শহরের প্রেম কবরে অগণিত অপ্রেম লাশ পরে আছে। একটুকরো ভালোবাসা নিয়ে হন্যে হয়ে আমি এ প্রেম কবর, ও প্রেম কবরের বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছি আর একটি উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি, ভালোবাসা কি?

১৯ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৩

শহরের প্রেম কবরে অগণিত অপ্রেম লাশ পরে আছে। একটুকরো ভালোবাসা নিয়ে হন্যে হয়ে আমি এ প্রেম কবর, ও প্রেম কবরের বাহিরে ঘুরে বেড়াচ্ছি আর একটি উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি, ভালোবাসা কি? ভালোবাসার মত একটি জীবন্ত লাশও আর বেঁচে নেই।
ভালোবাসা কি?

সত্যিকারের উত্তর:
ভালোবাসা একটি হরমোন জনিত অস্তিত্বহীন এবং অস্থায়ী অনুভূতির নাম, যেটির প্রধান উৎস হরমোন এবং বাস্তবে যার কোন অস্তিত্ব নেই।

আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন হরমোনের নিঃস্বরণকে আমরা বিভিন্ন আলাদা আলাদা নামের অনুভূতিতে বোঝাতে প্রকাশ করি।
প্রকৃতিতে আবেগ এবং অনুভূতির এবং বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই।
Endorphins, Dopamine, Serotonin, Oxytocin এই চারটি প্রধান হরমোনের জন্য আমাদের মস্তিষ্কে ভালোবাসার অনুভূতি, রাগের অনুভূতি, অপমানের অনুভূতি দুঃখের অনুভূতি এবং আনন্দের অনুভূতি তৈরি হয়।
এর ভেতর Oxytocin হরমোন মানুষের আকর্ষণের অনুভূতি কিংবা, সোজা কথায় ভালোবাসার পেছনে কাজ করে।
ধরুন, কোন লোকের মগজ থেকে এই প্রধান চারটি হরমোন বের করে ফেললে কিংবা কোন ধরনের কেমিকেল রিয়্যাকশন করে নষ্ট করে ফেললে লোকটি এসব অনুভূতি আর অনুভব করবেন না।
Oxytocin হরমোনের প্রভাবে ভালোবাসা বাড়ে, কমে। এ জন্য ভালোবাসা একটি অস্থায়ী অনুভূতি এবং ভালোবাসা ফুরিয়ে যাওয়া কোন অপরাধ না।
আমাদের জীবনে এরকম অনুভূতি নিয়ে ভাবার চেয়েও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। পৃথিবীর পরিবেশ এবং আবহাওয়া অনুযায়ী আমাদের ছোট্ট।

রাফ কাগজে হিসেব কষুন গড়ে আর কতদিন বাঁচবেন এবং সে তুলনায় পৃথিবীর জন্য আপনার কি কি করে যাওয়া উচিৎ।
আমরা মিল্কি ওয়ে ছায়াপথের একটি গ্রহে বসবাস করি, সেখানের আবহাওয়ার অনুপাতে আমরা খুব কম আয়ুকাল লাভ করি। আমাদের এই আয়ুই মহাকাশে বেড়ে অনেকগুণ বেশী হয়ে যায়। যেহেতু আমরা গ্রহেই থাকি তাই আমরা খুব দ্রুত মারা যাই।
এই জন্য মারা যাবার আগেই একটি নোট তৈরি করুন, আপনি মারা যাবার আগে কি কি কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ।
যেহেতু প্রকৃতিতে অনুভূতির কোন অস্তিত্বই নেই, তাই ভালোবাসা, রাগ, অভিমান, ঘৃণা, আনন্দ এসব বলেও কিছু নেই। এ কারণে শুধুমাত্র নিজেকে এবং নিজের কাজকে গুরুত্ব দিন।

সাহিত্য এবং ফিলসফির ভাষায় উত্তর:
ভালোবাসা একটি উঁচু অনুভূতির নাম। ভালোবাসা মানুষের বেঁচে থাকার খোরাক। মানুষ ভালোবাসতে জানে বলেই বেঁচে থাকে। শুধুমাত্র মানুষ ভালোবাসতে জানেনা, বনের প্রাণীরাও ভালোবাসতে জানে। তাই বেঁচে থাকার অন্যতম উৎস হলো ভালোবাসা।
মানুষ জন্মের পরে থেকেই ভালোবাসতে শেখে। বয়সের সাথে সাথে ইচ্ছে বদলায়, রুচি বদলায়, চাহিদা বদলায়। এর সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষের ভালোবাসাও বদলায়। ভালোবাসা কখনো বাড়ে, কখনো কমে।

ভালোবাসা অনেক রকমের হয়, ছোটবেলার ভালোবাসা একরম, বড়বেলার ভালোবাসা আরেকরকম। ছোটবেলার আমরা আপনজনদের কাছে ভালোবাসা খুঁজি, আপনজনদের ভালোবাসি, আপনজনদের আদরযত্নে আমরা ভালোবাসার অনুভূতি পেয়ে থাকি।
আর বড়বেলায় আমরা জীবন সঙ্গী খুঁজতে আরম্ভ করি এবং সঙ্গী ভেতরে ভালোবাসা খুঁজি, ভালোবাসি। সঙ্গী হতে পারেন, বন্ধু, বান্ধবী, প্রেমিক, প্রেমিকা অথবা প্রেয়সী, সহধর্মী, সহধর্মিণী, সহপাঠী, সহপাঠিনী।

বয়সের সাথে এই জীবন সঙ্গীও বদলায়। ভালোবাসা যেরকম একটি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, সেরকম এই গুরুত্বপূর্ণ অংশের পছন্দ, ইচ্ছে চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ। ভালোবাসা জীবনের খাদ্যের মতন। মানুষ যেমন খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকে, ভালোবাসাও ওরকম।
মানুষের যেমন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে, ভালোবাসাতেও আসে। ছোট বেলায় যেমন শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন হয়, আবার বড় হলে তার সাথে যুক্ত হয় বিভিন্ন ডেলেসিয়াস খাবার, আবার বুড়ো হলে সব পরিমাপ করে করে নরম করে খেতে হয়, ভালোবাসার ব্যাপারেও এমন হয় বয়সের সাথে সাথে। বয়স, পরিবেশ এসবের উপর নির্ভর করে ভালোবাসা আসে, বদলায়।

বুড়োবেলার ভালোবাসায় একটু পরিবর্তন ঘটে। তখন ইচ্ছে হয় একটু একা থাকতে, আবার কারোর ইচ্ছে পরিবারের সব নাতিপুতি নিয়ে একসাথে থাকতে। কারোর ইচ্ছে হয় লেকে বসে সূর্য ডুবির শেষ অংশ দেখতে। কারোর ইচ্ছে হয়, ঘরবাড়ি ছেড়ে নস্যি হয়ে পৃথিবী দেখতে। এইসব ইচ্ছে গুলো ভালোবাসার অংশ।
মোদ্দা কথা, ভালোবাসা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং বেঁচে থাকার খোরাক। যেটা বয়স, স্থানকাল ভেদে বৃদ্ধি পায়, কমে আসে, পরিবর্তন হয়, তৈরি হয়।

-তন্ময় জাবের।

০ টি +০/-০