নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসামি পক্ষের ওকালতি ও জনতার ট্রায়াল!

২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:১৮

“অমুকের পক্ষেও আইনজীবী আছেন" "তমুকের পক্ষে দাঁড়াবেন না” "জেনে শুনেও অপরাধীর পক্ষে উকিল কেন" ইদানিং ফেসবুকে এমন সব কথা আইনজীবীদের নিয়ে হচ্ছে এবং এসব বলার পিছনে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। প্রথমত, ন্যাক্কারজনক অপরাধ সমূহ ঘটতে থাকা এবং এসব জঘন্য অপরাধের ন্যায় বিচার পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা থেকেই বিবেকবান মানুষের এমন আবেদন। স্বভাবতই, সম্মানজনক এই রয়েল পেশায় নিয়োজিত বিজ্ঞ আইনজীবীদের নিকট সবার ভালো কিছু প্রত্যাশা থাকে। দ্বিতীয়ত, ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া তথা ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া/মানদণ্ডের বিষয়ে ধারণা না থাকা।

স্বাভাবিকভাবেই একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে ন্যায় বিচার পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই দ্বিতীয় কারণটি ব্যাখ্যা করার নিমিত্তেই আমার আলোচনা।

আমরা সকলেই জানি ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ার ৩ টি আবশ্যকীয় পক্ষ হলো বিচারক/জুরি, প্রসিকিউশন ( রাষ্ট্র পক্ষ) এবং ডিফেন্স ল'ইয়ার (আসামি পক্ষের আইনজীবী)। এর যে কোন একটি ব্যতীত বিচার করা হলে তা ন্যায় বিচার হবে না। বিশেষ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতেই হবে। কারণ, A fundamental principle of natural justice is that "no man should be condemned unheard”. তাহলে বিষয়টি হলো, আসামীকে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনে বাধা দেওয়া বিচার অস্বীকার করার শামিল!।
১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১১(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রয়োজনীয় নিশ্চয়তা দিয়ে গণআদালতের বিচারে আইন অনুসারে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নির্দোষ হিসেবে গণ্য হওয়ার অধিকার রয়েছে’ । একই বিধান সংযুক্ত রয়েছে ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত দেওয়ানী ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত কভেনেন্টে।

এজন্য বিষয়টা আমাদের সংবিধান দ্বারাও সুরক্ষা করা হয়েছে এভাবে “গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথা সম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না” -অনুচ্ছেদ ৩৩(১)।
শুধু তাই নয় ফৌজদারী কার্যবিধির(১৮৯৮) এর ৩৪০ ধারা মতে একজন আসামি তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ তার অধিকার রাখেন। যার ফলে, আসামীর পক্ষে কোন আইনজীবী যদি ওকালতি করার ইচ্ছা প্রকাশ নাও করে থাকেন তখন সরকারী খরচেইসরকার একজন আইনজীবী আসামী পক্ষে নিয়োগ দেন আসামী পক্ষে আদালতে মামলা লড়ার জন্য। এবং এই আইনজীবীকে বলা হয় State Defence Lawyer. এমনকি গুরুতর অপরাধের পলাতক আসামীদের পক্ষেও সরকারী খরচে State defense lawyer নিয়োগ দেয়া হয় এবং তাকে রাষ্ট্র পক্ষ সংশ্লিষ্ট পলাতক আসামীর যাবতীয় নথিপত্র সরবরাহ করা হয়। যেমন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের হত্যা মামলায়ও পলাতক আসামীদের পক্ষে সরকারী খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল । এসব হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থেই । কারণ, দশজন অপরাধী ছাড়া পেলেও যেন একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিও সাজা না পায়, সেটা নিশ্চিত করা বিচারের পবিত্র দায়িত্ব।

আমার আলোচনার মূল কথা হলো আসামি পক্ষে ওকালতি করা অপরাধ নয়, তবে চাঞ্চল্যকর, জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে সচেতন আইনজীবীদপর একটু সতর্ক হওয়া উচিত। আর আইনজীবীদেরও জনতার ট্রায়ালের মুখোমুখি না করে ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া তথা ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণের মানদণ্ড বুঝতে সচেষ্ট হই।

সর্বশেষ বিষয়টি আরো বুঝার স্বার্থে বিজ্ঞ আইনজীবী এডভোকেট কুমার দেবুল দে সাহেবের উক্ত উদাহরণটি শেয়ার করলাম

"ধরুন নুসরাত হত্যা মামলার বিচার হল রায়ে দোষীদের ফাঁসি হল বিচার পরবর্তী কিছু প্রক্রিয়া এখনো বাকী। তার ফাঁসি কার্যকরের দিন ঘোষনা করতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। দেখা গেল বিচারিক প্রক্রিয়ার চলার কোন এক সময়ে আসামীর ক্যান্সার ধরা পড়ল, যেকোনো সময় সে মারা যাবে তাহলে তো ঝামেলা মিঠেই গেল রায়ে তার ফাঁসি হয়েছে, একদিকে জনগন তার মৃত্যুদণ্ড আশা করে এবং ক্যান্সারে সে মারা গেলেই তো কাহিনী শেষ।

আসলে কি এইভাবেই শেষ হয়ে যাবে কাহিনী? আসামীকে সরকার বা জেল কতৃপক্ষ আগে তার ক্যান্সারের চিকিৎসা করাবে, প্রয়োজনে তাকে কেমোথেরাপি দেয়া হবে তাকে সেইদিন পর্যন্ত সুস্থ্যভাবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হবে যেইদিন তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। কারন একজন অপরাধীর শাস্তি কার্যকর হবে একমাত্র আইনের অধীনেই কোন রোগ শোকের অধীনে নয়। আইন কোনদিন রোগ শোক বা অন্যকিছুর কাছে হার মানতে পারেনা। এইবার একটু ভেবে দেখুন তো এইখানে আসামীকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় ডাক্তারের দোষটা কোথায়?

ধরুন নুসরাত হত্যাকান্ডের বিচার চলাকালে আসামীর বাড়ীতে আগুন ধরেছে, ফায়ার সার্ভিস কি তার বাসার আগুন নেভানোর চেষ্টা করবেনা?

তাই কোন মামলায় সে যতই স্পর্শকাতর বা চাঞ্চল্যকর মামলাই হোকনা কেন আসামী ধরা পড়লে তার পক্ষে আইনজীবী থাকবেই। তাছাড়া আদালতে বিরোধীয় কোন পক্ষে ওকালতি করা একজন আইনজীবীর দায়িত্ব যদি তিনি উপযুক্ত ফি প্রদান সাপেক্ষেও যদি অনীহা জ্ঞাপন করেন তবে তা হবে অপরাধ। বিচার প্রক্রিয়ায় আসামীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া, বা খাবার দেয়া বা তার বাড়ীতে আগুন নিভানো যেমন একটি সাধারন বিষয় আসামীকে আইনী সেবা দেওয়াও ঠিক তেমনি একটি সাধারন বিষয় যা ন্যায় বিচারের অংশ"
- এডভোকেট এম টি উল্যাহ
+৮৮০১৮১৬৫৫৭৫৮৩
mtullah89@gmai. com

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৪

নতুন বলেছেন: আপনি কাছে এক মক্কেল আসলো সে ধষ`ন মামলার আসামী,

সে আপনার কাছে স্বীকার করলো যে সে আসলেই ধষন করেছে, তখন আপনি কি করবেন?

ঐ পক্ষের মামলা করলে তাকে বাচাতে নারীকে মিথ্যাবাদি বা তার দাবী ভুল প্রমান করবেন?

আইন অনুযায়ী নিয়মে থাকলেও সব কিছু করা ঠিক না। মানুষের একটা আদশ` থাকা উচিত।

Not everything Legal Right.

২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৪৫

এম টি উল্লাহ বলেছেন: সে স্বীকার করলে আর মামলা চালানোর মানে কি?

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: মিন্নির প্রতি অবিচার হচ্ছে না তো!
-
সরল বিশ্বাসে কইলাম।

২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৪৬

এম টি উল্লাহ বলেছেন: বিষয়টি তদন্তাধীন

৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:৩৩

সেতুর বন্ধন বলেছেন: সাম্প্রতিক ঘটনার একজন বিক্টিম মিন্নি সে যদি প্রহসনের বিচারে পড়ে থাকে তাকে আইনী সহযোগিতা দেওয়ার প্রয়োজন। তার পার্শ্বে বিজ্ঞ আইনজীবিরা দাড়ানো চাই।

২০ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৪৭

এম টি উল্লাহ বলেছেন: আগামীকাল দাঁড়াবে।

৪| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৩৩

এমজেডএফ বলেছেন: ভালো একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন, ধন্যবাদ।
আসলে আমাদের দেশের মানুষের বিচার পদ্ধতির ওপর আস্থা কম। তাই মানুষ মনে করে উকিলের সাহায্যে এসব দুর্ধর্ষ আসামীরা জামিন নিয়ে পালিয়ে যাবে বা আইনের ফাঁকে শাস্তি পাবে না বা শাস্তি কম পাবে।

৫| ২১ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:৪৬

নতুন বলেছেন: আমি বলেছি আপনার মক্কেল একজন ধষন মামলার আসামী ।

তিনি যখন আপনার কাছে এসেছে আপনি তাকে জি্গাসাবাদ করলে সে স্বিকার করলো যে সে সত্যিই ধষ`ন করেছে।

কখন আপনি কি করবেন? আসামীর আইনজীবি হিসেবে আসামীকে নিদোষ প্রমান করার চেষ্টা করবেন?

আপনার মক্কেল '' যাহা বলিবো সত্য বলিবো '' শপথ করে আদালতে দাড়িয়ে বলবেন যে তিনি নিদোষ.... এবং আপনি আইনজীবি হিসেবে কি করবেন?

তাই একজন সত মানুষ হিসেবে এই মামলা আপনার নেয়া এবং আসামীকে নিদোষ প্রমানের চেস্টা করা নৈতিক মনে হবেনা।

কিন্তু এমন ভাবে আইন প্রস্টিস করলে চুলায় আগুন জলবেনা। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.