নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খাঁচার পাখি

স্বার্থপরতাকে আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। কিন্তু এই বাস্তবতা আমাকে কখন যে স্বার্থপর বানিয়ে দিল, বুঝতেই পারলাম না............।

খাঁচার পাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ছুঁয়ে দিলে মন" সত্যিই মনকে ছুঁয়ে দিল :) :) :)

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:১৬

সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আর বেশি অপেক্ষা করতে পারলাম না। অবশেষে আজ দেখে ফেললাম আমার বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা ছুঁয়ে দিলে মন। আমার সিনেমাটি দেখার প্রবল আগ্রহের মূল কারণ দুইটা। প্রথম হল জাকিয়া বারি মম। কেন জানি মমকে আমার অনেক আগে থেকেই এত ভাল লাগে। আর দ্বিতীয় কারন হল শিহাব শাহীন। উনার তো আমি বিরাট বড় ফ্যান। ভালবাসি তাই, ভালবাসি তাই ভালোবেসে যাই, মন ফড়িঙের গল্প, মনসুবা জংশন, নীলপরি নীলাঞ্জনা এই সব জনপ্রিয় আর হৃদয় ছোঁয়া রোমান্টিক নাটকগুলা দেখার পর যখন দেখলাম শিহাব শাহীনের ছুঁয়ে দিলে মন নামের পুরুদস্তুর একটা রোমান্টিক মুভি আসছে, তখন প্রত্যাশার পারদ অনেকখানি বেড়ে গেল। আজ সেই প্রত্যাশায় কোন ব্যাঘাত ঘটেনি, বরং প্রত্যাশার আলো আরও বেশি বেড়ে গেল। ঠিক এমন সিনেমাই তো আমরা দেখতে চাই বারবার।



শিহাব শাহিনের ছুঁয়ে দিলে মন শুরু হয় হৃদয়পুরের আবির আর নীলার বাল্যকালের এক মিষ্টি প্রেমের মধ্য দিয়ে। যে প্রেমটি দেখলে আপনাদের নিজেদের বাল্যকালের অনেক ছোটখাট ঘটনা মনের মাঝে উঁকি মারতে শুরু করবে, আর সেই সব ঘটনার সাথে আপনার ঠোটের এক কোণে ফুটে উঠবে ছোট্ট একটি মুচকি হাসি। যাই হোক, আবির আর নীলার সেই ছোট্ট প্রেমকাহিনী বেশি দূর এগুতে পারে নাই। কোন এক কারনে অপমানিত হয়ে আবিরের ফ্যামিলিকে ত্যাগ করতে হয় হৃদয়পুর। ছবির মূল কাহিনী শুরু হয় ঠিক এখান থেকেই।



দুরত্ব যতই হোক, ভালোবাসা কিন্তু কখনও কমে না। ঠিক এমনই কিছু ঘটেছে আবির আর নীলার মধ্যে। কিন্তু ঘটনাচক্রে আবির ফিরে আসে হৃদয়পুরে, আর দেখা হয়ে যায় ছেলেবেলার প্রেমের মানুষ নীলার সাথে। এখন আবির কি পারবে তার সেই হারানো প্রেম ফিরে পেতে...?? নাকি ব্যার্থ মনরথে চলে যেতে হবে প্রিয়তমার ছোট্ট মফস্বল শহর হৃদয়পুর ছেড়ে????





ছবিটার সফলতার জন্য যদি কোন একজনকে বেশি করে ক্রেডিট দিতে হয়, তাহলে সেই ক্ষেত্রে শিহাব শাহিন হবেন তার একমাত্র দাবীদার। উনি এত চমৎকার ভাবে ছবিটা পরিচলনা করেছেন যে, ছবির প্রতিটা জিনিস খুব ভালভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। অনেকেরই অভিযোগ থাকে যে, নাটকের পরিচালকেরা যদি সিনেমা বানাতে যান, তাহলে তার মধ্যে নাটক নাটক ভাব ঠিকই রেখে দেন। কিন্তু শিহাব শাহীন এখানে পুরাই ব্যাতিক্রম। একটা সুন্দর পরিপুর্ন রোমান্টিক বানিজ্যিক ছবিতে যা যা থাকা দরকার, শিহাব শাহীন তার সব কিছু খুব ভালকরেই দিয়ে রেখেছেন এই সিনেমায়। অসম্ভব কিছু সুন্দর লোকেশনে শুটিং করেছেন শিহাব শাহীন, যা দেখলে মনে হবে যে, এফডিসি ছাড়াও বাংলাদেশে শুটিং এর জন্য অসংখ্য সুন্দর সুন্দর যায়গাও আছে। ছুঁয়ে দিলে মন সিনেমাটি দেখার পর শিহাব শাহীনের কাছে আমার অনুরোধ থাকল, উনি যেন এমন সিনেমা যেন তিনি বারবার আমাদের উপহার দিতে থাকেন।



অভিনয়ের কথা যদি বলতে হয় তাহলে সবার আগে রাখব আরেফিন শুভকে। যদিও এর আগে আরেফিন শুভর কোন সিনেমা আমার দেখা হয়নি, কিন্তু অনেক কথা শুনেছিলাম তার অভিনয় সম্পর্কে। কিন্তু আজ আমার সেই শোনা কথাগুলো ভুলে প্রমানিত হল। আরেফিন শুভর অভিনয় সম্পর্কে এক নতুন ধারনা জন্ম নিল আজ। তার অভিনয়ে না ছিল কোন বাড়াবাড়ি, না ছিল অতিরঞ্জিত কোন কিছু। খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে তার চকলেট বয় চরিত্রটি। অন্য দিকে মম এর অভিনয়ও ছিল অসাধারন। নীলা চরিত্রের জন্য মমকে ছাড়া হয়তো আর কাউকে ভালই লাগত না। তবে ট্রেইলার আর গানের মিউজিক ভিডিওতে মমকে যেরকম মেক-আপ গার্ল লেগেছিল, সিনেমায় আদতে তা একদমই লাগে নি। তবে মাঝে মধ্যে কিছুটা অতি অভিনয় দেখা গেছে তার মধ্যে। যেগুলা না থাকলে তাকে হয়তো আরও বেশি ভাল লাগত। আনন্দ খালেদের অভিনয়ও ভাল ছিল। তবে মিশা সওদাগরের অভিনয় দেখে একটা জিনিস খেয়াল করলাম যে, উনি ভিলেনের অভিনয় করতে করতে এত অভ্যস্ত যে, উনাকে ভাল চরিত্রে কেন জানি মানায় না। যদিও উনার অভিনয় নিরীহ দুলাভাই হিসেবে যথেষ্ঠ ভাল ছিল। তবুও কেন জানি উনার ডায়লগ, আর অঙ্গভঙ্গিতে সেই পুরোনো ছবির ভিলেন ভিলেন ভাব এমনিতেই চলে এসেছিল।



আর ইরেশ জাকের সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়, একখান বস পাব্লিক। প্রথম যখন আমি শুনলাম যে ইরেশ যাকের হবেন এই সিনেমার ভিলেন, তখন আমি ভাবসিলাম যে... হয়তো এই চরিত্রটার বারোটা বেজে যাবে। কিন্তু উনি বারোটা বাজতে দেন নি।মেয়ের সামনে ভয় পেয়ে কাপা কাপা কথা বলা, আবার যখন মাস্তান হয়ে মাস্তানি কথা বার্তা বলেন তখন উনার লুক, অঙ্গভঙ্গি সব কিছুই এক কথায় অসাধারন। সবচেয়ে ভাল লেগেছে উনার আন্ডারসেন্ডিং এর থিওরিটা বর্ননা করার মুহুর্তটা :P , যা আপনারা না দেখলে বুঝতে পারবেন না।



এবার আসি মিউজিকে। হাবিব ওয়াহিদ আর সাজিদ সরকারের পরিচালনায় প্রতিটা গানই ছিল অসাধারন। টাইটেল ট্র্যাক, ভালোবাসা দাও, শুন্য থেকে আসে প্রেম, ছুঁয়ে দিলাম সকল গানই যে কারও মন ছুঁয়ে দিবে। প্রত্যেকটা গানের টাইমিং ছিল পার্ফেক্ট। মানে যে সময় যে ধরনের গানের দরকার সেই গানই বেজেছে ছবিতে। আর গানগুলার জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর লোকেশন দেখানো হয়েছে সিনেমায়। গানগুলা এত সুন্দর ছিল যে, এখনও আমি গুন গুন করে গেয়ে চলছি “ভালোবাসা দাও... ভালোবাসা নাও”





ছবিটির খারাপ দিক বলতে তেমন কিছু চোখে পরে নি। তবে যা চোখে পরেছে, পুরোটা ছবি দেখার পর সেই ভুলগুলা অতি নগন্যই মনে হয়েছে। যদিও কেউ ভুল ধরেন, তাহলে তাদের বলে রাখি, এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে এমন কোন মুভি তৈরি হয় নাই যেটায় ছোটখাট ভুল নাই।





সব শেষে একটা কথাই বলি, কিছু কিছু সিনেমা আছে যেটা দেখার পর তৃপ্তি ভরা এক দীর্ঘশ্বাস নিজ থেকেই বের হয়ে আসে। কিছু কিছু সিনেমা আছে যেগুলা শেষ হয় মুখের মধ্যে ছোট্ট একটি মুচকি হাসি নিয়ে।আবার কিছু কিছু সিনেমা আছে, যেগুলা দেখার পর মনে হয়, নাহ...... আমার ২ ঘন্টা সময়ের একটু সময়ও বৃথা যায় নি। আজ এই প্রথম সিনেমাহল থেকে ঠিক এমনই এক সিনেমা দেখে বের হলাম। আপনারা যারা এখনও এই সিনেমাটি দেখব দেখব করে এখনও দেখছেন না, তাদেরকে বলি...... যত তাড়াতাড়ি পারেন হলে গিয়ে দেখে ফেলেন। না হলে যে কোন সময় মিস করে ফেলতে পারেন। :) :)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.