নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর সকল উদ্ধাস্তুর মতই আমি নিজেও একজন উদ্ধাস্তু...জীবন আমাকে তেমন কিছুই দিতে পারেনি কেড়ে নেয়া ছাড়। শত শত উদ্ধাস্তুর ভীড়ে আরো একজন উদ্ধাস্তু।

উদ্ধাস্ত৬১

পৃথিবীর সকল উদ্বাস্তুর মতই আমি নিজেও একজন উদ্বাস্তু। জীবন আমাকে তেমন কিছুই দিতে পারেনি কেড়ে নেয়া ছাড়া....শত শত উদ্বাস্তুদের ভীড়ে আরো একজন উদ্বাস্তু।

উদ্ধাস্ত৬১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্বিতীয়া।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৭

বেশ কিছুদিন ধরেই আসাদ সাহেব ঝামেলায় আছেন।শুধু ঝামেলা বললেও কম বলা হবে,বেশ বড় ধরণের ঝামেলা।আসাদ সাহেব আস্তিক ও না নাস্তিকও না।সময় অনূযায়ী নামায কালাম ও পড়েন তবে অবস্তুগত কোন কিছু বিশ্বাস করার ব্যাপারে উনির যথেষ্ট পরিমাণে এলার্জি আছে।
কিছুদিন হল আত্না আছে কি নাই সেটা তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।অংক কষে আত্না বের করা।উনি কেন আত্নার পিছনে লেগেছেন সেটা একটু বলি।আসাদ সাহেব যুবা বয়সে এক অতি রপবতী মেয়েকে বিয়ে করেন।ভার্সিটির প্রফেসর হওয়ায় মেয়ের পরিবার থেকেও বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ ছিল,তাই বিয়েটাও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।এত্ত সব তাড়ার মাঝে কেউ আর মেয়ের মতামত জিগ্ঙেস করার সময় পায়নি।আসাদ সাহেব বাসর ঘরে ঢোকার পরই জানতে পারলেন মেয়ের অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল,আসাদ সাহেবকে বলে দেয়া হল উনি যাতে বিছানা পত্র নিয়ে অন্য ঘরে চলে যান।আসাদ সাহেব প্রথমে কিছুটা হতবম্ভ হলেও নিজেকে অতি দ্রুত সামলে নিলেন।নিজেকে এই বলে বুঝ দিলেন নতুন নতুন তাই হয়ত এমন করছে কিছুদিন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।মেয়েটির নাম ছিল মিতু।দিনের বেলা দুজনের মাঝে সম্পর্কটা খুবই স্বাভাবিক।মিতুর মাঝে পতি প্রেম ঝড়ে ঝড়ে পড়ে টাইপ,আসাদ সাহেবও ভাবেন এইতো আস্তে আস্তে সব কিছু স্বভাবিক হয়ে উঠছে।কিন্তু সন্ধ্যা হতে না হতেই মিতুর ঘরের কপাটে খিল পড়ে!!আসাদ সাহেবের ভাবনা অনুযায়ী সব কিছু অতি সহজে ঠিক হয়না।দিন যত যায় মিতুর ব্যাপার স্যাপার সব আরো জটিল হতে থাকে।আসাদ সাহেবও বুঝতে পারেন তিনি আস্তে আস্তে মিতুর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছেন।বসন্তের শুরুতে প্রথম ফুল ফোটার মত উনির ভিতরেও কোথাও কিছু একটা ডাল-পালা মেলছে।কিন্তু তিনি সতর্ক হবার প্রয়োজনবোধ করেননি সেটাকে নিজের মত করেই বাড়তে দিলেন।যদিও তিনি ভালই বুঝতে পারছিলেন তার প্রতি মিতুর পতি প্রেমের আড়ালে ঘৃণার পরমাণটাই বেশী।

কিছুদিন থেকেই আসাদ সাহেব লক্ষ করছেন মিতুর চঞ্চলতা আগের থেকে বেড়ে গেছে,কারণ আবিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন উনির অনুপস্তিতিতে বাড়িতে অন্যকারো উপস্তিতি।স্বাভাবিক ভাবেই আসাদ সাহেব ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেননি।মিতুকে ডেকে কড়া করে কিছু কথা শুনিয়ে দিলেন,আসাদ সাহেব এমনিতে অনেক নরম-সরম মানুষ কিন্তু রেগে গেলে তিনি আর নিজের মাঝে থাকেন না।কথা গুলা হয়তো মিতুকে অনেক বেশী পরিমাণে আঘাত করেছিল।
পরেরদিন সকালে নাস্তার সময় মিতুকে ডাকতে গিয়ে দেখেন মিতু ফ্যানের সাথে ঝুলছে।মিতু মরে বেচে গেলেও আসাদ সাহেবকে নিয়ে জমে-পুলিশে টানাটানি ছিল বহু দিন।মিতুর বাবা-মা আসাদ সাহেবের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও আত্নহত্যায় প্ররোচিত করার কেস করে বসলেন।আসাদ সাহেব খুব সহজেই ঝামেলা থেকে বেচে যেতে পারতেন।মামলা হওয়ার পর থানার ওসি এসে বলল স্যার আপনি নামি-গুণি মানুষ কি দরকার এইসব ঝামেলায় যাওয়ার।তারচেয়ে কিছু ছাড়েন,আপনারও সম্মান বাচল আমরাও কিছু সম্মানি পেলাম দুইজনের জন্যেই সুন্দর রাস্তা তাই না স্যার??কিছু বেশী দিলে দুই বুড়া -বুড়িরেও চৌদ্দ শিকের ভিতরে পাঠামোনে!!কি কন স্যার??
এই দেশে ঘোষ আর সুপারিশ ছাড়া কিছু হয় না।সাদাকে কালা বানানো পুলিশের জন্যে কোন ব্যপারই না।যদিও তিনি কেসটি শেষ পর্যন্ত লড়লেন।দীর্ঘ তিন বছর লড়ার পর রায়ে বলা হল আসাদ সাহেব নির্দোশ।রায় হওয়ার পরও আসাদ সাহেবের যতটা খুশি হওয়ার কথা ছিল তিনি ঠিক ততটা হতে পারলেন না।তার কেবলই মনে হচ্ছিল ওইদিন এভাবে না বললেও পারতেন,তাহলে হয়তো মিতু আজো বেচে থাকতো।

মিতু মারা যাওয়ার পর উনি আর বিয়ে করেননি।আসাদ সাহেবের এখন বয়সও হয়েছে বেশ।সারাটা জীবন একা কাটিয়ে দিয়ে এই শেষ বয়সে এসে ঝামেলায় পড়লেন।উনি নাকি বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ করছেন উনির রুম এবং সারা বাড়িতে কে যেন হাটাহাটি করে,গুনগুন করে গান ও নাকি গায়!!আমি যখন বললাম মিতুর ভুত না তো??উনি কেমন আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন!
আসাদ সাহেব মিতুকে অনেক বেশী পছন্দ করতেন বিধায়ই সারাটাজীবন একা কাটিয়ে দিলেন।মিতুর আবির্ভাব উনির নিঃসঙ্গতা থেকেও হতে পারে।মিতুর সাথে উনি বেশ কয়েকবার কথা বলারও চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু লাভ হয়নি যদিও এখন মিতুর কাজই হল আসাদ সাহেবের সাথে লেপ্টে থাকা,খেতে গেলে মিতুও সাথে যাবে,ঘুমুতে গেলে আসাদ সাহেবের পায়ের কাছে রাখা চেয়ারে বসে থাকবে। আসাদ সাহেব যখন আমার সাথে কথা বলছিলেন তখনো নাকি মিতু আমাদের সাথেই ছিল!ব্যপারটা ভাবতেই আমার শরীর কটা দিয়ে উঠল!!
তারপর থেকেই আসাদ সাহেব আত্নার পছনে লেগে বসলেন!আত্না আছে কি নাই সেটা তিনি অংক কষে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন,অংক কষার সময় মাঝে মাঝে মিতু নাকি ঘাড়ের উপর দিয়ে উকি দিয়ে দেখে কতটুকু শেষ হল!আসাদ সাহেব কিছু বললেই নাকি মিতু মুখ টিপে হাসে।
আসাদ সাহেবের বাড়ির কাজের লোকও আস্তে আস্তে কাজ ছেড়ে দিল,ভুতের বাড়িতে কে ই বা থাকতে চায়!!
আমি আসাদ সাহেবকে বেশ কয়েকবার পরামর্শ দিলাম ডাক্তার দেখানোর জন্যে।রাতদুপুরে ত্রিশ বছর আগে মারা যাওয়া কোন রুপবতী মেয়েকে হেটে বেড়াতে দেখা নিশ্চয়ই ভাল লক্ষণ না।

আমার শত ব্যস্ততার মাঝেও কিছুটা সময় আমি আসাদ সাহেবের ওখানে গিয়ে কাটিয়ে আসি।কারণ হল আত্মশুদ্ধি,কিছু কিছু মানুষ আছে যাদেরকে দেখলেই মনে পবিত্র ভাব জাগ্রত হয়"মনে হয় কোন পঙ্কিলতা তাদের স্পর্শ করতে পারেনি,আসাদ সাহেব তাদেরই একজন।
কিছুদিন যাবত আমার ব্যাক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় আর আসাদ সাহেবের খোজ নেয়া হয়নি।ব্যস্ততার পরিমাণ কিছুটা কম থাকায় এক সকালে তাই উনির বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম।আসাদ সাহেব বাড়ির উঠানেই বসে ছিলেন হাতে একটি বই নাম," মৃত্যুর পরের জগৎ।

আমাকে দেখেই বললেন আরে আহমেদ যে!কি খবর?চেয়ার টেনে এগিয়ে দিলেন বসার জন্যে।আমি বসতেই বললেন বুঝলে আহমেদ অংক-টংক করে কিছু হবেনা।সাধারণত অংকের ২টা সমাস্যা বের হয়,আমার অংকের সমস্যা বের হয়েছে ৩টা।কোনটা রেখে কোনটয় করব সেটাই বুঝতে পারছিনা।তারোপর আবার আছে মিতু!ও আচ্ছা তুমি বোধয় জানোনা মিতু এখন আমার সাথে কথাও বলে!আত্না-টাত্না আছে কি নাই সেটা প্রমাণ করতে গিয়ে যদি আবার মিতুকে হারাতে হয়!তারচেয়ে মিতুকেই জিঙ্গেস করেছিলাম ও এতদিন কোথায় ছিল?কিন্তু মিতু কেবল মুখ টিপে হাসে।আসাদ সাহেব কিছুটা লজ্জিত ভাব নিয়ে বললেন,ভাল কথা তুমিতো নিয়মিত শাড়ি-টাড়ি কিন মিতুর জন্যে ভাল দেখে কয়কটা শাড়ি কিনে দিতে পারবে!?আমি কিছুটা হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে রইলাম।তিনি বললেন বুঝলে আহমেদ সারাটাজীবন তো একাই কাটিয়ে দিলাম,মিতুর ব্যাপারটা হয়তো তোমাদের ভাষায় আমার কল্পনার জগতে তৈরী কিন্তু আমিতো জানি আমার শেষ বয়সে মিতু কতটা বাস্তব হয়ে এসেছে।তুমি একটা কাজ কর আমার বাসায় কিছুদিন থাক তাহলেই বুঝতে পারবে মিতু সত্যি আছে কি নাই।আমি কিছুটা দুঃখিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৮

আজমান আন্দালিব বলেছেন: ভালো লাগা।

০১ লা মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১০

উদ্ধাস্ত৬১ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

রাকিব উদ্দিন নওশাদ বলেছেন: লেখাটি অনেক ভালো লেগেছে। তবে দু-একটি বানানে একটু সমস্যা আছে সম্ভব হলে শুধরে নিবেন। ধন্যবাদ আপনাকে~

০১ লা মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১০

উদ্ধাস্ত৬১ বলেছেন: আসলে বাংলা না লিখতে না লিখতে এই অবস্থা।সহজ বানান লিখতেও সমস্যা হয়।আগের থেকে এখন কিছুটা কম ভূল হচ্ছে।প্রভিউ দেখে ভূল গুলা ঠিক করার চেষ্টা করব।লেখা পড়ে আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন

৩| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:১২

পথে-ঘাটে বলেছেন: একরাশ ভাললাগা লেখকের জন্য।

১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২

উদ্ধাস্ত৬১ বলেছেন: ধন্যবাদ পথে-ঘাটে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.