![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন গবেষক..চিন্তা করাই আমার কাজ...চিন্তিত ভাই ব্রাদারদের আমার পেজে স্বাগতম। [email protected] https://www.facebook.com/bangal.miya
আজকে ফেইসবুকে খুব মজার একটা ইভেন্ট দেখলাম। "দুই নেত্রীর সংলাপের দাবিতে ৭১ ঘন্টা অনশন" করবে ৭ জন। হাজার খানেক মানুষ গোয়িং মেরে বসে আছে অনশন করে দুই নেত্রীর মুখদর্শনে বাধ্য করতে। আয়োজনে "আমজনতা" নামের একটা ফেইসবুক পেইজ। দাবি হিসেবে লিখা আছে "আমাদের একমাত্র দাবি সংঘাত নয় বরং দুই নেত্রীর সংলাপ, অন্তত একবার মুখ দেখাদেখি হোক...!" মানে মুখ দেখাদেখি করে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান না করলে লোকে ৭১ ঘন্টা দানাপানি ছাড়া শুয়ে বসে থাকবে সংসদ ভবনের সামনে। মিডিয়াওয়ালাদের জন্য নুতুন আইটেম। টিভিতে সাক্ষাত্কার। টক শোর বক্তাদের তুবড়ি ছোটানোর আরো একটি মওকা পাচ্ছেন মনে হয়। ইভেন্ট পেইজে আমি একটি নিচের দুলাইন লিখে সমমনা কিছু মানুষের লাইক পেয়ে ধন্য হয়েছি
"দুই নেত্রী আলাপ করে দেশের সকল সমস্যা সমাধান করবেন, নাকি গদির বাটোয়ারা করবেন? তারা এম্নিতেই আমাদের মারবে, না খেয়ে মরার দরকার দেখি না।" এখন ব্যাপারটা খোলাসা করা যাক।
উনাদের দাবিটা আরো পরিস্কার করে বললে, নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে সংকট দূর করা। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে এই সমস্যাটা একদিনে তৈয়ার হয় নাই। আজকে যেই সরকার আদালতের রায়ের আংশিক ব্যাখা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করছেন, তারা বেশ কৌশল করেই বিচারকের রায়ে আরো দুই বার তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার সুযোগটি এড়িয়ে গেছেন। আবার এরাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বর্তমান বিরোধীদলের আমলে ১৪৭ দিন হরতাল করে নাজেহাল করেছেন। বর্তমান বিরোধীদল তখন কিছুতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটি মানতে রাজি ছিলেন না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আজকে আমাদের একই অবস্থায় পড়তে হয়েছে। এই অবস্থায় পড়তে হবে সেটা দু-চার বছর আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল।
সচেতন সমাজ ফেইসবুকের নিজেদের সংঘবদ্ধ করছে, এইটা খুবই আশা জাগানিয়া। কিন্তু তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় একটা ম্যারম্যারে ভেজিটেবল টাইপ ভাব আছে। অনুনয় বিনয় করে দুইজন জাদরেল নেত্রীকে চাপ দিয়ে আলোচনায় বসাতে চাচ্ছেন। কিন্তু বুঝতে চাচ্ছেন না, এই মুখদর্শনে কারো পুণ্য হবে না। উনারা হালুয়া রুটির ভাগ নিয়ে আলোচনা করবেন। হয়তো পাঠাবেন মির্জা ফখরুল আর আশরাফ সাহেবকে। এমনটা আগেও দেখেছি। মরহুম মান্নান ভুইঞা ও মরহুম জলিল সাহেবের (আল্লাহ উনাদের আত্মার শান্তি দিন) সেই দীর্ঘ 'ফলপ্রসু চা-নাস্তা খাবার' আলোচনার ফল ছিল ১/১১। গোয়িং বাহিনী মনে করেন আলোচনা ফলপ্রসু মানে হরতাল নৈরাজ্য থাকবে না। লাশ পড়বে না। একটা সমঝোতার রাজনীতি পাচ্ছি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবস্থাটির সাথে আগের সংকটের কিছু পার্থক্য আছে। মূলত এই এক দফা সরকার পতনের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে সাঈদীর রায়ের পর সারাদেশের জোটের মিত্র জামাতে ইসলামীর সহিংসতা আর পুলিশের গুলিতে লাশের রাজনীতিতে জামাতে ইসলামী এগিয়ে যাওয়াতে। লাশের এক্সচেঞ্জ রেইটে পুলিশের চেয়ে জামাতি কর্মীদের লাশ বেশি পড়েছে। তাই নিয়ে ফরহাদ মাজহাররা 'গণহত্যা' ও 'ফ্যাসিবাদ' শব্দযুগল সজ্ঞা মুতাবেক ব্যবহার করে সরকারকে চাপের মুখে ফেলতে চাচ্ছেন। এখানে সাঈদীর চানবদন দেখে যে শ্রেনীর লোকে থানায় হামলা করতে এসেছিল, তারা নিতান্তই ধর্মভীরু মানুষ। তারা শ্রেণীসংগ্রাম বানান করতে পারবে না। আবার তাদের লাশের ছবি নিয়ে বিদেশে ডলার পাউন্ড কমানো ব্রাদাররা এটাকে মুসলিমদের উপরে হামলা বলে ফিলিস্তিনি-ফিলিস্তিনি একটা ভাব এনে ফরিয়াদ করছেন। উনাদের শ্রেণীর সাথে গ্রামের 'চানদেখা শ্রেণীসংগ্রামীদের' পার্থক্য আছে। এই জামাতে ইসলামীর আমির থেকে গোলাম পর্যন্ত সবাই এখন দল ও শীর্ষ নেতাদের বিচার ঠেকাতে মরিয়া। পিয়াস করিমরা এদের মরিয়াপনা দেখেই আশু গৃহযুদ্ধের ডংকা বাজিয়েছেন টক শো তে। তাহলে কিসের জন্য এই আলোচনা? ট্রাইবুনালের মীমাংসা? একটা মুটামুটি রায় দিয়ে আপোষ রফা? তত্ত্বাবধায়ক দাবি মেনে নিলে কি বিএনপি ঘরে ফিরে যাবে? যদি যায় (সাকা আর জামাতকে কুরবানি দেয়ার কোন সম্ভাবনা দেখি না) তাহলে কি জামাত বসে থাকবে? কোন সহিংসতা হবে না? তাহলে কিসের আলোচনা প্রস্তাব চেয়ে বেহায়ার মত আদালতে রিট করেছেন? দুই দিন আগেই অহিংস মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজাকার ঘায়েল করতে শাহবাগে এসেছিলেন। ১০০টা লাশ দেখেই ভড়কে গেলেন?
হরতালের রাজনীতিটাই এমন। ধংসাত্বক পেশীশক্তির প্রদর্শনী। প্রথম ১৫ হরতালের পরে আপনি ৫টা লাশ আর ৫০টা গাড়ি ভাংচুর দেখে সিরিয়াসলি ভাবতে শুরু করবেন, কিভাবে এথেকে বাচা যায়। হরতাল নিষিদ্ধ করার জন্য লাফাবেন। তখন বিরোধীদলের সমর্থকরা আগের আমলের ১৪৭দিনের হরতাল-ফর্দ নিয়ে আসবে। হরতাল-ফর্দ মানে, কটা লাশ, কটা গাড়ি, কটা পা কাটা পড়েছিল তার খতিয়ান। প্রতিটির লাশের আর যানবাহনের সাথে যে পরিবার জড়িত আছে- তাদের মর্মান্তিক জীবনের কাহিনী এই ফর্দের থাকবে না। এরপরের ১৫ হরতালের পর আপনি সিরিয়াসলি ভাবতে শুরু করবেন "থাক না, বিরোধীদলের কথাই থাক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মন্দ কি?" এটাই হরতালের রাজনীতি। রাজনীতির হরতালের যে দাবি আদায়ের আন্দোলন থাকে সেটা পিপার স্প্রে আর জলকামান দিয়ে ঠেকানো হয়। কিন্তু হরতালের রাজনীতিতে আপনি জিম্মি। ওটা ইলেকশন ইয়ার ছাড়া জমে না আর ওটা ঠেকানোর মত ঝাঝালো পিপার স্প্রে সরকারের নাই।
শহুরে সচেতন মানুষের হঠাত এই রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনায় বসানোর গরজ তৈয়ার হয় লাগাতার হরতালের কারণে। পাচ হপ্তা পরপর ৫ হরতালে যা হবে না, সেটা লাগাতার ৪৮ ঘন্টায় সম্ভব। হরতালের রাজনীতিটাই এমন। যেই আপনি এতদিন মুখ বুজে ছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর, সেই নির্বিবাদী আপনি এখন রাস্তায় নামতে আগ্রহী। আবার মুখ ফুটে বলতেও পারছেন না 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই'..... তাহলে আবার বিরোধীদলের দাবি আদায় হয়ে যায়। ঢাকাই নাগরিক সমাজের এই একটা অভ্যেস।একটা নিরপেক্ষ সং সাজা লাগবে সকল কিছুতেই। রাজনীতি ঘাড়ের উপরে চেপে বসলে বলবেন 'আমি বাবা কোন দলের না, শুধু শান্তিতে থাকতে চাই'.... ভালই তো। কিন্তু এই নিরীহ দাবিটার মধ্যে কপটতা আছে। আপনিই সমস্যাগুলোর সমাধান এড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনার দাবিটা 'সংলাপ বা আলোচনা' না, বরং ''অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন'....আরো ভালোভাবে বললে 'সবদলের অংশগ্রহনে একটা সুষ্ঠু কারচুপিমুক্ত নির্বাচন'.... এই কাজটি বাংলাদেশে শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে গেছে। এই সমাধানটা নিলে আপনি বিএনপি হয়ে যাচ্ছেন না। কারণ, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে যে কেউ জয়লাভ করতে পারে। তাহলে কেন শুধু নেত্রীদের পারস্পরিক মুখদর্শনের আশায় নাওয়াখাওয়া রেখে পরে থাকবেন কেন? তাতে দুইজনের মাথা থেকে কি কোন উন্নয়নচিন্তা বেড়িয়ে আসবে? পদ্মাসেতু কিংবা তেল-গ্যাস বন্টনের পিএসসির কোন সংশোধনী আসবে? নাহ। আপনার আশা শুধু শান্তির নগরজীবন। ১মাস আগে যখন মফস্বল শহরে এরচেয়ে অনেক বেশি লাশ আর আগুন জ্বলছিল মন্দিরে বাড়িতে রেলে- তখন এই শহুরে রাজনৈতিক মস্তিষ্ক ভেবেছিল- জামাতের আগুন শুধুই গ্রামে, ঢাকায় আসার সামর্থ্য তাদের নাই। আমাদের কেবল দুটো আহা-উহু স্ট্যাটাস দিয়ে মানবতা দেখালেই চলবে। এই স্বার্থপর বিবেক কেবল ঢাকায় আঘাত আসলেই নাগরিক দ্বায় ও কর্তব্য পালনে উদ্যোগী হয়।
পর্যাপ্ত প্রশ্ন দেখার পরে পাঠকের বিহবল মন জিজ্ঞাসা করবে, তাইলে কি করবো বলেন?
সমস্যাটা জটিল। তাই সমাধানটি খুবই সহজ। সরল অংকের মত। দুই নেত্রীর আলোচনা কখনই ফলপ্রসু হবে না যদি জামাতকে হিসাব থেকে না সরানো যায়। শাহবাগ আন্দোলনের কথা ভুলে যাবেন না। ওটা এখন পর্যন্ত গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বর গণজাগরণ। সরকারকে চাপ দিন জামাত নিষিদ্ধ করে তাদের শীর্ষ নেতাদের আরো সহিংস আক্রমন করার আগেই গ্রেফতার করতে। শাহবাগ মঞ্চ হয়ত ভুলে গেছে ২৬ মার্চের একটি নিরীহ আলটিমেটাম ছিল। সরকার এখন পর্যন্ত জামাত ও অন্যান্য পাকি দোসর দল নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে ১৩ নাম্বার বাসের মত আচরণ করছে। যেন এই বাসটা ছেড়ে দিল বলে, কিন্তু না। একটু পরে কন্ট্রাক্টরকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভাংতি করতে গিয়ে দেরী করবে, ব্যাপক তর্জন গর্জন করবে ড্রাইভার। যাত্রীরা ক্ষেপে বলবে "কি মিয়া, কি শুরু করলা". ..তখন আরো দুই পা এগিয়ে আবার কি মনে করে থেমে যাবে।সিগনালে ফেলে বিড়ি ধরবে।
সরকার জামাতের চেয়ে বিএনপি দমনেই বেশি আগ্রহী। ট্রাইবুনাল মাত্র ১ লক্ষ টাকা মুচলেকা নিয়ে শীর্ষ জামাত নেতা ছেড়ে দিলেও বিএনপির ১৫৪ জনকে এক সন্ধ্যায় গ্রেফতার করে ফেলেছে সরকার বাহাদুর। দেশের বিভিন্ন জেলায় এতগুলো হামলার পরেও ওই এলাকাগুলোর জামাত নেতাদের ধরা হয় নাই। স্বাধীন বাংলাদেশে পূর্ব-পাকিস্তানের দালাল থাকলে শান্তি কোন কালেই আসবে না। জামাতকে খরচের খাতায় দেয়ার পর, বিএনপি নেতাদের মুক্তি দিলে- বিএনপি আলোচনায় বসবে। সমাধানটা হতে হবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারব্যবস্থা। রোলার ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা যাবে না। মই দিয়ে আলতো চাপে এই রক্তাক্ত মাটি সমান করার দুর্বল নাগরিক চিন্তা থেকে ঢাকাই অন্তর্জালীয় সুশীলদের বের হয়ে আসতে হবে। জোরগলায় দেশের ড্রাইভারকে ধমক দিয়ে বলতে হবে "কি মিয়া, কি শুরু করলা?"
২| ২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৫৯
মাজহারুল হুসাইন বলেছেন: জামাতকে খরচের খাতায় দেয়ার পর, বিএনপি নেতাদের মুক্তি দিলে- বিএনপি আলোচনায় বসবে। সমাধানটা হতে হবে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারব্যবস্থা। রোলার ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা যাবে না। মই দিয়ে আলতো চাপে এই রক্তাক্ত মাটি সমান করার দুর্বল নাগরিক চিন্তা থেকে ঢাকাই অন্তর্জালীয় সুশীলদের বের হয়ে আসতে হবে। জোরগলায় দেশের ড্রাইভারকে ধমক দিয়ে বলতে হবে "কি মিয়া, কি শুরু করলা?"
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৮
তুষার মানব বলেছেন: কিছুই কওয়ার নাই