নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উননুর

সামাইশি

সময় বয়ে যায়, ক্ষয়ে যায় জীবন, মন, সৃষ্টি, ক্লেদের গ্লানি জমা হোল যত যথাপি ঝরে যায় বৃষ্টি।

সামাইশি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কানাতা- আমাদের গ্রাম।

২৭ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৭:৫৩




কানাতা- আমাদের গ্রাম।

পৃথিবীর একেবারে উত্তর প্রান্তে শক্তিশালী এবং মুক্ত একটি দেশ। যে দেশের নাগরিকেরা নিজেদের স্বাতন্ত্র নিয়ে গর্ব বোধ করে। উত্তরাধিকার সুত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শাসনতন্ত্রের প্রতিভু, এবং উত্তর আমেরিকার একমাত্র প্রতিকী রাজতন্ত্র এখনো বিদ্যমান। এদেশের প্রথম এবং মূল শাসনতন্ত্রের মূল কথা হলো শান্তি, শৃঙ্খলা ও জনগনের কল্যানে ভালো শাসন ব্যবস্থা। একটি অত্যন্ত বিরূপ পরিবেশে কঠোর পরিশ্রম, মুক্ত চিন্তার প্রয়োগ এবং সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশটি আজ প্রশান্ত মহাসাগর থেকে অতলান্তিক ও উত্তর উত্তর মেরুর পুরো অঞ্চল জুড়ে বৃস্থিত। এদেশের নাগরিকদের জানতে হলে একটু সুদুর অতীতে যেতে হবে যারা এইদেশটিকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছ। আদিবাসী, ফরাসী এবং ইংরেজ. অর্থাত ইউরোপের অভিবাসীরা মুখ্যত দেশটির জন্মদাতা মূল জনগোষ্ঠী। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে ইউরোপে থেকে জাহাজ বোজাই করে দাগী অপরাধী, দুস্কৃতকারী, সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী এক কথায় ডাম্পিং করা হয়েছিল। কালক্রমে কিছু দেশ মাথা উচু করে তুলে দাড়ায়।

বিপরীত ক্রমে ধারণা করা হয় আদিবাসীরা বহু সহস্র বছর আগে এশিয়া থেকে এই দেশে অভিবাসন করেছিলো। অনেকেরই ধারণা দূর প্রাচ্চ্য এশিয়া হয়ে আলাস্কা দিয়ে বেরিং সাগরের তীর হয়ে স্থলভাগের যোগাযোগ ছিল সেইসময়। কালক্রমে সেই স্থলভাগ সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সৃষ্টিকর্তা এবং তার সৃষ্ট পরিবেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ থেকে এইদেশের আনাচে কানাচে তাদের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি, অত্যন্ত সুদৃঢ় ভাবে প্রোথিত হয় হাজার হাজার বছর ধরে। ইউরোপীয় অভিবাসীদের ভাষায় তারা ফার্স্ট নেশন এবং এইদেশের শাসনতন্ত্রে তাদের অধিকার শক্ত ভাবে সংরক্ষিত আছে ১৭৬৩ সালের রাজা চতুর্থ চার্লসের রাজকীয় ফরমান দ্বারা। যদিও সর্বদা তা যথাযথ সন্মানিত হয়নি সবসময়। ১৮০০ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ফেডেরাল সরকার তাদেরকে মূল স্রোতধারায় আত্তিকরনের জন্য আদিবাসী শিশুদের জোর করে আবাসিক স্কুল গুলোতে পড়তে বাধ্য করে। স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ছিলনা, তাদেরকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করা হত, আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা ছিল নিষিদ্ধ। মাত্র সেইদিন ২০০৮ সালে অটোয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের নিকট ক্ষমা পার্থনা করে। আদিবাসী বলতে মূলত তিনটি গ্রুপকে বোজানো হয়.ইন্ডিয়ান, ইনুইট এবং মেটিস।

ইউরোপীয়রা যখন প্রথম এদেশে আসে তারা মনে করেছিল ভারতের পূর্ব প্রান্তে অবতরণ করেছে। তারই অনুমান অনুসারে এদশের অধিবাসীদের তারা ইন্ডিয়ান বলে অভিহিত করেছিল। তাই বলে ওরা ইনুইট এবং মেটিস থেকে আলাদা। ইন্ডিয়ানরা ৬০০ টি সংরক্ষিত এলাকায় বসবাস করে। অল্প কিছু সংখ্যক বিভিন্ন শহরতলিতে বসবাস করে। ১৯৭০ সালে প্রথম তাদেরকে ফার্স্ট নেসন বলে অভিহিত শুরু করা হয়। ইনুইটরা সাধারণত ছোট এবং বিক্কিপ্ত: সমাজে আর্কটিক অঞ্চলে বসবাস করে। তাদের ভাষা হলো ইনুকটিটুট। সাগর, ভূমি এবং বন্যপ্রাণী সম্পর্কে তাদের অগাধ ধারণার কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরূপ পরিবেশে তারা খাপ খাইয়ে নিয়েছে। মেটিসরা হলো আদিবাসী এবং ইউরোপীয় পূর্বপুরুষদের মিশ্রনের জাতি। তাদের অধিকাংশই ফরাসী এবং ইংরেজ ভাষাভাষীর থেকে উত্পত্তি হলেও ওদের নিজস্ব ভাষার নাম মিচিফ। আদিবাসীদের ৬৫% ফার্স্ট নেসন, ৩০% মেটিস এবং ৪% ইনুইট। আদিবাসীদের সবাই সেই সময় শিকার করে, মাছ ধরে, শস্য ফলিয়ে জীবন ধারণ করত। কেও কেও ছিল যাযাবর কেবলি বাইসনের পালের পিছনে পিছনে ছুটে বেড়াত। ওরা আবার বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিল। যেমন হুরণ, উএন্দাত, ক্রী, ডেনি, ইরকুইস, সিআওউক্স ইত্যাদি।

ইউরোপীয় ব্যবসায়ী, মিশনারী, উপনিবেশকারীদের আগমনে আদিবাসীদের জীবন যাত্রা সম্পূর্ণ রূপে চিরতরে পাল্টে যায়। বহু আদিবাসী ইউরোপীয়দের বহন করা রোগের কারণে মারা যায়। তথাপি তাদের অধিকাংশই ইউরোপীয়দের সাথে মিলে মিশে সামরিক ও অর্থনৈতিক বন্ধনের মাধ্যমে ২০০ বছর এদেশের সমৃদ্ধির সোপান গড়ে তোলে। ইউরোপীয়রা প্রথম এদেশে আগমন করে হাজার বছর আগে। আইসল্যান্ডএর ভাইকিংসরা যারা গ্রীনল্যান্ডে উপনিবেশ স্থাপন করেছিলো। সেইসময় তারা ল্যাবরাডোর এবং নিউ ফাওল্যান্ড দ্বীপে ও পৌছেছিলো। সেইখানে আজ তাদের উপনিবেশের ধ্বংসাবশেষ আয়ানস অএক্স মিডোস বিশ্ব পুরাকীর্তির একটি দর্শনীয় স্থান। তারও অনেক পরে ১৪৯৭ সাল থেকে ইউরোপীয়রা পুরোদস্তর এদেশ আবিস্কারের অভিযান শুরু করে। জন কাবোট ইংল্যান্ডএর একজন ইতালীয় অভিবাসী প্রথম নিউ ফাওল্যান্ড, কেপ বার্টন দ্বীপে অবতরন করে। জনই প্রথম এদেশের পূর্ব উপকুলের ম্যাপ অঙ্কন করে। সে নিউ ফাওল্যান্ডকে ইংল্যান্ডএর অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। যদিও ১৬১০ সালের পর থেকে পুরোদস্তর ইংল্যান্ড থেকে অভিবাসন শুরু হয়। ১৫৩৪ থেকে ১৫৪২ এর মধ্যে ফরাসী জ্যাক কারটিয়ের তিন দফা আটলান্টিক পাড়ি দেন। জন প্রথম সেন্ট লরেন্স নদী দিয়ে আজকের মন্ট্রিয়েল এবং কুইবেক শহর পর্যন্ত তার আস্তানা গড়ে তোলেন। অত্র অঞ্চলকে সে ফরাসী রাজা ফ্রান্সিসের রাজ্য বলে ঘোষণা দেন। কারটিয়েরের লোকেদের হাতে ধৃত স্থানীয় ইরোকুওইঅন ভাষী দুই গাইডের মুখে তারা "কানাতা" শব্দটি শুনতে পায়. যার অর্থ হচ্ছে গ্রাম। (ক্রমশ)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:২৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আগ্রহটি জি্য়ে রইল :)

পরের পর্বের অপেক্ষায়....

++++++++++

২৯ শে জুন, ২০১৭ রাত ১:৫২

সামাইশি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।পরের পর্ব পেয়েছেন নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে। শুভ কামনা।

২| ২৭ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:১৫

আল ইফরান বলেছেন: এই বর্বরতার ইতিহাস নিয়ে ডি ব্রাঊনের একটা বই আছে, 'বিউরি মাই হার্ট এট উন্ডেড নি' (বাংলা অনুবাদও আছে সংঘ প্রকাশনী থেকে, রকমারি তেও পাওয়া যায়)।
এই সিস্টেমেটিক এথনিক ক্লিনসিং এর ইতিহাস আমার কাছে হলোকাস্টের থেকেও ভয়াবহ বলে অনুমিত হয়।

২৯ শে জুন, ২০১৭ রাত ১:৫৪

সামাইশি বলেছেন: আপনার তথ্যের জন্য ধন্যবাদ। বর্তমানে কানাডিয়ান সরকারগুলো সুযোগ পেলেই তাদের অতীত কর্মকান্ডের জন্য নেটিভদের
কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে। শুভ কামনা।

৩| ২৭ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:২৬

বিজন রয় বলেছেন: ইতিহাস আমার অত্যন্ত প্রিয় বিষয়।

লিখুন।

২৯ শে জুন, ২০১৭ রাত ১:৫৭

সামাইশি বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। এবং শুভ কামনা।

৪| ২৭ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:১৯

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: খুব সুন্দর পোষ্ট দিয়েছেন ভাই। জেনে ভালো লাগলো নতুন কিছু।

শিরোনাম দেখে ভেবেছিলাম বাংলাদেশের কোন জায়গা হবে হয়তো, কিন্তু পড়ে সম্পূর্ণ নতুন এক দেশ আবিষ্কার করলাম। ভালো লাগলো ভাই। কৃতজ্ঞতা রইল পোষ্টে।

২৯ শে জুন, ২০১৭ রাত ১:৫৫

সামাইশি বলেছেন: আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.