নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসামি পক্ষের ওকালতি ও সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল!

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:১৯

“অমুকের পক্ষেও আইনজীবী আছেন" "তমুকের পক্ষে দাঁড়াবেন না” "জেনে শুনেও অপরাধীর পক্ষে উকিল কেন" ইদানিং ফেসবুকে এমন সব কথা আইনজীবীদের নিয়ে হচ্ছে এবং এসব বলার পিছনে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। প্রথমত, ন্যাক্কারজনক অপরাধ সমূহ ঘটতে থাকা এবং এসব জঘন্য অপরাধের ন্যায় বিচার পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা থেকেই বিবেকবান মানুষের এমন আবেদন। স্বভাবতই, সম্মানজনক এই রয়েল পেশায় নিয়োজিত বিজ্ঞ আইনজীবীদের নিকট সবার ভালো কিছু প্রত্যাশা থাকে। দ্বিতীয়ত, ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া তথা ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণের প্রক্রিয়া/মানদণ্ডের বিষয়ে ধারণা না থাকা।

স্বাভাবিকভাবেই একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে ন্যায় বিচার পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই দ্বিতীয় কারণটি ব্যাখ্যা করার নিমিত্তেই আমার আলোচনা।

আমরা সকলেই জানি ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ার ৩ টি আবশ্যকীয় পক্ষ হলো বিচারক/জুরি, প্রসিকিউশন ( রাষ্ট্র পক্ষ) এবং ডিফেন্স ল'ইয়ার (আসামি পক্ষের আইনজীবী)। এর যে কোন একটি ব্যতীত বিচার করা হলে তা ন্যায় বিচার হবে না। বিশেষ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতেই হবে। কারণ, A fundamental principle of natural justice is that "no man should be condemned unheard”. তাহলে বিষয়টি হলো, আসামীকে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনে বাধা দেওয়া বিচার অস্বীকার করার শামিল!।
১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের ১১(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রয়োজনীয় নিশ্চয়তা দিয়ে গণআদালতের বিচারে আইন অনুসারে দোষী প্রমাণিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নির্দোষ হিসেবে গণ্য হওয়ার অধিকার রয়েছে’ । একই বিধান সংযুক্ত রয়েছে ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত দেওয়ানী ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত কভেনেন্টে।

এজন্য বিষয়টা আমাদের সংবিধান দ্বারাও সুরক্ষা করা হয়েছে এভাবে “গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথা সম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না” -অনুচ্ছেদ ৩৩(১)।
শুধু তাই নয় ফৌজদারী কার্যবিধির(১৮৯৮) এর ৩৪০ ধারা মতে একজন আসামি তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ তার অধিকার রাখেন। যার ফলে, আসামীর পক্ষে কোন আইনজীবী যদি ওকালতি করার ইচ্ছা প্রকাশ নাও করে থাকেন তখন সরকারী খরচেইসরকার একজন আইনজীবী আসামী পক্ষে নিয়োগ দেন আসামী পক্ষে আদালতে মামলা লড়ার জন্য। এবং এই আইনজীবীকে বলা হয় State Defence Lawyer. এমনকি গুরুতর অপরাধের পলাতক আসামীদের পক্ষেও সরকারী খরচে State defense lawyer নিয়োগ দেয়া হয় এবং রাষ্ট্র পক্ষ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট পলাতক আসামীর যাবতীয় নথিপত্র সরবরাহ করা হয়। যেমন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের হত্যা মামলায়ও পলাতক আসামীদের পক্ষে সরকারী খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল । এসব হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থেই । কারণ, দশজন অপরাধী ছাড়া পেলেও যেন একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিও সাজা না পায়, সেটা নিশ্চিত করা বিচারের পবিত্র দায়িত্ব।

আমার আলোচনার মূল কথা হলো আসামি পক্ষে ওকালতি করা অপরাধ নয়, তবে চাঞ্চল্যকর, জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে সচেতন আইনজীবীদপর একটু সতর্ক হওয়া উচিত। আর আইনজীবীদেরও ফেসবুক ট্রায়ালের মুখোমুখি না করে ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া তথা ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণের মানদণ্ড বুঝতে সচেষ্ট হই।

সর্বশেষ বিষয়টি আরো বুঝার স্বার্থে একটি উদাহরণ শেয়ার করলাম

"ধরুন হত্যা মামলার বিচার হল রায়ে দোষীদের ফাঁসি হল বিচার পরবর্তী কিছু প্রক্রিয়া এখনো বাকী। তার ফাঁসি কার্যকরের দিন ঘোষনা করতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। দেখা গেল বিচারিক প্রক্রিয়ার চলার কোন এক সময়ে আসামীর ক্যান্সার ধরা পড়ল, যেকোনো সময় সে মারা যাবে তাহলে তো ঝামেলা মিঠেই গেল রায়ে তার ফাঁসি হয়েছে, একদিকে জনগন তার মৃত্যুদণ্ড আশা করে এবং ক্যান্সারে সে মারা গেলেই তো কাহিনী শেষ।

আসলে কি এইভাবেই শেষ হয়ে যাবে কাহিনী? আসামীকে সরকার বা জেল কতৃপক্ষ আগে তার ক্যান্সারের চিকিৎসা করাবে, প্রয়োজনে তাকে কেমোথেরাপি দেয়া হবে তাকে সেইদিন পর্যন্ত সুস্থ্যভাবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হবে যেইদিন তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে। কারন একজন অপরাধীর শাস্তি কার্যকর হবে একমাত্র আইনের অধীনেই কোন রোগ শোকের অধীনে নয়। আইন কোনদিন রোগ শোক বা অন্যকিছুর কাছে হার মানতে পারেনা। এইবার একটু ভেবে দেখুন তো এইখানে আসামীকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় ডাক্তারের দোষটা কোথায়?

ধরুন হত্যাকান্ডের বিচার চলাকালে আসামীর বাড়ীতে আগুন ধরেছে, ফায়ার সার্ভিস কি তার বাসার আগুন নেভানোর চেষ্টা করবেনা?

তাই কোন মামলায় সে যতই স্পর্শকাতর বা চাঞ্চল্যকর মামলাই হোকনা কেন আসামী ধরা পড়লে তার পক্ষে আইনজীবী থাকবেই। তাছাড়া আদালতে বিরোধীয় কোন পক্ষে ওকালতি করা একজন আইনজীবীর দায়িত্ব যদি তিনি উপযুক্ত ফি প্রদান সাপেক্ষেও যদি অনীহা জ্ঞাপন করেন তবে তা হবে অপরাধ। বিচার প্রক্রিয়ায় আসামীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া, বা খাবার দেয়া বা তার বাড়ীতে আগুন নিভানো যেমন একটি সাধারন বিষয় আসামীকে আইনী সেবা দেওয়াও ঠিক তেমনি একটি সাধারন বিষয় যা ন্যায় বিচারের অংশ"।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০২

নতুন বলেছেন: উকিল কিন্তু জানেন তার মক্কেল সত্যিই বলতকার করেছে। এখন আসামী পক্ষের উকিল কি টাকা পেয়ে তার মক্কেলকে বেকসুর প্রমান করবে?

এখন বেকসুর প্রমান করতে অবশ্যই তাকে কিছু সত্য ঢেকে মিথ্যা দিয়ে তার মক্কেল যে দোষীনা সেটা আদালতে প্রমান করবে।

এখানে আইনের নৈতিকতা কোথায় থাকবে???

যেমন কিছুদিন আগে একজনকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আসামী পক্ষের উকিল এখন কি কাজ করবে?

প্রমান করবে তার মক্কেল নির্দোষ??

নাকি ফাসি না হয়ে যেন যাবতজীবন সাজা হয় বা সাজা কমানো যায়?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৮

এম টি উল্লাহ বলেছেন: কে মেরেছে তো বের করা জরুরি!

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০৯

লর্ড ভ্যারিস বলেছেন: আসামীপক্ষের উকিলের আসল কাজটা কি আসলে?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৮

এম টি উল্লাহ বলেছেন: আসামির ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা।

৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:২১

রাজীব নুর বলেছেন: আসল কথা টাকা থাকলে অন্যায় করেও ছাড় পাওয়া যায়।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৯

এম টি উল্লাহ বলেছেন: হয়তো!

৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:২০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সোশ্যাল মিডিয়া খুব একটা ভুল বলে না। আসামির ল-ইয়ার, বিশেষ করে আমাদের দেশের অ্যাকিউস্‌ডদের ল'-ইয়ার প্রথমেই দাঁড়াইয়া ঘোষণা দিয়া দেন, তার মক্কেল নিরপরাধ, অন্যায় ভাবে দোষ চাপানো হয়েছে। অথচ, অনেক ক্ষেত্রেই আসামিরা যে সত্যিই অপরাধী তা আগে থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়, যেমন, সিনহা হত্যা, নূসরাতের মৃত্যু, বরিশালের রিফাত হত্যা, ইত্যাদি ঘটনাগুলোতে অপরাধীদের শনাক্ত করা গিয়েছিল। তাদের অপরাধগুলো সর্বোচ্চ শাস্তি ডিমান্ড করে। আইনজীবীদের ভূমিকা হতে পারে ঘটনার নানাদিক বিশ্লেষণ করে এটা প্রমাণ করা এবং আরজ করা যে, তাদের মক্কেল সর্বোচ্চ শাস্তির পরিবর্তে গুরু বা লঘু শাস্তি পাবার যোগ্য। কিন্তু তারা যখন মক্কেলদেরকে একেবারে নিরপরাধ প্রমাণের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেন, সেটা শুধু হাস্যকরই হয়ে ওঠে না, অনৈতিকও বটে। আমাদের দেশের আইনজীবীদের এই বদ্‌অভ্যাসটা পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে তারা আরো বেশি সম্মানের ভাগী হবেন।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪০

এম টি উল্লাহ বলেছেন: যথাযথ

৫| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৮

কল্পদ্রুম বলেছেন: আইনজীবী,ডাক্তার এবং পুলিশ নিজেদের এমন অবস্থানে নিয়ে গেছেন যে ফেসবুকিয় গণ আদালত থেকে রেহাই পাবার সম্ভাবনা কম।তাদের কাজটা এমন যে সঠিক কাজটাও অনেকসময় সাধারণ মানুষের ভিতরে ভুল ধারণা তৈরি করে।আবার এই ভুল ধারণা ভাঙ্গানো কঠিন।তাদের নিজেদের প্রফেশনের বহুদিনের কুখ্যাতি এসব ধারণার পিছনে ফুয়েল হিসেবে কাজ করে।আপনি ভালো লিখেছেন।আপনার সাথে একমত।তবে এই ধরণের সেন্স তৈরি হতে আমাদের সর্ব সাধারণের আরো সময় লাগবে।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২০

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.