![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সকল উদ্বাস্তুর মতই আমি নিজেও একজন উদ্বাস্তু। জীবন আমাকে তেমন কিছুই দিতে পারেনি কেড়ে নেয়া ছাড়া....শত শত উদ্বাস্তুদের ভীড়ে আরো একজন উদ্বাস্তু।
আজকেই প্রথম বেতন পেলাম,জীবনের প্রথম বেতন।টাকার পরিমাণ কম হলেও আমার কাছে অনেক।যেই ছেলের জীবন শুরু হয়েছিল পরিত্যক্ত একটি ড্রেনে তার জন্যে ৮ হাজার টাকা অবশ্যই অনেক টাকা।জীবনযুদ্ধে জরাতে না জরাতেই আমার পরাজিত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।শহরের কোন বিখ্যাত খুনি হিসেবে নাম কামানোর কথা ছিল অনেক আগেই।কিন্তু আমার বাবা-মা মনে হয় একমুহুর্তের ভূল ছাড়া খুব একটা খারাপ ছিলেন না,তাই আমারও বিখ্যাত কিছু হয়ে উঠা হল না।
সত্যিকার অর্থে জীবন অথবা সমাজের বাস্তব রুপ শুধু মধ্যবিত্তরাই দেখেন কিনা আমি জানিনা,তবে এই সমাজে আমার অবস্থান অতি নিম্নস্তরে।সমাজ আমাকে কেবল ঘৃণার চোখেই দেখেছে,অথচ ভূলটা কিন্তু আমার ছিলনা।মাঝে মাঝে নিজের কাছে মনে হয় আমার ছাব্বিশ বছরের শরীরে ষাট-সত্তর বছরের কেউ বসবাস করছে।আমার এই অল্প বয়সেই আমি সমাজের এত বেশী কদাকার-অন্ধকার রুপ দেখেছি যা একজন সাধারণ মানুষের কয়েক জীবন লাগবে দেখে শেষ করতে।
হয়ত এই অবহেলা আর অন্ধকারই আমার ভিতরের জিদটাকে আরো বেশী করে শক্তি যুগিয়েছে আলোর পথে আসার।হয়ত আমি নিজেও নষ্টদের একজন বলেই সত্যিকার অর্থে নষ্ট হতে ইচ্ছা হয়নি।আমার শরীরটা নষ্টামীর দ্বারা তৈরী হলেও মনটাতো আমার নিজের।
একজন সাধারণ মানুষ প্রথম বেতন পেলে বোনের জন্যে জামা,মায়ের জন্যে শাড়ি বাবার জন্যে শার্ট না হয় জুতো কিনবেই।হয়ত নিজের পুরু টাকাটাই বাবার হাতে উঠিয়ে দিবে।কিন্তু আমিতো সাধারণ কেউ নই,এমন একজন যার কোন পরিচয়ই নেই।এমন একজন যার পরিচয় বা বেড়ে উঠা কোন এক আশ্রমে বা এতিমখানায়।এমন একজন যার বাবা-মা তাদের ভূলের ফলস্বরুপ জন্ম নেয়া লজ্জাকে মাটিচাপা দিতে চেয়েছিল ড্রেনে ফেলিয়ে।সেই বাবা-মা কাছে থাকলেও হয়ত উনিদের জন্যে কিছু একটা কিনতাম,কিছুক্ষনের জন্যে হলেও খুব সাধারণ হয়ে যেতাম।কিন্তু আমারতো সেই উপায় নেই।
তারপরও কি মনে করে একটা শাড়ি কিনে ফেললাম,নীলার জন্যে।বড় শান্ত আর স্নিগ্ধ মেয়ে নীলা।অঙ্কুরেই নষ্ট হওয়া ফুলের মত নীলাও আস্তে আস্তে ঝড়ে যাচ্ছে।বছর খানেক ধরেই ব্লাড ক্যান্সার এর সাথে যুদ্ধ করে করে এখন প্রায় শেষের পথে।ওর দিকে তাকালেই বুকটা ভেঙ্গে আসতে চায়।প্রথম যখন আমাদের সম্পর্কের বিষয়টা প্রকাশ পায়,ওদের বাসায় তখন কেউই ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি।আমার নাম পরিচয়হীনতাই ছিল এর মূল কারণ।কিন্তু তারপরও আমাদের স্বপ্ন দেখা থেমে থাকেনি।মাঝে মাঝেই সেই স্বপ্নগুলো ঘর সাজানো বা ছেলে মেয়ে পর্যন্তও চলে যেত।
দুঃখতেই যার জন্ম তার আবার সুখ!হয়ত ভালবাসাহীন বেচে থাকাটাই আমার নিয়তি।নীলা অসুস্থ হওয়ার পর আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেউ বাধা না দিলেও ওদের বাড়িতে আমার অবস্থান নিমন্ত্রণহীন অতীথির মতই।আমার একটা ফোন অথবা হঠ্যাৎ কোন একদিন ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর ফলে ওর ভিতরে যে উচ্ছ্বাস এনে দেয় তা আমার মত একজনের জন্যে পরম পাওয়া ছাড়া কিইবা হতে পারে!
ভার্সিটিতে আমার ব্যাপারটা সবাই জানত।এই জানার কারণেই আমি ছিলাম অবহেলা আর করুণার পাত্র।এই করুণা প্রদানকারীর মাঝে যে দুইএকজন আমার সাথে কথা বলত নীলা ছিল তাদেরই একজন।কথা বলার সময় ওর চোখে যে গভীর মমতা দেখতে পেতাম সেটাই আমাকে বেচে থাকার ব্যাপারএ উৎসাহ দিত।হুডখোলা রিক্সায় ঘুরে বেড়ানোটাও দুজনের অসম্বভ প্রিয় ছিল।সুজোগ পেলেই দুজন ছায়াঢাকা ব্যস্তহীন রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা ঘোরে বেড়াতাম।
আমার সাথে যদিও কখনো নিলার বাবা-মার কথা হয়নি কিন্তু নীলা অসুস্থ হওয়ার পর ওদের বাড়িতে যাওয়া হত নিয়মিত বিরতিতেই।আমাকে পছন্দ না করলেও তাদের মেয়ের হাসিখুশির দিকে চেয়ে আমাকে সহ্য করতে হচ্ছিল।আমার মত একজনের জন্যে কারো ভিতর এত মায়া থাকতে পারে সেটা নীলাকে না দেখলে কখনোই জানতে পারতাম না।
সন্ধ্যার কিছু পর নীলাদের বাড়িতে উপস্থিত হলাম।আমি জানি আজও নিলা আমাকে দেখতে পেয়ে সারাবাড়ি মাতিয়ে তুলবে।নতুন শাড়ি পড়ে আমাকে সাথে নিয়ে ওর বাবা মাকে সালামও করে আসতে পারে।মনের মাঝে নিলাকে নিয়ে কত-শত কল্পনাইনা উকি দেয়।কিন্তু ভাবনারা শুধু কল্পনাতেই ডালপালা মেলে।গতকালকেও যখন নীলার সাথে কথা বলি তখনো নীলা জানতে চাচ্ছিল আমার শেষ বিদায়ের সময় তুমি কি আমার পাশে থাকবেনা?এই কথাটা নীলা সবসময়ই জানতে চাইত।
আমি যখন শাড়ি নিয়ে নীলার রুমে প্রবেশ করলাম নীলা তখন আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে।নীলার প্রাণহীন দেহের দিকে তাকিয়ে কেমন একটা ঘোরের ভিতর চলে গেলাম।চারপাশের কোন কিছুই আমাকে তখন স্পর্শ করছিল না।নীলার পাশে হাটু গেড়ে বসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বুকের ভিতর থেকে যে তীব্র কষ্টের স্রোত গলার কাছে এসে আটকে যাচ্ছিল সে কষ্টের জন্ম হয়ত পৃথিবীতে না অন্য কোথাও!!
কতক্ষন এভাবে ছিলাম জানিনা।কাধে কারো কোমল স্পর্শে পিছন ফিরে তাকাতেই নীলার বাবাকে দেখতে পেলাম আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।সেই চোখে শুধু সন্তান হারানোর ব্যথাই ছিলনা,চোখের এক কোণে আমার জন্যে কিছু ভালবাসাও জমা ছিল।
নীলাদের বাসা থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম ভাগ্যিস তোমাদের এক মুহূর্তের ভূলে আমি দুনিয়াতে এসেছিলাম।না আসলে এই গভীর ভালবাসার দেখা কোথায় পেতাম!যেখানেই থাক ভাল থেক তোমরা।যদি কাছে থাকতে দেখতে পেতে কতটা গভীর মমতায় ভালবাসি তোমাদের।
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫২
উদ্ধাস্ত৬১ বলেছেন: আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগছে।
২| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:০২
পথে-ঘাটে বলেছেন: অসাধারন লিখেছেন।
ভাললাগা রইল।
১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২০
উদ্ধাস্ত৬১ বলেছেন: ধন্যবাদ পথে-ঘাটে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৫৮
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: ভালো লেগেছে পড়তে।
গুছানো লেখা।