![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেন এক অচিন মানুষের বাস মানুষের ভিতর? জর্জরিত বোধ তবু অভিনয় যেন সুখের সাঁতার!!
'হল' লাইফ বা 'হোস্টেল' লাইফ নিয়ে একটি রম্য। ছাত্রজীবনের কোন না কোন সময় যারা হলে থেকেছেন শুধু তারাই এই গল্পের গভীরে যেতে পারবেন বলে ধারনা।
প্রথম পর্ব এখানে
দুই
গ্রামে প্রতি বাড়িতেই হাস পালা হয়। ডিম আর হাসের মাংস উপাদেয় আহার। বাত রোগী, নব বিবাহিত পুরুষের উত্তম খাবার হাসের মাংস। খাইলে শরীর হিট হয়। অনেকে গরমকালে হাসের মাংস খেয়ে হিট সহ্য করতে না পেরে পানিতে নেমে ঘন্টার পর ঘন্টা ছিলো এমন গল্পও প্রচলিত আছে। হাস সারাদিন পানিতে ঘুরে বেড়ায়। ভুস করে ডুব দিয়ে শামুক, ছোটমাছ খায়। আবার অনেকে আগেরদিন নারকেল পাতা কেটে পুকুরে ফেলে রাখে। পরদিন তুললে সেখানে ছোট ছোট শামুক পাওয়া যায়। সেই শামুক ভেঙ্গে হাসকে খাওয়ানো হয়। খাবারের সময় হলেই হাসকে 'আয় আয় চৈ চৈ' বলে কয়েকবার ডাক দেওয়া হয়। ডাক শুনে হংসকুল এসে শামুক ভাঙ্গা খেয়ে আবার পানিতে নামে। দাপাদাপি করে। আচ্ছা, হাসকে যদি শামুক ভুনা করে দেওয়া হয় তাইলে কি তারা খায়? ভুনা শামুক ভাঙ্গার স্বাদ হাস জানে কিনা কে জানে? শামুক ভুনা আর পাতলা ডাল। হাসের সামনে দিয়ে একটা টেস্ট করা দরকার, তারা পছন্দ করে কিনা দেখা দরকার। হংসকুলেরও নির্দৃষ্ট কিংবা ব্যক্তিগত পছন্দ থাকতে পারে। পানিতে দাপাদাপি করে বলে কি তাদের সব ইচ্ছা ধুয়ে মুছে গেছে নাকি!!
হাসের গল্পের সাথে আমাদের হোস্টেল লাইফের অনেক মিল ছিলো, অমিলও ছিলো। ততদিনে ৬ তলা বাড়ির প্রতিটা ফ্লোর পরিপূর্ণ। মিরপুরের ২য় চিড়িয়াখানা বললে ভুল হতো না। হরেক রকমের ছেলেপেলে এসে উঠেছে। তখনো দু'এক জন ছাড়া কারো সাথে বন্ধুত্ত্ব হয় নি। আজব আজব কিছিমের পোলাপাইন দেখে ভালো লাগতো। আস্তে আস্তে কয়েকজনের সাথে ঘনিষ্টতা হলো। হোস্টেলে অনেক নিয়ম ছিলো। খাবারের নিয়ম, গেট বন্ধ হওয়ার নিয়ম, টাকা দেওয়ার নিয়ম, কথা বলার নিয়ম, হাটার নিয়ম, গোসলের নিয়ম, অজুর নিয়ম, নামাজের নিয়ম এইসব আরকি। ওই দেখ!! আবার ধর্মের দিকে চলে গেছি! থাক, লিখা যখন হয়ে গেছে তখন আর ব্যাকস্পেস দিবো না। ধার্মিক লোকের এই এক সমস্যা। সব জায়গায় ধর্মীয় অনুভুতির দন্ড জাগ্রত হয়। আমাদের দন্ড অনেক বলবান, আমরা হাসের মাংস খাই।
কোন কথা কোথায় চলে গেলো। বাদ দিলাম, বিরতির গল্প বলি। মশার জীবন চক্র ইয়াদ না থাকলেও হাঁসের জীবন চক্রের সাথে আমাদের অনেকটাই মিল ছিলো। খাবারের সময় আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো। ঘড়িতে সেই সময় হলেই কানে গায়েবী 'আয় আয় চৈ চৈ' বাজতো। বাবুর্চি আগে থেকেই নারিকেল পাতা বিছিয়ে রাখতো। আমরা থালাবাটি নিয়ে যেয়ে হাসের মত ভুস ভুস করে ভাজি, ভুনা, পাতলা ডাল খেতাম। সারাদিন দাপাদাপি করার পর হাসের মত ভাঙ্গা শামুক খেয়ে আসতাম, তবে সাথে ডাল থাকতো। প্রতি বেলায়। হোস্টেল লাইফে যদি কারো কোন নাইটমেয়ার থেকে থাকে তাহলে সেটা হলো সকাল বেলার আলুর গোলা আর তিন বেলার পাতলা ডাল। ডাল দিয়ে হাত ধোয়ার গল্প আগে অনেক শুনেছি। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের মত। আপেক্ষিকতা প্রমাণ করার সুযোগ পাই নাই কিন্তু ডাল দিয়ে হাত ধুয়ে প্রমাণ করেছিলাম।
এসাসিন ক্রিড গেমের বাজারে অনেক জনপ্রিয়। প্রচুর ফ্যান আছে এই গেমের। গেমের মধ্যে নিজেকে জলদস্যু নাবিক হিসেবে খেলতে হয়। এম্পায়ারের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। সাগরে ভাসমান জাহাজ নিয়ে শত্রু পক্ষের জাহাজ ধ্বংস করা লাগে। কামানের গোলা ছুটে যায় শত্রুপক্ষের জাহাজে। তারাও বিপরীতে গোলা মারে। নতুন পিসি পেয়ে বহুদিন সেই গেম খেলেছি। রাতের বেলায় শত্রুপক্ষের জাহাজের সাথে যুদ্ধ স্বপ্নেও দেখেছি কয়েকবার। কিন্তু স্বপ্নে যুদ্ধগুলা থাকতো অন্যরকম। যুদ্ধ করছি তো করছিই, আমি কামান দাগাই, তারাও কামান দাগায়। আমার কামান থেকে গোলা ছুটে গিয়ে তাদের জাহাজ বিধ্বস্ত করে দেয়। তাদের জাহাজ থেকে গোলার বদলে হোস্টেলের সেই আলু ভর্তার গোলা এসে সরাসরি আমার পাকস্থলীতে লাগে। পাকস্থালী বিধ্বস্ত হয়। দুঃস্বপ্ন আর খিদায় সকালে ঘুম ভাঙ্গে। আহত পাকস্থলী নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পরোটা খেতে যাই। আলুর গোলার সামনে আর যাই না। তাও মাঝে মাঝে সামনে পড়তে হতো। মাসের শেষে পকেট যখন খালি তখনি তাদের দ্বারস্থ হতাম। ব্যাটারা আমাকে দেখে দাঁত ক্যালিয়ে হাসতো।
আলুর গোলার সে কি মহিমা। রক্তবর্ণ গোলা খেয়ে আউটগোয়িংয়ে জ্বলে নাই এমন কাউকে হোস্টেলে আজ অবধি খুঁজে পাওয়া যায় নাই। প্লেটে আলুর গোলা আর পাতলা ডাল দিয়ে মাখন্ত ভাত নিয়ে সেই শামুক ভুনা খেতে বাধ্য করা হংসকুল যদি আমাকে দেখতো, তাহলে প্যাক প্যাক করে জানতে চাইতো, 'কি মিয়া! আপনার অনুভূতি কি?'
হোস্টেলের সব খাবার খারাপ ছিলো না। বিশেষ বিশেষ দিনে আমাদের স্পেশাল কেয়ার নেওয়া হতো, স্পেশাল আইটেম থাকতো। শুক্রবার, ধর্মীয় কোন বিশেষ দিন, বাড়িওয়ালার মেয়ের বিয়ে এই সব দিনে স্পেশাল ডিশ থাকতো। মাঝে মাঝে অতিউৎসাহী কেউ কেউ চাঁদা তুলে কোর্মা পোলাও খাওয়ার আয়োজন করতো আর বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে নিজের পকেট করছ দিব্যি চালিয়ে নিতো। চাঁদার টাকায় আর কিছু হোক না হোক ডাইনিং রুমে ভীড় পাওয়া যেত নিশ্চিত। হংসপালের মত সবাই একসাথে ভীড় করতো। ই'মেচিউরড কিছু ছেলেপেলের খাওয়ার জন্য অন্য রকম ব্যাস্ততা। সবার আগে গিয়ে খেতে হবে, দেরি করলে লেট হয়ে যাবে, শামুক ভুনা পাওয়া যাবে না টাইপ মানসিকতা। বিশেষ দিনে খাওনো দাওয়ানোর দায়িত্ব সেচ্ছায় কয়েকজন নিয়ে নিতো। মানুষের সেবা করা আতি উত্তম কাজ, সওয়াবের কাজ। সওয়াবের পাল্লার সাথে সাথে উহাদের পাকস্থলীর পাল্লাও একটু ভারী হতো। বেঁচে যাওয়া খাবার তো আর ফেলে দেওয়া যায় না। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। হংসপালের ভাই হয়ে কি শয়তানের কাজ করা যায়? আচ্ছা, অপচয়কারী শয়তানের কোন ভাই? বড় ভাই হলে তো দায়িত্ব অনেক বেশি। আর ছোট ভাই হলে তো খেমটি খেতে খেতে পটল ক্ষেতের দিকে যাওয়া লাগবে। পটল ক্ষেতে আবার এনাকোন্ডা থাকে। ডাইনোসর ও থাকতে পারে। আল্লা মালুম।
একবার বানিজ্য মেলায় গিয়েছিলাম বন্ধুরা মিলে। টিকেট কাউন্টারে ইয়া বড়ো লাইন। সামনে আগায়ই না। কয়েকজন অতীষ্ঠ হয়ে ভ্যাজর ভ্যাজর করতেছে। জানুয়ারী মাসের শীতের মধ্যেও কয়েকজন ঘেমে টেমে অস্থির। কারো কারো আবার ছোটটা পেয়েছে। লাইনে জায়গা হারানোর ভয়ে যেতে পারছে না। কেউ পরিবার নিয়ে এসেছে, কেউ প্রেমিকা নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সাথে, কেউ পুরা গুষ্ঠি নিয়ে। বানিজ্য মেলা পুরোটাই সেদিন বানিজ্য করে নিয়ে যাবে যাবে ভাব। কেউ রুখতে পারবে না। এসব ছোট ছোট দলের সবচেয়ে শক্তিশালী দেহধারী লোকটাই টিকেটের জন্য লাইনে দাড়িয়েছে। দলের বাকিরা একটু দুরে দাড়িয়ে তামাশা দেখছে। কেউ কেউ নানা রকম আবদার -ফরমায়েশ করছে। গোলগাল মুখের এক তরুণী তো না বুঝে বলেই ফেললো তার জন্য জানালার পাশের টিকেট নিতে। জানালার পাশের সিট না হলে সে বসবে না। অবশ্যই বাঁ দিকের জানালার পাশে। এসব আবদার শুনে লাইনে দাড়ানো পালোয়ান মুখ হা করে তাকিয়ে আছে। থুতনি বুকের সাথে লেগে গেছে তার। আবদারকারীর সেদিকে কোন খেয়াল নেই। ঠোঁটের দুই পাশ কান অবধি প্রসারিত করে স্মাইল দিচ্ছে। স্মাইলের সাথে সাথে সেলফি তোলার চেষ্টা। উল্টা দিক থেকে মোবাইলের টু মেগাপিক্সেল ক্যামেরায় সরাসরি আলো পড়ছে। ক্লিয়ার সেলফি আসছে না। তার উপর লাইনে দাড়ানো পালোয়ানের বেদা মাছের মত বিশাল হা করা মুখ সেলফির কদর আরো কমিয়ে দিয়েছে। ফেসবুকে এই সেলফি দিলে তেমন লাইক পাওয়া যাবে না। চেহারাই তো দেখা যায় না। কত সময় নিয়ে ডলে ডলে মেক-আপ করেছে। হতচ্ছাড়া সুর্যের আলোয় তরুণীর মেকাপ করা চেহারা সেলফিতে দেখা যাচ্ছে না! কি অলুক্ষুনে কথা!! জানালার পাশের সিট, সেলফি, ফেবু লাইক নিয়ে তরুণীর মন কিঞ্চিত খারাপ। মেলার সাউন্ড সিস্টেমে আবার বাপ্পা দা'র গান বাজছে। আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে.........
প্রতি শুক্রবার সকালে হোস্টেলে ডিম ভাজা আর খিচুড়ি দেওয়া হতো। রাজ্য জয়ী রাজার একমাত্র পুত্রও ডিম খিচুড়ি খাওয়ার জন্য কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে আসতো। ডাইনিংয়ে গিয়ে বিশাল লাইন ধরতে হবে। ডিমের লাইন। মিসটেক করা যাবে না। সাড়ে আটটা নয়টা নাগাদ ডিমের লাইন দীর্ঘায়িত হতো। বানিজ্য মেলায় প্রবেশের টিকেটের লাইনের মত ডিমের লাইনেও একটা অঘোষিত যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব ছিলো। কে কার আগে নিবে সে যুদ্ধ। সিনিয়রদের তেমন একটা টেনশন ছিলো না। এনি টাইম এসে পকাৎ করে লাইনের সামনে ঢুকে গেলেই হতো। কারো কিছু বলার সাহস নাই। পোলাপানের মধ্যে বিদ্রোহী ভাব ছিলো না। কাজী নজরুল সাবে দেখলে এইগুলারে থাবড়া দিয়া দু'চারটা দাঁত খুলে ফেলতো। ব্যাটারা, আর কত দেরি সইবি? লাথি মার ভাঙ্গেরে তালা টাইপ কছু একটা কর। নিজের ডিম আগেভাগে আদায় কর। কে শুনে কার কথা। নজরুল নাই বিদ্রোহী ভাবও নাই। থাকলে মোটামুটি অসুবিধা হইতো। সিনিয়াররা লাইনের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকবে আর পুচকি পাচকি মার্কা পোলাপাইন আগে!! তাও একটা ভাজা ডিমের জন্য!!! দুনিয়া থেকে কি আদব লেহাজ উঠে গেছে নাকি? হুঁ??
গতরাতে প্রেমিকার সাথে সারারাত কথা বলে কাটিয়ে দেওয়া ছেলেটা, টুয়ান্টি নাইনে সেভেনে রং করা ছেলেটাও ডিমের লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তারা সিনিয়ার। ঘুমের নেশা আর ক্ষুধায় লাইনের অগ্রভাগে ঢুকে আগেই ডিম নিয়ে নেবে এই ব্যাপারটা তাদের মাথায় ঢুকছে না। লাল হয়ে ডিমের মত বেরিয়ে আসা চোখ নিয়ে লাইনের শেষ ভাগে ঢুলুঢুলু হয়ে দাড়িয়ে আছে। জুনিয়র কয়েকজন আবার অতি উৎসাহে বড় ভাইয়ের ডিমের মত বেরিয়ে আসা লাল চোখ দেখছে। তারাও লাইনের শেষ দিকে। ডিম না পেলে সিনিয়ারের চোখ খুলে নিয়ে ভেজে খেয়ে ফেলবে এমন চিন্তাও কারো কারো মনে উঁকি দিচ্ছে। সমস্যা কি? পোল্ট্রি ডিমের কালার লাল, সিনিয়ার ভাইয়ের চোখের কালারও লাল। সাইজেও মনে হয় একই। মেডিকেলে পড়া কয়েকজনকে সিনিয়ারের চোখের সাইজ নিয়ে তর্ক করতেও দেখা গেছে। কিছুতেই তারা একমতে আসতে পারছে না। একজন দৌড়ে গিয়ে রুম থেকে হিউম্যান এনাটমি বই নিয়ে এসেছে। গতকাল রাতেই পড়েছিলো, এখন পাতাটা খুঁজে পাচ্ছে না। লাইন ছেড়ে অনেকেই পাতা খোঁজায় লেগে পড়লো। লাল চোখা সিনিয়ার ভাই তাদের সাথে বসে ডিম ভাজা আর খচুড়ি খেতে খেতে উপদেশ দিচ্ছে, আরে ব্যাটা!! এক পাতা এক পাতা করে দেখ। পেয়ে যাবি। এনশাল্লা।
অবশেষে সেই পাতা পাওয়া গেছে। চোখ সম্পর্কে বিস্তারিত সব কিছু লেখা। কিন্তু লাল চোখের সাইজ নিয়ে কিছুই লেখা নাই। মেডিকেল স্টুডেন্টরা সবাই হতাশ। লাল হওয়া চোখের সাইজ তারা জানে না। এই প্রশ্নটা যদি পরীক্ষায় আসে তাহলে কি হবে? সঠিক উত্তর তো কারো জানা নেই। পরীক্ষায় আসলো, লাল হওয়া চোখের ব্যাসার্ধ কত? উত্তরে কি লিখবে! আমি জানি না নাকি বইয়ে নাই এইরকম কিছু। সবাই বিমর্ষ হয়ে পড়েছে। এই প্রশ্ন পরীক্ষায় আসলে নিশ্চিত ফেল করা লাগবে এই ভাবনায় আবার ডিমের লাইনে দাঁড়িয়েছে। সিনিয়ারের চোখ খুলে তার ব্যাসার্ধ্য মেপে বইয়ে পাওয়া ব্যাসার্ধ থেকে বাদ দিলেই লাল চোখের ব্যাসার্ধ পাওয়া যাবে এটা কারো মাথায় আসে নাই। জুনিয়দের সবার মাথায় একটা চিন্তা। চোখের সাইজ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ডিমের লাইন ছেড়ে দেওয়াটা মোটেই ঠিক হয় নাই। খুবই অন্যায় হয়েছে। ডিমের লাইনে দাড়িয়ে সবাই করুন চোখে সিনিয়ারের ডিম-খিচুড়ি খাওয়া দেখতে দেখতে নিজের ডিম ভাজার জন্যে অপেক্ষা করছে। সবার দৃষ্টি সিনিয়ারের প্লেটে আটকে আছে। 'ক্ষুধার রাজ্যে পৃথীবি গদ্যময়, পুর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি' মনে হচ্ছে। যদিও চাঁদের প্রতি এই মুহূর্তে কারো কোন রুচি নেই। একটা ভাজা ডিম পেলে খিচুড়ি দিয়ে সিনিয়ারের মত করে খাবে এই ভাবনায় সবার মুখেই লালা জমছে।
ডিম খিচুড়ি খেতে খেতে সিনিয়ার ভাবছে অন্য কথা। মানীর মান আল্লা রাখে। ছাগলের দলের মত ওরা সবাই লাইন ছেড়ে না দিলে এত্ত তাড়াতাড়ি ডিম ভাজা পাওয়া যেতো না। লাইন ছেড়ে সবাই লাল চোখের পিছে লাগছে আর এই ফাঁকে ডিম পাওয়া গেছে। শুকরিয়া। আগামী জুম্মাবারে আবার চোখ লাল করে আসবে এই ভাবনায় খেতে খেতে সিনিয়ারের গলায় ভাজা ডিম আটকে গেছে। খাবার নিচে নামছে না। নিঃশ্বাস বন্ধ হব হব অবস্থা। সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করছে। বড় ভাইয়ের গলায় ডিম আটকেছে। মহামারী অবস্থা। ফিল্টারে পানি নেই। টেবিলের উপর সব পানির বোতল খালি। যে কোন মুল্যে ডিম নামাতে হবে। ট্যাপেও পানি নাই। জলশুন্যতা দেখে কয়েকজন উৎসুক কন্ঠে গালাগালি দিয়ে বাড়িওয়ালার জাত গুষ্টি উদ্ধার করায় মন দিলো। কয়েকদিন আগেই বাড়িওয়ালার মেয়ের বিয়েতে বাড়িওয়ালা সবাইকে একবেলা ভালো খাইয়েছিলো সে কথা কারো মনে নাই। মানুষ ভালো জিনিশ বেশিদিন মনে রাখে না। জাত গুষ্টি উদ্ধার প্রক্রিয়া চলছে। পানি থাকবো না কেন? ট্যাকা দিয়া থাকি না?! বড় ভাই যায় যায় অবস্থা। যে কোন সময় আজরাইল জান কতল করবে। কয়েকজন দোয়া কালাম পড়ে ফুঁ দিচ্ছে। যদি ডিম নামে। টিভির পিছনে দুই লিটারি বোতল ভরা পানি কারো চোখে পড়ছে না। একজন বিড়ালের পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার বুদ্ধি দিলো। কিন্তু সেখানেও তর্ক। বিড়াল ক্ষমা দিলে কাঁটা নামে। ডিম নামে কিনা কেউ জানে না। আচ্ছা, মুরগীর কাছে ক্ষমা চাইলে কি ডিম নামে? মুরগীর পা ধরে যদি বলে, 'ম্যাডাম, ক্ষমা দেন। জীবনে আর ডিম খামু না, ভুল হইছে' তাইলে হয়তো ডিম নামতে পারে। এই বুদ্ধি কারো মাথায় আসে নাই। বিপদে বাঙ্গালী হিতাহিত জ্ঞানাশুন্য হয়ে পড়ে।
অবশেষে ডিম নামানো হয়েছে। পেপসি পানে ডিম্ব মুক্তি। সিনিয়ার হতাশ চোখে চারদিক দেখছে। পেপসি খাওয়াতে সে মহা বিরক্ত। পেপসি ইহুদি পন্য। মুত খাবে কিন্তু পেপসি খাবেনা বলে ওয়াদা করেছিলো। আজ ওয়াদা ভঙ্গ হয়েছে। খুবই খারাপ কথা। ওয়াদা ভঙ্গ মুনাফিকের লক্ষণ। সিনয়ার তো মুনাফিক না। মাঝে মাঝে ধর্ম কর্ম করে, জুম্মাবারে জুমার নামজ পড়ে।
প্রতি রাতে ডাইনিং হলে ছেলেপেলেরা স্টার জলশা দেখতে দেখতে আহার করে। সেদিনও চলছিলো, মহাময়ী স্টার জলশা। সিনিয়ার খেতে গিয়েছে। ডিম্ব কেলেংকারির পর সঙ্গত কারনেই মেজাজ খারাপ। ইচ্ছা করতেছিলো লাত্থি দিয়া টিভি উড়াই দিতে। ছেলে মানুষ কিসের স্টার জলশা দেখে!! আর কোন চ্যানেল নাই!? একজন বললো, ভাই ইংলিশ চ্যানেল আছে। বলেই সিনিয়ারের হাতের থাবড়া খেয়েছে। সিনিয়ারের সাথে ফাইজলামি?? ইংলিশ চ্যানেল নদীর নাম। ডিম্ব কেলেংকারির পর বজ্জাত পোলাপাইন চান্স পেয়ে গেছে। কথায় কথায় বিটলামি করে। একটা শিক্ষা হয়েছে আজকে। কেউ আর বিটলামি করার সাহস পাবে না। বজ্জাত ছেলেপেলে। এগুলারে টিভি সহ পটল ক্ষেতে রেখে আসা দরকার। এনাকোন্ডার উৎসাহ নিয়ে খাবে। টিভি খাবে কিনা কে জানে। না খেলে টিভির ভিতরের সব মেশিন পত্র ফেলে দিয়ে খালি বডিটা পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। টিভির খাঁচায় অনেক শামুক পাওয়া যাবে নিশ্চই। হাঁসেরা শামুক খুব আগ্রহ নিয়ে খায়। তবে, ভুনা শামুক খায় কিনা জানা নেই। ছেলে মানুষ কেন স্টার জলশা দেখে আর হাস ভুনা শামুক খায় কিনা সেটা বিরাট এক রহস্য।
(চলবে)
১২ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৪৪
উল্টা দূরবীন বলেছেন: আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
২| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: সুন্দর লিখছেন।
নিরাপদ হবার জন্য শুভেচ্ছা।
১২ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৫০
উল্টা দূরবীন বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ
৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৫০
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: হা হা হা ঘুমের মাঝে স্বপ্নে ভিডিও গেইম খেলা দারুণ একটা ব্যাপার
১২ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৫
উল্টা দূরবীন বলেছেন: গেমের প্রতি নেশা ধরে গেলে এমন হয়। আর বেশি নেশা ধরে গেলে আরো অনেক কিছুই হয় যা কেউ ভাবেনি আগে :p
৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২০
চাঁদগাজী বলেছেন:
বিচিত্র লেখা
১২ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৭
উল্টা দূরবীন বলেছেন: হয়তোবা। আপনাকে ধন্যবাদ
৫| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০৯
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: হল লাইফ মনে পড়লো । হলে ডাইনিং এর পাতলা ডাল আর মসলাছাড়া তরকারি অবিসম্রনীয় আইটেম । তবে আমি ম্যাচ সদস্য ছিলাম শহীল্লাহ হলের ১নং ম্যাচে । সেখানকার কাওয়াদাওয়া সেই রকম খানদানি । সপ্তাহে একটিন মিনিফিস্ট মানে একটা ফিস্ট হতো আর ডালও সেইরকম সুস্বাদু । হল লাইফ শেয়ার ভাল লাগলো ।
১২ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:০০
উল্টা দূরবীন বলেছেন: ধন্যবাদ।
ছাত্র জীবনে হল লাইফের মত মজা আর নাই।
৬| ২৮ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: তবে একবার এক রাজহাসের হাসের গুতো খেয়েছিলাম, সেই থেকে হাসের মাংস দেখলেই পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়...৷
২৮ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১১
উল্টা দূরবীন বলেছেন: রাজহাঁসের গুতা আমিও খাইছি। ছোটবেলায়। আপনার কথা শুনে কামড়খাওয়া জায়গাটা আবার জ্বলে উঠলো।
৭| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: রক্তবর্ণ গোলা খেয়ে আউটগোয়িংয়ে জ্বলে নাই এমন কাউকে হোস্টেলে আজ অবধি খুঁজে পাওয়া যায় নাই -বেশ বলেছেন!
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৩৫
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ