![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সকল উদ্বাস্তুর মতই আমি নিজেও একজন উদ্বাস্তু। জীবন আমাকে তেমন কিছুই দিতে পারেনি কেড়ে নেয়া ছাড়া....শত শত উদ্বাস্তুদের ভীড়ে আরো একজন উদ্বাস্তু।
কিরে খোকা ঘুমাসনি যে? একা একা বসে আছিস! আমাকে ডাকলেওতো পারতি।
না বাবা ঘুম আসছে না বড্ড ক্লান্তি লাগছে।
কিছুদিন ধরে এই হচ্ছে। শরীরে আর আগের মতো সাড়া পাইনা। ভিতরের রোগটা কুড়ে কুড়ে খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। অনেকদিন ধরেই সমস্যা ছিল। শেষ পর্যন্ত ডাক্তার এর সরণাপন্ন হয়ে জানতে পারলাম ব্রেইন ক্যান্সার। আমার মধ্যবিত্ত বাবার পক্ষে এই বিশাল চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব না সেটা আমি ভালই বুঝতে পেরেছিলাম। সেই থেকেই চলে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নেয়া। কিন্তু মা সেটি মানতে পারলেন না। আমার চেপে রাখার ব্যাপারটি আর কেউ বুঝতে না পারলেও মা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন। মা সামনে থাকা অবস্থায় ব্যাথায় যখন হাত পা নীল হয়ে আসতো তখনো মাকে বুঝ দিতাম পেটে ব্যথা! মনে হয় আলসার এর কোন সমস্যা হবে।মা কিছুক্ষণ নিজের মনে রাগ করে চলে যেতেন খাওয়ার অনিয়ম করি বলে। সেই মা যখন জানতে পারলেন আমি আসলে লাষ্ট স্টেজে। আমার কোন আশাই নাই তারপর থেকে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ। মার কেন যেন মনে হয়েছে আমি অসুস্থতার কথা চেপে রেখে আসলে অন্যায় করেছি। মা জানতে পারার পর একদিনে আমার জন্যে যে পরিমাণে চোখের পানি ফেলেছেন তা তার সারা জীবনে ফেলেছেন কিনা সন্দেহ। মার হাতে যেদিন রিপোর্টগুলো এসে পৌছায় মা কেমন অদ্ভূদ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন খোকা তুই পারলি! আমি মনে মনে বললাম আমায় ক্ষমা করো মা,আমার কোন উপায় ছিল না।
বাবা পাশে আছে সেটা মনেই ছিল না বাবার ডাকে সৎবিৎ ফিরল।
বাবা বলল কিরে খোকা কি এত্ত ভাবিস? কই নাতো কিছু ভাবিনাতো বাবা!
বাবা বললেন ও!
বাবার সাথে সম্পর্কটা আমার বরাবরই ভদ্রতা পর্যায়ের।সামান্য কিছু হাত খরচ চাইতে হলেও সেটা মার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়।কিন্তু তারপরো বাবার সংগ পেতে আমার ভালই লাগে বাবাও হয়তো আমার মাঝে তার ছেলেবেলাটাকে খুজে ফিরেন।অসুস্থ হওয়ার পর খুব বেশী ইচ্ছা করে বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকি ঠিক ছোট্ট বেলাটির মতো।ইচ্ছা অনিচ্ছার ভীরে ভদ্রতার আড়ালে সব গোপন ইচ্ছাগুলো অপূর্ণই থেকে যায়।
বাবা মা দুজনই কিছু বিষয় মেনে চলেন,আমাকে কখনোই জিঙ্গেস করেন না খোকা তোর কি খেতে ইচ্ছা করে, কি করতে ইচ্ছা করে, কোথাও যেতে ইচ্ছা করে কিনা?এসব আমার একদমই ভালো লাগেনা মনে হয় জোর করে আমাকে মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে খোকা তুই আর বাচবিনা! সাধরণ অবস্থায় হয়তো এই প্রশ্নগুলাই মধুর মনে হতো। সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করে স্বাভাবিক থাকার কিন্তু স্বাভাবিক থাকতে গিয়ে সবাই যে স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করছে সেটা আর কেউ বুঝতে পারে না।
বাবাকে বললাম, ঘুমোতে যাও বাবা।রাত তো অনেক হলো!বাবা চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন তুইও চল।রাত জাগলে শরীর আরো বেশী খারাপ করবে! চেয়ারে বসে থেকে রাতের আকাশ দেখতেই ভালো লাগছিলো কিন্তু সেই সাথে শরীরে দু্র্বলতাও থেকে থেকে জানান দিচ্ছিল! তাই আমিও বাবার পিছনে পিছনে রওনা হলাম ঘুমোব বলে।যদিও জানি শুয়ে থাকাটাই বৃথা,শত চেষ্টা করেও ঘুম আসবে না।
২|
মা যতই চেষ্টা করুক আমার সাথে কথা না বলে থাকার আমি জানি সেটা সর্ব্বোচ্চ এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চালিয়ে নিতে পারবেন; এর বেশী না। মাঝে মাঝে দেখা যায় আমি নিজেও মাকে সাহায্য করি মা যাতে কথা না বলে থাকতে পারেন।কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় মা-ই অস্থির হয়ে কোন এক ছুতোয় কথা বলা শুরু করেন।এবারো সেটাই হলো। বেশ কিছুদিন ধরেই মার ধরণা হয়েছে ছেলেকে বিয়ে করানো উচিৎ। হঠাৎ করেই মার মাথায় বিয়ের পোকা কিভাবে ঢোকল সেটাও এক রহস্য।মেয়ে দেখা হচ্ছে নিয়মিত।প্রতিদিনই দেখতে পরী পরী চেহারার মেয়েদের ফটো এনে আমাকে দেখানো হচ্ছে! কিংবা কে জানে আমার কাছেই হয়তো নাক বুচা দাত উচা মেয়েকে দেখতেও হয়তো পরী লাগে। মা যখন ছবির কোন এক মেয়েকে দেখিয়ে বলেন এই মেয়েটা দেখতে শুনতে ভালই মনে হচ্ছে। খোকা তুই কি দেখতে যাবি? আমি তখন ভীষণ উৎসাহ নিয়ে বলি হ্যা চলো যাই! কিন্তু প্রতিবারই দেখা যায় মেয়ে সবার পছন্দ হলেও আমি একবার দেখেই না করে দেই। মার পাগলামীতে বারণ করতে বড্ড কষ্ট হয়। করুক না কিছুদিন তারপর তো সব শেষই হয়ে যাবে। এক সকালে যেন গোপন কোন পরামর্শ করতে এসেছেন এমন ভাবে বললেন খোকা মাষ্টার বাড়ীর মেয়েটা কি যেন নাম? আমি বললাম "নীলা"।মা বললেন হ্যা নীলা, নীলা তো তোর কাছে নিয়মিত আসে,দেখতে শুনতেও ভালো বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো? মার কথা শুনে আমি হয়তো কিছুটা রেগেই গিয়েছিলাম তাই নিজের মুখ থেকে না শব্দটা নিজের কানেই কেমন কর্কশ শুনালো।মা কেবল আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন।এর পর থেকে অবশ্য আমাকে আর বিয়ের কথা শুনতে হয়নি তবে নীলা যখনই বাসায় আসতো মার আদর যত্ন হতো দেখার মতো!
আমি জানি নীলাকে বিয়ের কথা বললে নীলা ঠিকই রাজি হয়ে যেতো।আমি যদিও মহামানব পর্যায়ের কেউ নই তারপরো নিজের সাময়িক সুখের জন্যে নীলার সারাটাজীবন নষ্ট করতে বাঁধলো! অসুস্থ না হলে এতদিনে নিশ্চয়ই দুজনের খুব সুন্দর একটা সংসার হয়ে যেতো। হয়তো দুজনের দু-একটা বাচ্চা কাচ্চাও।
৩|
সকাল থেকেই ব্যাথাটা বড্ডবেশী জ্বালাচ্ছে।মনে হচ্ছে মাথার ভিতর কেউ যেন আগুন গরম কিছু ঢুকিয়ে দিয়েছে।ব্যাথার প্রতিটা স্রোত মাথা থেকে সাড়া শরীরে ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পরছে। বাসায় আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতি যথেষ্ট বেড়ে গেছে কিন্তু এই ব্যাপারটাই আমি মেনে নিতে পারছিনা।বারবার মনে হচ্ছে চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাকে কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছে তোমারতো শেষ সময় চলে এল!আমি বরাবরই শান্তশিষ্ট ছিলাম। কিন্তু এখন অল্পতেই রেগে যাচ্ছি।বাবা বললেন কি করবি বল!তারচেয়ে অত্যাচারটা একটু মেনে নে।ভালবাসার অত্যাচার মনে হয় একেই বলে!সন্ধ্যার দিকে ব্যাথার তীব্রতা প্রায় অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলো।।বাবা মা সহ কাছের কিছু মানুষ আমাকে ঘিরে বসে আছ। কেউ কেউ কুরআান থেকে তেলাওয়াত করে আমার জন্য দোয়া করছে। মা কাদছেন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে!বাবার থেকে থেকেই নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ পাচ্ছি হয়তো চোখের কোনে দু-এক ফোটা পানিও চিকচিক করছে। সবাই রাত পোহাবার অপেক্ষায় আছে।হঠাৎ করেই কেন জানিনা মনে হলো এই রাত আর কখনোই পোহাবেনা। ভোরের সোনালী রোদ আমার আর কখনোই দেখা হবেনা।
৪|
আর একটা সূর্য আমার জীবনে উদিত হবে সেটা কি আমি কখনো ভেবেছিলাম!কতক্ষণ পর আমার জ্ঞান ফিরলো এক ঘন্টা দুই ঘন্টা নাকি এক সপ্তাহ পর?এইতো বাবা দাড়িয়ে আছে মা মাথায় হাত রেখে বসে আছে।চোখ মেলে তাকাতেই সবাই ব্যাস্ত হয়ে ছুটে এলো।কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই আমার দিকে। মুখেে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো থাকায় সবার কথা শুনতে পেলেও আমি কিছু বলতে পারছিনা।হাসপাতালেই বা আমাকে কখন আনা হলো সেটাও জানিনা। মার চোখ বেয়ে পানি পড়ার দৃশ্য দেখতে ভালো লাগছে।এ কান্না নিশ্চয়ই খুশির কান্না! সবার আনন্দ মাখা মুখ আমাকেও ছেয়ে গেল।বেচে থাকাটা বোধ হয় খারাপ না।ডাক্তার এসে কি সব পরীক্ষা টরীক্ষা করে মাস্ক খোলে দিলেন। বাবাকে বলে গেলেন যদি সম্ভব হয় আমাকে যেন হাসপাতালেই রাখা হয়। কিন্তু আমার প্রবল আপত্তির কারনে বাবা হাড় মানতে বাধ্য হলেন। তবে শর্ত দিলেন আগামী এক সপ্তাহ আমাকে অবশ্যই ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে থাকা লাগবে।
রুম কিছুটা ফাকা হতেই মাকে কাছে পেয়ে বললাম, মা নীলা আসলোনা যে? মা,বাবার দিকে কিছুটা বাকা চোখে তাকিয়ে বললেন নাীলা! এসেছিলো তো।
আমি বললাম, নীলা কেমন আছে মা? ওর নীল অপরাজীতায় ফুল ফোটার কথা ফুটেছে কি?
নীলাকে নিয়ে মার উচ্ছ্বাস বরাবরই বাড়াবাড়ি পর্যায়ের ছিলো।শুধু এবারই কিছুটা ব্যাতিক্রম দেখতে পেলাম।মা বললেন ভালো আছে নিশ্চয়ই। ফুল ফোটার কথা থাকলে নিশ্চয়ই ফুটেছে! এক কাজ করিস নীলা আসলে তুই নিজেই জিঙ্গেস করিস।
অলস মস্তিষ্ক সারাক্ষণই এটা সেটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে।আমার নিজেরটাও এর থেকে পিছিয়ে নেই।তবে আমার সকল পপরিকল্পনাই বাবা মা আর নীলাকে ঘিরে।নীলার ব্যাপারটা যদিও মনের কোন এক ছোট্ট কুঠুরিতে বন্দি করা। নীলাকে নিয়ে আমার যতো ফ্যান্টাসি সব মনের ঔই ছোট্ট কুঠুরিতেই সীমাবদ্ধ সেটাকে কখনোই বাহিরে আসতে দেইনি।অসুস্থ হওয়ার পর নিজের কথা নিজের মনে চেপে রাখার প্রবণতাটা আরো বেড়ে গেলো।সাধারণ কথাই যেখানে বলতে ইচ্ছা করেনা সেখানে নিজের আবেগ বা গোপন কথা তো একেবারেই নয়।
নীলাকে নিয়ে সপ্নটা প্রায়ই দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। নির্জনে হাত ধরে বসে থাকা,কোন এক জোনাকি জলা রাতে জোসনা দেখা।ভবিষ্যৎ এর স্বপ্নে দুজনেই বিভোর থাকা।কিন্তু এসব শুধুই কল্পনা। বাস্তবতার ছোয়া সেখানে সামান্যই।
৫|
হাসপাতাল থেকে বাসায় আসছি বেশ কিছুদিন হল। মা যে কথাটা বলতে ইতঃস্তত করছিলো সেটা নীলার মুখ থেকেই শুনতে পেলাম খুব স্বাভাবিক ভাবেই নীলা আমাকে ওর বিয়ের কথাটা জানালো।নীলা হয়তো অস্বাভাবিক ভাবেই বলেছে কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক মনে হল।
নীলা ঘরে এসে আমার কপালে হাত দিয়ে স্পর্শ করল। ভালোবাসার কোমল স্পর্শ যে স্পর্শের জন্যে একজন পুরুষ সারা জীবন তৃষিত থাকে। আমি বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা বলার জন্যে ও নিজের সাথে যুদ্ধ করছে! আমি যখন বললাম, নীলা তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও? নীলা বলল, হ্যা।আমি বললাম এমন কিছু যেটা শুনলে আমি কষ্ট পাবো? নীলা আবারো বলল, হ্যা। আমি বললাম নীলা তোমার কি বিয়ে? এবার উত্তর দেয়ার বদলে ওর দুগাল বেয়ে অশ্রু পড়তে শুরু করল।যে কান্নাটাকে এতক্ষণ চেপে রেখেছিলো সেটা এখন হাহাকার এর মতো ছিটকে বেরিয়ে এলো।আমাকে ভালবেসে কোন মেয়ে কাঁদছে এর চেয়ে বিষ্ময়ের। এর চেয়ে ভালো লাগার আর কি হতে পারে! যদিও ভিতরে ভিতরে ঠিকই কষ্ট পাচ্ছিলাম। আমি নীলাকে বললাম ছিঃ কাঁদে না নীলা।খুশির সংবাদে কেউ কাদে নাকি! বোকা মেয়ে। নীলা তবুও কেদেই যাচ্ছে। সকল দুঃখ কষ্ট পানি হয়ে নেমে আসুক দু চোখ বেয়ে। নিজের অশ্রু নীলাকে দেখাতে ইচ্ছা করল না। আমার অশ্রু আমার কাছেই জমানো থাকুক।
৬|
আজ নীলার বিয়ে। সারা গ্রামেই মোটামুটি সাঝসাঝ ভাব। হবেইবা না কেন মাষ্টার বাড়ীর মেয়ের বিয়ে বলে কথা। নীলার বিয়ের আমেজ খানিকটা আমাদের বাড়িতে এসেও পড়লো। নীলা বার বার খবর পাঠাচ্ছে মা যেন একবার হলেও ওখানে যান। মা এসে আমাকে জিঙ্গেস করলেন কি করবো খোকা? আমি বললাম, কেন যাবে না মা! ও তো তোমার মেয়ের মতোই।মা আর কথা না বাড়িয়ে নীলাদের বাড়িতে রওনা হলেন।
বাবাকে যদিও কোথাও দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু আমি জানি বাবা আমার আশে পাশেই কোথাও আছেন ডাক দিলেই চলে আসবেন কিন্তু ডাকতে ইচ্ছা হলোনা।অসুস্থ হওয়ার আগে প্রায়ই ভাবতাম কিছু টাকা জমা হলেই একটা গাড়ি কিনবো।বাবাকে পাশে বসিয়ে নিজ হাতে ড্রাইব করব!কিন্তু ঘাস ফড়িং এর মত যার জীবন তার বোধ হয় সপ্ন না দেখাই ভালো।
থেকে থেকেই ব্যাথাটা জানান দিচ্ছে।ব্যাথা ভুলে থাকার জন্যে ভাবতে চেষ্টা করলাম নীলা এখন কি করছে! নীলার মাঝে অনেক ছেলেমানুষি ব্যাপার আছে। মাকে দেখে না আবার হাউমাউ করে কান্না ঝুড়ে দেয়। নীলাকে দেখতে নিশ্চয়ই খুবই সুন্দর লাগছে। নীলার খুব বেশী সাঝুগুঝু করা লাগে না। হালকা সাঝেই নীলাকে পরীর মতো লাগে দেখতে। বিয়ের সাঝে নিশ্চয়ই ইন্দ্রাণীর মতো লাগবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই তন্দ্রার মতো এসে গেল! ঘুমিয়েও পড়েছিলাম বোধ হয়।তীব্র ব্যাথা নিয়ে ঘুম ভাঙ্গল।যে ব্যথাটা থেকে থেকে জানান দিচ্ছিল সেটা এখন নখ দন্তহীন বাঘের মতোই রণমুর্তী ধারন করেছে।ঘড়ি ধরে দেখলাম সন্ধ্যা পার হলো কেবল।।পানির পিপাসায় মনে হচ্ছে বুকের ছাতি ফেটে যাবে।বাবাকে ডাকলাম বেশ কয়েকবার কিন্তু বাসায় কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না।নিজে উঠে গিয়ে পানি খাবো সেই শক্তিটুকুও আমার নেই।মনে মনে সমুদ্র কল্পনা করার চেষ্টা করলাম তাতে যদি তৃষ্ণার পরিমাণ কিছুটা কমে!কিন্তু ব্যাথার জন্যে কোন কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছিনা।
মা আমার ঘরে এসে আমাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন।আমি তখন তীব্র ব্যাথায় নীল হয়ে আছি।মার পিছনে পিছনে বাবাও রুমে এসে আমার অবস্থা দেখে ডাক্তার আনার জন্যে ছোটলেন।মাকে বললাম কেঁদো না তো মা!তারচেয়ে আমার কপালে হাত বুলিয়ে দাও।নিজের তীব্র ব্যাথা গিলে মাকে বললাম নীলাকে কেমন দেখলে মা?মা কিছু না বলে আরো বেশী করে কাঁদতে লাগলেন।নিজের সন্তানের কষ্ট কোন মা ই সয্য করতে পারেনা।
বাবা ডাক্তার নিয়ে আসতে আসতে আমার ততক্ষণে ঠোট নীল চোখ লাল হয়ে উঠেছে।আমাকে দেখে বললেন পেথিড্রিন দিয়ে দেই এছাড়া এই ব্যাথা কমবে না।ইন্জেকশন দেয়ার পর বাবা বললেন ব্যথা কি কমেছে খোকা?আমি বললাম, হ্যা।আমার ততক্ষণে ঘুমে চোখ জুড়িয়ে আসছে,মা তখনো কপালে হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন।
ঘুম ভাঙ্গল মধ্যরাতে।ঘর অন্ধকার,জানালা দিয়ে জোসনার আলো ঘরে এসে বিছানার এক কোন ভাসিয়ে যাচ্ছে।পানির জন্যে হাত বাড়াতেই গ্লাসের নিচে চাপা দেয়া চিঠি পেলাম।চিঠি খোলে দেখি নীলার চিঠি। নীলা নিশ্চয়ই মাকে দিয়ে পাঠিয়েছে।নীলার সব চিঠিই সম্বোধনহীন এটাও তার ব্যতিক্রম না।
কেমন আছো তুমি?ব্যাথা কি খুব বেশী?তোমার হাতে যখন চিঠিটা পৌছাবে তখন আমি অনেক দূরে।আমার উপর কি খুব বেশী রাগ করে আছো। নাকি অভিমান? আমার মনে হয় দুটোর কোনটাই করনি।কেন যেন মনে হচ্ছে আমি বিয়েতে রাজি হওয়ায় তুমি কিছুটা খুশিই হয়েছো।ভেবেছিলাম বিয়ের আগে কিছু একটা পাগলামি করে সবাইকে চমকে দিবো।তুমি কি ভাবছো আত্মহত্যা?আমি আত্মহত্যা করা টাইপ মেয়ে না।আমার কি উচিৎ ছিল জান??তিন বছর আগে তুমি যখন আমাকে তোমার ক্যান্সার এর কথা জানাও তখনই তোমাকে বিয়ে করা।আমি প্রতিটা মুহুর্ত প্রতিটা দিন অপেক্ষা করেছি আজকে হয়তো বিয়ের কথা বলবে কিন্তু বলনি।তোমার কি মনে হচ্ছে আমি রেগে রেগে কথাগুলা লিখছি? অবশ্যই না।আমি কেন তোমার কাছে ছুটে যেতাম সেটা তুমি ভালই বুঝতে।আমিতো একটা মেয়ে তারপরও যথেষ্ট রুপবতী!একটার পর একটা বিয়ের প্রস্তাব আসতো আর আমি সেটা নাকচ করে দিতাম।আমার না, না উত্তর শুনে বাবা প্রচন্ড রকমের বিরক্ত।শেষ পর্যন্ত নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে রাজি হতেই হল।আচ্ছা সত্যি করে বলতো তুমি রাগ করোনি? আমি জানি কি প্রচন্ড পরিমাণ ভালোবাসো আমায়।আমি নিজেই তোমাকে বিয়ের কথা বলতাম কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হবো জেনে আর বলতে ইচ্ছা হয়নি।তুমি কি জান কি প্রচন্ড রকমের ভালোবাসি তোমায়?ভালো থেকো তুমি। ইতি
-নীলা।
চিঠিটা কয়েকবার পড়ে ফেললাম তারপরো মনে হচ্ছে আবার পড়া উচিৎ।থেকে থেকেই চোখ ভিজে উঠছে আর কি রকম যেন অদ্ভূদ কষ্ট!
আস্তে আস্তে রাত গভীর হতে লাগলো।জোসনা চলে গিয়ে ধীরে ধীরে পুরো পৃথিবীটা অন্ধকারে গ্রাস করে নিলো।আর সেই সাথে আমি নিজেও তলিয়ে যেতে থাকলাম আদি-অন্তহীন অন্ধকার কোন কিছুতে!!
০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৩
উদ্ধাস্ত৬১ বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩৩
তৌফিক মাসুদ বলেছেন: দারুন ফিনিশিং।
শুভকামনা জানবেন।
০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৪
উদ্ধাস্ত৬১ বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভাল থাকুন সব সময়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
পথে-ঘাটে বলেছেন: মন খারাপ করা একটি গল্প।
শুভ কামনা রইল।