![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আর দশ জনের মতো আমিও একজন সাধারণ বাংলাদেশী। সাধারণ হলেও মনের সুপ্ত ইচ্ছা ছিল দেশের জন্যে কিছু করা। সেই জন্যেই লিখি লিখেই কিছু করার ইচ্ছা। শুরু করেছিলাম সাংবাদিকতা দিয়ে, তাই বলতে পারেন আমি একজন সাংবাদিকও।
আগামিকাল সেই দিন যেদিন ভোরের আলো ভালো ভাবে পৃথিবীকে ভালো ভাবে আলোকিত করার আগেই কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে মারা যায় বিয়ের জন্যে বাংলাদেশে ফেরা বাংলাদেশের নাগরিক ও কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকার মেয়ে “ফেলানি”। সেই দিন শুধু গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি বিএসএফ ১৮১ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল অমিয় ঘোষ ও তার সাথীরা তাকে(ফেলানিকে) ঝুলিয়ে রাখে অনেকক্ষণ(প্রায় চার ঘণ্টা)।
পেটের টানে আর জীবিকার তাগিদে সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে গিয়েছিলো কিশোরী ফেলানির পুরো পরিবার। ওপার বলতে দাদাদের ভারত সাম্রাজ্যে। ৮ তারিখে আপন খালাত ভাইয়ের সাথে বিয়ের জন্যেই সেখান থেকেই আবার ফেরত আসছিলো দেশের ভিতরে। দালালদের খপ্পরে পড়ে কাঁটাতার পার হয়েই প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরতে চেষ্টা করে তারা। দালালদের কথামতো ভোরের আলো ফোটার আগেই কাঁটাতার পার হবার জন্যে মইতে উঠে তারা। ফেলানির উঠতে কষ্ট হবে বলে তার বাবা আগে মইতে উঠে এবং তিনি হাত ধরে উপরে তুলছিলেন তার পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যকার বড় মেয়ে ফেলানিকে। কিন্তু মই বেয়ে কিছুদূর উঠার পর, কিছু বুঝে উঠার আগেই ধেয়ে আসে একটি বুলেট যা লাগে ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানির বুকে, আর এতে মইয়ের উপরে থাকা ফেলানির বাবা গুলির শব্দে ও ভয়ে বাংলাদেশের দিকে পড়ে যায়। গুলিবিদ্ধ কিশোরী “পানি, পানি” করে আধাঘন্টা চিৎকার করলো কাঁটাতারে ঝুলেই। তারপর একসময় সে আর পারলো না। নিজেকে সঁপে দিলো ওপারের জগতে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আধাঘন্টা ঝুলে থেকে পানির অভাব নিয়েই ভোর পৌনে সাতটার দিকে মৃত্যুবরন করলো কিশোরী ফেলানি। কিন্তু এখানেই শেষ হয় না তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয় ৪ ঘণ্টা।( সুত্রঃ ফেলানির বাবা)
ফেলানির তো ঝুলে থেকে মারা গেলো কিন্তু জোরেসরে সার্বভৌমতের প্রশ্ন উঠল বাংলাদেশের। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে সংঘাতপূর্ণ দুটি দেশের নাম বলুন তাহলে কোন নাম বলবেন?
* ভারত-পাকিস্তান?
*ইসরায়েল-ফিলিস্তিন?
হয়তো এগুলোই হবে কিন্তু আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সীমান্ত হত্যা হয় কোন সীমান্তে? উত্তরটা কি হবে জানেন? উত্তরটা হবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। আর এই হত্যার কৃতিত্ব কতটুকু বিজিবির আর কতটুকু বিএসএফ এর সে কথা নিশ্চয় আলাদা করে হিসাব করে দিতে হবেনা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রত্যেকদিন গড়ে একজন করে মানুষ বিএসএফ হাতে মারা পড়ছে।
সবচেয়ে দুঃখের এবং সেই সাথে ক্ষোভের ব্যাপার হল আমাদের নিজেদের মানুষগুলোর আচরন। ফেলানির এরকম নির্মম মৃত্যুর পরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সে সময় পাওয়া যায়নি উল্লেখযোগ্য কোন প্রতিক্রিয়া। একটি বাড়ির জন্য হরতাল করা খালেদা জিয়া ফেলানি হত্যার প্রতিবাদে একটি মিছিলও ডাকেননি। সে সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ফেলানির মৃত্যুর পর প্রথমে ফেলানির নাগরিকত্বকেই অস্বীকার করেছিলেন। বলেছিলেন তিনি ” বিএসএফের হাতে নিহত ফেলানী বাংলাদেশি নয়। তারা ভারতীয়।” অর্থাৎ সে সময় তিনি ফেলানির লাশের দায়িত্বও এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। যদিও জন্মসূত্রে ফেলানি বাংলাদেশের নাগরিক।
অন্য এক সমীক্ষাতে পাওয়া যায়, ২০০১-২০১৩ সাল পর্যন্ত সীমান্তে মারা গেছে ১০৫০জন। তবে এই পর্যন্ত কোন বিএসএফ সদস্যের শাস্তি হইছে বলে খোঁজ পাওয়া যায়না। তাইলে কি বাংলাদেশের সবাই খারাপ, আর ভারতীয়রা পৃথিবীর সব চাইতে শান্ত আর র্নীতিবান? আমাদের উপরের মহলও ব্যাপার গুলো স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে। বিএসএফ সদস্যরা মেরে যেভাবে বলছে আমরা তাই বিশ্বাস করে নিচ্ছি। প্রতিবেশীকে খুব ভালো বন্ধু ভাবতে গিয়ে তাকে প্রভু বানিয়ে ফেলেছি।
গত কিছুদিন আগে ভার্সিটির বন্ধুরা মিলে গেছিলাম ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাতে, সেখানে কথা হয় বেশ কজন লোকের কাছ থেকে জানতে পারি, ভারতীয়রা প্রায়ই বাংলাদেশে আসে সীমান্ত দিয়ে তাদের বেশীর ভাগ অবৈধভাবে। প্রথম আলোতে একদিন পড়েছিলাম এক ভারতীয় নাগরিক যে কিনা এখন কক্সবাজারে রিক্সা চালাই। সে এদেশে এসেছিলো ঐ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে।
এখনও ছিটমহলের সুরাহা হোলনা। ছিটমহলের লোক গুলো কোন দেশের বাংলাদেশের নাকি ভারতের ?
©somewhere in net ltd.