নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

কাঙাল মানুষ, কাঙাল মন / আগা-গোড়া কাঙালী জীবন/ দুঃখ করি না, দুঃখ দিই না/ জোৎস্নার দিঘীতে স্নান দিয়ে/ সুখে ভাসতে চাই।

সৈয়দ মামুনূর রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্র ঃ গ্রামীণ শিক্ষায় গুণগত মান উন্নয়নে এক নিরব বিপ্লবের নাম

১৮ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৬

সৈয়দ মামুনূর রশীদ ঃ সাজ্জাদ হোসেন সানি শিশুশ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবা নতুন জীবনের সন্ধানে নতুন আনন্দে নিরুদ্দেশ। ‘মা’ মানুষের বাসায় কাজের মানুষ। গ্রাাম থেকে দুরে যে বাসায় কাজ করেন সেখানেই থাকেন। একজন শিশুর অন্যতম আশ্রয়স্থল মা-বাবার সান্নিধ্য হারিয়ে মার্বেলের মতো গড়াতে-গড়াতে সানি’র জীবন ঠেকে বৃদ্ধা অসহায় নানীর দরিদ্রালয়ে। কর্মহীন বৃদ্ধা নারী সবিলা খাতুন নিজের আহার-বসন জোগান বড় কস্টে। তার মধ্যে যোগ দেন আরেকটি কচিমুখ সানি। সানির মা-বাবা দু’জনই তাকে ফেলে গেলেও বৃদ্ধা নানী অবহেলিত এই নিস্পাপ কচি শিশুমুখটি দেখে কাতর হয়ে পড়েন। তিনি সানিকে সঙ্গী করে নেন জীবনের দুর্গম পথে। দুর্ভাগা বুড়ো বয়সের নানা জরা-ব্যধিগ্রন্থ শরীরে নিয়েও তিনি কাজ নেন পরের বাড়ীতে। সারা দিনমান কাজ করেন মানুষের ঘরে ঘরে। দরিদ্রতা তাকে বুড়ো হওয়ার ফুরসত দেয়নি। শিশু সানি একা একাই ঘুরে বেড়ায়। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও সানির পড়ালেখার কোন ভাবনা ছিল না। অথবা কোমলমতি এই শিশুকে নিয়ে ভাববারও কেউ ছিল না। একসময় বৃদ্ধা নানীর মুখোমুখি হয় মেখল ইউনিয়নে ঘাসফুল বাস্তবায়নাধীন সমৃদ্ধি কর্মসূচীর বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্রের শিক্ষিকা এবং প্রতিবেশী লিলি আকতার। লিলি সানি এবং বৃদ্ধা নানীর দুর্ভাগ্যের কাহিনী জানতেন। শিক্ষকতার একটি মহতি আবেশ তখন লিলির মাঝে কাজ করে। লিলি মাতৃমমতায় সানিকে নিয়ে ভাবতে থাকেন। নানী সবিলা খাতুনের সাথে কথা বলে সানিকে ভর্তি করে নেন মেখল ইউনিয়নের ০৫নং ওয়ার্ডের মিয়াজান তালুকতারের বাড়ীস্থ সমৃদ্ধি’র বৈকালিক পাঠদান কে›েন্দ্র। সানি আগে পড়তে ও লিখতে পারতো না কিছুই। বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্রের শিক্ষিকা সানিকে মানুষ করার কাজটি নিজের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। পরম মমতা ও আদর দিয়ে আনন্দঘন পদ্ধতিতে তাকে শিক্ষা দেয়া শুরু করেন। শিক্ষিকা শুকরিয়া আদায় করে পরম তৃপ্তি নিয়ে বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সানি এখন লিখতে পারে, পড়তেও পারে”। সানি এখন প্রতিদিন মাদ্রাসায় যায়, মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করে, কখনো ক্লাস ফাঁকি দেয় না। ক্লাসের হোমওয়ার্ক নিয়মিত সম্পন্ন করাতে ইতিমধ্যে মাদ্রাসার শিক্ষকদেরও নজর কাড়ে শিশু সানি। ছড়া ও কবিতা আবৃত্তির প্রতি দারুণ আগ্রহ তার। একা বসে থাকলে আপন মনে ছবিও আঁকে। এই দেখে শিক্ষিকা লিলি একঝুঁড়ি ছড়া মুখস্থ করিয়েছে সানিকে। সানিকে যা পড়া দেয়া হয় তাই সে মনের আনন্দে সম্পন্ন করে। মা-বাবার স্নেহবঞ্চিত সানিও শিক্ষিকা লিলিকে পেয়ে ভুবনজয়ী খুশি। অন্যদিকে বৈকালিক পাঠদান কে›েন্দ্র এসে অকুল সাগরে যেন এক টুকরো আশ্রয়স্থল পেয়ে যায়। মনের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে ভাল থাকার আপ্রাণ চেস্টা করছে অবুঝ শিশুটি। বৃদ্ধা নানী যিনি একসময় সানি’র পড়ালেখার কথা কল্পনাও করতেন না এখন তিনি সানিকে নিয়ে ভাবছেন অনেক কিছুই। বৃদ্ধা কাবিলা খাতুন বলেন, “আমার ধনকে জজ-বারিস্টার বানাতে চাই, তার কেউ নাই, খোদা আছে! আর তোমরাতো আছোই!” বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্রে এক নিভৃত গ্রামে এভাবে রচিত হচ্ছে ছোট্ট অবুঝ সানি’র এক বেদনাবিদুর সাফল্যের কাহিনী। শুধু সানি নয় পিকেএসএফ এর সমৃদ্ধি কর্মসূচীর বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে সারাদেশে গ্রাম পর্যায়ে রচিত হচ্ছে এরকম হাজারো কাহিনী। আমাদের বিশ্বাস বাংলাদেশের গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত মান নেই- এরকম যে বদনাম রয়েছে “বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্রের মাধ্যমে তা মুছে দেয়া সম্ভব। কারণ বকালিক পাঠদান কেন্দ্র শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে এক নীরব বিপ্লবের নাম।

এতক্ষণ যে বৈকালিক পাঠদানকেন্দ্রের নাম বলা হলো এবার আসুন জেনে নিই বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্র কী এবং তার প্রেক্ষাপট? বাংলাদেশে নাগরিক মৌলিক চাহিদা; শিক্ষার ব্যাপক প্রসার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণও সমান গুরুত্ব বহন করে। শিক্ষার গুণগত মান উৎকর্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর পাঠদান, উন্নত যুগ-উপযোগী শিক্ষাসূচির যেমন প্রয়োজন তেমনি এই সকল কর্মযজ্ঞ সফল করার জন্যে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক পর্যায়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে দেয়া পাঠ্য যদি বাসায় যথার্থভাবে চর্চা করা না হয় তাহলে কোনভাবেই ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। অপরদিকে একথা অস্বীকার করারও কোন উপায় নেই যে, আমাদের দেশে এখনও অধিকাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানদের পড়ালেখার প্রতি অসচেতন কিংবা উদাসীন। অনেকসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার্থীর তুলনায় অপ্রতুল শিক্ষকের কারণেও শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এধরণের অনেকগুলো কারণ এবং বাস্তবতার ফলে আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা করা যাচ্ছে না। আমরা আরো দেখতে পায়, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করতে ব্যর্থ হওয়া, বারবার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া এবং শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক এর দেয়া বাড়ীর কাজ সম্পন্ন করতে না পারা- এধরণের বিবিধ কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়াসহ পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে গ্রামীণ জনপদে একসময় দেখা যেতো সকাল কিংবা বিকালে ছোটছোট ছেলেমেয়ে দল বুকে বই চেপে পড়তে যেত গুরুগৃহে। এখন সেই দৃশ্য আর চোখে পড়ে না কিন্তু তার বিকল্প কোন ব্যবস্থাও গড়ে উঠেনি। যারা সচ্ছল তারা নিজেদের ঘরে গৃহশিক্ষক রেখে নিজ সন্তানদের বিদ্যাচর্চার বন্দোবস্ত করে থাকেন। কিন্তু বাকী অসচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায়, স্কুলে দেয়া পড়াগুলো বাড়ীতে এসে চর্চার কোন সুযোগ বা তাগিদ না থাকাতে তারা দিনদিন পিছিয়ে পড়তে থাকে এবং একসময় ছিটকে পড়ে শিক্ষার স্বাভাবিক গতিপথ থেকে।

এধরণের জাতীয় প্রেক্ষাপটে এসকল স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ফেরত পাঠচর্চা নিশ্চিতকরণে দেশে কর্মরত এনজিও, সামাজিক উদ্যোক্তা, সামাজিক ক্লাব কিংবা কোন বিত্তশালী শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে যদি বাড়ীতে-বাড়ীতে, মহল্লায়-মহল্লায় বৈকালিক পাঠদানকেন্দ্র স্থাপন করা যায় তাহলে গ্রামীণ পর্যায়ে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন স¤ভব। পাশাপাশি এসকল পাঠদানকেন্দ্রে প্রশিক্ষিত এবং মেধাবী শিক্ষক নিশ্চিত করা গেলে গ্রাম পর্যায়েও ব্যাপক হারে মেধার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। এতে করে স্কুল থেকে ছাত্র-ছাত্রী ঝরে পড়ার হার কমে আসবে, স্কুলে ভাল ফলাফলে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির পাশাপাশি লেখাপড়ায় উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটবে দেশের নিভৃত পল্লী অঞ্চল থেকে মেধাবীরা জাতীয় পর্যায়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে এবং ধীরে ধীরে গ্রামাঞ্চলে জীবন-যাত্রার মান-উন্নয়নে এক বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। শুধুমাত্র শিশুশ্রেণি কিংবা প্রাইমারী পর্যন্ত নয়, পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও যদি এলাকায়-এলাকায় বৈকালিক পাঠদানকেন্দ্র কার্যক্রম চালু করা যায় তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় আমাদের দেশে শিক্ষার গুণগত মান-উন্নয়নে এক অভুতপূর্ব পরিবর্তন সম্ভব হবে। আশা করা যায় এই বিকল্প ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গ্রামের স্কুলগুলোতে যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ইংরেজী, গলিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে দুর্বল তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সম্ভব। সুতরাং সর্ব-বিবেচনায় একথা বলা যায় যে, বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্র বাংলাদেশের শিক্ষার গুণগত মান-উন্নয়নে এক বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে নিশ্চিত। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে ঘাসফুল চট্টগ্রামের হাটহাজারীস্থ মেখল ও গুমান মর্দ্দন দুইটি ইউনিয়নে “সমৃদ্ধি” কর্মসূচির অধীনে এরকম ৭৮টি বৈকালিক পাঠদানকেন্দ্র চালু করেছে। এসকল স্কুলগুলোতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচশতাধিক শিশু তাদের স্কুলে দেয়া পড়া তৈরী করছে প্রশিক্ষিত শিক্ষিকাদের পাঠদানের মধ্য দিয়ে। এই স্কুলগুলোতে সাধারণত একজন করে শিক্ষিকা নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগকৃত শিক্ষিকাদের নিয়োগ পরবর্তী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং সার্বক্ষনিক পরিচর্চার মাধ্যমে পাঠদানে বা শিক্ষকতায় দক্ষ ও পারদর্শী করে তোলা হয়। প্রশিক্ষিত শিক্ষিকাগণ স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্য থেকে নির্বাচিত করা হয় এবং তাদের মাধ্যমে স্থানীয় অধিবাসীদের বসার ঘর কিংবা বারান্দায় এসব বৈকালিক পাঠদান কেন্দ্র এর স্থান নির্ধারণ করা হয়।

------০-----

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:২২

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: এমন পোষ্ট আরও চাই।

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৪:৩০

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: বাহ, ভালো লাগলো। গ্রামে গঞ্জে যদি এই ধরণের বৈকালিক পাঠ দান কেন্দ্র চালু করা হয় তাহলে সেখান থেকে মেধাবীরা বেরিয়ে আসবে দেশ ও সমাজ সেবায়।

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো উদ্যোগ।

৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:২৩

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: অসাধারণ উদ্দ্যোগ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.