নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্প- নাম নেই!

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৩৭

আমার লেখা কয়েকটা flash fiction
গল্প-১
রবি ও জীবনের বন্ধুত্ব ভাঙবে কেউ ভাবতে পারেনি। প্রাণের বন্ধু ছিল ওরা। রবি না খেলে জীবন ক্ষুধার্ত থাকত, জীবন জেগে থাকলে রবিও ঘুমাত না।
কেউ যেন বিশ্বাসই করতে চায় না যে ওরা আর বন্ধু নয়। কেউ ভাবে- “নিশ্চয়ই কোন মেয়ে আছে এর মধ্যে। হয়তো একজনকেই দুজনে ভালবাসে, তাই এতোদিনের বন্ধুত্বের ভাঙ্গন”। কেউ বলে- “অতি বার বের না, ঝড়ে পড়ে যাবে; অতি ছোট থেকো না, ছাগলে মুরাবে”। কেউবা মনে করেছিলো, “দুইজনই আলাদা আলাদা রাজনৈতিক দল করে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন দুই মানুষের বন্ধুত্ব হতে পারে না।” কেউবা- “আরে বাদ দে, রবি ওই সুকান্তের দেখা পাইছে। এখন সুকান্তের কারণে জীবনের সাথে ঘুরে না। ওদের বনে না কিনা!”
আসল সত্য যেটা কেউ জানে না তা হোল-“রবি জীবনকে টাকা ধার দিয়েছিল।”

গল্প-২
রাসেলের স্ট্যাটাসটায় প্রথম লাইক দিয়েছে ওর জিফ।
রাসেল লিখেছিল- “আজ ব্রেকাপ করে ফেলবই। আর পোষাচ্ছে না এই সম্পর্ক রেখে।”

গল্প- ৩
“মা, তুমি সেই আগের যুগেই পড়ে আছো। এখন ঘরে বসে থাকার সময় নয় কারো ভয়ে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি মা। সব জায়গায় সমান অধিকার করে নেব আমরা। দেখো না, আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরধিদলীয় নেত্রী- দুই দলের প্রধান মেয়ে। আমরা আধুনিক যুগে বাস করি, মা। দেখো না সব জায়গায়- লেখাপড়া, রাজনীতি, চাকরি এমনকি দেশরক্ষায়ও আমরা অবদান রাখছি ছেলেদের মতো। আমরা আর দুর্বল নই মা- আমরা এতদিন বন্দী ছিলাম বলেই নিজেদের স্বাধীন ভাবতে পারি না, মা।” বলে তরী সন্ধ্যায় তার বান্ধবীর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলো মায়ের নিষেধ শর্তেও।
পরদিন সকালে লেকের ধারে ওর রক্তাক্ত-নগ্ন-মৃত-ধর্ষিত দেহ একজন দেখতে পুলিশে খবর দেয়। তরুণ সমাজ আর সুশীলেরা দুইতিনদিন মানববন্ধন আর প্রতীকী অনশন করে ওকে ভুলে যায়।

গল্প-৪
মা বারবার বলেছিল চুল কাটাতে। সায়হাম কাটেনি। বলেছিল, “পরীক্ষার সময় চুল বড় থাকার একটা সুবিধা হোল- চুল বড় থাকলে সবাই ভাববে, কি পড়ুয়া রে, এতো পড়েছে যে চুল কাটারও সময় পায়নি! ব্যাপারই আলাদা।”
সেবার পরীক্ষায় সায়হাম ফেল করে।

গল্প-৫
আমার বন্ধু রাশেদ বলেছিল একদিন, “ধর্ম নিয়ে এরা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। যখন ধর্ম কোন দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায় তখন সেদেশের পতন শুরু হয়। ধর্মের কোন প্রয়োজন নেই মানবজীবনে। এটা শুধু বিভেদ আর সাম্প্রদায়িকতা বাড়ায়।”
রাশেদ এখন ইসলামি ব্যাংকের এমডি।

গল্প-৬
“তুই যদি আর কোনদিন সিগারেট খাইস তাইলে আমি মারা যাব। তুই তোর সিগারেট নিয়ে থাকিস আর আত্মহত্যা করব।” উৎসের মা ওকে বলেছিল। ও মায়ের মাথায় হাত রেখে বলেছিল- প্রতিজ্ঞা করেছিলো, “সত্যি বলছি, আর কোনদিন খাব না। এই তোমার মাথা ছুঁয়ে বললাম।”
বিকেলে সোহেলকে উৎস বলে, “লিভ কেনার টাকা নাই দোস্ত, স্টার খাই।”

গল্প-৭
সাইয়েদ জামিলের কবিতা পড়ে রাগে গা শিরশির করে ওর। এতো অশ্লীল কবিতা কেউ লিখতে পারে! মনে হয় এখুনি যদি পারে খুন করে ফেলবে ওকে। জ্বালাময়ী একটা স্ট্যাটাস দেয় ফেসবুকে। লাইক কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়।অনেকে কমেন্ট করে, “আপনাদের মতো মানুষ আছে বলেই আজো বাংলা কবিতা টিকে আছে।” হাসে ও।
কে একজন জাইয়েদ জামিলের কবিতার পক্ষে নোট লেখে একটা। ও কমেন্ট করে, “চুদির ভাই, কবিতা বুঝিস? তোর মা** বাঁশ ঢুকাই দিব।”

গল্প- ৮
অনুপমের কথা আজ খুব মনে পড়ে আমার। আত্মহত্যা করেছে ও মেঘলার জন্য। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন। “আমরা বেঁচে আছি অকারণে। ওর মতো প্রতিভাবান একজন লাশকাটা ঘরে শুয়ে আছে আর আমরা গাধারা- যাদের দ্বারা কিছুই হবে না পৃথিবীর- যারা কিছু দিতে পারবোনা- শুধু অক্সিজেন নষ্ট করে দুষিত করছি সমাজ তারা বেঁচে আছি।”- মনে হয়েছিলো সেদিন আমার।
আজ আমি মেঘলাকে বিয়ে করছি।

গল্প-৯
দুই বাংলার সর্বাধিক পঠিত ব্লগার তিনি, তার কবিতা ফেসবুকে হাজারাধিক বার শেয়ার হয়। খিদের জ্বালায় ঘুম আসছে না তার। মনে হচ্ছে- এখুনি পেট সব নাড়িভুঁড়ি হজম করে ফেলবে। পকেটে এক টাকা নেই যে কিছু খাবে কিনে।
ব্লগে নটিফিকেশন জমা হয়ে আছে অনেক। চেক করে। একজন মন্তব্য করেছে তার কবিতায়- “আপনি এতো সুন্দর লিখেন কীভাবে? আপনার হাতের একটু ছয়োঁয়া দেবেন। এক কথায় অসাধারণ লিখেছেন আপনি”।
তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

গল্প-১০
তারিফ কল দিয়ে বলে অপুকে, “দোস্ত, তোর প্রিন্সেস এসছে আলম প্লাজায়। আয়।”
অপু বলে-“সময় নেই দোস্ত আর। আমি ওকে আর ভালবাসিনা।”
পিসি’র ব্যাকগ্রাউন্ডে(ওয়ালপেপারে) থাকা মেয়েটার পিকচারের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ও।

গল্প-১১
“আমেরিকা হচ্ছে সব নষ্টের মূল, বুঝলেন। শালাগুলা সারা পৃথিবীকে দাস বানায় রাইখছে। মনটা চায় মাঝে মাঝে হিরোশিমার বোমাটা মারি নিউইয়র্কে।” বলে ইয়াকুব নামাজ পড়ে আসার সময়। আরও বলে, “ইসলামের এক নাম্বার শত্রু এই অ্যামেরিকা, বুঝলেন। ওদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা আমাদের জন্য ফরজ।”
ইয়াকুব এখন লস এঞ্জেলসে একটা রুটির দোকানে কাজ করে। একটা লটারি ওর ভাগ্য খুলে দিয়েছিল।

গল্প-১২
“আমাদের যুব সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে। এরা পর্ণ মুভি ছাড়া কিছুই বোঝে না। এই স্কুলের কথাই ধরুন- যাদেরই মোবাইল আছে- চেক করে দেখুন- সবার মোবাইলে এক্স পাবেন।” বলেন “স্বপন কুমার গুহ” হাই স্কুলের গণিত শিক্ষক হামিদ।
আমরা হামিদ স্যারের ব্রাউজার চেক করলে দেখতে পারবো যে, সেখানে indiansexstories ডট নেট বুকমার্ক করা আছে।

গল্প-১৩
ছেলেটি আর মেয়েটি বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা হাত ধরে আছে পরস্পরের।ছেলেটা ছটপট করছে খুব, ও আরও কিছু চায়, মেয়েটা কিন্তু আজ রাজি নয়(বলেছি আজ রাজি নয়)- ছেলেরা এমনি। সবকিছু বেশিই চায়।
সেই সময় বাঘ আর বাঘিনী মিলিত হয় অবলীলায়। ছেলেটার মনে হয়, বাঘটা বন্দী থেকেও তার চেয়ে ভাগ্যবান।
-অনুবাদিত
গল্প-১৪
“শালা দেখছিস, কীভাবে কাপড় পইরছে। দুধগুলা দেখা যাচ্ছে এতদূর থাকিয়াও।” স্বাধীন এই কথা বললে আমি “হুম” বলি। “দেখলে মনচায় থাপড়ে বসায় দেই একেবারে।” আবারো হু বলে সাড়া দেই।
ওই মেয়েটা এখন স্বাধীনের জিফ। আমাকে স্বাধীন বলছে এখন, “একেবারে হার্ট থেকে লাভ করিরে, হাসতেছিস ক্যান। হাসার কিছু কইলাম নাকি?”

***
অনেক হয়েছে; এবার ফ্লাশ ফিকসন কি সেটা বলি। Wikipedia মতে “Flash fiction is a style of fictional literature or fiction of extreme brevity.” মানে- “ফ্লাশ ফিকশন হোল গল্পের সবচেয়ে ছোট ধারা” (অনুবাদটা বোধহয় ঠিক হোল না, ইংরেজি কম পারি তো)। আর এর আরেকটা সংজ্ঞা হোল- একটা সিগারেট খেতে যে সময় লাগে গল্পটা পড়তে যদি তারচেয়ে কম সময় লাগে তবে তাকে ফ্লাশ ফিকশন বলে। এজন্য এই ধারার গল্পের আরেক নাম হোল “smoke long” গল্প। সাধারণত এর আয়তন হয় তিনশো শব্দের মধ্য- একহাজার মতান্তরে। তবে এখন যারা লিখছে তারা তিনশো শব্দকেই আদর্শ ধরছে।
যাই হোক- আমাদের বাংলায় এই ধারাটা নতুন না। বনফুল সেই “শনিবারের চিঠি”র যুগ থেকে এরকম গল্প লিখে আসছেন। যাই হোক কথা হচ্ছে কথা তা না। এর একটা সুন্দর বাংলা আছে, “অনুগল্প”। আমি অনুগল্প শব্দটা ইচ্ছা করেই ব্যবহার করিনি । কেন করিনি জানি না।(কানে কানে বলি, কাউকে বলবেন না- ভাবটা এমন যে- দ্যাখ আমি অনুগল্পের ইংরেজি জানি-অল্প বিদ্যা ভয়ংকর কথায় আছে না, সেই রকম আরকি) কিন্তু এই অনুগল্প শব্দটা আগে কিন্তু ব্যবহার করা হতো না। গল্প তা সে যতোই ছোটই হোক তাকে ছোট গল্পই বলা হতো। এই ধারাটা শক্তিশালী হচ্ছে দিনদিন আমাদের ব্লগারদের কল্যানে। সামু, সচলায়তন এই ব্লগ দুইটার অনুগল্প অনেক উন্নতমানের- আমার তাই মনে হয়। আমার গুলো কি হয়েছে জানিনা। লিখতে ভালো লাগল লিখলাম। ভালো হবে না, কেউ পরবে না- এসব ভাবলে লেখাই হত না।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৩

খেলাঘর বলেছেন:

অনু থেকে কোনদিন আবার পরমানু বা নিউক্লয়াসে চলে যান কে জানে?

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: পরমানু, ইলেকট্রন প্রোটন সব গল্পই আসবে আস্তে আস্তে। মানুষের সময় বড় কম এখন। তাই অনুগল্প। যেদিন মানুষের অনুগল্প পড়ারও সময় থাকবে না সেদিন পরমানু গল্প আসবে এটা নিশ্চিত

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:

সময়ের অভাব, এক শব্দ দিয়ে কোন গল্প লেখা সম্ভব?

৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:২০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কি জানি আসবে হয়ত এক শব্দর গল্প| আমায এক শিক্ষকের কাছে শুনেছিলাম সবচেয়ে ছোট কবিতাটা নাকি এক শব্দের|এর নাম আমি এখন গোছল করব|মূল কবিতা ঝুপ!

৫| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:


তা'হলে ঠিকই এমন কিছু একটা আছে?

৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কি জানি, হয়ত আছে

৭| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮

শায়মা বলেছেন: সাইয়েদ জামিলের কবিতা পড়ে কমেন্টকারীর অবস্থা দেখে হাসছি ভাইয়া!

যাদের নিজের মুখের ঠিক নাই তারাই আবার যায় জামিল ভাইজানের কবিতার দোষ ধরতে! একেই বলে কানার নাম পদ্মলোচন! :P

৮| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫০

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ভালো।

৯| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হ্যা শায়মা আপু, এরকম প্রায় দেখি| নিজের মুখের ভাষার বারো অবস্থা, অন্যের ভাষা ঠিক করতে কোমড় বেঁধে নামে

১০| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ ব্লগার মামুদ পড়ার জন্য

১১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪

আবু শাকিল বলেছেন: অনুসরণ করলাম।

১২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ, আবু শাকিল ভাই

১৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:


১ম'টা বাস্তব

১৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হুম| টাকা মারাত্মক চিজ

১৫| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৫০

ভাঙ্গা ডানার পাখি বলেছেন: ৪, ৫, ৭, ৯ ভাল লেগেছে।

০৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:৪৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ

১৬| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: ২ নম্বরটা বেস্ট। তারপরে ৪,৫,৬,১১,১২,১৩,১৪।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হা হা| একেবারে প্রথম দিকের রচনা! ধন্যবাদ কষ্ট করে খুঁজে পড়ার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.