নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"স্বর্গ হবে মোল্লা পাদরী আচার্যদের “দাড়ী-স্থান”?"---ওমর খৈয়াম ও রুবাইয়াৎ

০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:০৭

আবার যখন মিলবে হেথায় শরাব সাকির আঞ্জামে,
হে বন্ধুদল, একটি ফোটা অশ্রু ফেলো মোর নামে।
চক্রাকারে পাত্র ঘুরে আসবে যখন সাকীর পাশ,
পেয়ালা একটি উল্টে দিয়ো স্মরণ করে খৈয়ামে।

কিছুকিছু বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে লেখার জন্য হাত খুদবুদ করে, মন চঞ্চল হয়। মনে হয় কিছু একটা করা উচিৎ, জানানো উচিৎ সব্বাইকে- যা ভাবছি আমি, করছি যা অনুভব। তা যে সমকালীন বিষয় নয়, সেটা বলাটা বাতুলতা। সমকালীন বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে, দেশ আর সমাজ নিয়ে বলতে হলে, কয়েকটা বই লেখা যায় অনায়াসে [মিছে কথা!]। “বর্তমান সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বাঁচতে হলে এই এই করতে হবে” বললেই হয়ে যায়। কিন্তু যে বিষয় নিয়ে মন হয় উচাটন, অকারণ, তা তো এতো সহজ নয়! পড়তে হয় বিস্তর- অন্তত যেটা নিয়ে বলতে চাচ্ছি সেটা, বিভিন্ন জ্ঞানীগুণী কী বলেছেন- তাদের মূল্যায়নটা কেমন, আমি যা ভাবছি সেটা কতোটা সঠিক- ইত্যাদি মেলা ফ্যাঁকড়া এসে যায়। কিন্তু এতো ধৈর্য আমার কোথায়? কোথায় এতো প্রজ্ঞা? খুব জোর বাতাসে সিগারেট ধরালে যেমন সে সিগারেটের আয়ু অর্ধেক হয়ে যায়, ফুরিয়ে যায় নিমেষেই; আমার আগ্রহও তেমন, হালকা কোন ধাক্কাতেই আর খুঁজে পাওয়া যায় না, হারিয়ে যায়।
কোথায় যেন পড়েছি, রবি ঠাকুর ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে প্রার্থনা করতেন ঘণ্টা দুয়েক, তারপর পড়া! (আপনি এই ফাঁকে ভেবে নিন, ছাত্র জীবন শেষ হওয়ার পর, কতদিন পড়েছেন নিয়মিত। চাকরির জন্য গাইড মুখস্তের কথা হচ্ছে না) একদম স্কুল ছাত্রের মতো ছটা থেকে দশটা, তারপর জলখাবারের বিরতি কয়েক মিনিট। আবার পড়াশুনা বারোটা পর্যন্ত। তারপর কাজ। দুপুরে ভাতঘুম দিয়েছেন তিনি কোনোদিন, একথা রবীন্দ্রবিরোধী কবিকুল তো দূরের কথা, তার কট্টর সমালোচক আহমদ শরীফও বলতে পারবেন না। সন্ধ্যায় গান শেখাতেন ছেলেপেলেদের, শান্তিনিকেতনের। তারপর আবার পড়া, মাঝেমাঝে গুনগুন করে গান গাওয়া, লেখা আর সুর করা-রাত এগারোটা পর্যন্ত! মাঝেমাঝে ভাবি, তিনি বাইজীবাড়ি যাননি, মদ্য পান করেননি সারারাত, মাস্তি করেননি কারও সাথে, তবুও কেন লিখেছেন, “কেন যামিনী না যেতে জাগালে না, বেলা হল মরি লাজে!”
আমাদের স্যারেরা কি আর সাধে বলে যে লেখাপড়ার বিকল্প নেই! লেখাপড়া করলে রবি ঠাকুরও হওয়া যায়, চাই কি বগলদাবা করে নোবেলটাও নিয়ে এসে সাজিয়ে রাখা যায় ঘরে!
যাই হোক, এসব কথার সারকথা হচ্ছে এই যে, আমি পরিশ্রমী কেউ নই, মোটেও। আমিও আপনাদের মতো পড়ি খুব কম। তাই পরিশ্রমহীন এই লেখা পড়াটাও পণ্ডশ্রম! তাহলে লিখছি কেন? ঐ যে বললাম- হাত খুদবুদ করে!

সুন্দরীদের তনুর তীর্থে এই যে ভ্রমণ, শরাব পান
ভণ্ডদের ঐ বুজ্‌রুকি কি হয় কখনো তার সমান?
প্রেমিক এবং পান-পিয়াসী এরাই যদি যায় নরক
স্বর্গ হবে মোল্লা পাদরী আচার্যদের “দাড়ী-স্থান”!

আমরা যারা আধুনিক কবিতা পড়ি, শাব্দিক অর্থের চেয়ে যারা ভাবার্থকেই গুরুত্ব দেই বেশি কবিতায় কিংবা যারা কবিতাকে রাখতে চাই সমাজ, রাজনীতি থেকে দূরে, অন্তরালে- তাদের কাছে উপরের কয়েকটি লাইন একটু বেখাপ্পা লাগতে পারে। মনে হতে পারে ব্যাকডেটেড, পুরনো ধাঁচের। হ্যাঁ পুরনোই তো বটেই- আসলে এটা কয়েকশো বছর আগে রচিত ওমর খৈয়ামের দ্বারা আর এটার অনুবাদক হুমায়ূন আজাদের ভাষায় “মধ্যমানের কবি”(? এবং !) কাজী নজরুল। মধ্যযুগের কবিতা, অথচ এখনো কতোটা প্রযোজ্য আমাদের সমাজের জন্য! ব্যাকডেটেড, কিন্তু এক্সপেয়ার ডেট পার হয়নি এখনো- অন্তত আমাদের সমাজে, আমাদের দেশে!
হ্যাঁ, বলতে চাইছি রুবাঈ নিয়েই। রুবাঈ শব্দটার সাথে পরিচিত না হলে বলি, রুবাঈ হলো চার লাইনের কবিতা, যার প্রথম দুই লাইন ও চতুর্থ লাইনের মধ্যে অন্ত্যমিল থাকে, কিন্তু তৃতীয় লাইন অন্ত্যমিল ছাড়া। যেমন-
দেখতে পাবে যেথায় তুমি গোলাপ লাল ফুলের ভিড়
জেনো, সেথায় ঝরেছিল কোনো শাহানশা’র রুধির।
নার্গিস আর গুল-বনোসা’র দেখবে যেথায় সুনীল দল,
ঘুমিয়ে আছে সেথায়- গালে তিল ছিল যে সুন্দরীর।

এখানে লক্ষ্য করা যায় ককগক। মানে প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ লাইনে অন্ত্যমিল। একারণেই নিচের কবিতাটি একটি সুন্দর কবিতা চার লাইনের, কিন্তু রুবাঈ নয়-
কেরোসিন-শিখা বলে মাটির প্রদীপে,
ভাই বলে ডাকো যদি, দেব গলা টিপে।
হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদা;
কেরোসিন বলি উঠে, এসো মোর দাদা।। (রবীন্দ্রনাথ)
কিন্তু অনুবাদের সময় অনেক অনুবাদকই এই স্ট্রাকচার মানেননি। বিশেষত বাংলা অনুবাদের সময়। খৈয়ামের একটি বিখ্যাত রুবাঈয়ের অনুবাদ কান্তি ঘোষ করেছিলেন এভাবে-
সেই নিরালা পাতায় ঘেরা বনের ধারে শীতল ছায়,
খাদ্য কিছু, পেয়ালা হাতে, ছন্দ গেঁথে দিনটা যায়।
মৌন ভাঙ্গি মোর পাশেতে গুঞ্জে তব মঞ্জু সুর-
সেই তো সখি স্বপ্ন আমার, সেই বনানী স্বর্গপূর।

একই রুবাঈয়েরে আরেকটি ভার্সন এমন-
এইখানে এই তরুতলে, তুমি আমি কৌতহলে
এ জীবনের আর কটাদিন, কাটিয়ে দিব প্রিয়ে
সংগে রবে সুরার পাত্র, একটু খানি আহার মাত্র,
আর একখানি ছন্দমধুর কাব্য হাতে নিযে।

এই একই রুবাঈয়ের অনুবাদ নজরুল করেছেন এভাবে-
এক সোরাহি সূরা দিও, একটু রুটির ছিলকে আর
প্রিয়া সাকী, তাহার সনে একখানি বই কবিতার,
জীর্ণ আমার জীবন জুড়ে রইবে প্রিয়া আমার সাথ,
এই যদি পাই চাইবো নাকো তখৎ আমি শাহানশার!

অনুবাদের সময় নজরুল রুবাঈয়াতের সকল ধর্ম মেনে নিয়েই তর্জমা করেছেন, যেটা অন্যান্য অনুবাদকের কাছে পাওয়া যায় না। উপরের কান্তি ঘোষের অনুবাদটা সুপাঠ্য, সুন্দর এবং কিউট! কিন্তু ওমর খৈয়ামের ভেতরের যে তেজ, যে আগুন, খৈয়ামের যে নিয়ম না মানার প্রবণতা, সেগুলো একমাত্র কাজীর অনুবাদের পাওয়া যায়। হাজার হলেও দুজনই এক গোয়ালের! তিনি নিজেই বলেছেন- “ওমরের রুবাঈয়াতের সবচেয়ে বড় জিনিস তার প্রকাশ ভঙ্গি বা ঢং। ওমর আগাগোড়া মাতালের ‘পোজ’ নিয়ে তাঁর রুবাঈ লিখে গেছেন-মাতালের মতোই ভাষা, ভাব, ভঙ্গি, শ্লেষ, রসিকতা, হাসি কান্না-সব। .........আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি- ওমরের সেই ঢংটির মর্যাদা রাখতে, তাঁর প্রকাশ প্রকাশভঙ্গির যতটা পারি কায়দায় আনতে। কতদূর সফল হয়েছি তা ফার্সি-নিবিশেরাই বলবেন”।
এজন্যই সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন-
“ওমরই ওমরের সর্বশ্রেষ্ঠ মল্লিনাথ, কাজীর অনুবাদ সকল অনুবাদের কাজী।”
অবশ্যি কান্তি ঘোষের অনুবাদের খুব প্রশংসা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি বলেছিলেন কান্তি ঘোষকে-
“কবিতা লাজুক বঁধুর মতো এক এক ভাষার অন্তঃপুর থেকে অন্য ভাষার অন্তঃপুরে আনতে গেলে আড়ষ্ট হয়ে যায়। তোমার তর্জমায় তুমি তার লজ্জা ভেঙ্গেচ, তার ঘোমটার ভিতর থেকে হাসি দেখা যাচ্ছে”।
কিন্তু আমার রুবাঈয়াতকে ঠিক লাজুক বঁধু মনে হয় না। কবিতার জগতে ওমরের রুবাইয়াৎ যেন ছেড়ে দেয়া ভগবানের পাঁঠা। সে তেজী, গোঁয়ার, অবাধ্য- তাকে আটকে রাখা যায় না। কিন্তু কান্তি ঘোষ বাংলায় অনুবাদ করে সেই পাঁঠাকে খাসি করে দিয়েছেন! মদ খেয়ে যদি বাওয়ালই না করলাম তবে আর মদ খাওয়া কেন?
আর রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা সম্পর্কে বলতে বলা যায়, তিনি সবার পিঠ চাপড়ে দিতেন চোখ বন্ধ করে। মাঝমাঝে মনে হয়, কেউ যদি “তোমার বুকের মধ্যে ফুল/ তোমার কি সুন্দর চুল/ তোমার কানে একটা দুল/ আমি পুরাই মশগুল” টাইপ কবিতাও সমালোচনার জন্য পাঠাতেন তার কাছে, তিনি হয়তো লিখে দিতেন –“তোমার কাব্যখানা পড়লুম। পড়ে সে রস পেলুম তা বাংলা কাব্যের ভাড়ারে একেবারে নতুন। নবীন এর স্বাদ, অপরিচিত এই সুর, আনকোরা এর ভাষা। বাংলা কাব্যের জগতকে যদি একখানা স্বচ্ছ জলের পুষ্করিণীর সাথে তুলনা করা যায়, তবে তোমার এই কাব্যখানা সেই পুষ্করিণীর কোলা ব্যাঙ। ইকোলজি জানা লোকমাত্রই জানেন, পুষ্করিণীর বাস্তুসংস্থানের জন্য মাছের চেয়ে কোলা ব্যাঙের গুরুত্ব কম নয়!”
তারমানে বলছি না, কান্তি ঘোষের অনুবাদ খারাপ।

নজরুল কতটুকু আরবিফার্সি জানতেন, তা নিয়ে বিতর্ক আছে অনেক। শৈশবে দারিদ্র্যের সাথে লড়েছেন, তাই, সুযোগ পাননি পড়ার। তবে সেসময় বাঙালি মুসলিম পরিবারে আরবিফার্সি শেখার রেয়াজ ছিল। কিন্তু তিনি খুব ভালো মানের আঁতেল ছাত্র ছিলেন, এমন কথাও শোনা যায় না। যে ছাত্র স্কুল না গিয়ে মাঠের মাঝে, বটের তলে বসে বাঁশি বাজিয়েছে, অন্যের বাড়িতে দুবেলা খাওয়ার বিনিময়ে অনেকটা কাজের লোকের মতোই খেটেছে, পরীক্ষার খাতা প্রশ্ন কমন না পড়ায় বোঝাই করে রেখে এসেছে স্বরচিত কবিতায়, সে যে খুব মনোযোগ দিয়ে ফার্সি কাব্য পড়েছে ছেলেবেলায়, তা বলা যায় না। তাই তার ফার্সিআরবি জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকের। প্লানচেটে তার সাথে কথা বলার উপায় কোনভাবে কেউ করে দিলে তাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতুম ব্যাপারটা! তবে এটা মেনে নিতেই হবে যে, তিনি হয়তো পণ্ডিতদের মতো আরবি জানতেন না, জানতেন না ফার্সি গবেষকদের মতো, কিন্তু অন্তর দিয়ে আয়ত্ত করেছিলেন সে ভাষা দুটো, তাদের চেয়ে অনেক বেশি। আর তার কবিতায় তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে জায়গা করে নিয়েছে এসব ভাষার শব্দ।
নজরুল খৈয়ামের অনুবাদ কেন করেছিলেন, যেখানে তার আগেই কান্তি ঘোষ প্রমুখ করেছেন? তিনি কি তাদের অনুবাদে খুশী ছিলেন না? নাকি নিজের প্রয়োজনেই করেছেন?
নজরুলকে নারীঘেঁষা কবিতার জন্য (নারীঘেঁষা শব্দটি দিয়ে আমি লুল বোঝাতে চাইনি) সে সময়ের মুসলমানেরা কাফের বলে আখ্যায়িত করেছিল। আর ‘যবন’ বলে মেনে নিতে পারেনি তখনকার হিন্দু সমাজ। তবে হিন্দুরা শিক্ষাগত দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল বলে, তাকে সাদরে নিজের করে নেয়ায় বেলায় তারা দেরী করেনি। কিন্তু মডারেট মুসলিম তাকে মেনে নেয়নি কখনোই। তাই তিনি হয়তো এমন কাউকে খুঁজেছিলেন, যার সাথে নিজের অবস্থার মিল আছে। যাকে তার মতোই ক্রসফায়ারে পড়তে হয়েছে। আর এক্ষেত্রে ওমর খৈয়াম তার অগ্রজ।
এক হাতে মোর তসবী খোদার, আর হাতে মোর লাল গেলাস,
অর্ধেক মোর পুণ্য-স্নাত, আধেক পাপে করল গ্রাস।
পুরোপুরি কাফের নহি, নহি খাঁটি মুসলিমও-
করুণ চোখে হেরে আমায় তাই ফিরোজা নীল আকাশ। (ওমর খৈয়াম
)
ঠিক এমন কথাই বলেন নজরুল তার ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতায়-
মৌ-লোভী যত মৌলভী আর মোল-লারা কন হাত নেড়ে,
‘দেব-দেবীর নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে!
(...) হিন্দুরা ভাবে, পার্শী-শব্দে কবিতা লেখে, ও পাত-নেড়ে!
(...)গোরা-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কনফুসি!
স্বরাজিরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহাদের অংকুশি!

এমন উভয় সংকটে পড়েই হয়তো কবি নজরুল অনুবাদ করেছেন এসব রুবাঈ। তবে এটা আমার অনুমান মাত্র। কোন নজরুল গবেষক এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।

বঙ্কিম চ্যাটার্জি মীর মশাররফের রচনা পাঠ করে ঠোঁট উল্টে মন্তব্য করেছিলেন, “এই লেখকের রচনায় পেঁয়াজ-রসুনের গন্ধ বেশি পাওয়া যায় না”। এটাকেই তখনকার মুসলিম সাহিত্য সমাজ মেনে নিয়েছিল স্বীকৃতি হিসেবে। বাংলা ভাষার যে সুললিত গদ্য বঙ্কিম সৃষ্টি করেছিলেন, তা তার নিজের অবদান অবশ্যই। কিন্তু তিনি যে স্টাইলে লিখেছেন, তা তৈরি করা, আরোপিত। ফোর্ড উইলিয়াম কলেজের সংস্কৃত পণ্ডিতেরা সংস্কৃত থেকে প্রচুর পরিমাণে ধারদেনা করে বাংলা লেখ্য ভাষার একটা কঙ্কাল দাঁড় করিয়েছিলেন। সে কঙ্কালে মাংস লেপে দিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র। কিন্তু কথ্য ভাষার সাথে তার তফাৎ ছিল আকাশ পাতাল। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই তফাৎ দূর করেছিলেন প্রহসন রচনা করে। ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ আর ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ তে দেখিয়ে দিয়েছেন সবার চোখে আঙুল দিয়ে যে কথ্য বাংলাও সাহিত্যের ভাষা হতে পারে।
কিন্তু মুসলিম সমাজে মাইকেল মধুসূদন তো দূরের কথা বঙ্কিমের মতো প্রতিভাধরও কেউ জন্ম নেয়নি, জন্মানো সম্ভবও ছিল না। তাই মুসলিম সমাজের মুখের ভাষাটা সাহিত্যে স্থান পেতে সময় লেগেছিল অনেক। সে সময়ে উচ্চমুসলিম পরিবারে ফার্সিতেই কথা বলা হতো, আর সাধারণ মুসলিমের ভাষায় বাংলার সাথে আরবিফার্সির মিশেল থাকতো বেশুমার। আর সেটা হতো স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই, তাই এটাকে মেকি হাইব্রিড ভাষা বলা অন্যায় হবে। কিন্তু সেই ভাষা মুসলিম সাহিত্যিকেরা সাহিতের বাহন করতে পারেনি। তারা সেই ফোর্ড উইলিয়ামের ভাষাতেই রচনা করেছিলেন। এটা তাদের অক্ষমতা ধরলেও ধরা যায় আবার যদি বলা হয় সে সময়ের কট্টর হিন্দু সমাজ সেই ভাষারীতি মেনে নেবে না বলেই তারা আর সে পথে যায়নি, তাও ভুল বলা হবে না।
কিন্তু নজরুল তার পূর্ববর্তী সাহিত্যিকদের মতো মিইয়ে ছিলেন না। তিনি মুসলিম সমাজের মুখের ভাষাটাকে তার কবিতায় স্থান দিয়ে, কথ্য ভাষাকে জায়গা করে দিয়েছিলেন সাহিত্যে। প্রথম দিকে তৎকালীন হিন্দু সমাজ তার কবিতায় বঙ্গিমের মতো ‘পেয়াজ-রসুনের’ গন্ধ পেলেও শেষতক মেনে নিয়েছিল, বলা যায় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলো। হ্যাঁ, এটা তার কবিতাকে কতোটা উন্নত করেছে, তার সাহিত্য এতে হয়েছে কতোটা চিরকালীন, সমৃদ্ধশালী- সেটা অন্য বিচার।
নজরুলের এই ওমর খৈয়াম অনুবাদ- তার এই ধারাকে, আরবিফার্সি মিশেল কাব্যের ধারাটাকে- করেছে আরও শক্তিশালী, আরও মজবুত, নিঃসন্দেহে। নজরুলের আগমত যেমন বাংলায় একটি অসাধারণ ঘটনা, তেমনই এই রুবাঈইয়াতও অনন্য সাধারণ। কান্তি ঘোষের অনুবাদে সে স্বাদ বাঙালি পায়নি, সে মজা পায়নি সত্তেন দত্তের তর্জমায়, সেই টেস্ট পাওয়া গিয়েছিলো নজরুলের রান্না করা কাব্যে।

নাস্তিক আর কাফের বলো তোমরা লয়ে আমার নাম
কুৎসা গ্লানির পঙ্কিল স্রোত বহাও হেথা অবিশ্রাম।
অস্বীকার তা করব না যা ভুল করে যাই, কিন্তু ভাই,
কুৎসিত এই গালি দিয়েই তোমরা যাবে স্বর্গধাম? (ওমর খৈয়াম)

ওমর খৈয়াম মূলত ছিলেন গণিতবিদ। এছাড়া জ্যোতির্বিদ্যাতেও তার অবদান আছে। জ্যামিতির অনেক সমস্যার সমাধান তিনি করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যেই মধ্যপ্রাচ্যে ইবনে সিনার মতো প্রতিভাবান জন্মেছেন, যেখানে বসে ওমর খৈয়াম সমাধান করেছেন জ্যামিতির জটিল সব বিষয়, সে মধ্যপ্রাচ্য বিজ্ঞানে এতো পিছিয়ে গেল কীভাবে? এর প্রশ্নের উত্তর একটাই। সেখানে প্রশ্ন করার কোন সুযোগ নেই, উত্তর খোঁজার কোন অধিকার নেই। ধর্মের সাথে সংঘর্ষ লাগতে পারে, এমন কিছু ওরা চিন্তাও করতো না, চিন্তা করতে দেয়াও হতো না। তাই আজ মধ্যপ্যাচ্য একটা অচলায়তন ছাড়া কিছুই নয়।
আজকের বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবলেই ঐ মধ্যপ্রাচ্যের কথাই মনে পড়ে। এখানে আমলারা চোখ বন্ধ করে ঘুষ খেয়ে পেটে চর্বি জমায়, সেনাবাহিনী কাউকে ধর্ষণ করে হত্যা করে, রাজনীতিবিদ মুখের বলীরেখা সামান্যও না কাঁপিয়ে মিথ্যে বলে অঢেল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সব ধরণের অপকর্ম করে শাসক দল- অথচ এদের কাউকেই কোপ খেতে হয়না। কোপ খেতে হয় তাদের, যারা মানুষের অধিকারের কথা বলে। যারা এই অচলায়তন ভাঙার চিন্তা করে, যারা বিশ্বাস করে একটি বৈষম্যহীন সমাজের যেখানে নারী পুরুষ থেকে শুরু করে সমকামী, উভকামী, হিজড়া সবার মর্যাদা সমান- যারা প্রমাণসহ দেখিয়ে দেয় অন্ধবিশ্বাসের অসাড়তা, যারা আলো হাতে আঁধারের যাত্রীকে নিয়ে আসতে চায় আধুনিকতায়, তাদের কোপ খেতে হয়, গুলি খেতে হয়। মধ্যপ্রাচ্যের ক্লোন ছাড়া আর বলা যায় কি, একে?
আর যারা চুপ করে আছে, তাদের মৌন সম্মতিকে ঘৃণা করার ভাষা খুঁজে পাইনা। তাদের কানে গিয়ে চিল্লিয়ে বলে আসতে ইচ্ছে করে, ‘আপনারা সারা জীবন পাতার পর পাতা লিখেও একজন মানুষের একটা ঘণ্টাও পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু যাদের মেরে ফেলা হচ্ছে, তারা সম্পূর্ণ জীবন একজনের পাল্টে দিতে পারে, পাল্টে দিতে পারে চিন্তাচেতনা।”
ওমর খৈয়াম এমন এক মৃত অসভ্যতায় নিজেকে আবিষ্কার করে তাই লিখেছিলেন-
খৈয়াম- যে জ্ঞানের তাঁবু করলো সেলাই আজীবন
অগ্নিকুণ্ডে পড়ে সে আজ সইছে দহন অসহন।
তার জীবনের সূত্রগুলি মৃত্যুকাঁচি কাটলো হায়,
ঘৃণার সাথে বিকায় তারে তাই নিয়তির দালালগণ।

রুবাইয়াৎ ই ওমর খৈয়াম এর অনুবাদের ভূমিকা- কাজী নজরুল ইসলাম

মন্তব্য ৩৮ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (৩৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:১১

বিজন রয় বলেছেন: এত উচ্চমানের লেখায় কি আর বলার থাকে।

অসাম।

০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:১৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনি তো আর নিম্ন মানের পাঠক নন। তাই আপনার অবশ্যই আশা করবো!

২| ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:১১

বিজন রয় বলেছেন: আলাদা সময় নিয়ে মন দিয়ে পড়তে হবে।

০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:১৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অবশ্যই। এনি টাইম

৩| ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪২

ক্লাউড বলেছেন: নজরুল ছিলেন বনের ফুল, রবীন্দ্রনাথ বাগানের। বঙ্কিম, মধুদাদা এদের নিয়ে আলাদা কিছু বলার নাই। আমার কাছে সাহিত্যের আসল মান নির্ভর করে পাঠকপ্রিয়তায়। অতি উন্নতমানের লেখাও দেখবেন বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে পারবে না। কারণ্‌, তা বোঝার মত জ্ঞান হয়তো সমাজের ৫% এরও নাই। আবার কেউ সমাজের ৯০% সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে গেলো। সেই সাধারণ ধারাও একটা ধারা। কি বলবো ভাবার পর যে এই কথাগুলো লিখলাম ভুলে গেছি।

যাইহোক, সিগারেট কেবল বাতাসেই দ্রুত ফুরায় না, সিগারেটের আগুন নীচের দিকে ধরে রাখলেও দ্রুত শেষ হয়, আগুনের মাথাটা উপরের দিকে রাখবেন, বরকত দিবে। হুমায়ুন আজাদকে আমি পছন্দ করিনা, কিছু কবিতা অসাধারণ, অনেক লেখাও। কিন্তু অহংকারী, সব বুঝে যাওয়ার মত একটা গর্ব আছে, এটা খারাপ। আবার এতকাল পরে এসেও খৈয়াম সাহেবকে নিয়ে কথা বলছেন, সেটাই প্রমাণ করে উনি কালজয়ী, কে কি বললো এতে উনার মুল্য একটূও কমবে না।

০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
অতি উন্নতমানের লেখাও দেখবেন বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে পারবে না। কারণ্‌, তা বোঝার মত জ্ঞান হয়তো সমাজের ৫% এরও নাই। আবার কেউ সমাজের ৯০% সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে গেলো।
এটা যতটা না পাঠকের ব্যর্থতা, তার চেয়ে বেশি ব্যর্থতা লেখকের। লেখকের উচিৎ পাঠকের মনে পৌছনো, না পারলে তার ভাগীদার অন্য কেউ হবে কেন?
আর অবশ্যই ওমর খৈয়াম চিরকালীন। তিনি হাজার বছর আগের অথচ তাকে নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে এই সেদিন থেকে, দুশো বছর ধরে। এর থেকেই বোঝা যায়, তিনি কতোটা এগিয়ে ছিলেন তার সময়ের চেয়ে, সমসাময়িক মানুষদের চেয়ে।
আর হুমায়ূন আজাদকে আমার ভালো লাগে। অসাধারণ একজন লেখক তিনি। কিন্তু সব কথা তার মানি না।

৪| ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: দুর্দান্ত একটা লেখা! গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়লাম ।
কাজীর অনুবাদে খৈয়ামের বেশ কিছু রুবাই পড়েছি, হাফিজের রুবাইও পড়েছি । লেখাগুলোয় কেমন মাদকতা অাছে ।

০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৪:১৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হাফিজের রুবাঈ পড়া হয়নি। পড়তে হবে!

৫| ০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:০৩

সাহসী সন্তান বলেছেন: চমৎকার পোস্ট! কবিতার ব্যাপারে বলতে গেলে, আমি একটু বেশি উদাসিন। কারণ আছে অনেকগুলো, তবে তার মধ্যে একটা অন্যতম কারণ হলো বুঝি কম। তবে পড়তে বেশ ভাল লাগে! আর সেজন্য অবসর সময়ে মাঝে মাঝে নজরুল, রবি ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ এবং জসিম উদ্দিনের কবিতা পড়ি।

ওমর খৈয়ামের ব্যাপারে আমার আগ্রহের কমতি নেই। লোকটা বিরল প্রতিভার অধিকারি একজন কবি ও দার্শনিক। তার জীবনে পড়েছি, কবিতাও পড়েছি তবে অনুবাদকৃত। এবং সেটাও প্রিয় কবি নজরুলেরই অনুবাদ! আমার মনে হয়, নজরুলই উনার কবিতাগুলোর সব থেকে ভাল অনুবাদ করতে পেরেছেন (অন্যদের অনুবাদ পড়িনি, সেজন্যই এমনটা মনে হচ্ছে কি না জানি না)!

রুবাঈ ব্যাপারটা জানতাম, তবে এতটা ক্লিয়ার ছিলাম না। আপনার পোস্ট থেকেই ওটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। ওমর খৈয়ামের কবিতা নিয়ে আলোচনা হবে আর রুবাইয়াৎ থাকবে না, তাই কখনো হয় নাকি? ধন্যবাদ বিস্তারিত ভাবে বিষয়টা জানানোর জন্য!

অনুবাদের ব্যাপারে বলতে গেলে বলতে হয়, বর্তমানে অনেক লেখক বা কবি আছেন যারা অনুবাদ করতে গিয়ে নিজেদের লেখার রং চড়ানোর জন্য অনেক সময় মূল লেখা থেকে দূরে সরে যান। যেটা আমার কাছে খুব একটা ভাল লাগে না। হ্যাঁ এমনটা হতে পারে যে, একটা শব্দের অনেকগুলো মানে থাকে। এবং অনুবাদ হয়তো অনুবাদের ক্ষেত্রে সব থেকে আকর্ষণীয় শব্দটা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তাই বলে মূল শব্দ থেকে দূরে সরে যাওয়া ঠিক না। তাতে কবি এবং কবিতা দুইটাই অপমানিত হয়! আর এ কারণেই নজরুলের অনুবাদ গুলো আমার কাছে সব থেকে বেশি ভাল লাগে! কারণ অনুবাদ করতে গেলেও তিনি কখনো মূল লেখা থেকে বিচ্যুত হন না!

একজন স্বল্পশিক্ষিত মানুষের মেধা দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত না হয়ে পারি না। কবিতার সব স্তরেরই নজরুলের যেন অবাদ যাতায়াত ছিল!

চমৎকার পোস্টে ভাল লাগা! শুভ কামনা জানবেন!

অফটপিকঃ 'আরবি এবং ফার্সি' দুইটা আলাদা আলাদা ভাষা! সুতরাং এদের মাঝে কমা অথবা একটা স্পেস দিলে ভাল হয়!

০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৪:২২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সাস ভাই, কবিতা যে আমিও খুব বেশি পড়ি তা নয়, তবে মাঝেমাঝে পড়া হয়।
অনুবাদ সফল তখনই হয়, যখন মূল লেখার টেস্ট পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে নজরুল অসাধারণ একটি কাজ করেছেন। এখনো কেউকেউ অনুবাদ করছেন রুবাইয়াৎ। কিন্তু সেটা সেই মানকে অতিক্রম করছে না, পারছে না।
আরবি-ফার্সি'র ব্যাপারটা ভালো বলেছেন। এডিট করতে হবে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

৬| ০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫

চিত্রনাট্য বলেছেন: কিছু কিছু লেখা আছে যেগুলোর মান কখনো কমবে না। ঠিক যতদিন মানুষ নুয়ে থাকবে ততদিনই বলতে হবে, বল বীর, বল উন্নত মম শির। ততদিনই এইসব লেখায় শরীরের ভেতরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যাবে।

আবার কিছু কিছু লেখা সময়ের সাথে সাথে অসাড় হয়ে যায়। এখন যদি বঙ্কিম লেখা কেউ লেখে সেটা অন্তত জোর করে পড়াতে হবে। বাংলা নিয়ে পড়লে এগুলো পড়তেই হবে। রবীন্দ্র নাথের প্রেমের ধরণ টাও হয়তো একশ বছর পরে মানুষের ভালো লাগবে না।
যতদিন আমরা এরকম অস্থির পরিস্থিতিতে থাকবো ততদিনই এগুলো আমাদের ভালো লাগবে।

আপনার পোস্ট খুব ভালো লেগেছে।

০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হ্যাঁ, এটা হতেই পারে। তবে ওমর রচনা আসলেই ওমর।
শেক্সপিয়ারের নাটকগুলো সেসময়ের ইংরেজিতে রচিত, তাই বলে কি মানুষ পড়ছে না? আবার সেগুলো আধুনিক ইংরেজিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ছোটরা যেন পড়তে পারে, এমন ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ছোটদের জন্য অনেক সুন্দর ভার্সনও পাওয়া যায়।
রবি ঠাকুরের যুগ নেই আর কিন্তু মানুষের অনুভূতি তো আর পাল্টায়নি। সেটা আছেই আগের মতো। তাই মানুষ ওকে ঠিক ভুলতে পারবে না। যখন পড়ি "গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী, কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরি"- তখন সে স্বাদ পাই, সে সুর শরীরে মনে শুনতে পাই, তা শতবছর পূর্বেও পাঠকেরা পেয়েছিল, শতবছর পরেও পাবে।
অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে এতোবড় পোস্ট পড়ার জন্য

৭| ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ৯:৪৮

ক্লাউড বলেছেন: না, ওইটাও লেখকের ব্যর্থতা না। যে ওই অল্প সংখ্যক মানুষের জন্য তাদের উপযোগী লেখা লিখতে পারলো সেও সফল লেখক। সাহিত্যে এমন কোনো বাধা নিষেধ নাই যে আপনাকে সকলের কাছেই পৌছানো লাগবে। কার্ল মার্কস কঠিন তত্ত্ব কিংবা দস্তভয়েস্কির সৃষ্টি সবার জন্যে হবে না হয়তো। আসিমভের সাইফাই বুঝবার জন্যও নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বিজ্ঞান জানা দরকার হবে। সকলের কাছে এদের কেউ যদি পৌছাতে ব্যর্থও হন, তবে এটা তাদের লেখাকে কিংবা সৃষ্টীকে বিন্দুমাত্র ছোট করে না। সমাজের জয় এই ৫% ও গুরুত্বপূর্ণ। এই সচেতন এবং প্রগতিশীল অংশটাই আসলে দেশ কিংবা পুরো বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে।

যেমন, সঙ্গীতের ক্ষেত্রে মমতাজও যেমন সফল, অর্ণবও সফল। তারা নিজ নিজ কাছাকাছি পর্যায়ের বা ভাবধারার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার বিচারে সফল। একজন হুমায়ুন জনপ্রিয়তার বিচারে সফল, আবার জনপ্রিয়তার বিচারে ইলিয়াস সাহেব সেইভাবে সফল না হলেও উনারও গুরুত্ব কম না।

০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১১:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর বলেছেন। এক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদ আর আজাদের কথা বলা যাতে পারে। আহমেদ যত মানুষের কাছে পৌঁছেছেন আজাদ ততো পারেননি। কিন্তু আহমেদের চেয়ে আজাদ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সম্পূর্ণ কমেন্টের সাথে একমত।

৮| ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১০:১০

জুন বলেছেন: প্রিয় একজন সম্পর্কে আপনার লেখাটি পড়ে মুগ্ধ হোলাম। ওমর খৈয়ামের অতুলনীয় রুবাই এর অনুবাদ অনেকেই করেছেন। তবে আমার কাছে নরেন্দ্র দেবের অনুবাদই ভাললাগে। অনেক বছর আগে তাকে নিয়ে দুটো ছোট পোষ্ট দিয়েছিলাম, সময় হলে দেখতে পারেন তার একটি ।
ওমার খৈয়াম ও তার জীবন কাব্য

০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১১:১৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
নরেন্দ্র দেবের অনুবাদ পড়িনি। এ পর্যন্ত বাংলাতেই নাকি শুধু ১০৪ জন অনুবাদ করেছেন। একজনেরটা পড়লে বাকি ১০৩ জনের বাকি থাকে!
তবে পড়বো সেটাই যেটা সবচেয়ে ভালো!
অনেক ধন্যবাদ লিংকটির জন্য

৯| ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: অনেক কিছুই জানলাম ।

০১ লা মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য

১০| ০২ রা মে, ২০১৬ রাত ১:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



অনেক কিছুই রাখা হয়েছে ছোট থলিতে।

০২ রা মে, ২০১৬ রাত ১:১৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হুম। পোস্টটা অবশ্য সামুর অন্যান্য পোস্টের তুলনায় একটু বড় হয়ে গিয়েছে!

১১| ০২ রা মে, ২০১৬ রাত ২:৫৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ধারনা কম হলেও মানতে বাধ্য, কবিতার জগতে ওমরের রুবাইয়াৎ যেন ছেড়ে দেয়া ভগবানের পাঁঠা। সে তেজী, গোঁয়ার, অবাধ্য- তাকে আটকে রাখা যায় না। কিন্তু কান্তি ঘোষ বাংলায় অনুবাদ করে সেই পাঁঠাকে খাসি করে দিয়েছেন! মদ খেয়ে যদি বাওয়ালই না করলাম তবে আর মদ খাওয়া কেন?

০২ রা মে, ২০১৬ সকাল ১০:০৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হা হা হা। একেবারে ঠিক জায়গায় হাত দিয়েছেন!

১২| ০২ রা মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩২

কল্লোল পথিক বলেছেন: অসাধারন পোস্ট।
সোজা প্রিয়তে।

০২ রা মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

১৩| ০৪ ঠা মে, ২০১৬ সকাল ১০:০৮

নীলপরি বলেছেন: খুব ভালো একটা বিষয় । ভালো লাগলো পড়তে । ++

০৭ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:১৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

১৪| ০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ৮:০৮

জেন রসি বলেছেন: কে বলেছে আপনি পড়েন কম? এইসব বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে হলেও পড়তে হয়। এই পোস্টের কনটেন্ট এবং উপস্থাপনা দুটোই চমৎকার হয়েছে। অনেক কিছু জানলাম, যা আগে জানতাম না। ঠিকই বলেছেন। পড়ার কোন বিকল্প নাই। :)

১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:১৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হা হা।
এ এমন কিছু নাহ!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

১৫| ১১ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৫৩

রিপি বলেছেন: দুর্দান্ত লিখেছেন।

১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:১৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

১৬| ১২ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:১৫

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: লেখাটা পড়ে সমৃদ্ধ হলাম।ধন্যবাদ এমন ভাল কিছু পোস্ট করার জন্য।

১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:২০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য

১৭| ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৫৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দারুণ গতিসম্পন্ন বিশ্লেষণ বলে আনন্দ পেলাম সত্যিই। আজকের রাতটা ভালই কাটছে এসব পড়ে।

১৮| ২৯ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭

মহা সমন্বয় বলেছেন: এটা পড়তে হবে, প্রিয়তে রাখলাম।

১৯| ১৩ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:১৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ

২০| ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:০৯

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: মনোযোগ দিয়ে পড়লাম । নিঃসন্দেহে একটি উচ্চ সাহিত্যমান সম্পন্ন লিখা ।
লিখকের জন্য শুভ কামনা ।

২১| ২৭ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫

মোঃ মঈনুদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেক অনেক ধন্যবাদ অসাধারণ এ লেখনির জন্যে। এখন খুব একটা পড়া হয়না আগের মতো। কিন্তু, আপনার লেখাটি পড়লাম। খুব খুব ভালো লাগলো আপনার আলোচনার ধরণ ও বক্তব্য চয়নের দিকটা। বেশ গুরুত্বপুর্ণ একটা লেখা সযতনে রাখার মতো তাই, প্রিয়তে রেখেছি। সুযোগ পেলেই পড়বো।
বাংলা ভাষার সর্বকালের সব কবিই আমার কাছে প্রিয়। অপ্রিয় কেউ নেই। প্রায় সবার কবিতাই আমি পড়ি। কিছু গদ্য কবিতা যার বিষয় বস্তু আমি বুঝতেই পারিনা সেগুলো একটু এড়িয়ে যাই; অবশ্য সুবিধা করতে না পারলে। কবি ওমর খৈয়ামের রুবাঈ আসলে অসাধারণ ও অনন্য ছন্দের কবিতা যার সফল ও স্বার্থক অনুবাদ কবি কাজী নজরুল ইসলাম করেছেন। আমি শুধুই পড়ি আর রস আস্বাদন করি কিন্তু ভাবিনা কোনটা কোন ধরণের কবিতা। এখন থেকে সে আবিষ্কারের দিকে মনোযোগ থাকবে।

আপনার ভুমিকায় যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন তার সম্পর্কে শেষ পরিচ্ছেদে কিছু ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেখানে আমাদের স্বদেশ যে মধ্যপ্রাচ্যের মতো অসার হয়ে আছে তা উল্লেখ করেছেন। এটা সত্য। তবে, সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, মানবতাবাদী, দরদী সরকার দেশের শাসন ক্ষমতায় না এলে এই অবস্থা কিয়ামত পর্যন্ত চলতেই থাকবে।
*** হিজড়া যারা তারা প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্ট। এদেরকে সঠিকভাবে আবাসন সহ সামাজিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার, রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বেঁচে থাকার অধিকার সরকারকে সংবিধানের অনুবলেই করে দিতে হবে। আর, আমরা যারা সমাজে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করি তাদের উচিৎ হবে ওদেরকে সস্মমানে চলার পথকে মসৃন করে দেয়া। কোন সামাজিক নিগ্রহের শিকার যেন না হয় তারা তা সবাইকেই দেখতে হবে।।
***সমকামী বা উভকামী যারা রয়েছে এদেরকে সঠিকভাবে মানসিক পরিচর্যা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার দায়ীত্ব ও কর্তব্য তাদের পরিবারের ও পরিচিতজন সবার।।
অবশেষে, যারা অন্যায় ভাবে জুলুমের শিকার ও অপঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে এদের মতো আর যেন কেউ এই বেদনাময় করুণ পরিণতি বরণ না করে তার দিকে সবাই সচেষ্ট হই।
## সবশেষে,আপনার এ লেখা থেকে আমি কবিতার কিছু গুরত্বপুর্ণ দিক সম্বন্ধে অবগত হলাম।আপনার সুখি সমৃদ্ধ জীবন কামনা করছি। ভালো থাকুন।

২২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৯

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: গোগ্রাসে গিলে নিলাম। আপনাকে ভবিষ্যৎ নজরুলের উত্তরসাধক হিসেবে আজই ঘোষনা দিয়ে দিয়ে দিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.