচণ্ড অসুখের জন্য হাজার খানেক টাকা বের করতে হয়েছিল। শরীফ শুতে শুতে সখিনাকে বলল,
- কাল না হরতাল, কাজে যাইবা?
- হ যামু, মালিকে কইয়া দিছে কাল কামে না আইলে চাকরি থাকবো না।
- তুমি না সেদিন কইলা তুমাগোর বিল্ডিং ফাইটা গেছে।
- হু, ইঞ্জিনিয়ার আইসা দেইখা কইয়া গেসে শুধু পিলাস্টার উইঠা গেসে।
- ও, তই সাবধানে থাইকো কওয়া তো যায় না।
- আমি সাবধানে থাকুম। মেলা রাইত হইসে আফনে ঘুমান।
সখিনা তার ফ্রেম হাতে আপন মনে সেলাই করতে থাকে। ভাবে, মানুষটাকে কিচ্ছু দেওয়া হয় না। গত একবছর যে সে কত কষ্ট করেছে তার বলার ইয়াত্তা নেই। শরীফের এক্সিডেন্টের পর অনেক কষ্টে তিল তিল করে নিজেকে নিজের পরিবারকে গুছিয়ে নিয়েছে। এখন সে বেশ সুখেই আছে। মাঝ রাতে সেলাই শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে। এতক্ষণ ধরে সে সাদা একটা শার্টে কাল সুতা দিয়ে ফুল তুলছিল। কয়েকটা বোতাম সে কায়দা করে নিয়ে এসেছে গার্মেন্টস থেকে। কাওকে না বলে অবশ্য এর জন্য সে বেশ কবার অনুতপ্ত হয়েছে। বোতাম গুলো লাগানোর পর মনে হচ্ছে অনেক দামি শার্ট সেটা। কিন্তু ইস্তিরি করতে পারলে ভাল হত।
খুব ভরে ঘুম থেকে উঠল সখিনা। শরীফের দিকে তাকিয়ে দেখল সে। বাচ্চার মত ঘুমাচ্ছে সে। সখিনা আর তাকে জাগাল না। আস্তে করে উঠে রান্না শুরু করল। রান্নাবান্না শেষ করে শার্টটাকে শরীফের পাশে রেখে রওনা দিল। শরীফ তখনও ঘুমাচ্ছে। সাভারের পাশের বস্তিতেই থাকে সখিনা। গার্মেন্টসে হেঁটেই যায় সে। আধঘণ্টা লাগে। গার্মেন্টসের গেটে রেশমার সাথে দেখা। সে বলল,
- কি সখিনা আছ কেমুন?
- আছি ভালা, তুমি?
- আমিও ভালা আছি। তুমারে যেইটা কইছিলাম সেইটা করছ?
- ‘সারপিরাইজ’ করছি।
- চল দেরি হইয়া যাইতেছে।
- হু চল।
সখিনা আর রেশমা দুজন বেশ ভাল বন্ধু। তারা পাশাপাশি কাজ করে। কাজের মধ্যে চুপি চুপি কথাও বলে, নানা ধরণের কথা। কে কি তরকারী রান্না করেছে, কার কি হয়েছে সব। আজ সখিনার কেমন যেন লাগছে। মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে। অজানা একটা ভয় তাকে গ্রাস করতে শুরু করেছে। রেশমা কি কি যেন বলেই যাচ্ছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই তার। কাজে সে বরাবরই খুব মনোযোগী কিন্তু আক সে কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারছে না। কেন যানি মনে হচ্ছে সে আর কোনদিন বের হতে পারবে না এখান থেকে। প্রতিদিন সে শরীফের সাথে কথা বলে বের হয় কিন্তু আজ কেন যে সে কোন কথা বলেনি কেন তাকে জাগায়নি!
হঠাৎ সে একটা মৃদু শব্দ শুনতে পাই তার পর হালকা কম্পন তারপর বিকট শব্দ ও কম্পন একসাথে। মাথায় প্রচণ্ড জোরে আঘাত পাই সে, মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করতে থাকে, সামনের সবকিছু মনেহয় উড়ছে। একটা মৃদু আওয়াজ পাই সে, রেশমার গলা শুনতে পাই। তার মনে হয় সে মারা যাচ্ছে। মনে পড়ে শরীফের কথা আর তার সাথে দেখা হবে না। শেষে তার মনে পড়ে শরীফের জন্য সে খাবার রেখে আসছে কিন্তু পানি তো রাখেনি। একসময় সব কিছু অন্ধকার হয়ে যায়।
শরীফ ঘুম থেকে উঠেছে। বিছনা থেকে হুইল চেয়ারে সে একাই নামতে পারে। নামার সময় সে দেখল সাদা একটা জামা তার বালিশের কাছে রাখা। হাতে তুলে নিয়ে দেখে সুন্দর একটা শার্ট। আবেগে ভালবাসায় শরীফের চোখে পানি চলে আসে। সে তার প্রিয়তমা বৌকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু আসেনা সখিনা। এ যেন অন্তহীন অপেক্ষা।
কত শত সখিনা মারা গেল, কত শত শরীফ অপেক্ষায় আছে, তা কি আমরা বলতে পারব? আমরা কি পারব ফিরিয়ে দিতে সখিনার সংসার, তার জীবন? পারব না। দু’দিন খুব মাতামাতি করব লাফালাফি করব তারপর ভূলে যাব কিন্তু আরও হাজারও সখিনা এভাবে প্রাণ দিবে। আমাদের কিছু হবে না কারণ তারা আমজনতা, তারা সখিনা জরিনা, তাদের নেই প্রতিপত্তি ক্ষমতা, নেই তাদের টাকাপয়সা, কোন রাজনৈতিক নেতা তাদের আত্মীয় না, তারা কোন দল করে না। শুধু সৎ পথে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অল্প কিছু আয় করতে চায়, ভালভাবে বাঁচতে চায় এটাইকি তাদের অপরাধ?
আরও লিখতে ইচ্ছা করছে যেমনঃ সাভারের আর্তনাদ (একজন মায়ের), সাভারের আর্তনাদ (একজন শিশুর), সাভারের আর্তনাদ (একজন কর্মচারীর), সাভারের আর্তনাদ (একজন ব্লগারের), সাভারের আর্তনাদ (একজন রাজনৈতিক নেতার ),
ভাল লাগলে জানাবেন।
উৎসর্গঃ কিছু দিতে না পারলেও শ্রম দিতে পারতাম, কিন্তু থাকি রাজশাহী, তাই আমার সামান্য এই গল্প খানা তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম।
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:২৮
তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: আসলেই বাস্তবতা আরও ভয়াবহ । : (
২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৬
আমি যে আমার মতো, কারো মতো নই! বলেছেন: কত শত সখিনা মারা গেল, কত শত শরীফ অপেক্ষায় আছে, তা কি আমরা বলতে পারব? আমরা কি পারব ফিরিয়ে দিতে সখিনার সংসার, তার জীবন? পারব না। দু’দিন খুব মাতামাতি করব লাফালাফি করব তারপর ভূলে যাব কিন্তু আরও হাজারও সখিনা এভাবে প্রাণ দিবে। আমাদের কিছু হবে না কারণ তারা আমজনতা, তারা সখিনা জরিনা, তাদের নেই প্রতিপত্তি ক্ষমতা, নেই তাদের টাকাপয়সা, কোন রাজনৈতিক নেতা তাদের আত্মীয় না, তারা কোন দল করে না। শুধু সৎ পথে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অল্প কিছু আয় করতে চায়, ভালভাবে বাঁচতে চায় এটাইকি তাদের অপরাধ?
সহমত।
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: শুধু সৎ পথে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অল্প কিছু আয় করতে চায়, ভালভাবে বাঁচতে চায় এটাইকি তাদের অপরাধ?
৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৪৮
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের পক্ষেএকজন সেডিমেন্টোলজিস্ট হিসেবে গেলাম ক্লিংকার্স ক্লের র মেটেরিয়াল অনুসন্ধানে এক সেডিমেন্টোলজিস্ট হিসেবে।ফ্রেন্স কোম্পানী তাদের কাছে নিরাপত্তা সবার আগে লাইফ জ্যাকেট না পরলে নৌকায় ওঠতে দেয় না।মাথায় হেলমেট আর বুট না পরলে সাইটএ যেতে দেয় না। ওখানেআগে সিকিউরিটি তারপর কাজ।আর এখানে মরার ঝুকি নিয়েও কাজ কর।জীবনের নিরাপত্তা শতকরা শূন্য ভাগ
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:২৭
তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: জীবনের নিরাপত্তা শতকরা শূন্য ভাগ। এ থেকে আমরা মুক্তি চাই।
৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৫০
জাতির মামু বলেছেন: ভালো লিখেছেন । আল্লাহ তাদের নাজাত দিন ।
২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:২১
তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: ধন্যবাদ মামু ভাই। ভাল থাকবা।
৫| ১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:০২
সপ্নাতুর আহসান বলেছেন: কত শত সখিনা মারা গেল, কত শত শরীফ অপেক্ষায় আছে, তা কি আমরা বলতে পারব? আমরা কি পারব ফিরিয়ে দিতে সখিনার সংসার, তার জীবন?
পারব না।
১০ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:২৩
তন্দ্রা বিলাস বলেছেন: আসলেই আমরা অপারগ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:০৫
ফারজানা শিরিন বলেছেন: বাস্তবতা আরও ভয়াবহ । : (