নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প-আমরা

১৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৫০

বুন্দেসলিগা কিংবা প্রিমিয়ার লীগের ফাইনালে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা শুধু বসে থেকে আলোচনা করি যদিও জানি আমরা কোন বিষয় সম্পর্কেই সম্পূর্ণ ভাবে জানি না।
অমল কাকার চায়ের দোকান আমাদের মুখস্থ হয়ে গেছে। প্রতিটি নিউরনে আমাদের প্রতিধ্বনিত হয় কাপের টুংটাং, চিনি দেয়ার সময় চায়ে চামচের ঘটঘটানি, কাঠের টেবিলে মজবুত শক্ত গ্লাস রাখার কঠিন শব্দ। ইচ্ছে করে মুখস্থ করিনি আমরা। আমাদের ইচ্ছে শক্তি অনেকদিন জং ধরে পচে গেছে। কিন্তু আমরা এখন অমল’কা পান খেয়ে পিক ফেলার সময় আয়েসের যে বেসুরো শব্দ করে তাও আয়ত্ত করে নিয়েছি।
আমাদের ইচ্ছে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমরা অমল’কার দোকানে আড্ডা গেড়েছি। এখন সকাল সন্ধ্যা- কোন কোন দিন অসহ্য হয়ে এলে সময়- দুপুরও কেটে যায় কাকার দোকানের বিচিত্র কিন্তু শুনতে শুনতে ঠেস লেগে যাওয়া আমাদের কানে অভ্যস্ত শব্দ কানে নিতে নিতে। আমাদের কণ্ঠ আর কোলাহলে নিমজ্জিত থাকে দোকানটার পরিপাশ। এজন্য অবশ্য আমাদের গঞ্জনা কম শুনতে হয় না। যে শব্দাবলী শোনার থেকে বাঁচার জন্য আমরা বাড়ি ছেড়ে কাকা’র দোকানে আশ্রয় নিয়েছি, সে-শব্দগুলোই আবার কাকার কন্থে ধ্বনিত হয়ে আমাদের মনে জ্বালা ধরিয়ে কান লাল করে দেয়। বাড়ির শতবারের মতো আমরা চুপ থেকে শুনি, কিছু সময়ের জন্য ঠাণ্ডা মেরে যাই কিংবা দোকানের বেঞ্চগুলোকে একটু আরাম করতে দিয়ে বাইরে আলোয় বেড়িয়ে আসি। আমাদের কানে তখন বাজে- “বাল্কামার ঘরের কোন কাম কাজ নাই, সারাদিন খালি হুড়াহুড়ি, হাসাহাসি। তোমার জন্যে মোর দোকানে কাস্টোমার আসে না”
মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করি আমরা, রুখে দাঁড়াই।
বলি, “শালা তোর দোকানে আর আসবোই না। সামান্য তো চায়ের দোকানদার- তারই এমন তেজ- কতো দেখলাম।”
আমরা প্রতিবাদ করলেই কাকার মুখ চলতে শুরু করে। বচসা হয়, মাঝেমাঝে তো মারামারির পর্যায়েই চলে যায়। আমরা জানি আমাদের পক্ষে দাঁড়াবার কেউ নেই বলে আমরাই শান্ত করি কাকাকে; কয়েকদিন আসি না দোকানে।
কিন্তু আবার কিছু দিনের মাথায় আগুন চড়ে যায় কাকার মাথায়, আবার আমরা সবাই একযোগে কোলাহল শুরু করি। চাপর মারি টেবিলগুলোয়, আমাদের নিষ্ঠুর আচরণে চিৎকার করে ওঠে তাদের বৃদ্ধ হাড়হাড্ডি। মাঝে মাঝে নিষ্পাপ- যাদের শরীরে আমরা সময় সময় লুকিংগ্লাসের অভাবে চেহারা দেখি, সেই কাপ গ্লাসও রক্ষা পায় না।
আমরা কিংবা আমাদের মধ্যে থাকা কেউ ক্ষ্যাপা গলায় বলে, “শালা মাদারচোদ পাইছে কি!”
আমাদের সবার মনেই এক-কথা ঘুরে বলে, সেই কথাই আমাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হতে থাকে। ভিড় জমে, আমরা সরে যাই সময় মতো।
কিছুদিন আমরা আর আসিনা দোকানে। তারপর আবার সেখানেই আড্ডা গাড়ি। নতুন করে আসলে কাকাও আর আমাদের কিছু বলে না, বরং আমাদের রসিকতায়- যেটাও পুরনো হয়ে গেছে অনেকদিন- যোগ দেয়।
তাই বলে আমরা যে কিছু করিনা তাও না। আমাদেরও ডাক পরে মাঝে মাঝে।
আমাদের মধ্যে কাউকে তারা ফোন করে বলে, “আসতে পারবি?”
আমাদের না যেতে পারার কোন কারণ নেই, তবুও তারা জিজ্ঞেস করে। তাদের অযাচিত কিংবা অপ্রত্যাশিত সম্মানে আমরা আপ্লুত হই। নিজেদের ক্ষণিকের জন্য হলেও দামি মনে হয়। আমরাও জবাব দেই তেলচর্বিত উচ্চারণে, “পারবো না কেন, ভাই? আপনি বললে সব পারবো।”
আমরা জানি আমাদের দরকার সামান্য। কিন্তু এই সামান্য কাজই যে আমরা করতে পারি সেটাই বা কম কিসে?
আমরা দল বেঁধে ভাইয়ে’র কাছে যাই। আমাদের কিছু করতে হয় না। আমরা শুধু সাথে থাকি। যা করার ভাই’ই করেন। তিনি কারো সাথে কথা বলেন আর আমরা ভাইয়ের দল ভারি করি।
কথা বলা শেষ হলে আমরা চলে আসি আর আমাদের হাতে চলে আসে আগামী কয়েক সপ্তাহ কাকার দোকানে আড্ডা জমানো আর চাবিস্কুট বিড়ি টেনে পড়ে থাকার লাইসেন্স।
আমরাও প্রগতিশীল ছিলাম। সব বিষয় সম্পর্কেই ছেড়ে দেয়া ভাব ছিল আমাদের। পোশাকআশাক সম্পর্কে আমরা বেশ খোলামেলা ছিলাম। কিন্তু এখন কেউ খোলামেলা কিছু পরলেই আমাদের গা জ্বলে যায়। আমাদের জন্য কেউ সেজে বসে থাকে না বলেই হয়তো আমরা জ্বলে যাই। আমরা তখন তাদের শরীর বিশ্লেষণে আমাদের সে জ্বালা মেটাই। আর ফেসবুকে “কেউ বুঝল না” টাইপের স্ট্যাটাস দিয়ে দূরের বন্ধুদের “দিতে হয় বলেই দেয়া” সান্ত্বনায় সামান্য আত্মপ্রসাদ লাভ করি; যদিও জানি আমরা কাউকে কিছু বঝাতে চাইনি।
আমরা একদিন যে মেয়েটাকে প্রাইভেটে, বড় ক্লাসে পড়ার সুবাদে অংক করিয়েছিলাম সেও এখন আমাদের এড়িয়ে যায়। আমরাই আগ বাড়িয়ে কথা বলি।
দেখা হলে হয়তো বলি, “ভালো আছো?”
সে হয়তো চোখ মাটিতে নামিয়ে উত্তর দেয় কিছু, অনেকসময় তা শোনা যায় না। কিন্তু আমরা তাতে থোরাই কেয়ার করি! প্রশ্ন করে যাই আরো কয়েকটা। যখন বুঝতে পারি একপক্ষের প্রশ্নে আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তখন ক্ষুণ্ণ কণ্ঠে বলি, “আচ্ছা যাও!”
আমাদের জন্য কেউ সেজে, খোপা খুলে চুল উড়িয়ে বসে থাকে না বলেই হয়তো আমরা অযাচিত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকি, কিংবা আমাদের উত্তর খোঁজার সাধ্যেও হারিয়ে গেছে কখন!
কোন উৎসবেই আমাদের ডাক পড়ে না। কিন্তু আমরা আমোদিত হই। দল বেঁধে হইহুল্লোড় করতে করতে আমরা উৎসবে যাই। সেদিন আমাদের জন্য বিশেষ আয়োজন করে নেই আমরা। যদিও আকসার আমরা গঞ্জিকার ধোয়া টানি কিন্তু সেদিন ধোয়ার মাত্রা বেড়ে যায়। ফেন্সিডিলের বোতল কিনতে যে ৪৫০ টাকা আমাদের খরচা হয়, তাতে আমরা বিশেষ চিন্তিত হইনা।
আমরা প্রতিজনই প্রায় চার পাঁচ স্টিক ধোয়া টানি। আমাদের চোখে তখন সবকিছুই রঙিন লাগে। শুয়ে থেকেও আমরা উড়তে পারি। চুলের উপর দিয়ে -সাদা কি লাল আমরা বুঝতে পারিনা ঠিকমতো- পায়রা উড়ে যায়। আমরা ধরার চেষ্টা করি- সমস্বরে চিৎকার করি। কিন্তু পায়রাটা আমাদের বীভৎস চিৎকারে হারিয়ে যায়। আমরা দুঃখিত হয়ে কেঁদে ফেলি অনেকসময়। আমাদের এই ক্রন্দনেও আনন্দ থাকে। কতদিন আমরা কাঁদি না! নাকি কান্নার ক্ষমতা আমাদের হারিয়ে গেছে?
আমরা বোধহয় শুধু এই কান্নাটুকুর জন্য আরেকটি উৎসবের অপেক্ষা করতে থাকি।

   কি লিখতে চাইলাম, কি হয়ে গেল!!!!

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:০৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভবঘুরে, স্বপ্নভাঙা যুবকদের জীবন যাপন এবং টুকরো অনুভূতির চমৎকার চিত্রায়ন। ভালো লাগলো।

১৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ হামা ভাই

২| ১৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৯

সুফিয়া বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

১৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৭ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৭

দীপংকর চন্দ বলেছেন: অনেক ভালো লাগা। অনেক।

অনুভূতির সাবলীল প্রকাশ।

অনিঃশেষ শুভকামনা জানবেন ভাই।

ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।

১৭ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:০২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হই সবসময়

৪| ১৭ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:১৫

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: হামা ভাইয়ের সাথে একমত ।
শুভকামনা রইল।

১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৪১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ মাহমুদ ভাই

৫| ১৭ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৪৯

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: আগামীর এক গল্পকারের সুনিপুণ এক গল্প। মুগ্ধতা রইল আরণ্যক।

১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৪৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, রাজপুত্র

৬| ১৭ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:২৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ভবঘুড়ে , বাউন্ডুলে .।

১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৪৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এদের নিয়ে লিখতেই ভাল লাগে। ধন্যবাদ অনেক

৭| ১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:৫৯

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভাল্লাগছে। সাবলীল লেখা। ++

১৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৪৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ

৮| ২০ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:৫১

জেন রসি বলেছেন: হতাশা এবং নির্লিপ্ততার মিশ্রণ।

চমৎকার।

+

২০ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ

৯| ২৩ শে মে, ২০১৫ সকাল ৯:৫৭

জুন বলেছেন: সমাজের এ সমস্ত যুবক সম্পর্কে তাদের অনুভুতি সম্পর্কে জানা হলো আরন্যক রাখাল
ভালোলাগলো অনেক।
+

২৩ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:৫৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

১০| ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:২৫

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। খুব সুন্দর এবং সাবলীল লেখা।

৩০ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ

১১| ১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ১:০৯

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: এই "আমাদের দল"কে খুব হিংসে হয়... বাউন্ডুলে, ভবঘুরে, বখাটে যাই বলি না কেন সবে, ওদের ঐ অদ্ভুত মায়াময় জগতটা'কে মনের অজান্তে হলেও ঈর্ষা করি।

লেখায় ভালো লাগা রইল, শুভকামনা।

১৭ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: "আমি ভবঘুরে হব এটাই আমার এম্বিসন" নচিকেতার এই গানের লাইনটা আমার খুব প্রিয়। আমি ওদের প্রতি ভালোবাসা আর ঈর্ষা যাই বলুন, সেটা থেকেই লিখেছি গল্পটা। আসলে এদের প্রতি আমার আলাদা একটা মুগ্ধতা আছে, আকর্ষণ আছে এদের জীবনাচরণের প্রতি :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.