নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেওয়ানী মামলা করার আগে জেনে নিন/ দেওয়ানি মামলার খুঁটিনাটি

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৯


বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় দুই ধরনের মামলা রয়েছে। একটি হলো দেওয়ানি অপরটি ফৌজদারি মামলা। নিজের অধিকার আদায়ে সম্পত্তির ওপর স্বত্ব ও দখলের জন্য যে মামলার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয় তাকে সাধারণত দেওয়ানি মামলা বলা হয়।

দেওয়ানি মামলার অনেক ধরন রয়েছে। নিচের মামলাগুলি দেওয়ানী মামলাঃ
পারিবারিক মামলা: যেমন : দেনমোহর, ভরণপোষণ, বিবাহ বিচ্ছেদ/তালাক(ডিভোর্স), পারিবারিক সম্পর্কের পুনরুদ্ধার, দত্তক, উত্তরাধিকার, সন্তানের হেফাজত ইত্যাদি;
চুক্তি নিয়ে মামলা; যেমন : টাকা পাওয়ার মামলা, চুক্তির শর্ত মানার মামলা ইত্যাদি
সম্পত্তি দখল বা অধিকার নিয়ে মামলা
স্থায়ী বা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার (ইনজাংশন) মামলা
দলিল সংশোধন (ভুল থাকলে ঠিক করা) ও বাতিল করার মামলা
জমি-জমা নিযে আরও মামলা; যেমন : নামজারি (মিউটেশন), নামখারিজ ইত্যাদিমোকদ্দমা ইত্যাদি।

দেওয়ানী মামলা কোথায় ও কিভাবে দায়ের করা যায় ?

দেওয়ানী মামলাগুলো ধরণ বুঝে বিভিন্ন আদালতে করতে হয়। যে মামলা যে আদালতে করার নিয়ম আছে, সেই আদালতের কর্মকর্তার কাছে আবেদন করে মামলাটি করা যায়। জমি-জমা সম্পর্কিত মামলাগুলো সাধারণত জেলা জজ আদালতের সহকারী জজ আদালত অথবা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দায়ের করতে হয়। পারিবারিক বিরোধের মামলা পারিবারিক আদালতে দায়ের করতে হয়। যিনি মামলা করার আবেদন করেন তিনি বাদী, আর যার বিপক্ষে মামলা করেন তিনি বিবাদী। বাদীর আবেদনের পর আদালত সমন দেন। সমনের পর বিবাদী লিখিত জবাব দেন। এরপর আদালত বাদী এবং বিবাদী দুই পক্ষকে আদালতে ডেকে তাদের অভিযোগ এবং জবাব শোনেন। সবশেষে আদালত তার রায় বা মামলার ফলাফল জানান।


আরজিতে কি কি বিষয় উল্লেখ করতে হবে:

ক) যে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে সে আদালতের নাম।

খ) বাদীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান।

গ) বিবাদীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান (যতদূর জানা যায়)।

ঘ) বাদী বা বিবাদী নাবালক অথবা মানসিক বিকারগ্রস্থ হলে সে মর্মে বিবৃতি।

চ) যে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে সে আদালতের যে এই মামলা বিচারের এখতিয়ার রয়েছে সেই মর্মে বিবৃতি।

ঙ) যে ঘটনাবলী মামলার কারণ সমূহের সৃষ্টি করে থাকে এবং যখন এগুলাে সৃষ্টি হয়ে থাকে।

ছ) মামলায় বাদীর প্রার্থীত প্রতিকার।

জ) দাবীর কোন অংশ বর্জন করা হলে সেই মর্মে বিবৃতি।

ঝ) Suit Valuation Act অনুযায়ী মামলার মূল্য এবং Court fees Act অনুযায়ী দাবীর মূল্য বিষয়ে বিবৃতি।

ঞ) যদি বাদী প্রতিনিধিত্ব কোন মামলা করে থাকেন সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ের উপর বাদীর স্বার্থ আছে উক্ত বিষয়ের বর্ণনা এবং বাদী মামলা করতে সক্ষম সেই বিষয়েও একটা বর্ণনা।

ট) যদি মােকদ্দমা কোন অর্থ আদায়ের মােকদ্দমা হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে উক্ত অর্থের পরিমান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ

করতে হবে।

ঠ) যদি বাদী কোন সেট অফ অনুমােদন করে থাকে বা তার কোন অনুমােদিত ও পরিত্যাগকৃত অংশের পরিমান উল্লেখ করতে হবে।

দাবীর অংশ পরিত্যাগ করে থাকে তাহলে এরূপ

ড) যদি অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে মামলা করা হয়ে থাকে তবে তার যথাযথমূল্য বা পরিমান। ঢ) যদি মােকদ্দমাটি কোন স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত হয়ে থাকে তবে সম্পত্তিটি সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কিত বিবরণ।

ণ) যদি মােকদ্দমাটি সময় দ্বারা বারিত হয়ে থাকে, তবে তা থেকে অব্যাহতি পাবার কারণগুলাে উল্লেখ করতে হবে। ত) সত্যপাঠ পক্ষের স্বাক্ষর ও তারিখ সম্বলিত হতে হবে।

এসব অধিকার আদায়ের আইনগত পন্থা হলো আদালতে মামলা করা। কিন্তু মামলা করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে সাধারণ মানুষকে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। আর দেওয়ানি মামলার বেশিরভাগই স্বত্বের মামলা। তাই এ সংক্রান্ত মামলার ধারবাহিক স্তরগুলো জানা খুবই প্রয়োজন।

*স্তরগুলো জানা থাকলে একজন বাদী, বিবাদী ও আইনজীবীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করা অনেক সহজ হয়।

*দেওয়ানি মামলায় সর্বপ্রথম স্তর হলো:

> সেরেস্তাদারের কাছে মামলার আরজি (লিখিত বিবরণ) দাখিল করা।
> আরজির সাথে ওকালতনামা, যে সমস্ত দলিল বা কাগজপত্রের ওপর বাদীর মামলার প্রমাণ নির্ভর করে সে সমস্ত দলিল ও কাগজপত্র প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি, প্রসেস ফি, সমন এবং ডাকযোগে সমন জারির জন্য প্রয়োজনীয় প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দাখিল করতে হয়।
> বাদী স্বয়ং বা তার আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি পেশ করতে পারেন।

**আরজি দাখিলের সঙ্গে সঙ্গেই কিছু বিষয় পালন করতে হয়। যেমন:

>মামলার বিষয়বস্তুর মূল্যায়ন সঠিকভাবে হয়েছি কি-না এবং আরজিটিতে যথার্থভাবে কোট ফিস প্রদান করা হয়েছে কি-না ইত্যাদি।

**আরজিতে উপরোক্ত কাগজপত্র প্রদান করা না হলে বা সঠিকভাবে পূরণ না করা হলে বা ত্রুটিপূর্ণ রয়ে গেলে আদালতের নির্দেশ অনুসারে অনধিক ৭ দিনের মধ্যে তা পূরণ করতে হবে এবং তা পূরণ না করা হলে আদালত দেওয়ানি কার্যবিধির অনুসারে আরজি নাকচ করে দিতে পারেন।

**আরজি ও আরজির সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছু যথাযথভাবে পরীক্ষার পর কোনো ত্রুটি দেখা না গেলে সেরেস্তাদার আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা শুরু করার জন্য আরজিটি পেশকারের কাছে পাঠিয়ে দেন।

**কোর্ট ফিস, প্রসেস ফিস, সমন ইত্যাদি সঠিক না হলে বা দাখিলকৃত দলিল এবং ওকালতনামা ইত্যাদির মধ্যে কোনো ত্রুটি বা অনিয়ম থাকলে বা আরজিতে অন্য কোনো ত্রুটি থাকলে সেরেস্তাদার ত্রুটি বা অনিয়মগুলো দূর না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখতে পারেন।
**বাদী বা মামলা কারী সঠিকভাবে পূরণ করে দিলেই আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা শুরু করা হয়।

**সমন জারি :
একটি মামলা দায়েরের পরের ধাপ সমন জারি।

**জবাব দাখিল :
বিবাদি মামলার প্রথম শুনানির তারিখ বা এর আগে বা আদালতের অনুমোদিত সময় দুই মাসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করবেন (দেওয়ানি কাযির্বধি, আদেশ-৮, বিধি-১)। তা না হলে মামলাটি একতরফা শুনানির জন্য নিধাির্রত হবে। তবে দেওয়ানি কাযির্বধির ৮০ ধারার নোটিশ জারি না হলে সরকার জবাব দাখিলের জন্য ৩ মাস সময় পাবে। বিবাদি যদি তার দাবির সমথের্ন কোনো দলিলাদির ওপর নিভর্র করে, তবে তা ফিরিস্তিসহকারে ওই দলিলাদি দাখিল করবেন।

**বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি :
মামলার জবাব দাখিলের পর পক্ষগণ যে কোনো সময় আপস নিষ্পত্তির জন্য আদালতের মধ্যস্ততায় বা আদালতের বাইরে আইনজীবীর মাধ্যমে বা লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে বসতে পারেন। দেওয়ানি কাযির্বধির ৮৯ক ধারা অনুযায়ী আপস-নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে, যা এডিআর বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি নামে পরিচিত।

** বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে শুনানি :
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে শুনানি শুরু হবে।

**ইস্যু গঠন
মামলার প্রথম শুনানির তারিখ বা জবাব দাখিলের মধ্যে যেটি পড়ে, তা হতে ১৫ দিনের মধ্যে ইস্যু গঠন করতে হবে । যে সব বিরোধীয় বিষয়ের ওপর মামলা নিষ্পত্তি হবে সে সব বিষয়বস্তু নিয়ে ইস্যু গঠন করা হবে।

**উদঘাটন ও পরিদশর্ন

ইস্যু গঠনের ১০ দিনের মধ্যে বাদি বা বিবাদি আদালতের অনুমতি নিয়ে অন্যপক্ষকে প্রশ্ন দাখিল করতে পারবেন। তবে একটি পক্ষকে একবারই লিখিত প্রশ্ন দাখিল করতে পারবেন

**৩০ ধারার তদবির

ইস্যু গঠনের পর উভয়পক্ষের কোনো তদবির আছে কিনা তার জন্য এই পযার্য়টি রাখা হয়। একপক্ষ অন্যপক্ষের তথ্য উদঘাটনের জন্য এ পযাের্য় পারস্পরিক তদবির চালিয়ে থাকে।

**চুড়ান্ত শুনানির তারিখ নিধার্রণ (এসডি) :

ইস্যু গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে মামলার চুড়ান্ত শুনানির তারিখ নিধার্রণ করতে হয়।

**চুড়ান্ত শুনানি

চুড়ান্ত শুনানির (পিএইচ) তারিখ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করতে হয়। চুড়ান্ত শুনানি (পিএইচ) ও পরবতী চুড়ান্ত শুনানি (এফপিএইচ) পযাের্য় বিচারক জবানবন্দি, জেরা, দলিলাদি গ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক শুনেন।

**রায়
মামলার শুনানি সমাপ্ত হওয়ার পরে অনধিক ৭ দিনের মধ্যে আদালত রায় ঘোষণা করবেন।

**ডিক্রি প্রদান
রায় ঘোষণার তারিখ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ডিক্রি প্রদান করতে হয়।

তা ছাড়া মামলার যে কোনো পযাের্য় পক্ষগণ আরজি-জবাব সংশোধন, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় পরিদশর্ন এবং স্থানীয় তদন্তের জন্য আদালতের দরখাস্ত প্রদান করতে পারবেন।

- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.