নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

সৈয়দ মামুনূর রশীদ

কাঙাল মানুষ, কাঙাল মন / আগা-গোড়া কাঙালী জীবন/ দুঃখ করি না, দুঃখ দিই না/ জোৎস্নার দিঘীতে স্নান দিয়ে/ সুখে ভাসতে চাই।

সৈয়দ মামুনূর রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণপিটুনি ক্রমশ: জনপ্রিয় খেলা হয়ে উঠেছে আমাদের এ চমৎকার দেশে !!

২৫ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৩



মিমি সুপার মার্কেটের সামনেই। শীতকালের সন্ধ্যা। মজুর টাইপের উঠতি বয়সের এক যুবক আর মধ্যবয়েসি হুজুরের হাতাহাতি চলছে। খেলা দেখে মাগনা মজা লুঠবো বলে থমকে দাঁড়ালাম। তখনো বিয়েশাদি করি নাই, হাতে অফুরন্ত সময়। আমাকে দেখে আরো বেশ কিছু লোকজন গোল হয়ে দাঁড়ায়। এ এক অদ্ভুত দেশ। জটলা দেখলেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে, এমনকি অফিসগামি পাবলিক পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যায় গোল হয়ে। মাঝখানে পর্যাপ্ত জায়গা রেখে আমরা মজা নিচ্ছিলাম। দুই প্রতিদ্বন্ধির হুজুর টাইপের লোকটি হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলে উঠে;

খানকিনির বাচ্চা, তোর এতোবড় সাহস! দাঁড়ির উপর হাত দিয়েছিস!

কথা শেষ হতে দেরি নেই, জটলার মধ্যে হঠাৎ উত্তেজনা বেড়ে যায়। আমি নিজেই বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ি অল্পবয়েসি ছোকরাটির উপর। আমার একক আক্রমণ সেকেন্ডের মধ্যেই গণপিটুনিতে রূপ নেয়।

হঠাৎই বলা যায় । হঠাৎ আক্রান্ত ছেলেটির সাথে আমার আই কন্ট্রাক হয়, চোখাচোখি যারে বলে।

দেখলাম যুবকটি কী যেন বলতে মরিয়া হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

আমি সেদিনই বুঝেছিলাম, মানুষের মুখের অনুরোধ উপক্ষো করা যায়, চোখের ভাষা উপেক্ষা করা অসম্ভব।

যেহেতু কাজটি আমিই শুরু করি সেহেতু ঝুঁকি নিয়ে আবারো বাঘের মতো হুংকার দিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলাম।

ভাগ্য ভালই বলতে হয়, গণপিটুনি নামক এই চমৎকার খেলা থেকে পাবলিক হালকা ছুটে গিয়ে কেন জানি আমার কথা শুনার জন্য এক মুহুর্তের জন্য থেমে গেলো।

এ দৃশ্য না দেখলে বুঝানো সম্ভব নয়। পাবলিকের চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল সবাই নানাবয়েসি নেশাখোর। মনে হচ্ছিল, নেশা থেকে কিঞ্চিত অবসর নিয়ে চোখ তুলে তাকাচ্ছে মাত্র।

আমি হাঁক দিয়ে বললাম; এই ছেলে কী বলতে চায় শুনুন!

সাথে সাথে সবাই বলে উঠলো, বল শালারপুত কী বলবি!

ছেলেটি কোনমতে উঠে বসে, তারপর দম নিয়ে বলে, আমি রিকশাওয়ালা!

হুজুর ভাড়া কম দিয়ে যাইতে লাগছিল, বাধা দিলে উনি মারতে মারতে এদিকে লইয়া আসে।

পাবলিক কিছুটা সন্তুষ্ট হইয়া প্রশ্ন করে, তারপর?

রিকশাওয়ালা বলে, আমিও দু'চারডা দিছি। দিতে গিইয়া এ অবস্থা বাবা! বলেই কাঁদতে শুরু করে যুবকটি।

জনতার বিচারে এবার হুজুরের পালা।

সবাই মাথা ঘুরিয়ে দেখে কোথাও হুজুর নাই!

আমার সাত পুরুষের ভাগ্য যুবটির রিকশাটি তখনো অক্ষত অবস্থায় ছিল।

আমি তখন বেকার মানুষ, তবুও পকেটে হাত দিয়ে যা আছে সবটুকু দিয়ে জটলা থেকে বেরিয়ে আসছিলাম।

দেখলাম চারপাশ থেকে পাবলিক যুবকটির দিকে টাকা ছুড়ে মারছে। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য! অনেকটা পথেঘাটে খেলা দেখানো ম্যাজিসিয়ানদের খেলাশেষে যেভাবে পাবলিক টাকা ছুড়ে দেয়।

বাঙালি এক অদ্ভুত জাতি! একই মায়ের পেটে সাদা-কালো, বাদামি নানাজাতের সন্তান জন্ম নেয়, যা পৃথিবির অন্যকোন জাতির মায়েরা পারে বলে আমার মনে হয় না।

সেদিনের সেই ঘটনা আজো আমাকে অনুতপ্ত করে। লজ্জায় মাথা হেট হয়ে আসে।

সেদিন কি আমি নেশাগ্রস্থ ছিলাম?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: এদেশ স্বাধীণ হয়েছে।
বহু মানুষ শিক্ষিত হয়েছে। কিন্তু মানূষ হয়নি। তাদের মধ্যে মানবতা নেই।
রাস্তায় বের হলেই মানুষ গুলো হিংস্র হয়ে যায়।

২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৮

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: আমাদের ক্যাম্পাসে এক চোর কট খাইছিলো, সে কি মাইর রে বাবা!!!

বাঙালীরা জন্মগতভাবে এক একটা ক্রিমিনাল। একদল সরাসরি ক্রাইম করে আর বাঁকিরা সুযোগের অভাবে ক্রাইম করতে পারে না, পার্থক্য এতটুকুই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.