![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেন এক অচিন মানুষের বাস মানুষের ভিতর? জর্জরিত বোধ তবু অভিনয় যেন সুখের সাঁতার!!
বিভিন্ন প্রজাতির ফেসবুক ইউজারদের সংজ্ঞা সহ বিশ্লেষণধর্মী একটি রম্য রচনা। বাস্তবভিত্তিক কিন্তু হাসি তামাশা করে লেখা।
ফেসবুকের জয়জয়কার এখন সবখানে। কে ফেসবুক ব্যবহার করে না? এককথায় বলা যায় প্রশ্নটা ভুল। সবাই ব্যবহার করে। রোমিও টু জুলিয়েট, সিঙ্গেল টু মিঙ্গেল, প্রচন্ড স্মার্ট টু খ্যাত, পয়সাওয়ালা টু রিক্সাওয়ালা, সেলিব্রেটি টু আমজনতা, স্বাক্ষর টু নিরক্ষর, পুচকা ছেলেমেয়ে টু প্রাগৈতিহাসিক দাদি নানী, লেখক টু পাঠক, রাজনৈতিক টু কর্মী, সরকার টু বিরোধীদল, ইংলিশ টু বাংলা মিডিয়াম সবাই করে। কিন্তু কিভাবে, কতভাবে, কত ঢংয়ে সেটাই মূল উপপাদ্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে সবারই এখন একটা ফেসবুক প্রোফাইল আছে। না থাকাটাই সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা। এই যুগে কারো ফেসবুক থাকবে না এটা কেমন কথা!! হার্টের একটা ভাল্ব, একটা কিডনি না থাকলেও চলে কিন্তু ফেসবুক থাকা চাই ই চাই। ভূমিকার আঁচল বেশি না টেনে মূল কথায় আসি।
বাস্তবাতার অস্পর্শে ভার্চুয়ালে কে, কিভাবে, ফেবু চালায় সেটা বলি, বিভিন্ন ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলা যাক।
১) সেলিব্রেটিঃ উঁহু, আসল সেলিব্রেটি না। ফেসবুক সেলিব্রেটি। বাস্তবে আমরা কি দেখি? সেলিব্রেটিদের ছবি টিভির পর্দায়, রুপালী পর্দায়, পত্রিকার পাতায়, বিলবোর্ডে, ম্যাগাজিন ট্যাগাজিনে এসব জায়গায় দেখা যায়। সেলিব্রেটিরা ব্যাক্তিত্ত্ব বজায় রেখেই সেলিব্রেটি হন, ছবি তোলেন, নাচানাচি, লাফালাফি, কানাকানি, মারামারি, গোলাগুলি, লাথালাথি এসব করেন। কিন্তু ফেসবুক সেলিব্রেটিরা অন্য চিজ। একেবারেই আলাদা। নিজেকে সেলিব্রেটি রুপ দিতে হেন কোন কাম, কুকাম নেই যে উহারা করে না। সেলিব্রেটি হিসেবে উহাদের ছবি নিজেদের ওয়ালে দেখা যায়। তাদের ফেবু স্ট্যাটাস, ছবি, ফিলিংস, চেক ইন, লিসেনিং, ওয়াচিং, ইটিং, রিডিং, ট্রাভেলিং সব কিছুতেই লাইক সুনামি হয়ে আসে। কমেন্ট সেকশন দেখলে যে কেউ নিজেই ঘাড় ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেল ঘুরে ধপাস করে পড়ে যাবে, গ্যারান্টি। ভুত, পেত্নীও ঘাড় এতো এঙ্গেলে মটকায় না। ফেবু সেলিব্রেটিদের একটা স্ট্যাটাস কল্পনা করা যাক যেখানে ৪২০ টা কমেন্ট পড়েছে। একটু সময় নিয়ে যদি নীরিক্ষা করা হয় তাহলে দেখা যাবে সেখানের ৪১৩ টি কমেন্টই সেলিব্রেটির নিজের করা তাও '' এরকম স্মাইলি জাতীয় কমেন্টই উনি করেছেন ৩৯৮ বার, আর বাকি ১৫ টি অন্যান্যদের ধইন্নাপাতা হিসেবে দেওয়া। লাইক কমেন্টের সুইচ ব্যাংক হিসেবেও যদি ফেবু সেলিব্রেটিদের প্রোফাইলকে ঘোষণা করা হয় তাহলে সরকার কিবা অর্থনীতির ক্ষতি হবে না। আর যারা দেশের বাইরে থেকে নিজেদের ফেবু সেলিব্রেটি বানিয়ে নিয়েছে তারাতো চির উন্নত মমশীর। উহাদের লাইক, কমেন্ট দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে হাইড্রোজেন জ্বালানি হিবেসে কাজ করে বলেই উহাদের ধারনা। সংবিধানের ধারার মত সেলিব্রেটিদের স্ট্যাটাসের অনেকগুলা ধারা আছে। কপি পেস্টই উহাদের মূল মন্ত্র। মাঝে মাঝে মোবাইল অপারেটরদের মত উহারা প্যাকেজ ঘোষণা করে। 'এই স্ট্যাটাসে লাইক, কমেন্ট করুন। আপনার লাইক, কমেন্ট চক্রবৃদ্ধিহারে ফেরত পাবেন' জাতীয় স্ট্যাটাস উহাদের প্রোফাইলেই দেখা যায়। দিনে গুলা তিরিশেক স্ট্যাটাস প্রসব, দশ পনেরোটা ফটো, বিশ্বের নামীদামী আট দশটা দেশে চেক ইন উহাদের কাছে পান্তা ভাতের মত। কাচামরিচ হিবেসে তাহারা আলাদা প্রকল্প হাতে নেয়। রোজগার হিসেবে সব মিলিয়ে দিনে এই ধরেন হাজার বিশেক লাইক আর হাজার ছয়েক কমেন্ট উহাদের একাউন্টে জমা পড়ে। অচিরেই লাইক কমেন্ট বিক্রি করে উহারা হেলিকপ্টার কিনতে পারবে। সেলিব্রেটি হিসেবে অন্তত একটা হেলিকপ্টার উহাদের খুবই প্রয়োজন।
এসব আধমরা ফেবু সেলিব্রেটিদের ওয়ালে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হিসু করার ইচ্ছা অনেকেরই আছে।
আরেকটা কথা, এড মি, এড মি, আই এম ব্লক করে করে কতগুলারে চিল্লি মারতে দেখা যায়। এরাও এক প্রকারের সেলিব্রেটি। তবে এখনো হইতে পারে নাই। স্ট্রাগল করতেছে। সেলিব্রেটি হওয়া কি এতো সোজা?! হাজার লাইক না পাইলে কেউ সেলিব্রেটি হয় না।
২) ট্যাগ পিপলঃ ইয়েস। নামের ধরণ দেখেই এদের কর্ম বুঝা যায়। এদের একমাত্র কাজ হল যে কোন ছবিতে অন্যদের ট্যাগ করা। জোরপূর্বক ট্যাগ করে এরা কি ইবাদত সাধন করে আল্লা মালুম। গাছের ছবি, মাছের ছবি, ফুলের ছবি, গরু গাধার ছবি, আকাশ, বাতাস, ঘাস, বাঁশ, গু, মুত সব ছবিতেই এরা ট্যাগ করবে। যতই বিধি নিষেধ থাক, কর্ম তারা সাধন করবেই। একবার মানা করলে এরা দশবার ট্যাগ করে। নিজের ছবি অন্যদের জোর করে দেখানোকেই এরা বিংশ শতাব্দীর একমাত্র লক্ষ্য মনে করে। টয়লেটের বদনা আর ট্যাগ পিপল একই জিনিশ। ফটোর ব্যাপারটা বাদ দিলে অন্য জিনিশ সামনে আসে। এরা স্ট্যাটাস দেয়, "ফিলিং এলোন উইথ অমুক, তমুক এন্ড ফিফটি টু আদারস।" কিরে ভাই, এত জনের লগে থাইকাও এলোন ফিল করছ? তোরে কি কেউ দাম দেয় না? তুই কি ধইঞ্চা?? অথবা স্ট্যাটাস দেয়, "ফিলিং স্লিপি উইথ অমুক, তমুক এন্ড ফরটি এইট আদারস!!" কি কইতাম!! কত জনের লগে ঘুমাছ তুই? তুই কি ওইটা নাকি?? তুই কি ভাড়ায় কাম করছ??
এরা ধইঞ্চা, ওইটা, আবাল, ছাগল যাই হোক জোর করে সবাইরে জানাবে। নিষ্পাপ কিছু মানুষেরে ট্যাগ করবে। এটাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। ট্যাগ শব্দের বাংলা অর্থ এরা জানে না। সাত জনের গ্রুপ ছবিতে সত্তুর জনেরে ট্যাগ কইরা এরা সত্তুর হাজার নেকি হাসিল করে।
৩) শেয়ার আদমিঃ নাহ!! এরা শেয়ার বাজারে শেয়ারের বিজনেস করে না। ফেসবুকে শেয়ার করে। যেখানে দেখিবে যা, শেয়ার করিবে তা নীতিতে ফেবু চালায়। কোন দিন নিজের কোন স্ট্যাটাস দিবে না। শেয়ার করবে। ওমুক নায়িকা একসাথে বত্রিশটা মহিষের গুতা খাইছে, তমুক স্থানে প্রধান দুই দলের সংঘাত, রিক্সার চাপায় ট্রাক চালকের মৃত্যু, লাহোরে মুরগি বৃষ্টি, আমাজনে দুর্লব প্রজাতির সাকিব খান, অনন্ত জলিল কেন ভাংগা কমোডে, মুন্নির কি বদনাম, জওয়ান শীলার গোপন ছবি, ইছলাম গ্রহণ করলেন সানি লিওন এইসব নিউজ প্রতিদিন শেয়ার দিবে। উহাদের সবচেয়ে বেশী আগ্রহ ট্রোল আর চটি পেজ। যদিও দ্বিতীয়টা শেয়ার দিয়ে প্রাইভেসি লক করে রাখে। পরে কাজে লাগবে। কখনো কখনো নিজের ছবি দেয় ফেসবুকে। আপলোড হইতে না হইতেই শেয়ার বাটন খোঁজে। ত্রিশ সেকেন্ড পরেই শেয়ার করে। প্রেমিকা ওদের ফোন দেয়, 'কি করো, জান্টুশ?' উত্তর আসে, ' শেয়ার করি।' 'ওমা তাই? তুমি শেয়ারের বিজনেস করো? কালকে কিন্তু রেডিসন ব্লুতে খাওয়াইতে হবে', গার্লফ্রেন্ড উত্তর দেয়। শেয়ার ম্যানের কিছু একটা শিমুল তুলার মত ঠুস কইরা ফাটে তখন।
৪) হুটহাট জনতাঃ কি? এরা রাজনৈতিক কর্মী?? ভাংচুর করে?? আরে নাহ। নামের সাথে এদের কামের মিল আছে কিন্তু এরা উগ্র না। ভীষন কিউট আর আবেগী একটা প্রজাতি। হঠাৎ একদিন ফেসবুকে লগ ইন করবে। স্ট্যাটাস দিবে, 'হাই বন্ধুরা, বহুদিন পরে ফেসবুকে আসলাম। কেমন আছ সবাই?' এহ!! উনি এক্কেবারে ডাক্তারি পাস কইরা আইছে। সবাই ভালো আছেনি জিগায়!! কিরে ব্যাটা!! ভালো না থাকলে তুই কি ফ্রি ট্রিটমেন্ট দিবি? কেমন আছে সেটাতো এখন কয়েক পয়সা খরচ করলেই জানা যায়। সেটা ফেবুতে স্ট্যাটাস দিয়া জিগানো লাগবো কেন!! এভাবে ওরা হুটহাট ফেসবুকে আসে হানাদার বাহিনীর মত। এসে কয়েক মিনিট হানা দেয়। কিছুক্ষণ ঠুকুর ঠুকুর করে। যখন বুঝে এমবিতে টানাটানি শুরু হইছে তখন আবার স্ট্যাটাস দেয়। 'বন্ধুরা, চলে যাচ্ছি। আবার তিন বছর ফেসবুকে আসতে পারবো না। তোমরা ভালো থেকো। সব্বাইকে অনেক মিস করবো।' :'( ইমো দিতেও ভুলে না। ওরে আবেগ রে!!! এত আবেগ কই রাখছ ভাই?? তুই কি ফেসবুকেই তোর বন্ধুদের মিস করছ?? রিয়েল লাইফে তোর মিস করা কি আছে নাকি সেটাও মিছামিছা?? হুঁ??
সামাজিক সংবিধান এরা ফেবুতেই দেখায়। মে বি।
৫) কয়েল টাইপঃ নামের দিকে তাকালে কিছুই বুঝা যায় না অথচ চেনা চেনা লাগে। ফেবুতেও এরা ওরকম। পরিচিত লোক তবুও অপরিচিত হয়ে এরা ফ্রেন্ডলিস্টে থাকবে। প্রোফাইল পিক, কিংবা নাম কোনটাই প্রথম থেকে ঠিক রাখবে না। নিজেকে লুকিয়ে রাখবে। কোনদিনও নিজের ছবি আপলোড করবে না। মাঝে মাঝে শেয়ার করবে কিন্তু ট্যাগ করবে না। অন্যের স্ট্যাটাসে ওরা কমেন্ট করবে ঘনিষ্ট লোকের বেশে। কিন্তু পরিচয় দিবে না। কত যে প্যাঁচ আছে ওদের মধ্যে কে জানে। জিলাপির চাইতেও বেশি প্যাঁচ নিয়ে ওরা ফেবুতে বিচরন করে, লাপাত্তা হয় না কিন্তু আজনাবি হয়ে থাকে।
৬) এরিস্টটলঃ জি জনাব। এই লোক দার্শনিক ছিলেন। দর্শন করতেন। ভাবতেন। তারপর কিছু একটা মতামত দিতেন। ফেসবুকেও কিছু কিছু নির্লিপ্ত এরিস্টটল পাওয়া যায়। এরা সব কিছু দেখে, বুঝে কিন্তু কিছু বলে না। পোলিও না খাইয়া যদি কেউ বোবা হয় তাইলে এরা বোবা পোলিও রুগী। এদের পাছায় গুনে গুনে কেউ একশোটা লাত্থি দিলেও কিছু বলবে না, তবে লাত্থিগুলা অবশ্যই ফেসবুকে দিতে হবে। কে কি স্ট্যাটাস দিলো, ছবি দিলো, শেয়ার দিলো এরা তা দেখবে। নিজেরা মাঝে মাঝে স্ট্যাটাস দিবে, 'আজ মনটা খুব খারাপ', অথবা ' ধের, কেচ্চু বাল্লাগে না'। অন্যদের ট্যাগ করা জিনিশে এদের টাইমলাইন ফুল ট্যাঙ্ক হয়ে যায়। এরিস্টটল প্রজাতি খুব নিরীহ।
৭) কনভার্টারঃ এরা একটু আলাদা। ক্রিয়েটিভ ধাঁচের। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এই ক্লাসে বেশি। অন্যদের ভালোই কনভার্ট করতে জানে। যে ছেলে আর কোনদিন প্রেম করবে না বলে বুকে হাত রেখে শপথ করেছে কিংবা যে মেয়ে কোনদিনও রিলেশান করবে না ঠিক করেছে তাদেরকে এরা কনভার্ট করে ফেলে। একেবারে স্রোতের বিপরীতে নিয়ে যায়। ভার্চুয়ালি এরা সবকিছু কনভার্ট করতে জানে। দুধকে মদ আর মদকে দুধ বানানো এদের কাছে বাঁ হাতের খেল।
৮) সেলফিগ্রাফারঃ 'আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে, দেখতে আমি পাইনি তোমায়, দেখতে আমি পাইনি!' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা গীত। কিন্তু আবেগের জায়গা ছাড়া এই গানের এখন আর তেমন দরকার নাই। সেলফি যুগ আইসা গেছে না!! হিয়ার মাঝে কেন, মাটির বিয়াল্লিশ ফুট নিচে থাকলেও এখন সেলফিতে দেখা যায়। আর সেলফির সবচেয়ে বড় বাজার তো ফেসবুক। এই প্রজাতি সেলফি ছাড়া কিছুই তোলে না। নাক, মুখ ছুঁচোর মত করে, দুঃখিত বিড়াল বা কুত্তার মত করে, ভেংচি করে সেলফি তোলে। খালি রাস্তায়, ভরা বাসে, বাড়ির ছাদে, নিজের রুমে, রমনা পার্কে, বোটানিক্যাল গার্ডেনে, ঝোপের আড়ালে সেলফি চলে। রেস্টুরেন্টে খালি প্লেট সামনে নিয়া বোয়াল মাছের মত মুখ করে সেলফিগিরি করে। গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড মিলে সেলফি তোলে, নানান ঢংয়ে, নানান রংয়ে। স্লোগান একটাই, সেলফি চলছে, সেলফি চলবে। হরলিক্সের বিজ্ঞাপনের মত ফেবুতে সেলফি আপলোড করে। দু বেলা, চার বেলা সেলফি খেয়ে শক্তিমান হয়। ফেবু আর সেলফি ছাড়া উহাদের আর কোন মেনু নাই। ফেবুর সাথে পাতলা ডাইলের মত সেলফি। কোন কথা হবে না। রবীন্দ্রনাথ স্যার এই সেলফি যুগ দেখলে লিখা ফালাইতো, 'ক্যামারার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলে, সেলফি তুলে-ছি আমি, সেলফি তুলে-ছি'। সেলফি তোলা যায়, দোষের কিছু না। কিন্তু চব্বিশ ঘন্টায় আটচল্লিশটা সেলফি ফেসবুকে দেওয়াই লাগবো। ফেবুতে সেলফি আপলোড করাই একমাত্র দাওয়াই। ঘন্টায় চারশ তিন মাইল বেগে চার সতিনেরা সেলফি আপলোডায়, বাহারি নামে। খাওয়া সেলফি, গোসল সেলফি, এনগেজ সেলফি, ব্রেকাপ সেলফি, বাঁচা সেলফি, মরা সেলফি, সেলফি সেলফি...........
৯) ইগলুঃ এরা কোন আইসক্রিম কিংবা মিষ্টিজাত খাবার নয়। এরা জলজ্যান্ত মানুষ, লাইভ ফেসবুকার। সারাদিন ফেসবুকিং করে প্রচন্ড ইগো নিয়ে। সমসাময়িক বিষয়ে অন্যের লেখা কপি করে স্ট্যাটাস মারে। নাক সিঁটকানির মত ইগোর ছিঁটা মারে। আগ্নেয়গিরির গলিত লাভার মত ইগোর লাভা দিয়ে সব জালিয়ে দেবার কিংবা পরিবর্তন করে দেবার সুপ্ত বাসনা এদের মনে সবসময় থাকে। সুযোগ পেলেই হয়। কারো কোন স্ট্যাটাস, ছবিতে উহারা লাইক, কিংবা কমেন্ট দেয় না। দে ডোন্ট গিভ ফাক। ইগোবাজ ঈগলের মত ফেসবুকিং করে। ইগো ছড়াই, ইগো কুড়ায়।
১০) টু লেটঃ এটা কোন বাসা, অফিস কিংবা গাড়ির টু লেট না। এটা টাইপিক্যাল টু লেট ফেসবুকার। অন্যভাবে বলা যায় সিঙ্গেল, অসহায়, অভাগা। সোজা কথায় বাদাইম্মা। ফেসবুকে যাদের একমাত্র কাম হইলো স্ট্যাটাসে টু লেট ঝুলিয়ে পার্টনার সার্চ করা। হাবিজাবি গ্রুপ খুলে হুদাই অন্যদের এড করে। গ্রুপে এতিম ছেলের মত টু লেট মার্কা আবেগী, রোমান্টিক, সব হারাই ফালাইছে, সব উড়াইয়া নিয়া গেছে মার্কা স্ট্যাটাস দেয়। সাথে ফিলিং তো আছেই। লোনলি, এলোন, ব্রোকেন, ডিজি, সেড, ইমোশনাল, হার্টব্রোকেন এগুলাই উহাদের প্রতিটা স্ট্যাটাসের একমাত্র সারমর্ম। আগে কোন কনভার্টারের কাছ থেকে ছ্যাকা খাইয়াও উহাদের হুঁশ হয়নাই। আগেরটারে ধোলাই, বদ দোয়া, অভিষাপ দেওয়া আর সার্চ লাইট জ্বালিয়ে রাখা সমান্তরালে চালায়। হোক ফেক আইডি, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, হাই হেলো, পোকাপুকি করা চাই ই চাই। গুরুজনের কথা উহারা ফালাইতে পারে না। গুরুজন বলেছিলেন, 'যেখানে দেখিবে ছাঁই, উড়াইয়া দেখিবে তাই। পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।' কবি লোকটা তো গুরুজনই, নাকি?? বয়সে বড় যে!!!!
১১) ছাগুঃ আপনি যদি প্রচন্ড রকমের ধার্মিক বা ধর্মভীরু হয়ে থাকেন অথবা রাজনীতি যদি আপনার রক্তে দুধে মেশানো জলের মত মিশে থাকে তাহলে এই প্রকারভেদের বর্ণনা না পড়াটাই ভালো হবে।
উড়ন্ত বিমানের পাখায় বসে কেউ ধর্ম গ্রন্থ পড়ছে, পানির নিচে অক্সিজেন ট্যাংক স্কুল ব্যাগের মত কাধে ঝুলিয়ে ধর্মের নির্দেশ পালন করছে, ছোট বাচ্চা ধর্মীয় ফ্যাশনের জামা গায়ে দিয়ে আছে, অসুস্থ কিংবা মুমূর্ষ কারো জন্য এক লাইক, কমেন্ট বা শেয়ারে সুস্থতা কামনা কিংবা তার জন্য প্রার্থনা, গাছের লতা, গরু, মাছ, ফল,পাহাড় রুটির উপর প্রভুর নাম স্পষ্ট লেখা আছে, কোন পশু অবধারিতভাবে স্রষ্টার নাম নিচ্ছে এসব ব্যাপার যাদের কাছে প্রচন্ড কিউট, বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় তারাই ছাগু। ফটোশপে এখন সব কিছুই করা যায়। কারো ওজন ১১৪ কেজি হলেও ফটোশপ দিয়ে দুইটা ডলা দিয়ে তাকে দেখতে ৫৭ কেজি করে ফেলা যায়। দ্যাটস হোয়াট ফটোশপ ইজ। এইসব ছাগুরা ফটোশপ কেরামতি আর নিজ নিজ প্রভুর কেরামতিও বুঝে না। তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয়, চাঁদে চতুর্থবার কে গেছে, এককথায় প্রকাশ করবে - সাইদী। রাজাকার সাইদী। আর এই ফটোশপ কেরামতি করেই ছাগুরা ফেবু চালায়, ফেসবুক কায়েম করে। ওদের কাছে ফেসবুক মানেই জলের উপর তেল ছড়ানোর মত করে গুজব ছড়ানো। ছাগুরা গুজব ছড়ায়, সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই। বুঝেও ওরা ব্যা-বুঝ থাকে। আর যারা ফেবুতে রাজনীতি করে ওরা আরো বড় ছাগু। রাজনৈতিক কোন পোস্ট দেখলেই তাদের জিভ লকলকিয়ে উঠে। এই প্রজাতি সম্পর্কে আরো অনেক কিছু বলার ইচ্ছা ছিলো। বাদ দিলাম। ওদের সম্পর্কে সর্ব শেষে বলা যায়, রাজনীতি আর ধর্ম ফেসবুকের মধ্যে নয়। রাজনীতি করতে হয় রাজপথে আর ধর্ম পবিত্র স্থানে।
১২) ম্যাঙ্গু পিপলঃ এরা উপরের কোন প্রজাতিতেই পড়ে না। এরা হচ্ছে সাধারন, স্ট্যান্ডার্ড ফেসবুকার। আমার, আপনার মত। ফেসবুক কিভাবে ইউজ করতে হয়, কিভাবে কারো অনুভুতিতে আঘাত না করে, কাউকে বিরক্ত না করে সামাজিক যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হয় সেটা এদের চাইতে ব্যাটার আর কেউ জানে না। কোন ইস্যুতে নাক না গলিয়ে, কে কি বললো, কি লিখলো সেটা নিয়ে মাতামাতি, গুতাগুতি, হুড়াহুড়ি না করেই ম্যাঙ্গু পিপল নিজের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবে। সেলিব্রেটি, ট্যাগ পিপল, ছাগু, সেলফিগ্রাফার সহ উক্ত এগারো ক্যাটাগরি এদের চোখের শুল। জুকারবার্গও আদর করে এদের কখনো ব্লক করে না। নিষ্পাপ, কোমল, স্নিগ্ধ ফুলের মত প্রোফাইল পিকচার নিয়ে এরা ফেসবুকিং করে যায়। ব্লক করার কেউ নেই। কেউ ব্লক করে না। কারো সাধ্য নেই করার।
শেষ। খুঁজে খুঁজে এই ডজন খানেক ক্যাটাগরির ফেসবুকার পাওয়া গেলো। অন্য কোন ক্যাটাগরি থাকলে কমেন্ট অপশনে বলতে পারেন।
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭
উল্টা দূরবীন বলেছেন: আমি এই ব্যাপারে শিওর না। বাংলাদেশের চাইতেও বেশী জনসংখ্যার দেশ আছে।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:০২
মনিরা সুলতানা বলেছেন: ইয়া মাবুদ
হাসতে হাসতে জীবন শেষ
কিন্তু আপনি তো ভাই ম্যংগো না
কোন ক্যাটাগরিতে জাবেন???
এত কিছু খেয়াল করে সুন্দর করে লিখেছেন।
অনেক অনেক শুভ কামনা
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৫৯
উল্টা দূরবীন বলেছেন: দিদি, সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আমার মনে হয় আমি 'কয়েল টাইপ' ক্যাটাগরিতে পড়ি।
সুস্থ্য থাকুন, ভালো থাকুন।
৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৩৬
মায়াবী রূপকথা বলেছেন: Mojar post to!
২৪ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৫১
উল্টা দূরবীন বলেছেন: হুম
৪| ০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৯:৩৮
ফারজানা ইয়াসমিন তিথি বলেছেন: জানারা আছে অনেক কিছু
১৩ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৫৮
উল্টা দূরবীন বলেছেন: বাঁচতে হলে জানতে হয় :p
৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:২৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: হার্টের একটা ভাল্ব, একটা কিডনি না থাকলেও চলে কিন্তু ফেসবুক থাকা চাই ই চাই -- হা হা হা... চমৎকার বলেছেন!
কমেন্ট সেকশন দেখলে যে কেউ নিজেই ঘাড় ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেল ঘুরে ধপাস করে পড়ে যাবে, গ্যারান্টি। ভুত, পেত্নীও ঘাড় এতো এঙ্গেলে মটকায় না --
ফেসবুকেও কিছু কিছু নির্লিপ্ত এরিস্টটল পাওয়া যায় -- ফেইসবুক এদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র।
খুবই মজা পেলাম, এই রম্য রচনা পড়ে।
আপনার "হয়তোবা ভুলে গেছো" কবিতায় একটা কমেন্ট রেখে এসেছিলাম।
২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৪
উল্টা দূরবীন বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ওই কবিতাটা হয়তো ড্রাফট করে ফেলেছি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:২৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
ফেবুর সবচেয়ে বেশী ব্যবহারকারী বাংলাদেশে।