![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইমরান হোসেইন সুমন: ট্যাক্সি নম্বর ঢাকা মেট্রো-প-১৪-৩২৯৪। ১৯শে এপ্রিল এটি রাজধানীর কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকুইজিশন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। গাড়িটি দেয়া হয় এসবি’র ডিউটি টিমকে। ২৩শে এপ্রিল সকাল নয়টায় ট্যাক্সিটি আনার জন্য এসবি অফিসে যান গাড়ির মালিক মো. রাজু। সেখানে দায়িত্ব পালনরতরা জানিয়ে দেন এসবি অফিস থেকে গাড়িটি হারিয়ে গেছে।
গাড়ি ফেরত পেতে সংশিৱষ্ট দপ্তরে ধরনা দিয়েও ট্যাক্সি ফেরত পাচ্ছেন না তিনি। উল্টো তার গাড়ির চালক লিটনকে ওই গাড়ি চুরির মামলা দিয়ে রিমান্ডে, তারপর কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ রাজু’র। শুধু রাজু একা নন- এমন ঘটনার শিকার আরও অনেকেই। তবে রাস্তায় ‘শান্তিমতো’ চলার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। ট্যাক্সি মালিক আবদুল আজিজ বলেন, রিকুইজিশন বন্ধ হলেও সার্জেন্টরা যে কত সিস্টেম বাইর করে। কখনও বলে আলো জ্বলে না। কখনও গৱাসে আঁচড়। একটার পর একটা কেইস। জরিমানা গুনতে গুনতে জান শেষ। একাধিক চালক বলেছেন, গাড়ি রিকুইজিশনের পর সরকারি কাজের চেয়ে পুলিশের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হচ্ছে। শপিং ও হয় অনেক সময়। চালক মজিবর জানান, মতিঝিল থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা তার হলুদ ট্যাক্সি রিকুজিশন করে কেনাকাটা করতে গিয়েছেন।
ইস্টার্ণ পৱাজা ও বসুন্ধরা সিটির সামনে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছেন তাকে। এদিকে এক মাসের ব্যবধানে রিকুইজিশনের নামে চার থেকে ছয়বার একটি গাড়ি আটক থাকে। এর জন্য খরচ তো দূরের কথা এক কাপ চা-ও খাওয়ানোর আগ্রহ দেখায় না পুলিশ। উল্টো সরকারের দেয়া ২শ’ টাকা মূল্যের গ্যাসের সিৱপ জোর করে নিয়ে যায় তারা। পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই চুরি, পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। এরকম শ’ শ’ ট্যাক্সিক্যাব-প্রাইভেটকার, মিনিবাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাসের চালক পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন। ৪১ থানায় গাড়ি সঙ্কট থাকায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি রিকুইজিশন করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। প্রতিদিন গড়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন আড়াই শ’ গাড়ি রিকুইজিশন করছে তারা। তারপরও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন থানার ওসিরা। তারা বলেছেন, লক্কড়-ঝক্কর সরকারি গাড়ি দিয়ে দায়িত্ব পালন করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বড় কোন ঘটনা ঘটলে গাড়ির অভাবে ঘটনাস্থলেই যাওয়া যায় না। সাড়ে ৭ কোটি টাকার নতুন গাড়ি কেনার কথা থাকলেও তা কেনা হয়নি। মেয়াদ উত্তীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী এসব গাড়িতে চড়ে ডিউটি করতে গিয়ে পুলিশও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। ডিএমপি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশ বিভাগে গাড়ি সঙ্কট চলছে। একেকটি থানায় দু’টি থেকে তিনটি করে সরকারি জিপ থাকলেও বেশির ভাগ অকেজো। ডিউটি করার সময় মাঝে মধ্যে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে অচল হয়ে পড়ে। গাড়িতে থাকা পুলিশ সদস্যদেরই তখন তা ঠেলে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যেতে হয়। চিহ্নিত সন্ত্রাসীর অবস্থানের তথ্য জানার পরও গাড়ির অভাবে সময়মতো অভিযান চালানো যায় না। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, রিকুইজিশনের নিয়ম হচ্ছে একটি গাড়ি পুলিশ সর্বোচ্চ ৩ দিন ব্যবহার করবে। গাড়ির জ্বালানি এবং প্রতিদিন চালকের খরচ ৫০ টাকা করে দিতে হবে। সাধারণত রেন্ট-এ কার, প্রতিষ্ঠান, সিটি সার্ভিস রুটে চলাচলকারী বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের গাড়ি রিকুইজিশন করা হয় বেশি।
গাড়ির মালিক বা চালকরা গাড়ি দিতে টালবাহানা করলে তাদের হয়রানি করা হয়। ট্যাক্সিক্যাব চালক মজিদ জানান, দেড় মাসের ব্যবধানে মতিঝিল ও আদাবর থানা পুলিশ তার হলুদ রঙের প্রাইভেটকার চারবার রিক্যুইজিশন করে। সরকারিভাবে প্রতিদিন দুই শ’ টাকার গ্যাস কিনে দেয়ার কথা থাকলেও পুলিশ ওই টাকা গায়েব করে দেয়। বিভিন্ন স্থানে ডিউটি করার সময় এক টাকার নাস্তাও খেতে দেয়া হয় না। তিন দিনের কথা বলে ১৫ দিন গাড়ি আটকে রাখে। পুলিশ ইচ্ছা করে গরিবের পেটে লাথি মারছে। ডিউটি করার সময় গরম থেকে বাঁচতে তারা গাড়ির এয়ারকন্ডিশনও চালু রাখতে বাধ্য করে। মাঝে মধ্যে মামলা দিয়েও হয়রানি করে। মতিঝিলে কথা হয় ট্যাক্সিচালক আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, ৪ দিন হয়েছে তার গাড়ি রিক্যুইজিশন করেছে। কবে ছাড়া পাবো আল্লাহ জানেন। পুলিশের ডিউটি করতে গিয়ে পরিবারের খোঁজ নেয়া যাচ্ছে না। পুলিশ কোন খরচও দেয় না। বলতে গেলে ২৪ ঘণ্টা ডিউটি। এক থানা থেকে আরেক থানা। দৌড়ের ওপর রাখে আমাদের।
সংশিৱষ্টরা জানান, সচিবদের ব্যক্তিগত ব্যবহার থেকে শুর্ব করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের জন্যও প্রতিদিনই গড়ে নব্বইটি গাড়ি রিকুইজিশন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ডিএমপি’র ৪১টি থানাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্যও গাড়ি রিকুইজিশন করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, রিকুইজিশনের ভয় দেখিয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ট্যাক্সিক্যাব চালকদের নানা ধরনের হয়রানি করছে। ওদিকে ভুক্তভোগীরা জানান, গাড়ি রিকুজিশনের ৰেত্রে পুলিশ কোন নিয়ম মানে না। গাড়িটি কোন প্রতিষ্ঠানের, এটি স্কুলের কিনা, কোন প্রতিবন্ধী সংগঠনের কিনা অথবা ব্যক্তিগত কিনা- তা যাচাই-বাছাই করেন না সার্জেন্টরা। তবে পুলিশ বলছে তাদের ওপর চাপ থাকে উপরের বড় কর্মকর্তাদের। নির্দেশ অনুযায়ী গাড়ি রিকুইজিশন করতে না পারলে আবার মন্ত্রণালয়ের বড় কর্মকর্তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। সংশিৱষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে প্রায় সাড়ে ৫শ’টি গাড়ি আছে। ৪১টি থানা ও ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিবহন ও টহল ডিউটির জন্য এসব গাড়ি ব্যবহার হয়। কিন্তু ডিএমপি’র ২৪ হাজার সদস্যের জন্য এই গাড়ি যথেষ্ট নয়। এ কারণে প্রতিদিন পুলিশকে বেসরকারি মালিকানাধীন গাড়ি রিকুইজিশন করতে হয়। ডিএমপি’র উপ-কমিশনার (পরিবহন) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু পুলিশের জন্য নয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, র্যাব, ভ্রাম্যমাণ আদালত- এসবের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশকে গাড়ি রিকুইজিশন করে দিতে হয়। পুলিশের পৰ থেকে দাবি করা হয়, তাদের গাড়ি সঙ্কট। ডিউটি পালন করতে বেসরকারি মালিকানাধীন গাড়ির দিকে তাদের হাত বাড়াতেই হয়। এ নিয়ে পুলিশের সার্জেন্টদের সঙ্গে গাড়ি চালক বা গাড়ি মালিকদের বাক-বিতণ্ডার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এক মাইক্রোবাসের মালিক আবরার হোসেন জানান, গত মাসে আগারগাঁওয়ে পুলিশ তার প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবাস রিকুইজিশন করে। গাড়িটি কদমতলী থানার ডিউটির জন্য পাঠিয়ে দেয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনের গাড়ি রিকুইজিশন শাখায়। রাতে ডিউটিরত অবস্থায় ধলপুরে গাড়িটি নষ্ট হয়ে যায়। ওই সময় কদমতলী থানা পুলিশ গাড়ির চালককে রেখে চলে যায়। পরদিন রাত ৯টা পর্যন্ত মাইক্রোবাসটি নষ্ট অবস্থায় সেখানে পড়ে থাকে। পুলিশ এ ব্যাপারে কোন খোঁজও নেয়নি। এমনকি গাড়িটি ঠিক করেও দেয়নি। গাড়ির মালিক ওই স্থান থেকে গাড়িটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিয়ে আসেন।
ব্যক্তিগত কাজে
‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ১০৩-ক ধারায় যানবাহন রিক্যুইজিশন করা সম্পর্কে বলা হয়েছে, (১) বর্তমান বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহাই থাকুক না কেন, পুলিশ কমিশনার লিখিত আদেশবলে যে কোন যানবাহন ৭ দিনের বেশি নহে এমন সময়ের জন্য রিক্যুইজিশন করতে পারবেন। যদি ইহা জনস্বার্থে প্রয়োজন পড়ে। (২) উপধারা-১ মোতাবেক কোন যানবাহন রিক্যুইজিশন করা হলে এর মালিককে এর নির্ধারিত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।’ ট্যাক্সিক্যাব চালক সিরাজ জানান, গত ২রা মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মতিঝিল ইত্তেফাক মোড় এলাকায় ট্রাফিক সার্জেন্ট তার গাড়িটি আটকিয়ে রিকুইজিশনের ভয় দেখিয়ে ৫শ’ টাকা হাতিয়ে নেয়। তিনি বলেন, এভাবে প্রতিদিন ট্যাক্সিক্যাব চালকদের কাছ থেকে ট্রাফিক পুলিশ চাঁদাবাজি করছে। ট্যাক্সিচালক মোস্তফা জানান, তার গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-প-১৪-২৮৯৩) গত ৩রা মে মতিঝিল থানা পুলিশ রিকুইজিশন করে। টানা ৭ দিন তাকে দিয়ে ডিউটি করানো হয়। তিনি জানান, বেশির ভাগ সময় পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত কাজে তার গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের স্ত্রী-সন্তানেরা তার গাড়ি দিয়ে বিভিন্ন মার্কেটে গিয়েছেন। তিনি রিক্যুইজিশনের ডিউটি শেষে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার দুই দিন যেতে না যেতেই পুলিশ আবারও রিক্যুইজিশনের জন্য তার গাড়িটি আটক করে। কিন্তু তিনি যেতে না চাইলে পুলিশ তার গাড়ির ওপর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ট্রাফিক আইনের ১৩৭ ও ১৫৭ ধারায় মামলা ঠুকে দেয়।
সূত্রঃ Click This Link
ঘটনা সত্য।
২| ২২ শে মে, ২০১০ রাত ৮:৩৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: পোষাকী সন্ত্রাসী হল এরা...
পুলীশ বিভাগের কোটি কোটি টাকা যায় কই????
ঠুনকো অজুহাত বাদ দিয়া পরের ঝোল খাবার নেশা ছাড়াইতে হইবে!!
এদিকে শুনি ট্রান্সপোর্ট পুলে কোটি কোটি টাকার গাড়ী নষ্ট হচ্ছে!!
ডিজিটাল সরকার ডিজিটালি কি সমাধান করতে পারবে এই জন হয়রানীর??
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে মে, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৪
নিমপাতা১২ বলেছেন: বাংলা দেশের পুলিশ নামক দানব থেকে কবে যে দেশের মানুষ রেহাই পাবে তা বলা মুসকিল