![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেন এক অচিন মানুষের বাস মানুষের ভিতর? জর্জরিত বোধ তবু অভিনয় যেন সুখের সাঁতার!!
বুক ফেটে, চোখমুখ প্লাবিত হয়ে, মনের আকাশ ভেঙ্গে, দুই চোখে অঝোর ধারায় অশ্রুজল আসার কথা এতোদিন শুধু গল্প, উপন্যাস আর সিনেমাতেই দেখেছে মেয়েটা। সত্যি সত্যি কেউ এমন করে কাঁদতে পারে, এতো বেশি পরিমাণ দুঃখ পেতে পারে তাও সেটা অন্যকারো জন্য এটা ও এতোদিন বিশ্বাসই করতো না। অথচ এখন মনে হচ্ছে ঢিবি থেকে উইপোকারা যেমন মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে ওর মনের কষ্টগুলো, দুঃখগুলো, অভিমানগুলো নরম, কোমল মনের ঢিবি থেকে পাঁজর, বুক কুরে কুরে খেয়ে বেরিয়ে আসছে। অন্ধ উইপোকার মত দুঃখগুলোও মনকে জখম করে অশ্রুধারা হয়ে গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। নেমে আসছে বিরামহীন, অগণিত, অঝোরধারায়। নিজেকে কিছুতেই বুঝাতে পারছে না। আপোষহীন মন কিছুতেই মানতে চাইছে না। মনে হচ্ছে, চলে যাওয়াটাই সবকিছুর একমাত্র সমাধান হবে। সব কষ্ট, দুঃখ, দুর্দশা, গ্লানি, হতাশা ভুলে যাওয়ার একমাত্র উপায় খুঁজে পাওয়ার চিন্তায় বারান্দায় এসে বসেছে সে। আচ্ছা, দুঃখ, কষ্ট, অভিমানগুলো কি আসলেই অন্ধ?
তিন বছর আগের কথা। কাজিনের মাধ্যমে ভার্সিটির এক বড় ভাইয়ের সাথে মীমের পরিচয় হয়। পরিচয় পর্বটা মীমের কাজিন জোর করেই করিয়ে দেয়। হাই, হ্যালোর মাধ্যমে যে পরিচয়টা হয়েছিলো সেটা আস্তে আস্তে ভার্চুয়ালে গড়ায়। তারপর ক্যাম্পাস আঙ্গিনার আড্ডায়, ফুচকায়, রিক্সায়, পার্কে, রেস্টুরেন্টে, মুভি থিয়েটারে.....
প্রথম প্রথম মীমের কাছে ছেলেটাকে বাউন্ডুলে লাগতো। সারাদিন ঘুরাঘুরি, আড্ডা, ইন্টারনেট, চায়ের কাপ আর ঠোঁটে আগুন নিয়ে পড়ে থাকে। প্রথমে ছেলেটাকে পাত্তা দিতে চায় নি। বিদ্যুতের এক ঝলকের মত পরিচয়েই যে একেবারে হাতে-পায়ে-গায়ে মাখামাখি হয়ে হাসিমুখে কথা বলতে হবে তা নয়। আজকালকার ছেলেরাই লুল টাইপের। কোন মেয়ের সাথে প্রাথমিক পরিচয়েই এরা প্রেমে নিমজ্জিত হয়। হাবুডুবু খায়। তারপর মরে পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে চলে যায়।
অথচ মীমের ভাবনার সম্পূর্ণ বিপরীতটাই ঘটেছে। আলিফের সাথে দ্বিতীয়বার যখন দেখা হয় তখন সে মীমকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছে। কখনো দেখাই হয় নি অথবা চিনেই না এমন একটা মুড নিয়ে আলিফ মীমের দিকে তাকিয়েছে। ক্যাম্পাসের আঙ্গিনায় সবার সাথে আড্ডায় আলিফ হাসিমুখে কথা বলেছে। মীম নামের সম্পূর্ণ নতুন একটা মেয়ে সেখানে উপস্থিত আছে সেটা যেন ও খেয়ালই করেনি। মীম বারবারই ভেবেছে ছেলেটার এতো অহংকার কিসের? ওর মত সুন্দরীকে আলিফ কিভাবে এতোটা এড়িয়ে গেলো? হাই, হ্যালো, কেমন আছেন পর্যন্ত জিজ্ঞেস করলো না। স্নিগ্ধতা, কোমলতা, সৌন্দর্যকে অবজ্ঞায় সাইডে রেখে হেয়ালি করে চলার বৈশিষ্ট্য আলিফের মধ্যে দেখে মীম সেদিন কিছুটা অবাক, বিস্মিত, আপমানিত, রুদ্ধ হয়েছিলো।
তারপর আস্তে আস্তে সব পাল্টে যেতে লাগলো। আলিফের সাথে মীমের বন্ধুত্ত্ব হলো। সেই ঘোষিত বন্ধুত্ত্বের মাঝে অঘোষিত একটা টান ছিলো। আস্তে আস্তে সেই টান গাড় হলো। মায়ার, আবেশের, নেশার, প্রেমের এক সরলরেখা তৈরী হলো। একে অপরকে ভালোবেসে, হাতে হাত রেখে, বিশ্বাস রেখে, বাকি জীবন চড়ুই পাখির মত শিল্পের মধ্যে থেকে কাটিয়ে দিবে বলে একীভুত হয়েছিলো।
গত তিন বছরে একে অপরকে পাগলের মত ভালো বেসেছে ওরা। সবসময় কমিটমেন্ট ঠিক ছিলো। বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, অনুভুতি এক বিন্দুও কমেনি বরং দিনে দিনে বেড়েছে। রামধনুর সাত রংয়ের মত দুজনে বর্ণীল স্বপ্নের জাল বুনেছিলো। হাতে হাত রেখে পাশাপাশি হেঁটেছে মাইলের পর মাইল। একসাথে, একইভাবে ওদের সময় কেটেছে। কৃষ্ণচুড়ার ডালে আগুন লাগলেও ওদের মনে কখনো লাগেনি। নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে অথচ ওদের কারোই এক বিন্দুও অশ্রু গড়ায়নি।
কল্পনার প্রতিটা ফ্রেমে ওরা দুজন দুজনকে নিয়ে ভেবেছে। চোখ বন্ধ করে মনের দুয়ার খুলে বেরিয়ে পড়েছে ভালোবাসার বাগিচায়। একে অন্যেরপ্রতিটা কোষে ভালোবাসার স্পর্শ করেছে। মীমের মিষ্টি চুলের ঘ্রাণ আলিফের ঘ্রাণশক্তি অবশ করে দিয়েছে। একজন আরেকজনকে শুনিয়েছে হৃদয়ের অপেক্ষমান মামলার শুনানি।
মীমের চোখে চোখ রেখে আলিফ দেখেছিলো এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির কান্ডকারখানা, বুঝেছিলো ফিজিক্স ক্লাসের না বুঝা সেই 'বিগ ব্যাং' থিয়োরি। আলিফের চোখের আইরিশ, কর্নিয়া সব কিছুতে নিজের প্রতিফলন দেখেছিলো মীম। মীমের জন্যে হঠাৎ সাহসী হয়ে গিয়েছিলো আলিফ। গুটানো সার্টের হাতা ঠিক করে, চুল ঠিক করে, মাথা নিচু করে সাহসী হয়েছিল। না কামানো দাড়ি, গোঁফ আবার ক্লিন শেইভ হয়েছিলো। মীমের গায়ের মিষ্টি গন্ধ ধার নিয়ে, ডিওডোরেন্ট হিসেবে ব্যাবহার করেছিলো।
অথচ আজ মীম একেবারে একা। অরুচিতে আধখাওয়া সিগারেট যেমন করে ছুড়ে ফেলতো আলিফ তেমন করেই মীমকে ছুড়ে ফেলেছে। একেবারে একা, নিঃস্ব, রিক্ত, নিরেট করে দিয়ে আলিফ ত্যাগ করেছে ওকে। হঠাৎ ধেয়ে আসা দানব ঝড়ে মীমের দিনক্ষণ, মন, দেহ সব লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। যে মানুষটাকে এই সময়ে ওর খুব বেশি কাছে পাওয়ার ইচ্ছা ছিলো, প্রত্যাশা ছিলো সে মানুষটাই ওকে পঙ্গুর মত রেখে চলে গেছে।
গত মাসের এক্সিডেন্টের পর মীমের জীবন এভাবেই বদলে গেছে। সারাজীবন মীমের হুইলচেয়ার ঠেলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা না দেখিয়েই আলিফ নিজের মেরুদন্ডে সোজা থেকে পায়ে হেঁটে চলে গেছে। পেছনে রেখে গেছে জরাজীর্ণ, চুরমার, দহিত, ভঙ্গুর মনে বসে থাকা ল্যাংড়া মীমকে।
সকাল থেকেই বাসায় কেউ নেই। একা একা বারান্দায় হুইলচেয়ারে বসে বসে পুরনো, ঘুনে ধরা, মরিচা পড়া অথচ ওর কাছে এখনও চির সজীব দৃশ্যগুলো কল্পনা করতে করতে চোখের পানি ফেলছে। একসময় হকারের আওয়াজ কানে এলো মীমের। ইঁদুর মারেন, তেলাপোকা মারেন, ছারপোকা মারেন......
হঠাৎ মনে আসা ইচ্ছেটা মীমকে ফণা তুলে ছোবল মারছে। লাভের হিসেব এখন আর নেই। ওর প্রাণশুন্য দেহটা হুইলচেয়ারে পড়ে থাকলে কারো কোন ক্ষতি হবে না। বিষধর জীবন থেকে ও নিজেই মুক্তি পাবে।
১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:১১
উল্টা দূরবীন বলেছেন: গল্পের পোস্টমর্টেম করায় আপনাকে ধন্যবাদ। তবে গল্পের গল্প জিনিশটা একটু ক্লিয়ার করে বলবেন কি?
২| ১৩ ই মে, ২০১৫ দুপুর ২:১৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: কষ্টের গল্প।
১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:১২
উল্টা দূরবীন বলেছেন: হুম।
৩| ১৪ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:২৯
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: গল্পটা আরেকবার পড়তে হবে তাইলে
২২ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯
উল্টা দূরবীন বলেছেন: না পড়েই মন্তব্য করলেন নাকি?
৪| ০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ১১:৪৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: গল্পের শুরুটা চমৎকার হয়েছে। কিন্তু তারপরে একটু ঢিলেঢালা হয়ে গেছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:২২
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: গল্পের ধারাটা ভাল লাগেনি। একেবারই সাধারণ। কিন্তু উপমাগুলো সুন্দর লেগেছে। চড়ুই পাখির জীবন ইত্যাদি।
গল্পের গল্প যাকে বলে সেটাও ধরে রাখতে পারেনি।
best of luck