![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকা, রাওয়ালপিন্ডি ও করাচীর পদস্থ সামরিক অফিসারদের সাথে কথায় এটা স্পষ্ট তাদের কাছে দ্রুততার সাথে পূর্ব বাংলার অভিযানটা শেষ করাই একমাত্র সমাধান। অভিযান বন্ধ করাটা নয়। সরকারী অন্যান্য খাতের চেয়ে এই খাতের ব্যয়টাকেই তাই অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে|
এক কথায় রাজনৈতিক সমাধানের কোন ইচ্ছা সরকারের না থাকায় তারা সামরিক পন্থায় জয়ী হবার জন্য পূর্ব বাংলা অভিযান চালাতে থাকবে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাঘের পিঠে উঠেছেন। কিন্তু তিনি হিসেব কষেই সাওয়ার হয়েছেন। সেনাবাহিনীকে থামানো যাবে না। ঢাকার পূর্বান্ঞলীয় কমান্ডে বসে পূর্ব বাংলা সম্পর্কে সরকারী নীতিগুলো আমার জানার সুযোগ হয় । এর তিনটি প্রধান দিক হল -
১) প্রমানিত হয়েছে বাঙ্গালীদের বিশ্বাস করা যায় না। পশ্চিম পাকিস্তানীদেরই এদের শাসন করতে হবে।
২) বাঙ্গালীদের ইসলামী শিক্ষায় নতুন করে শিক্ষিত করতে হবে। জনতাকে সত্যিকার মুসলমান বানাবার মাধ্যমে তাদের থেকে বিচ্ছিন্নতার চিন্তা দূর করে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে তাদের আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।
৩) বিতাড়িত এবং মৃত হিন্দুদের সম্পত্তি অবহেলিত মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে। ভবিষ্যৎতে এ মানুষগুলোকে দিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো তৈরী করা হবে।
এই নীতি গুলো সর্বোচ্চ নিষ্ঠুরতার সাথে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বিদ্রোহের কারনে বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনীতে বাঙ্গালীদের নিয়োগ বন্ধ । সতকর্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নৌ ও বিমান বাহিনীর বাঙ্গালী পদস্থ অফিসারদের কড়া নজরদারীতে রাখা হয়েছে। চৌকষ বাঙ্গালী বৈমানিকদের আকাশে উড্ডয়ন নিষিদ্ধ। তাদেরকে অবৈমানিক কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। দু’অঞ্চলের ভেতর চলাচলকারী পিআই এর সদস্যদের ভেতরও কোন বাঙ্গালীকে রাখা হয় না।
বাঙ্গালী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এর মত আধা সামরিক বাহিনীকে অস্তিত্বহীন করা হয়েছে। তার জায়গায় বিহারী ও পশ্চিম পাকিস্তানী স্বেচ্ছাসেবকদের সম্বনয়ে তৈরী করা হচ্ছে সিভিল ডিফেন্স ফোর্স। পুলিশ বাহিনীতে বাঙ্গালীদের বদলে নেয়া হচ্ছে বিহারীদের। পুলিশবাহিনী পরিচালনার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানী অফিসারদের পাশাপাশি সেনা অফিসারদের নিয়োগ করা হচ্ছে। এপ্রিলের শেষে সেনা পুলিশের একজন মেজর ছিলেন চাঁদপুর পুলিশের এসপি।
শত শত পশ্চিম পাকিস্তানী আমলা, ডাক্তার আর টেকনিয়াশনদের পূর্ব পাকিস্তানের রেডিও, টিভি, টেলিগ্রাফ, টেলিফোন পরিচালনা করার জন্য পাঠানো হয়েছে। এক কিংবা দুই ধাপ উচ্চতর পদোন্নতির কথায় তারা আসতে অনুপ্রানিত হচ্ছে। বাধ্যতামূলকভাবে বদলীর হুকুমটা মানতে হয় । প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সম্প্রতি জারীকৃত হুকুম মোতাবেক সরকারী চাকুরেদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে কোন জায়গায় বদলী করা সম্ভব।
আমাকে জানানো হয়েছে পূর্ব বাংলার সব কমিশনার এবং জেলার ডেপুটি কমিশনাররা ভবিষ্যৎতে হয় বিহারী অথবা পশ্চিম পাকিস্তানী হবেন। অভিযোগ আছে জেলার ডেপুটি কমিশনাররা আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে যেমন কুমিল্লায় এমন অফিসারদের আটকের পর হত্যা করা হয়েছে। কুমিল্লার অফিসারটি মার্চের ২০ তারিখে যখন শেখ মুজিবর রহমানের লিখিত পত্র ছাড়া সেনাবাহিনীর জন্য পেট্রোল ও খাবার সরবরাহের রিকুইজিশন দিতে অস্বীকার করে তখনই তাদের বিরাগভাজন হয় ।
পূর্ব বাংলার বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত কঠোর। সরকারের কাছে এগুলো বিচ্ছিন্নতাবাদ তৈরীর ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অনেক প্রফেসর পালিয়ে গেছেন। কিছু সংখ্যককে গুলি করা হয়েছে। তাদের শূন্যস্থান পূরন করা হবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে নতুন নিয়োগের মাধ্যমে।
সিভিল সার্ভিস এবং ফরেন সার্ভিসের গূরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বাঙ্গালী অফিসারদের অব্যাহতি দেয়ার পাশাপাশি চলছে নিবিড় অনুসন্ধান ও তদারকী।
অবশ্য উপনিবেশের স্বপ্নের অর্ধেকটুকুও শাসকরা এখনও বাস্তবায়ন করতে পারে নাই। কুমিল্লার মার্শাল ল শাসক মেজর আগা এ বিষয়ে একটা পরিষ্কার ধারনা দিলেন। বিদ্রোহীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ সেতু ও সড়ক মেরামতের জন্য বাঙ্গালী প্রকৌশলীদের কাছ থেকে তিনি তেমন সহায়তা পাচ্ছেন না। বেশীর ভাগ সময়ই এ কাজগুলো আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে পড়ছে। আগা অবশ্য আসল কারনটা জানেন।
তিনি আমাকে বললেন, যখন আমরা তাদের হত্যা করছি, তাদের দেশকে ধ্বংস করছি তখন আপনি তাদের থেকে কাজ আশা করতে পারেন না। তাদের এ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য দায়ী অবশ্য আমরা।
কৃমিল্লা এয়ারপোর্টের রক্ষনাবেক্ষনে নিয়োজিত ক্যাপ্টেন দুররানীর নিজস্ব কিছু পদ্ধতি আছে। কন্ট্রোল টাওয়ারের বাঙ্গালীদের দিকে ইঙ্গিত করে সে বলে, ওদের বলা আছে সন্দেহজনক কিছু করলেই আমি গুলি করব।
দুররানীর কথায় ও কাজে মিল আছে। দিন কয়েক আগের রাত্রিতে এক বাঙ্গালীকে এগুতে দেখে বিদ্রোহী ভেবে সে গুলি করে।
দুররানীর অন্য একটা খ্যাতির ব্যাপারে আমাকে বলা হয়েছিল। এয়ারপোর্টের আশেপাশের গ্রামগুলো পরিষ্কার করার সময় দুররানী নিজের হাতে ৬০ জনের বেশী মানুষ হত্যা করেছে।
পূর্বাংশকে উপনিবেশ বানাবার প্রক্রিয়াটাকে হাস্যকরভাবে লুকাবার চেষ্টা চলছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও লেঃজেঃ টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমর্থন পাবার চেষ্টা করে চলেছে। সমর্থন তেমন একটা পাওয়া যায় নাই। এখন পর্যন্ত যেসব মানুষের কাছ থেকে সমর্থন এসেছে তাদের মধ্যে আছে ঢাকার আইনজীবী মৌলভী ফরিদ আহমদ, ফজলুল কাদের চৌধুরী এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রফেসর গোলাম আজম। এরা সকলেই গত ডিসেম্বরের সাধারন নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে।
সমর্থন দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রধান ব্যক্তিত্ব হলেন বয়োঃবৃদ্ধ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রবীন মুসলিম লীগার জনাব নুরুল আমিন। আওয়ামী লীগের বাইরে যে দুজন জাতীয় পরিষদের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের একজন এই নুরুল আমিন। বর্তমানে তার বয়স সত্তুর। কিন্তু এই নুরুল আমিনও তার সমর্থন প্রদানের সময় বড্ড সর্তক। আজ পর্যন্ত তিনি যে দুটি বিবৃতি দিয়েছেন তাতে কেবল ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের কথাই উল্লেখ আছে।
দালালরা বাঙ্গালীরা চোখে ঘৃণ্য। ফরিদ আহমদ এবং ফজলুল কাদের চৌধুরী এ ব্যাপারে বেশ সচেতন। ফরিদ আহমদ সব সময় তার বাড়ির জানালাগুলো বন্ধ রাখেন এবং ব্যাপক তল্লাসীর পর আসা মানুষগুলোকে যদি তিনি দরজার ফুটো দিয়ে চিনতে পারেন তবেই তার বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দেন।
ভয়ভীতি দেখিয়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত ৩১ জন আওয়ামী লীগারের সম্মতি সরকার আদায় করেছে। প্রতিনিধিত্বকারী সরকারে যোগদানের জন্য তাদের সুরক্ষিত ভাবে নির্জন স্থানে রাখা হয়েছে। কেবল মাত্র নিকট আত্মীয় ছাড়া আর কেউ তাদের দেখা পায় না। তবে তারা এখন কেবল তাদের নিজের প্রতিনিধি, গনমানুষের নয়।
আবদুল বারী নামের ভাগ্যবান দর্জির বয়স ২৪ বছর। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বয়সও ২৪। হয়ত সেনাবহিনী বল প্রয়োগ করে দু’অংশকে একসাথে রাখতে পারে। কিন্তু তারা পূর্ব বাংলায় যা করছে তাতে ১৯৪৭ এর যে মানুষগুলো দু’অংশে সমতার ভিত্তিতে যে মুসলিম রাষ্ট্রের স্বপ্ন তারা দেখেছে তার স্বপ্ন নিশ্চিতভাবেই ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে বহুদিন পরও আজ এটা কল্পনা অসম্ভব যে পশ্চিম অংশে পাঞ্জাবীরা আর পূর্ব অংশে বাঙ্গালীরা একই রাষ্ট্রে এক সাথে সমতার জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে। বাঙ্গালীদের ভবিষ্যৎ আজ অন্ধকার। শক্তির সামনে আজ তাদের নতজানু করা হচ্ছে।
-Anthony Mascarenhas, Former Assistant Editor, Morning News, Karachi, in Sunday Times,
London, June 13, 1971:.
( জন্মসূত্রে মাসকারেনহাস ভারতীয় গোয়ানিজ খ্রিস্টান। বসবাস করেছেন পাকিস্তানের করাচিতে।
১৯৪৭ সালে করাচিতে সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। তার প্রথম কর্মস্থল ছিল রয়টার্স। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সংবাদ সংস্থা, এপিপি, নিউইয়র্ক টাইমস এবং টাইম/লাইফ সাপ্তাহিকের সংবাদদাতা ছিলেন। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মে মাস পর্যন্ত দ্য মর্নিং নিউজ-এ কর্মরত ছিলেন; প্রথমে চিফ রিপোর্টার এবং পরে সহ-সম্পাদক হিসেবে।
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় যান এবং গণহত্যার তথ্যাদি সংগ্রহ করেন। ঢাকা থেকে করাচী হয়ে লন্ডনে পালিয়ে গিয়ে এসব তথ্যাদি ১৩ জুন, ১৯৭১ তারিখে সানডে টাইমস পত্রিকায় প্রকাশ করেন। তাঁর প্রকাশিত এইসব তথ্য বিশ্ববিবেককে নাড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। )
অনুবাদ - জেনোসাইড (Genocide - Anthony Mascarenhas) -৩ য় পর্ব
অনুবাদ - জেনোসাইড (Genocide - Anthony Mascarenhas) -২ য় পর্ব
অনুবাদ - জেনোসাইড (Genocide - Anthony Mascarenhas)
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৭
toysarwar বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই।
২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৩৬
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: ভালো লাগা
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:৫৯
toysarwar বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:১৮
আমিই মিসিরআলি বলেছেন: 2nd valo laga,
prothom porbota porechilam, baki 3tao save kore rakhchi,
onk dhonnobad apnake vai eta blogge deyar jonne,valo thakben
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২২
toysarwar বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইল।
৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:২৬
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: অশেষ শুভকামনা অনেক অনেক ভালো কাজ। +++।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:২৩
toysarwar বলেছেন: ধন্যবাদ শরৎবাবু।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৫
মামুন রশিদ বলেছেন: চমৎকার একটা সিরিজ শেষ হয়ে এলো । এই অনুবাদ নিঃসন্দেহে দারুণ কাজ । শুভকামনা ।