নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah
মানি লন্ডারিং(Money laundering) হল একটি অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রম। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে সেই সম্পদের আংশিক বা পূর্ণ অংশ রুপান্তর বা এমন কোন বৈধ জায়গায় বিনিয়োগ করা হয় যাতে করে সেই বিনিয়োগকৃত সম্পদ থেকে অর্জিত আয় বৈধ বলে মনে হয়, তাকে আর্থোশোধন বা মানি লন্ডারিং বলা হয়। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।
সাধারণত, এক খাতের টাকা আরেক খাতে নিয়ে, সেই টাকা আবার আরেক খাতে নিতে নিতে বিষয়টি এমন দাড়ায় যে মূল উৎস খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয়ে যায়। ফলে আইনের লোকজনের পক্ষে অবৈধ উৎসটি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না। মানে মানি লন্ডারিং হলো অবৈধ বা কালো অর্থকে লেনদেন চক্রের মাধ্যমে বৈধ করা বা স্বচ্ছতাদান করার একটি প্রক্রিয়া। অন্য কথায় সংগৃহিত অর্থের উৎস গোপন করে হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উক্ত তহবিলকে পর্যায়ক্রমে বৈধ আয় হিসেবে পরিগণিত করা। অর্থাৎ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে যে সব অর্থ আসছে সেগুলিকে ব্যাংকের মাধ্যমে ডিডি, টিটি, এমটি করে অথবা বিভিন্ন নামে এ্যাকাউন্ট খুলে তা পরবর্তীতে অন্য কোথাও বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ করার যে প্রক্রিয়া তাকে মানি লন্ডারিং বলে।
মূলত অবৈধ অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে তবে সে আয়ের উৎস গোপন করা এবং বৈধ অর্থনৈতক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপার্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যই মানি লন্ডারিং করা হয়ে থাকে।
মানি লন্ডারিং করার প্রক্রিয়াঃ
সাধারণত তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করা হয়ে থাকে।
১। সংযোজন বা প্লেসমেন্ট
যখন কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ড হতে উপার্জিত অর্থ প্রথমবারের মত অর্থ ব্যাবস্থায় প্রবেশ করানো হয় তাকে সংযোজন বা প্লেসমেন্ট বলে। যেমন চুরি, ডাকাতি, চোরাচালান বা ঘুষের অর্থ যখন একটি ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয় তখন তাকে সংযোজন বা প্লেসমেন্ট বলে। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে জমি ক্রয়, বাড়ি বা গাড়ি ক্রয়, শেয়ার ক্রয় ইত্যাদির মাধ্যমেও প্রথমবারের মত অবৈধ অর্থ, অর্থ ব্যাবস্থায় প্রবেশ করানোর প্রক্রিয়াকে প্লেসমেন্ট বলে।
২। স্তরিকরন বা লেয়ারিং
এই প্রক্রিয়ায় সংযোজনকৃত অর্থ পর্যায়ক্রমে জটিল লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরে সরানো হয়। এই প্রক্রিয়া অর্থের উৎস গোপন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন একটি ব্যাংক হিসাব থেকে অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর, বিদেশে অর্থ প্রেরণ, ট্রাভেলার্স চেকে রুপান্তর, একটি ব্যাংক হিসাব থেকে অন্যান্ন শাখায় বিভিন্ন নামে অর্থের স্থানান্তর বা জমা দেওয়া।
৩। পূনর্বহাল বা ইন্টিগ্রেশন
স্তরিকরন সফল হলে পরবর্তীতে অবৈধ অর্থ এমনভাবে ব্যবহৃত হয় যাতে করে মনে হয় এটি বৈধ পন্থায় উপার্জিত। এভাবেই লন্ডারিংকৃত অর্থ অর্থনীতিতে পূনর্বহাল হয়। যেমন অবৈধ অর্থ দিয়ে ক্রয়কৃত জমি বিক্রয় করে পুনরায় সেই অর্থ দিয়ে জমি কেনা বা বাড়ি, গাড়ি, বীমা পলিসি ঘন ঘন বাতিল এবং পূনর্বহাল করা ইত্যাদি।
মানি লন্ডারিং এর তদন্ত কার্যক্রমঃ
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলা আগে তদন্ত করত শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুধু তদন্ত নয়, মামলা দেখাশোনাও করত দুদক। তবে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করে গেজেট প্রকাশের পর থেকে দুদুকসহ পাঁচটি সংস্থা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায়। দুদক ছাড়া অপর চারটি সংস্থা হলো- পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
***কি করলে মানিলন্ডারিং মামলায় পড়তে পারেন?
এ বিষয়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর সেকশন ২ সংজ্ঞাতে বলা আছে;
বিষয় বা প্রসংগের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনের
(ক) ‘‘অর্থ বা সম্পত্তি পাচার’’ অর্থ
(১) দেশে বিদ্যমান আইনের ব্যত্যয় ঘটাইয়া দেশের বাহিরে অর্থ বা সম্পত্তি প্রেরণ বা রক্ষণ; বা
(২) দেশের বাহিরে যে অর্থ বা সম্পত্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রহিয়াছে যাহা বাংলাদেশে আনয়ন যোগ্য ছিল তাহা বাংলাদেশে আনয়ন হইতে বিরত থাকা; বা
(৩) বিদেশ হইতে প্রকৃত পাওনা দেশে আনয়ন না করা বা বিদেশে প্রকৃত দেনার অতিরিক্ত পরিশোধ করা;
(খ) ‘‘অর্থ মূল্য স্থানান্তরকারী’’ অর্থ এমন আর্থিক সেবা যেখানে সেবা প্রদানকারী একস্থানে নগদ টাকা, চেক, অন্যান্য আর্থিক ইন্সট্রুমেন্ট (ইলেকট্রনিক বা অন্যবিধ) গ্রহণ করে এবং অন্যস্থানে সুবিধাভোগীকে নগদ টাকা বা আর্থিক ইন্সট্রুমেন্ট বা অন্য কোনভাবে সমপরিমাণ মূল্য প্রদান করে;
(গ) ‘‘অপরাধলব্ধ আয়’’ অর্থ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত অপরাধ হইতে অর্জিত, উদ্ভূত সম্পত্তি বা কারো আয়ত্তাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন এ ধরণের সম্পত্তি;
(ফ) ‘‘মানিলন্ডারিং’’ অর্থ
(অ) নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যে অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত সম্পত্তি জ্ঞাতসারে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তরঃ
(১) অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন বা ছদ্মাবৃত্ত করা; অথবা
(২) সম্পৃক্ত অপরাধ সংগঠনে জড়িত কোন ব্যক্তিকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ হইতে রক্ষার উদ্দেশ্যে সহায়তা করা;
(আ) বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়ম বর্হিভূতভাবে বিদেশে পাচার করা;
(ই) জ্ঞাতসারে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করিবার উদ্দেশ্যে উহার হস্তান্তর, বিদেশে প্রেরণ বা বিদেশ হইতে বাংলাদেশে প্রেরণ বা আনয়ন করা;
(ঈ) কোন আর্থিক লেনদেন এইরূপভাবে সম্পন্ন করা বা সম্পন্ন করিবার চেষ্টা করা যাহাতে এই আইনের অধীন উহা রিপোর্ট করিবার প্রয়োজন হইবে না;
(উ) সম্পৃক্ত অপরাধ সংঘটনে প্ররোচিত করা বা সহায়তা করিবার অভিপ্রায়ে কোন বৈধ বা অবৈধ সম্পত্তির রূপান্তর বা স্থানান্তর বা হস্তান্তর করা;
(ঊ) সম্পৃক্ত অপরাধ হইতে অর্জিত জানা সত্ত্বেও এই ধরণের সম্পত্তি গ্রহণ, দখলে নেওয়া বা ভোগ করা;
(ঋ) এইরূপ কোন কার্য করা যাহার দ্বারা অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করা হয়;
(এ) উপরে বর্ণিত যে কোন অপরাধ সংঘটনে অংশগ্রহণ, সম্পৃক্ত থাকা, অপরাধ সংঘটনে ষড়যন্ত্র করা, সংঘটনের প্রচেষ্টা অথবা সহায়তা করা, প্ররোচিত করা বা পরামর্শ প্রদান করা;
(আ) নগদ টাকা, ইলেকট্রনিক বা ডিজিটালসহ অন্য যে কোন প্রকৃতির দলিল বা ইন্সট্রুমেন্ট যাহা কোন সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব বা মালিকানা স্বত্বে কোন স্বার্থ নির্দেশ করে;
(শ) ‘‘সম্পৃক্ত অপরাধ (Predicate offence) ’’ অর্থ নিম্নে উল্লিখিত অপরাধ, যাহা দেশে বা দেশের বাহিরে সংঘটনের মাধ্যমে অর্জিত কোন অর্থ বা সম্পদ লন্ডারিং করা বা করিবার চেষ্টা করা, যথাঃ
(১) দুর্নীতি ও ঘুষ;
(২) মুদ্রা জালকরণ;
(৩) দলিল দস্তাবেজ জালকরণ;
(৪) চাঁদাবাজি;
(৫) প্রতারণা;
(৬) জালিয়াতি;
(৭) অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা;
(৮) অবৈধ মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা;
(৯) চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা;
(১০) অপহরণ, অবৈধভাবে আটকাইয়া রাখা ও পণবন্দী করা;
(১১) খুন, মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি;
(১২) নারী ও শিশু পাচার;
(১৩) চোরাকারবার ;
(১৪) দেশী ও বিদেশী মুদ্রা পাচার;
(১৫) চুরি বা ডাকাতি বা দস্যুতা বা জলদস্যুতা বা বিমান দস্যুতা;
(১৬) মানব পাচার বা কোন ব্যক্তিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মিথ্যা আশ্বাস প্রদান করিয়া কোন অর্থ বা মূল্যবান দ্রব্য গ্রহণ করা বা করিবার চেষ্টা;]
(১৭) যৌতুক;
(১৮) চোরাচালানী ও শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ;
(১৯) কর সংক্রান্ত অপরাধ;
(২০) মেধাস্বত্ব লংঘন;
(২১) সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থ যোগান;
(২২) ভেজাল বা স্বত্ব লংঘন করে পণ্য উৎপাদন;
(২৩) পরিবেশগত অপরাধ;
(২৪) যৌন নিপীড়ন ( ঝবীঁধষ ঊীঢ়ষড়রঃধঃরড়হ) ;
(২৫) পুঁজি বাজার সম্পর্কিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে তাহার কাজে লাগাইয়া শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে বাজার সুবিধা গ্রহণ ও ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার লক্ষ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা (Insider Trading & Market Manipulation ) ;
(২৬) সংঘবদ্ধ অপরাধ (Organised Crime) বা সংঘবদ্ধ অপরাধী দলে অংশগ্রহণ;
(২৭) ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায়; এবং
(২৮) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ৫[ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট] কর্তৃক সরকারের অনুমোদনক্রমে গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষিত অন্য যে কোন সম্পৃক্ত অপরাধ;
এসব অপরাধে কেউ সম্পৃক্ত হলে এবং তদন্তে ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করা হয়। আইনে ৪ থেকে ১২ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে ধারা অনুযায়ী ।
- এম টি উল্যাহ
আইনজীবী, ০১৭৩৩৫৯৪২৭০
mtullah89@gmai. com
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৪
এম টি উল্লাহ বলেছেন: আঁধারে!
২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৪৬
ইব্রাহীম আই কে বলেছেন: প্রশাসনিক কাঠামোর দুর্বলতা মানি লন্ডারিং করতে সাহায্য করে।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৪
এম টি উল্লাহ বলেছেন: সহমত
৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৩০
রাজীব নুর বলেছেন: এরকম অপরাধী কমপক্ষে পাঁচ লাখ আছে। সরকার তাদের ধরছে না কেন??
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৫
এম টি উল্লাহ বলেছেন: এ বিষয়ে কবি নিরব।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৭
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ নিয়ে কি হয়েছে?