নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
দুদক চেয়ারম্যান সাহেব সরল বিশ্বাস নিয়ে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা কতটুকু সরল বিশ্বাসে দিয়েছেন জানিনা তবে তিনি বড়ই দ্বিধান্বিত করে ফেলেছেন জনগণকে। কারণ, সরল বিশ্বাস প্রসূত ভুল ( Bona fide mistake) এর মত একটি আইনি টার্ম নিয়ে এক কথায় মন্তব্য করাটা একদিকে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে উৎসাহী করতে পারে, অন্যদিকে আইনের ভুল ব্যাখা হতে পারে।
তাহলে প্রথমেই আমরা চলে আসি আইনি আলোচনায়। আইনে, কোনরূপ অসৎ বা প্রতারণামূলক অভিপ্রায় ব্যতীত হঠাৎ করিয়া কোন ভুল হইলে উহা সরল বিশ্বাস প্রসূত ভুল ( Bona fide mistake) বলে গণ্য হয়।
দণ্ডবিধির ৫২ ধারায় সরল বিশ্বাসের সংজ্ঞায় বলা হইয়াছে যে, যথাবিহিত সতর্কতা ও মনোযোগ ছাড়াই সম্পন্ন বা বিশ্বাসকৃত কোন কিছুই ‘সরল বিশ্বাসে’ করা হইয়াছে বা তাহাতে 'সদ্ বিশ্বাস করা হয়েছে বলে পরিগণিত হবে না। (Nothing is said to be done or believed in "good faith" which is done or believed without due care and attention)
তামাদী আইনের ২ (৭) ধারায় সরল বিশ্বাসের সংজ্ঞায় বলা হইয়াছে যে, যদি যথাবিহিত যত্ন ও মনোযোগ সহকারে কোনো কাজ না করা হয় তাহা হইলে সরল বিশ্বাসে করা হইয়াছে বলিয়া বুঝাইবে না।
জেনারেল ক্লজেজ এ্যাক্ট ৩ (২০) ধারায় বলা হইয়াছে যে, সততার সহিত সরল বিশ্বাসে কোন কার্য সম্পাদন করা হইয়াছে, যা কিনা অবহেলাজনিত কারণে হতে পারে অথবা নাও হতে পারে।
দণ্ডবিধির ৭৬ ধারা অনুসারে কোনো ব্যক্তি আইনবলে কোনো কার্য করিতে বাধ্য বলিয়া সরল বিশ্বাসে উক্ত কার্য করিলে তাহার অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না। এখানে মূলত দুইটি বিষয় ক্লিয়ার করা হয়েছে যা পয়েন্ট আকারে ইংরেজি পাঠ টা করলে এমন হয় (i) Nothing is an offence which is done by a person who is bound by law to do it.
(ii) Nothing is an offence which is done by a person who by reason of a mistake of fact and not by reason of a mistake of law in good faith believes himself to be bound by law to do it.
আর দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর সেকশন ৩১ এ, দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মকর্তা ও কর্মচারী যদি সরল বিশ্বাসে কোনো কাজ করে সে ক্ষেত্রে তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এবার তাহলে আমরা ফিরে যায় দুদক চেয়ারম্যানের কথায়। তিনি বলেছেন " পেনাল কোড অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীদের সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম কোনো অপরাধ নয়। এটাকে বলে জেনারেল এক্সসেপশন। কিন্তু এখানে শর্ত আছে, সরল বিশ্বাসটা যেন উইথ কেয়ার অ্যান্ড কসাস হয়। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে সরল বিশ্বাসে আপনি এ কাজটা করেছেন"।
তাহলে প্রশ্ন হলো , সরল বিশ্বাসে দুর্নীতিতে জড়ানোর সুযোগ আইনে আছে কি? কিংবা উইথ কেয়ার অ্যান্ড কসাস (due care and attention) এর সহিত কি দুর্নীতিতে জড়ানোর কোনো সুযোগ আছে? (যেমন দুর্ঘটনায় আহত শিশুকে অবিলম্বে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হলে ডাক্তার শিশুর অভিবাকের সম্মতি না নিতে পেরেও সদ্ বিশ্বাসে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করলেন এবং শিশুটিকে বাঁচাতে না পারলেও আইনত তিনি অপরাধী হবেন না। কারণ এটি সরল বিশ্বাস প্রসূত। অন্যদিকে, আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পায়দা লুটার জন্য কিংবা কোন স্বার্থ হাসিল করার জন্য কোন ফাইল আটকিয়ে রেখে দিলেন কিংবা উপরি পাওনার বিনিময়ে কাজটি করলেন তখন তা সরল বিশ্বাসে দুষ্কর্ম বলে গণ্য হবে। এবং যেটি নিসন্দেহে ফৌজদারি অপরাধ।)
দুদক চেয়ারম্যান সাহেব কি তাহলে সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম আর সরল বিশ্বাসে দুষ্কর্ম দুইটা ভিন্ন জিনিসকে এক করে ফেললেন! করলে কার স্বার্থে! ।
ওনার বক্তব্য কাদেরেকে দায়মুক্তি ( Indemnity) দেয়ার স্বার্থে এবং কতটুকু সরল বিশ্বাস প্রসূত তা খতিয়ে দেখা আবশ্যক। একটা দায়িত্বশীল জায়গা থেকে তিনি সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম আর সরল বিশ্বাসে অপকর্ম বুঝবেন না তা মেনে নিতে নারাজ আমি। এমনকি তিনি দুর্নীতির সাথে দন্ডবিধির জেনারেল এক্সসেপশন এর উদাহরণ টেনে এনে তার দাবিটাকে আরো পাকাপোক্ত করার চেষ্টা করেছেন। যা শুধু দুঃখজনক নয়, ওনার আইনি জ্ঞানের গভীরতার মাপকাঠিও একজন আইনের ছাত্র হিসেবে আমাকে হতাশ করে।
-এডভোকেট এম টি উল্যাহ
[email protected]
+8801816557583
২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫৩
এম টি উল্লাহ বলেছেন: সেটাই
২| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৫০
সায়ন্তন রফিক বলেছেন: জনগণ সরল বিশ্বাসের দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ।
২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫৩
এম টি উল্লাহ বলেছেন: সেটাই
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:১১
রাজীব নুর বলেছেন: এই কথায় সমস্ত দেশবাসী'ই হতাশ হয়েছে।