নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উননুর

সামাইশি

সময় বয়ে যায়, ক্ষয়ে যায় জীবন, মন, সৃষ্টি, ক্লেদের গ্লানি জমা হোল যত যথাপি ঝরে যায় বৃষ্টি।

সামাইশি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তির আলয়।

০৯ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৮:০৫


(পূর্বের পর)
আব্বা ভাই কথা বলছিল, মনে হচ্ছিল ক্রন্দন বিলাপ করছে. ওখানে থাকা নিরাপদ না ভেবে আমরা বিলের মধ্যে দিয়ে পীরের বাগের দিকে রওনা দিলাম. কল্যাণ পুরের বিলের কিনারার দিকে আমার ফুপুর বাসা ছিল, ওখানে পৌছে আমরা সুস্থির হলাম আম্মাদের সেখানে দেখে. সাথে সাথেই কাল বিলম্ব না করে উনারা সহ আমরা মিরপুর সেকেন্ড কলোনির (শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান পিছনে ) গোলার টেকে আমার ফুপাত ভাই ওসমান ভাই ( সরকারী বাংলা কলেজের অধ্যাপক ) এর বাসার দিকে রওনা দিলাম. দারুসসালাম, টেকনিকাল এর রাস্তা এড়িয়ে ভিতর দিয়ে বাংলা কলেজ হয়ে যাওয়া হবে ঠিক মনে করে বাংলা কলেজের প্রিন্সিপালের বাসার সামনে পৌছে দেখি ওসমান ভাই এবং আমার চাচাতো দাদার পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে. ওসমান ভাই বলল ওনাদের এলাকায় আর্মিরা বিহারীদের সাথে নিয়ে নির্বিচারে বাঙালিদের হত্যা করছে. ভাইয়ের কলেজের ছাত্ররা এসকর্ট করে ওনাদের কলেজের এখানে নিয়ে এসেছে. সবাই একসাথে হয়ে আমাদের মনের জোর কিছুটা বাড়ল. বেশিক্ষণ ওখানে থাকা নিরাপদ হবে না, তাই প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কলেজের পিছন দিয়ে হেটে গাবতলীর রাস্তায় ওঠে বিউটি সিনেমা হলের দিকে কিছুদূর যেয়ে বা দিকে তাকাতেই চক্ষু ছানাবড়া. রাস্তার কিনার থেকে পিপিলিকার ন্যায় মানুষের লাইন জমির আইল ধরে তুরাগ নদীর ধরে গিয়ে থেমেছে. অকস্শাত গুলির শব্দ, দেখি এখনকার গাবতলী বাস টার্মিনালের পূর্ব পাশের গেটের রাস্তার উপর কয়েক জন মানুষ গুলি খাওয়া পাখির ন্যায় রাস্তার উপর পড়ে গেল. গুলির উত্সে সবাই ডান তাকাতেই দেখা গেল পাকিস্তানি আর্মি বিউটি সিমেমা হলের পিছনে জলাভূমির অপর পার্শে বর্ধন নগর (ঠিক আমাদের বন্ধু শিপনদের জায়গার উপর. ওদের জায়াগার পর সামনে তখন কেবল খোলা জলাভূমি ছিল দক্ষিনে মেইন রাস্তা পর্যন্ত ) থেকে পাখি মারার ন্যায় বাঙালি গুলি করে মারছে. আমরা দিকবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে রাস্তার সেখান থেকেই বা পাশে বিলে নেমে উর্ধশ্বাসে অলিম্পিকের “১০০ মিটার এর চেয়ে দ্রুতগতিতে”তুরাগ নদীর তীরে পৌছলাম.

ওখানে পৌছে আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম, নদী পার হতে পারব কিনা এই দুশ্চিন্তায়. কেননা হাজার হাজার মানুষ নৌকা মাত্র দুই তিনটা. আর নদীটা পার হতে পারলে আমরা আপাত: নিরাপদ কারণ আমিনবাজারের সেই পুরাতন ব্রিজের মধ্যিখানে গ্রুভ ওয়ালা দুটি রোলার ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিল ওখানকার মুক্ত্রিকামি জনগণ. ক্যামন করে যেন ওসমান ভাই তাড়াতাড়িই একটা নৌকায় সবাইকে ওঠালেন. তবে নৌকা পার হওয়ার কথা মনে হলে এখনো আমার গা শিউরে ওঠে. নৌকা ভরা মানুষ জন ডুবু ডুবু অবস্থা, নৌকায় জায়গা নাই আমার স্পষ্ট মনে আছে ভাই, মামা এবং সেখানে উপস্থিত তরুণ ছেলেরা লুঙ্গি কাছার দিয়ে, প্যান্ট গুছিয়ে নৌকার কিনার ধরে গরু পশু প্রাণীর ন্যায় পুরো শরীর ডুবিয়ে শুধু মাত্র মাথা উচু করে নদী পার হোল. নদী পার হয়ে দ্রুতই উপদ্বীপের ন্যায় আমিন বাজারের দক্ষিন অংশের গ্রামে গিয়ে পৌছলাম. ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে বিকেল. এতক্ষণে মনে হোল গত রাত্রের পর থেকে আমরা এখনো কিছুই খাইনি. মনে হতেই ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তিতে আমরা ছোটরা সবাই নেতিয়ে পড়লাম. তখন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখলাম, হাজার হাজার লোককে ওই গ্রামের লোক যে যেভাবে পারলো খাবার তৈরির ব্যবস্থা করে দিলো. আমরা আশ্রয় নিয়েছিলাম গ্রামের দক্ষিন অংশে খোলা জায়গায় যেখান থেকে আমিন বাজার ব্রিজটা দেখা যেত. আম্মা ফুফু, দাদী রান্না করছে এরই মধ্যে দেখা গেল আর্মির জিপ এসে ব্রিজের মাঝখানে দাড়িয়ে পড়ল ব্যারিকেডের কারণে. তখন ফিরে গিয়ে বিশ মিনিট পর আবার ফিরে এলো এবার আর ফিরে যাওয়ার নাম নেই, দেখে আমাদের আতঙ্কের মাত্রা ফের বেড়ে গেল. যাই রান্না হোল তাই (সাদা ভাত আর আলু ভর্তা) গোগ্রাসে সবাই চেটেপুটে খেয়ে নিলাম. পরে জীবনে অনেক জায়গায় অনেক লোভনীয় সুস্বাদু খাবার খেয়েছি তবে সেইদিনের মত খাবারের স্বাদ আজ পর্যন্ত আমি কোথাও পাইনি.

বিকেল গড়িয়ে এলো. আধার নামার নামার আগেই নিরাপদ স্থানে যেতে হবে. খাওয়া শেষ করেই ওসমান ভাই, আমার ভাই, মামা কিভাবে যেন একটা ট্রাকের ব্যবস্থা করলো. ওই ট্রাকে আমাদের পুরো ৪ পরিবার এবং অচেনা আরো অনেক মানুষ (নারী, পুরুষ, শিশু যুবা, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা ) গরুর ন্যায় গাদাগদি করে চেপে সাভার ধামরাইয়ের দিকে রওনা দিলাম. আমাদের ছোট ভাই মুকুটের বয়স তখন কেবল কয়েক সপ্তাহ, ওই অত টুকুন ছেলেকে কোলে নিয়ে সকলের গুতা গুতি খেয়ে মা কি করে ট্রাকের মধ্যে বসেছিলো তা এখনো আমার কাছে এক চরম বিস্বয়. নয়ারহাট পৌছতে পৌছতে সন্ধা হয়ে এলো. ছোট ফেরি (তখন ব্রিজ হয়নি) পার হয়ে ধামরাইএ উঠলাম. দেখলাম আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ সেখানে আগত মানুষদের বড় বড় ডেকচি থেকে অল্প অল্প পরিমান দুধ দিয়ে আপ্যায়ণ করে সামান্য হলেও সেবা করার চেচ্টা করছে. এর মধ্যে সেখানে ত্রাতা হয়ে উপস্থিত হোল ওসমান ভাইয়ের বাংলা কলেজের এক বা একাধিক ছাত্র। উপস্থিত ওসমান ভাইয়ের বাংলা কলেজের ছাত্র ধামরইএর একটু ভিতরে তাদের বাসায় আমাদের সবাইকে নিয়ে গেল.ছাত্রের বাবা ছিলেন খুব সম্ভবত ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর বা চেয়ারম্যান. সেই রাতে আমাদের ৪ টি পরিবারের প্রায় তিরিশ জন মুখের আহারের ব্যবস্থা উনারা হাসি মুখে করলেন. (ক্রমশ)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৮:৪৮

ফেরদাউস আল আমিন বলেছেন: মামা, খালা, চাচাদের মুখে শুনা ১৯৭১ সালের সেই অভূতপূর্ব একাত্মতার কাহিনী। গ্রামের জনগন অজানা শহুরে পরিবারকে (শহর ছেড়ে গ্রামে নিরাপদ অংশ গ্রহনেচ্ছু ধাবমান জনতা) না জেনে না চিনেই এই ঐতিহাসিক সহযোগিতা করেছিলেন। আশা করি সেই একাত্মতা ফিরে এসে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করবে।

১৩ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৫৪

সামাইশি বলেছেন: সত্যিই ভাই আবার আমাদের দেশের সবাই এক হয়ে দেশটাকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য একতাবদ্ধ হলে মুক্তিযুদ্ধের
শহীদদের রক্ত দান মা বোনের ইজ্জত লক্ষ্ কোটি মানুষে দুর্ভোগ এর যে ক্ষত তা উপশম হবে এবং আমরা বিশ্বের বুকে মাথা
উঁচু করে দাঁড়াবো। আপনার অন্তরের গভীর থেকে নি:সৃত মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.