নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইস্টিশন বন্ধের হুমকি- মুক্তচিন্তার গলায় আবার ছুরি?

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫

কবি শামসুর রাহমানের একটি অসাধারণ কবিতা একসময় আবৃত্তি করতাম বারবার। বিধ্বস্ত নীলিমার সেই কবিতাটায় কবি প্রভুকে, যাকে অনেকেই সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানেন- জিজ্ঞেস করেছেন, যদি তাকে পাঠানোই হলো, কেন পাঠানো হলো না তোতাপাখিরুপে!
"প্রভু, শোনো, এই অধমকে যদি ধরাধামে পাঠালেই,
তবে কেন হায় করলে না তোতাপাখি আমাকেই?
দাঁড়ে বসে বসে বিজ্ঞের মতো নাড়তাম লেজখানি,
তীক্ষ্ন আদুরে ঠোঁট দিয়ে বেশ খুটতাম দানাপানি।
মিলতো সুযোগ বন্ধ খাঁচায় বাঁধা বুলি কুড়োবার,
বইতে হতো না নিজেস্ব কথা বলবার গুরুভার।"
কবির আক্ষেপ আমারও, বাংলাদেশের হাজার মুক্তমনার, বন্ধ খাঁচায় বসে বুলি আওড়াতে না চাওয়া শতো শতো ব্লগারের। যদি তোতাপাখি হতাম এতো কিছু দেখতে হতো না, সইতে হতো না, বলার ইচ্ছে চাবুক মারতো না মননে। মানুষ তোতাপাখি নয় বলেই শিখিয়ে দেয়া বুলি আওড়াতে পারে না। বেঁধে দেয়া কিছু চিন্তা করতে পারে না। সে ভাবতে পারে, ভালোমন্দ বিচার করতে পারে। যা দেখছে তা বলতে পারে। আর এই বলতে চাওয়াটাই এখন হয়ে গিয়েছে বিপদজনক। অভিজিৎ বলতে গিয়ে কোপ খেয়েছেন। নিলয়, থাবা- আরো কতোজন। আর বলতে দেয়া, বলার জায়গা করে দেয়া, একটা সুন্দর যথাযথ প্লাটফর্ম তৈরী করে দেয়ার জন্য ইস্টিশনকে শুনতে হচ্ছে "বন্ধ করে দেব" টাইপ হুমকি।
বাংলাদেশে, সেই ইংরেজ আমল থেকেই, বলতে চাওয়ার পথ কোনদিন সুষম ছিল না। ১৯২৬ সালে নিষদ্ধ করা হয়েছিল শরৎচন্দ্রের পথের দাবি। নজরুলের কতিপয় বই নিষদ্ধ করা হয়েছিল দেশদ্রোহীতার অভিযোগে। এমনকি রবীন্দ্রনাথ, যে মহান প্রতিভা ইংরেজদের প্রতি ছিলেন কিছুটা নরম তার উপরও নজরদারী রাখা হয়েছিল। শুধু রবি ঠাকুর নন, তার মতো আর আটজন যাতে কোনভাবে- কথায়, লেখায়, বক্তব্যে, কাজে ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতা করতে না পারে সেদিকে ছিলো কঠোর নজর। রবিবাবুর "চার অধ্যায়" বাজেয়াপ্ত করার কথাও উঠেছিল "১৯৩১ সালের প্রেস ইমার্জেন্সি আইনে", বইটি স্বাধীনতাকামীদের প্রেরণা জোগাচ্ছে, এই অভিযোগে। এর অনেক আগে ১৮৮৭ সালে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয় সরকার বিরোধী সব নাটকের মঞ্চায়ন। পাক আমলে সরকার বিরোধী চিন্তাও ছিল যেন পাপ। শুধু দৈনিক ইত্তেফাককেই ১৯৬৬ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল দুবার। আর এর সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে যেতে হয়েছিল জেলে। রেডিও টেলিভিশনে রবীন্দ্রনাথের গান বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়, অবশ্য বুদ্ধিজীবিদের কঠোর অবস্থানের কারণে, তাদের সে আবদার মাথা তুলতে পারেনি।
আজকের বাংলাদেশে, স্বাধীন ভূমিতে যখন কোন পত্রিকাকে, কোন চ্যানেল বা ব্লগকে বন্ধ করার হুমকি দেয়া হয় বা বন্ধ করে দেয়া হয়, তখন মনে হয় আমরা এখনো উপনিবেশের অধিনেই আছি। আমাদের অধিকার নেই কিছু বলার, করার। স্বাধীন দেশের সার্থকতা কোথায় যদি আমার বলার অধিকারই না থাকে?
26 তারিখ, ইস্টিশনের ফেসবুক পেজে বলা হয়-
"দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সরকারের নির্দেশে বিটিআরসি ইস্টিশন ব্লগে বাংলাদেশ থেকে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গতকাল রাত থেকে ইস্টিশনে অনেকেই ঢুকতে পারছেনা। সরকারের এমন বাক-স্বাধীনতা হরন করার মানষিকতার নিন্দা জানাচ্ছি।"
খুব বেশীদিন হচ্ছে না অনলাইনে লিখছি। সামুতেই শুরু। সামু অনন্য ব্লগ, সন্দেহ নেই। তবে মাঝেমাঝে স্বাদ বদলাবার জন্য ইস্টিশনে যাই। লিখি। পড়ি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, আমাদের অসাধারণ এই অর্জন নিয়ে প্রচুর ভাল ভাল বিশ্লেষনী লেখা আছে ইস্টিশনে। যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসীর ব্যাপারে সে ব্লগ প্রচন্ড সোচ্চার। যদি খোলামেলা কথা বলার প্লাটফর্মের কথা বলা হয়, তবে বলবো ইস্টিশন সেরা। হ্যাঁ মুক্তমনা কিংবা সচলের কথা মাথায় রেখেও। এখানে মডারেটরের কচকচানি নেই। ব্যক্তিগত আক্রমণের ভয় নেই, ছাগুর ম্যাৎকার নেই, হিপোক্রাট সুশীলের 'যদি', 'কিন্তু', 'তবে' নেই। মুক্তচিন্তা, খোলামেলা কথার স্বর্গ ইস্টিশনকেই বলা যায়। আর এই ইষ্টিশনকেই বন্ধ করে দেয়ার পায়তারা করছে সরকার। এখন, অবশ্য সবাই, সব স্থান থেকেই ঢুতে পারছে ব্লগে। তবে, কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রেখে সরকার কি এটাই বুঝিয়ে দিল না যে, "তোমাদের বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের আছে। বেশী লাফিয়ো না। ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবো"?
রোদেলা প্রকাশনী বন্ধ করে বাংলা একাডেমী মুক্তচিন্তার পথে বিশাল এক গর্ত করে রেখেছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছিল নবী মোহাম্মদের তেইশ বছর। শোনা গিয়েছিল, এবারের বই মেলায় অভিজিতের বই পাওয়া যায়নি কোন স্টলেই। তার প্রামাণ পেয়েছি বইয়ের দোকানগুলোয় গিয়ে। কোথাও, অনেক খুঁজেও যোগার করতে পারিনি তার "বিশ্বাসের ভাইরাস"।
বাংলাদেশের কোন মূলধারার পত্রপত্রিকাই মুক্তচিন্তাকে ধারন করতে অপারগ। বাকি থাকে এই অনলাইন জগত। এই ব্লগ। সেটাকেও গলা টিপে মেরে কাফন পরিয়ে বিদায় করার চিন্তা করা হচ্ছে? সরকারের এই ব্লগ বন্ধের চিন্তা আর চাপাতিওয়ালাদের কুপিয়ে চুপ করিয়ে দেবার চিন্তার মধ্যে আসলে কোন পার্থক্য নেই। চাপাতিওয়ালারা চায় কুপিয়ে মুক্তচিন্তার প্রসার বন্ধ করতে, আর সরকার চায় ব্লগ বন্ধ করে কথা বলা বন্ধ করতে। অনেকেই এই ব্যাপারে প্রচন্ড খুশী। তাদের বক্তব্য, ঠিকই হয়েছে। ইসলামবিরোধী, নাস্তিক্যবাদ প্রচারকারী একটা ব্লগ বন্ধ হয়েছে। তাদের বলতে চাই, আপনারা তো মাইকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে এলাকা কাঁপিয়ে ধর্মের প্রসার, প্রচার করেন। কেউ তো বাধা দেয় না, বাধা দিবেও না। তবে আপনি কেন ধর্মহীনতা প্রচারে দেয়াল হয়ে দাঁড়াবেন। আপনার ধর্ম প্রসার, প্রচারের অধিকার থাকলে, আমারো আছে ধর্মহীনতা প্রচার, প্রসারের অধিকার। মজার ব্যাপার, কোনদিন শুনিনি চটি সাইটগুলো বন্ধের ব্যাপারে তারা কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ ওয়েব সার্চ করলে মূহুর্তেই পাওয়া যায়- মা, বোন, খালা, মামিকে নিয়ে অজস্র কুরুচিপূর্ণ লেখা, দেখা যায় ভিডিও রতিক্রিয়ার- সেসব বন্ধের কোন চিন্তা তাদের মাথায় নেই। কথা যখন উঠে মুক্তচিন্তার তখনই হয়ে যান তারা খড়গহস্ত।
যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তবে তার ফল যে ভালো হবে না কারো জন্যই- সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোন দেশেই, কোন সরকারই নাগরিকের কণ্ঠরোধ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। ইতিহাস সাক্ষী।
সেই ইতিহাসের দিকে নজর রেখেই সরকারের এধরনের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা উচিৎ। আর আমরা যারা সচেতন নাগরিক আছি, তাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে এই অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। শুধু ইস্টিশন কেন- আর কোন ব্লগের ব্যাপারেই যেন এমন কোন ফাউল সিদ্ধান্ত না নেয়া হয় তার জন্যও কথা বলতে হবে। নিজনিজ অবস্থান থেকে চেষ্টা করলেই এমন ভুলের জালে জড়িয়ে মরতে হবে না আমাদের।
27/09/2016

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১২

নির্ঝরের_স্বপ্ন বলেছেন: আমার দেশ পত্রিকা গায়ের জোরে বন্ধ করে দেওয়া হল। বিনা নোটিশে তিল তিল করে গড়ে তোলা দিগন্ত টিভি বন্ধ করা হল, খোঁড়া অজুহাতে এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের একমাত্র অবলম্বন পীস টিভি নিষিদ্ধ করা হল। বিডিটুডে নামক ব্লগ ও নিউজ পোর্টালকে একেক সময় একেক ডোমেনে ট্রান্সফার হতে হয় লুকিয়ে লুকিয়ে। বাঁশের কেল্লা ফেসবুক পেজের একজন এডমিনকে চট্টগ্রাম থেকে আটক করে নির্মম নির্যাতন করা হয় আদালতের নির্দেশনা ছাড়াই - আপনাদের এইসব মুক্তচিন্তার মায়াকান্না কই থাকে?

ভন্ড কোথাকার!!!

২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ও আচ্ছা?? মিথ্যাচার আর মুক্তচিন্তা এক হলো???
সাধে কি আর বলি, ছাগুময় দেশরে পাগলা!!

৩| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ও আচ্ছা?? মিথ্যাচার আর মুক্তচিন্তা এক হলো???
সাধে কি আর বলি, ছাগুময় দেশরে পাগলা!!

৪| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ও আচ্ছা?? মিথ্যাচার আর মুক্তচিন্তা এক হলো???
সাধে কি আর বলি, ছাগুময় দেশরে পাগলা!!

৫| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৫

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
মুক্তমনা, মুক্তচিন্তা বা ধর্মীয় চিন্তা - যেটাই হোক, কোন ধারার মানুষেরই কিন্তু এই অধিকারটা নেই যে আপনি অন্য কাউকে আঘাত করে কথা বলবেন।

যেমন - আপনার পোস্টেই আছে - আপনারা তো মাইকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে এলাকা কাঁপিয়ে ধর্মের প্রসার, প্রচার করেন।
এই কথাটা আমাকে আঘাত করলো। কারণ আমি ধর্ম বিশ্বাস করি। এবং আপনি এটাও উল্লেখ করলেন না যে - ধর্ম বিশ্বাস করা অনেকেও এই ধরণের অহেতুক শব্দ দূষণকে পছন্দ করে। তারাও এটার প্রতিবাদ করতে গেলে নাস্তিক ট্যাগ খেয়ে বসে। আমি নিজেও এই ট্যাগ বহুবার খেয়েছি।

কিন্তু, বিশ্বাস দুই রকম বলেই যে - আমি ইস্টিশন বন্ধ করে রাখার পক্ষপাতী সেটাও না। এটা অবশ্যই খারাপ কাজ করেছে। মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করার মত কিছু আমি কখনোই সাপোর্ট করিনা।

ইস্টিশন বন্ধ যেহেতু করেছিল একবার, ইঙ্গিতও দিল যে - তারা চাইলেই বন্ধ করে দিতে পারে- তার মানে স্বাধীনভাবে কথা বলা যাবে না - বলতে হবে তাদের মত, তাহলে এইভাবে করেই অনলাইনের নিষিদ্ধ চটি সাইট গুলো বন্ধ করে দিক। পর্ন সাইটগুলোতে বাংলাদেশ থেকে ঢোকার এক্সেস বন্ধ করে দিক। তারা তো পারবেই এটা করতে। করে না কেন?

আমি প্রতিবাদ করব এটা দেখিয়েই।

কে কী বিশ্বাস করে সেটা নিয়ে খোঁচাখুঁচি না করে - তাকে ঐভাবেই বিশ্বাস করার সুযোগ দেওয়া হোক। সাথে এটাও বলে দেওয়া হোক - কেউ যেন নিজের স্বাধীনভাবে কথা বলতে গিয়ে অন্য কারো বিশ্বাসে খোঁচা দিয়ে বসে। হোক তারা মুক্তমনা বা ধর্মপ্রেমী আস্তিক।
একদম মধ্যবিন্দুতে থেকে অবস্থান করলে কোন গোষ্ঠীরই সমস্যা হবে না।

সরকারের এসব পদক্ষেপই অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে।

৬| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৫

সজীব মোহন্ত বলেছেন: মুক্তচিন্তা থেমে থাকবেনা।

৭| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৩১

হাসান মাহবুব বলেছেন: ইস্টিশন ব্লগ বন্ধের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ট্রেন থেকে নামিয়ে দিলেও ওয়েটিং রুমে ঠিকই বসে থাকবো। ভোর আসবেই।

৮| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩২

খায়রুল আহসান বলেছেন: অবশ্য বুদ্ধিজীবিদের কঠোর অবস্থানের কারণে, তাদের সে আবদার মাথা তুলতে পারেনি। -- আজকে সেরকম বুদ্ধিজীবি কোথায়?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.