নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহাদাত উদরাজী\'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - \'গল্প ও রান্না\' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

সাহাদাত উদরাজী

[email protected] ০১৯১১৩৮০৭২৮গল্প ও রান্না udrajirannaghor.wordpress.comপ্লে স্টোরে ‘গল্প ও রান্না’ এন্ড্রয়েড এপ্লিকেশন! আনন্দ সংবাদ! বাংলা রেসিপি নিয়ে এই প্রথম প্লে স্টোরে এন্ড্রয়েড এপ্লিকেশন! ‘গল্প ও রান্না’ এখন Play Store এ Apps হিসাবে আপনার হাতের কাছে। নেট কানেশন বা WiFi জোনে থেকে Play Store এ যেয়ে golpo o ranna বা “Golpo O Ranna” বা “com.udraji.rannaghor” লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। খুব সহজেই আপনি আপনার এন্ড্রয়েড মোবাইলে ‘গল্প ও রান্না’র আইকন ইন্সটল করে নিতে পারেন। ফলে আপনাকে আর মোবাইলে আমাদের সাইট দেখতে লিঙ্ক বা কোন ব্রাউজার ব্যবহার করতে হবে না। নেট কানেশন বা ওয়াইফাই জোনে থাকলেই আপনি ওয়ান ক্লিকেই গল্প ও রান্না দেখতে পাবেন।

সাহাদাত উদরাজী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ ফেরা – এক সাধারন জীবনের গল্প

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৭

জামিলুর রহমান, ধার করা নাম, তিনি এই গল্পের নায়ক! আমার পরিচিত, আমার একান্ত এক আপনজনের মত, সরাসরি আমি উনার অধীনে কাজ না করলেও আমি উনার অধীনস্থ ছিলাম বলা চলে, তিনি একাউন্টসের হেড আর আমি এডমিনের সাধারন অফিসার। অফিস আদালতে এডমিন একাউন্টসের মধ্যে একটা ঠান্ডা ঝগড়া চলে, সেই ঝগড়া আমার বিভাগীয় হেড এবং উনার মধ্যে থাকলেও, কেন কি কারনে তিনি আমাকে ভালবাসতেন, যদিও তা প্রকাশ্য ছিল না তবে আমি এটা বুঝতে পারতাম। উনার শারীরিক উচ্চতা, বলিষ্ট শরীর এবং চেহারার সিরিয়াসনেসের জন্য অফিস/কারখানায় তিনি আমাদের নায়ক ছিলেন, তবে কেহ তার কাছে ভীড়তে পারত না, আমিও দূর থেকে উনাকে দেখে যেতাম। অফিসের মিটিং মিছিলে তার উপস্থিতি আমাদের অনেকের হাত পা কাঁপিয়ে দিত, জুনিয়রদের জন্য তিনি ছিলেন বাঘ্র্য, তার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা সহজ কাজ ছিলো না। তবে দেখা হলে সালাম দিলে ক্ষীনস্বরে উত্তর পাওয়া যেত সব সময়।

বছর সাড়ে নয় আমরা এক সাথে কাজ করে আমি ডেপুটি ম্যানেজার হলে তিনি তখন হেডঅফিসে জিএম, একাউন্স হয়ে যান এবং পরে আরো ভাল বেতনে অন্য কোন এক গ্রুপে সিএফও হয়ে চলে যান। তবে এর মধ্যেও আমাদের যোগাযোগ ছিলো, উনার খবরা খবর আমি সব সময়ে আপডেট থাকতাম উনার এক কাজিন থেকে, যে কিনা আবার আমার সমবয়সী এবং একই জায়গাতে কাজ করতাম। তার এই কাজিন আমার এক্স কলিগ এবং এখনো বন্ধু, আমাদের প্রায় কথা হয় এখনো, এই কথা ফাঁকেই আমি উনার পরিবার এবং কোথায় কি করছেন তা জেনে নিতাম, এটা অনেকটা বড়ভাইয়ের খবর নেয়ার মত! অন্যদিকে তিনি আমাকে পছন্দ করতেন বলেই আমিও খবরাখবর রাখতাম, তার সাফল্য গুলো আমার কাছে স্বপ্ন মনে হত! যাই হোক এক সময়ে আমি চাকুরী ছেড়ে নুতন স্বপ্ন দেখা শুরু করে ফেল করলাম এবং উনার কাছে হেল্প চাইলাম, তিনি আমাকে চাকুরী দিতে চেয়ে ছিলেন যদিও সেই চাকুরী আমি করি নাই। ভুমিকা শেষে, মুল গল্প শুরু করা যাক।



জামিলুর রহমান সাহেব বরিশাল থেকে ছাত্রাবস্থায় এই ঢাকা শহরে এসেছিলেন এবং সাফল্যের সাথে একাউন্টিং বিষয়ে পাশ করে, সিএ পাশ করে নিয়েছিলেন। এরপর সরাসরি চাকুরীতে যোগ দিয়ে নিজ যোগ্যতায় এগিয়েছেন। চাকুরীতে থাকার সময়ে তিনি এই শহরেই বিবাহ করেন এবং উনার স্ত্রীও বাংলাদেশের এক সরকারী বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন, খুব চমৎকার জুটি, বিবাহের কিছু দিনের মধ্যেই দুই ছেলে সন্তানের বাবা হয়ে পড়েন। সংক্ষেপে এগিয়ে যাই, ছেলেদের বয়স যখন ১৪ এবং ১২। এই সময়ে তার স্ত্রীর ক্যান্সার ধরা পড়ে, এবং দীর্ঘ দেশ বিদেশের চিকিৎসা সংগ্রামে পরাজিত হয়ে মারা পড়েন, তখন ছেলেদের বয়স ১৮ এবং ১৬। বলা বাহুল্য, তার স্ত্রীর চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করেছে, কথাটা এই জন্য জানালাম যে, যাতে গল্পে আপনাদের প্রশ্ন না থাকে!

এই শহরে এই ছেলেদের নিয়ে শুরু হয় তার নুতন সংগ্রাম, যদিও অর্থিক স্বচ্ছলতায় তিনি ভরপুর। হাতে ক্যাশ অনেক টাকা, অভিজাত এলাকায় দুই হাজার স্কয়ারের উপরে ফ্লাট, নিজের গাড়ি, অফিসের গাড়ি মিলিয়ে এক আলাদা জীবন। আপনারা একজন বড় গ্রুপ অফ কোম্পানীর সিএফও, ফাইন্যান্স এর জীবন কেমন বা বেতন কত তা কল্পনা করতে পারেন, যদি আপনার কর্পোরেট গ্রুপের উপর ধারনা থাকে!

বড় ছেলে এ লেভেল পাশ করে পড়াশুনার জন্য বিদেশ চলে যায় এবং ইঞ্জিনিয়া্রিং সার্টিফিকেট নিয়ে আবার ফিরে আসে। ছোট ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ পাশ করে ফেলে। তা হলে বুঝতে পারছেন, স্ত্রী মারা যাবার পরের দিন গুলোর কথা। সবই সাফল্যের গল্প। ইত্যমধ্যে বড় ছেলে একটা পাওয়ার প্লান্টে কাজ পেয়েছে এবং যা জানলাম সে প্রেমেও পড়েছে, পরে তাকে বিয়েও করিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলে কি যেন একটা কিছু করছে, তবে এখন দুই ভাই কানাডাতে মাইগ্রেন্ট হয়ে যাবার অপেক্ষায় আছে এবং কর্নফাম চলে যাবে।

হ্যাঁ, আপনাদের এখন হয়ত মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, তিনি কি বিবাহ করেছেন! না, তিনি আর বিবাহ করেন নাই এবং যতদুর জানি তিনি আর বিবাহ করবেন না বলেই সবাইকে জানিয়েছেন। বিবাহের প্রশ্নে তিনি পরিস্কার বলেছেন, এই জীবনে আর বিবাহ নয়! দুই ছেলে সহ তার জীবন কাটছে, আর তিনি কেমন ব্যস্ত মানুষ তা আপনারা কল্পনা করলেও করতে পারেন, বেতন ভাতা নিয়ে এই এক আলাদা চাকচক্য জীবন। তিনি সৎ ব্যক্তি এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি সব সময়েই, ফলে অফিস আর বাসাই, আমার জানামতে উনার ভাইবেরাদর ছাড়া তেমন কোন বন্ধু বা আলাদা আড্ডা নেই।

ইদানিং আমার মাথায় জামিল স্যারকে নিয়ে প্রায় প্রশ্ন আসে (নিশ্চয় আপনারাও ভাবছেন), ছেলে দুটো চলে গেলে তিনি কি করবেন বা এভাবেই কি এই জীবন চালাবেন। যতই টাকা কড়ি গাড়ি বাড়ী থাকুক, এভাবে কি জীবন চলে বা চালানো যায়! এখন উনার বয়স প্রায় ষাটের কাছাকাছি, এই বয়সে তিনি কি ভাবছেন! যদিও বেসরকারী চাকুরীতে বয়সের সীমা নেই, অভিজ্ঞতা এবং সুস্বাস্থ্য হলে হলেই চাকুরী যতদিন ইচ্ছা টেনে নেয়া যায় বা যেতে পারা যায়!

যতদুর জানতে পারছি, তিনি নাকি সিদান্ত নিয়েছেন, এই একা সময়ে তিনি আর এই শহরে থাকবেন না, তিনি বরিশাল তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবেন এবং সেই মোতাবেক সব ব্যবস্থা করে ফেলেছেন, মানি ইউটিলাইজেশন মেশিন ম্যান হিসাবে তিনি নাকি গ্রামের কাছাকাছি শহরে ইত্যমধ্যে বিল্ডিং বানিয়ে নিয়েছেন, যার আশে পাশে তার বোন এবং ভাই ও নানান আত্মীয় স্বজন আছে এবং এদের কাছেই থাকবেন। হ্যাঁ, গল্পটা এখানেই শেষ, এই গল্পের নাম ‘ফেরা’ রাখলাম, শেকড়ে ফেরার গল্প! আমার বারবার এই গল্পের নায়ক চরিত্র নিয়ে নানান প্রশ্ন মাথায় আসছে, কেন তিনি গ্রাম থেকে শহরে এলেন, বিশ্বের নানা শহর ঘুরলেন, নানান অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন এবং আবার সেই জায়গাতেই ফিরে যাচ্ছেন।

আপনারা অনেকে হয়ত ‘লাল মিয়া’ নাম চিনেন না, যার কাব্যিক নাম সুলতান, শেখ মোহামদ সুলতান! হ্যাঁ, আমাদের প্রিয় আদুরে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান, যিনি এখন নড়াইলেই শায়িত! সারা দুনিয়া দেখার শেষে তিনিও গ্রামে চিত্রা নদীর ধারে ফিরে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, “আমি সুখী। আমার কোনো অভাব নেই। সকল দিক দিয়েই আমি প্রশান্তির মধ্যে দিন কাটাই। আমার সব অভাবেরই পরিসমাপ্তি ঘটেছে।”

জামিলুর রহমান স্যার আজ চলে যাচ্ছেন, তার স্বপ্নের ঠিকানায়, পেছনে এই ব্যস্ত শহর পড়ে আছে! জানেন, আমিও আশায় আছি, আমিও আবার ফিরে যাব সেই মাটির কাছাকাছি, বুক ভরে শ্বাস নিবো, সবুজ কচি ধানের ডগায় শিশির বিন্দু দেখবো, সকালের ভেজা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটবো, মাচার নিচে লাউয়ের সাথে মাথায় বারি লাগলে, হেসে বলবো, ‘কি রে এত ঝুলে আছিস কেন? দেখে পথ চলতে পারিস না!’।

(মালিবাগ, ২৩শে আগষ্ট ২০২০ইং)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৩১

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: মানুষ তার শেকড়কে ভুলতে পারে না। অবচেতনে সকল মানুষের মধ্যেই শেকড়ে ফেরার তাড়ণা থাকে।
সুন্দর গল্প।

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:০৩

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। হ্যাঁ।

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



জামিলুর রহমানের নিজের মেধা উনার নিজের জন্য কাজ করেছে, এটুকুই, উনি আসলে কোন গল্লের নায়ক নন।

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৩৬

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: হ্যাঁ, অবশ্যই। এমন নায়ক তো পথের ধারেই মিলে, এরা কি করে নায়ক হয়! এটা তো সাধারন মানুষ্য জীবন।

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:১২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: জামিলুর রহমান মাটির মানুষ তাই ফিরে গিয়েছেন মাটির কাছে । সকাল বেলায় শিশির ভেজা ঘাসে হাটার জন্য

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৩৮

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: হ্যাঁ, এমনি মনে হয়েছে। অফিস আদালতে একটা মানুষকে যতটা কঠিন মনে হয়, দিন শেষে সে অনেক নরম মানুষ হয়ে থাকেন।

৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:১৫

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আপনার নিজের মনের ইচ্ছাই প্রকাশ পেয়েছে গল্পের মাধ্যমে।এবং শেষের দিকে তার প্রকাশ ও আছে।

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৪০

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: আমি এমন ইচ্ছা পোষন করি তবে আমার হিসাব মিলে না কখনোই। আমাকে হয়ত এই শহর থেকেই মাটির ঘরে প্রবেশ করতে হবে। আমার চাওয়া কখনোই পূর্ন হয় না, যে দুই চারটা হয়েছে, সেটার জন্য আমাকে অনেক হারাতে হয়েছে।

৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: জামিলুর রহমান ভাগ্যবান। তবে এযুগের জামিলুররা ভাগ্যবান নয়।

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩৮

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: হ্যাঁ, তিনি ফিরতে পারছেন, আমাদের হয়ত এই শহর থেকেই কবরে যেতে হবে, মানে সরাসরি মাটির নীচে, এই আর কি!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.