![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখি, চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহী, গল্প শোনাই, বুদ্ধি বিক্রি করে বেড়াই, অন্তর্মুখী, বিজ্ঞান এবং মহাকাশ পছন্দ করি, তথ্যভিত্তিক চিত্র নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। গবেষণা ধর্মী লেখা এবং কাজ বানাতে পছন্দ করি। সব কিছুতে বিভ্রান্ত হতে পছন্দ করি, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। যুক্তি পছন্দ করি, যুক্তি আমি মেনে নেই। আমার স্মৃতিশক্তি কম, তবে কল্পনা শক্তি ভালো। আমার একটি গুণ আছে, যে কারোর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে এবং ছবি দেখো আমি কিছু একটা লিখে ফেলতে পারি কল্পনা করে, এছাড়া তেমন কোন মুগ্ধতা আমার ভেতর নেই।
বেশ কিছুদিন আগে আমি একজন জীববিদের সাথে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। একজন জীববিজ্ঞানীর সাথে কথা বলার এরকম মোক্ষম সুযোগ পেয়ে আলাপচারিতার লোভ সামলাতে পারলাম না।
ভদ্রলোক বর্তমানে মাশরুম এবং মুরগি নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষণার বিষয় হলো কীভাবে মুরগির শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে হ্রাস করা যায়। যেটাকে বলা যায় হাইপোকলেস্টেরলেমিয়ার (অস্বাভিকরকম কম কলেস্টেরলের মাত্রা ) আগ মুহূর্তে নামিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা।
যেহেতু মানুষের দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির পেছনে মুরগির মাংস অন্যতম দায়ী, তাই কোন জৈবিক বা রাসায়নিক উপায়ে মুরগির মাংশের কোলেস্টেরল পরিমাপের ভেতর আনা গেলেই মুরগির মাংস বেশ খানিকটা কোলেস্টেরল মুক্ত করা সম্ভব।
সেখানে ভালো ব্যাপার হলো রাসায়নিক প্রয়োগ ছাড়াই মাশরুম মুরগির শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা একটি নির্দিষ্ট এবং সহনীয় পরিমাণে কমিয়ে আনতে পারে। যেহেতু পুরো ব্যাপারটা জৈবিক পদ্ধতি এবং শুধুমাত্র মাশরুম খাওয়ানোর ভেতরেই সম্ভব হচ্ছে কোনরকম রসায়নিক পদার্থের প্রয়োগ ছাড়া, তাই ব্যাপারটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, আমার মাথায় ভিন্ন প্রশ্ন ঘুরছিলো। মুরগির বিবর্তনের ধারা পৃথিবীর বৃহত্তম একটি বিবর্তনের ধারা যার আরম্ভ হয়েছিলো আজ থেকে প্রায় ২৩০ কোটি বছর আগে থেরোপডস্ বা থেরোপোডা দলের ডাইনোসরদের থেকে। এটি বিবর্তনের একটি বিশাল লম্বা ধারা যা থেরোপোডা দলের ডাইনোসদের থেকে অনেক গুলো ভিন্ন ধাপে ধাপে, প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে, অনেক সময় নিয়ে বিবর্তিত হয়।
থেরোপোডা দলের ডাইনোসরেরা এসেছে সরিস্কিয়া প্রজাতির ডাইনোসরদের থেকে। সরিস্কিয়ারা দু'টো প্রধান ভাগে বিভক্ত,
-সরোপডোমর্ফা
-থেরোপোডা
থেরোপডদের প্রথম আবির্ভাব হয় আনুমানিক প্রায় ২৩ কোটি ১৪ লক্ষ বছর আগে। মজার ব্যাপার হলো আদি জুরাসিক যুগ থেকে ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষ পর্যন্ত (৬.৬ কোটি বছর আগে) সমস্ত বৃহদাকার স্থলচর মাংসাশী প্রাণীই ছিল থেরোপড
-কয়েকটি নির্বাচিত বৃহৎ থেরোপড ডাইনোসর ও একজন মানুষের গড় আয়তনের তুলনামূলক চিত্র। ছবি -উইকিপিডিয়া।
প্রাথমিক সময়ে সমস্ত থেরোপোডা ডাইনোসরেরা মাংসাশী ছিল। যা বিবর্তনের ফলে পরবর্তী সময়ে থেরোপড ডাইনোসরেরা নানা প্রজাতি বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করে কিছু প্রজাতি উদ্ভিদভোজী, কিছু সর্বভুক, এবং কিছু মৎস্যাহারী প্রভৃতি হয়ে প্রায় ২৩০ কোটি বছর আগে দু'টো প্রধান ভাগে বিবর্তিত হয়,
-সেরাটোসরিয়া
-টেটানিউরা
থেরোপোডা ডাইনোসরেরা ২৩০ কোটি বছর আগে সেরাটোসরিয়া এবং টেটানিউরা নামে দুটি প্রধান বিভাগে বিবর্তনের পরে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পরিবেশে, বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করে কোটি কোটি বছর ধরে আরো অনেক বিভাগে বিবর্তনের ধারা অনুযায়ী খুব ধিরে ধিরে বিবর্তিত হয়ে পরে। এবং তাদের ভেতর শেষ দিকের টিকে থাকা ডাইনোসর হিসেবে টাইর্যানোসরাস প্রজাতির ডাইনোসরদের পাওয়া যায়।
যাদের পরিবারের আদর্শ ডাইনোসর হলো টাইর্যানোস রেক্স। রেক্স শব্দের অর্থ হলো রাজা। টাইর্যানোস রেক্স ডাইনোসরদের সংক্ষেপে ডাকা হয় টি রেক্স ( T-rex ) নামে।
এবং টি রেক্স ডাইনোসর থেকে অবশেষে মুরগির বিবর্তন ঘটে।
- কার্নেগি মিউজিয়াম অফ ন্যাশনাল হিস্ট্রি তে টি-রেক্স ( টাইর্যানোস রেক্স ) এর একটি নমুনা।
অর্থাৎ বিবর্তনের শুরুতে মুরগি মাংসাশী এবং হিংস্র প্রাণী ছিল বিবর্তনের কালক্রমে ধীরে ধীরে ভিন্ন খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করে এবং ধীরে ধীরে সর্বভুক প্রাণীতে বিবর্তিত হয়। সর্বভুক প্রাণী হলো যারা একই সাথে প্রাণীজ এবং উদ্ভিজ্জ খাদ্য খেয়ে জীবনধারন করে।
এবার, যদি মুরগির খাদ্যাভ্যাসে মাশরুম যুক্তের ফলে যদি মুরগীর শরীর থেকে কোলেস্টেরলের মাত্রা নির্দিষ্ট পরিমাণে জৈবিক উপায়েই কমানো যায়, তবে এভাবে কয়েক'শ বছর পরে এদের ডিএনএতেই কোলেস্টেরলের মাত্রা সিকিআণা পরিমাণে হলেও কমে আসবে বিবর্তনের ফলে।
এবং কয়েক'শ মিলিয়ন বছর পরে এদের ডিএনএতেই কোলেস্টেরলের মাত্রা নির্দিষ্ট স্কেলে চলে আসবে মাশরুম খাওয়ানো ছাড়াই।
কারণ ভিন্ন খাদ্যাভ্যাসের ফলে যদি থেরোপোডা থেকে বিবর্তিত হয়ে কিছু প্রজাতি উদ্ভিদভোজী, কিছু সর্বভুক, এবং কিছু মৎস্যাহারী হতে পারে বিভিন্ন পরিবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ার জন্য এবং সেসব পরিবেশে মানিয়ে নেবার জন্য। তবে মাশরুমের নতুন খাদ্যাভ্যাসের জন্য কয়েক'শ মিলিয়ন বছর পরে মুরগির মাংস থেকে কোলেস্টেরল কোষের তৈলাক্ত ঝিল্লির মাত্রা নির্দিষ্ট স্কেলে পরিপূর্ণ ভাবে কমে যাবে!
এবার, এরকম কিছু মানুষের উপর প্রয়োগ করলে কি হতে পারে। যেহেতু বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাসের ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যেমন খাদ্যাভ্যাসের উপরে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে, এমন অনেক খাদ্যাভ্যাস রয়েছে যার ফলে আমরা বিভিন্ন কঠিন কঠিন রোগ জৈবিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এভাবে কয়েক'শ মিলিয়ন বছর আমরা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে শুধুমাত্র ভালো খাদ্যাভ্যাস নিয়মিত করলেআমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিবর্তিত হয়ে প্রখর হয়ে উঠবে? এবং যেহেতু আমাদের আয়ুকালের বেশ কিছু অংশ নির্ভর করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিবর্তিত হওয়ায় আমাদের আয়ুকালে পরিবর্তন আসবে?
আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে ভদ্রলোক কে পুরো ব্যাপারটা বললাম। তিনি গবেষণা পত্র এবং থিসিস পেপারে কলম চালাতে চালাতে মোটা ফ্রেমের ভারি কাচের চশমার ফাঁকা দিয়ে তাকিয়ে পুরো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন, এরপরে একটি মুচকি হাসি দিয়ে পুনরায় কাজে মনোযোগ দিলেন। এর অর্থ হলো, আপাতত উনি ওনার গবেষণার বিষয়বস্তর বাহিরে কোন বিষয়ে মন্তব্য করবেন না। তাই আমি কৌতুহল দমিয়ে রেখে পূর্বের আলাপে ফিরলাম।
এই জীববিজ্ঞানী তার জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন এই গবেষণার পেছনে। এটি সফল হলে আমাদের দেহের কোলেস্টেরলের অন্যতম উৎসকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। আমাদের দেশে দৈনিক মাথাপিছু প্রায় বড়সংখ্যক মানুষের খাদ্যাভ্যাসে মুরগির মাংস রয়েছে। এবং এর ফলে প্রতিদিন আমাদের দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে চলেছে এবং নানান ধরণের রোগ হচ্ছে, প্রেশার বেড়ে চলেছে।
ফলে বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা সহ খেতে হচ্ছে বিভিন্ন পাওয়ারফুল ঔষুধ যা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন কে শুধুমাত্র দুর্বিষহই করে তোলে না, বরং বোঝা বানিয়ে ফেলে। বিশেষ করে আমাদের দেশের মতন একটি মধ্যবিত্ত দেশের মানুষরা এসব ব্যয়বহুল ঔষূধের খরচ যোগাতে রীতিমত হীমশীম খায়। আমাদের দেশে বয়স হলেই রোগ হবার ব্যাপারটা একটি ধারাবাহিক নিয়মে পরিণীত হয়েছে। এভাবে জৈবিক উপায়ে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করলে আমরা এই রোগের ধারাবাহিকতা কতা থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবো।
জীববিজ্ঞানীর সাথে এই আলাপচারিতা থেকে আমি কিছু দুর্দান্ত জিনিস শিখেছি। এ ছাড়া নতুন করে নতুন অনেক কিছু ভাবতে শিখেছি।
আমাদের দেশে মাশরুম চাষ সেভাবে এখনো আরম্ভ না হলেও ইতিমধ্যেই অনেকে উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ এ গবেষণা সফল হলে আমাদের দেশে মাশরুম চাষ করে ব্যাপক পরিমাণ মানুষ কৃষিকাজে স্বাবলম্বী হতে পারবে। ফলে মাশরুম চাষ বৃদ্ধি পাবে এবং এটি মুরগীর খাদ্যাভ্যাসে নতুন করে মাশরুম যুক্ত করতে ব্যাপক অবদান রাখবে।
লেখা, তন্ময় জাবের।
©somewhere in net ltd.