নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: প্রিয়তমা, এক কোটি লাইক তোমাকে!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:৪৮

মোহাম্মদ মাসুদ রানার একটা নেশা আছে। আছে বলতে, ভালো রকমেরই আছে। প্রবলভাবে আছে। সেটা হল বই প্রকাশের নেশা। প্রতি বছর একবার করে নেশাটা চেপে ধরে তাকে। তখন তিনি তড়িঘড়ি করে লিখতে থাকেন। লেখা শেষ করেই উঠে পড়ে লেগে যান প্রকাশকের পিছনে। ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের বই স্টলে দেখে তবে পিনিক কাটে তার।
মানুষের তো কতো ধরণের নেশা থাকে। পান, বিড়ি, সিগারেট। গাঁজার নেশা থাকে কারও। কারও বা হিরোইন, ফেন্সি, ডেক্সপো’। সব নেশার নামও জানেন না তিনি। পান পর্যন্ত খান না। সকাল সন্ধ্যা এককাপ চা শুধু। তবে সেটা নেশা নয়- কোনদিন চা না পেলে পিত্তি জ্বলে যায় না তার।
সাধাসিধা বই পাগল মানুষ মোহাম্মদ মাসুদ রানা। সকালে বাসে ঝুলতে ঝুলতে অফিস যান, এসে বৌয়ের রক্তচক্ষু এড়িয়ে বইয়ে মননিবেশ করেন। ইচ্ছে হলে বৌয়ের সাথে ‘কাভি খুশী, কাভি গম’ দেখেন টিভিতে। তবে বাংলাদেশের খেলা হলে মিস করেন না তিনি কোনভাবেই। বাংলাদেশের সিরিজ শুরু হলেই নিজের মধ্যে একটা উত্তেজনা টের পান তিনি। বাড়িতে থাকলে খেলা দেখা নিয়ে প্রতিবারই ঝগড়া লাগে তার। বৌ কোনভাবেই বুঝতে পারে না যে, স্টার জলসা’র সিরিয়াল পরদিন পুনঃপ্রচার দেখা যায়। কিন্তু খেলা লাইভ দেখতে না পারলে, সেটার আর মজা থাকে না। এভাবে ঝগড়া করে, চিল্লিয়ে মাঝেমাঝে যে রিমোট হাতে পান না তিনি, তা নয়। তবে বেশিরভাগ সময় তুলকালাম ঝগড়ার পর যুদ্ধে হেরে যাওয়া সেনাপতির মতো মাথা হেট করে তাকেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে হয়। পাড়ার মোড়ের দোকানে খেলা দেখার জন্য।
লাখো মানুষের মতো জীবন মোহাম্মদ মাসুদ রানার। ম্যারম্যারে।
কিন্তু এই বই প্রকাশের নেশাটাই তাকে অন্যদের থেকে ভিন্ন করে তুলেছে। অন্যেরা নেশা করে নেশাখোর পরিচিত পায়, তিনি পেয়েছেন লেখক উপাধি। অবশ্য পরিচিতরাই শুধু তাকে লেখক হিসেবে চেনে। পরিবার, বন্ধু সমাজ, কলিগেরা ছাড়া আর কেউ তার বই কেনে না। কিনলেও পড়ে না হয়তো।
প্রতিবছর একটা করে বই বের করেন মোহাম্মদ মাসুদ রানা। ২০০২ সাল থেকে পেয়ে বসেছে নেশাটা। সে হিসেবে এ পর্যন্ত ১৫ টা বই প্রকাশিত হয়েছে তার। সবই উপন্যাস। নিখাদ প্রেমের উপন্যাস। যদিও তিনি জীবনে প্রেম করতে পারেননি একবারও। বিয়ে করেছেন বাবা পছন্দ করা মেয়েকে।
কলেজে থাকাকালীন সময়ে একটা মেয়েকে অবশ্য ভালো লেগেছিল তার। মেয়েটার নাম মনে নেই এখন। ফুলের নামে নাম। তিনি তাকে দেখার জন্যই কলেজে যেতেন প্রতিদিন। ঝড়-বৃষ্টি-বাদল কোন কিছুই তাকে কলেজ যাওয়া থেকে আটকাতে পারত না। কিন্তু মেয়েটা কোনদিন লক্ষ করেনি তাকে।
একদিন সাহস করে একটা চিঠি লিখেছিলেন মোহাম্মদ মাসুদ রানা। একদম মনের মাধুরী মিশিয়ে। তখন সবে জীবনানন্দ পড়তে আরম্ভ করেছিলেন তিনি। মেয়েটাকে তাই তিনি “বিদিশার নিশা”, “পাখির নীড়” ইত্যাদির সাথে তুলনা করে লিখেছিলেন। কাব্য করে স্বরচিত একটা কবিতাও জুড়ে দিয়েছিলেন চিঠির শেষে, ল্যাজার মতো।
সে চিঠিতে ঠিক কী লিখেছিলেন, আজ এতো বছর পর তা আর মনে করতে পারেন না মোহাম্মদ মাসুদ রানা। কতো বছর হয়ে গেল! তবে তিনি যা কোনদিন ভুলতে পারবেন না তা হলো- মেয়েটা প্রিন্সিপালের কাছে বিচার দিয়েছিল একারণে।
সেদিনের কথা তার স্পষ্ট মনে আছে।–
কলেজের গ্যারেজে সাইকেলটা রাখতেই তাকে ঘিরে ধরল কিছু বন্ধু। চোখে মুখে জিজ্ঞাসা তাদের।
“কিরে তুই নাকি ***কে লাভ লেটার দিছিস?”
“কখন দিলি? কলেজ ছুটির পর?”
“একদম হাতে ধরিয়ে দিছিস নাকি বইয়ের নিচে রেখে দিছিস?”
“কী বলেছিল রে চিঠি পেয়ে?”
মোহাম্মদ মাসুদ রানা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন সেদিন। খুব গোপন ছিল তার ভালোবাসা। কাউকে বুঝতে দেননি তিনি। তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু মেহেরও জানত না কিছু। এমনকি চিঠিটা লিখেছিলেন ভোর রাতে, ফজরের আজানের কিছুক্ষণ আগে।
অথচ একদিনের মধ্যেই সব জানাজানি হয়ে গেল!
মোহাম্মদ মাসুদ রানা চোখ বন্ধ করলে এখনো দেখতে পান প্রিন্সিপালের রুমে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। তার বাবাকেও তলব করা হয়েছিল। প্রিন্সিপাল মেঘের মতো স্বরে তাকে জিজ্ঞেস করছেন, “লেটারটা তুমি লিখছ?”
মাসুদ রানা মাথা নেড়েছিলেন। হ্যাঁ সূচক। সব কথা মনে নেই তার। ভাসাভাসা যেটুকু স্মৃতি আছে, তাতে খুঁজে পান- প্রিন্সিপাল চিঠিটা তার হাতে দিয়ে বলেছিলেন, “চিঠিটা পড়ে শোনাও এখন আমাদের। সবাই শুনুক। তোমার বাবা আছেন, তোমার টিচারেরা সবাই উপস্থিত আছেন- তারাই বিচার করুক। আমি কিছু বলবো না।”
কাঁপাকাঁপা স্বরে চিঠিটা পড়েছিলেন সেদিন মোহাম্মদ মাসুদ রানা। উচ্চস্বরে। তার মনে হচ্ছিল, সবার সামনে উলঙ্গ করা হচ্ছে তাকে- খুলে নেয়া হচ্ছে তার দেহ থেকে সব পোশাক।
চিঠি পড়া শেষ হতেই, পিনপতন নীরবতা নেমে এসেছিল অফিস রুমে। কারও মুখে কোন কথা ছিল না। সবাই লজ্জা পেয়েছিল হয়তো। শুধু বাবার মুখটা লাল হয়ে গিয়েছিলো। লজ্জায় নয়- রাগে। মোহাম্মদ মাসুদ রানার এখনো খেয়াল আছে।
সবার প্রথমে সেদিন কথা বলেছিলেন তার বাংলার টিচার। তিনি মিনমিনে কণ্ঠে বলেছিলেন, “যাই হোক। ছেলের ভাষা জ্ঞান খুব ভালো!”
ঐ দিনের পর বিভীষিকা নেমে এসেছিল তার জীবনে। কলেজ যাওয়া বন্ধ। বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা করা বারণ। লজ্জায় বাড়ি থেকে বেরুতে পারতেন না- প্রতিবেশীরা জেনে গিয়েছিলো। সবসময় তার মনে হতো, সবাই যেন তাকে দেখে মুখ টিপে হাসছে। বাড়িতে কেউ ভালো মতো কথা বলতো না পর্যন্ত।
বিড়ালের মতো জীবন কাটিয়েছেন সেসময় মোহাম্মদ মাসুদ রানা।
তবে ঐ মেয়েটার সাথে তার দেখা হয়েছিলো আরও কয়েকবার। নিজেই এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। চোখাচোখি পর্যন্ত করেননি।
মেয়েটা হয়তো ক্ষমা চাইত তার কাছে- এমনটা ধারণা ছিল তার। যতোই সে এড়িয়ে চুলুক, কোন না কোন ভাবে মেয়েটা তার সাথে দেখা করবেই! তখন মোহাম্মদ মাসুদ রানা, কল্পনা করতেন, মেয়েটা ক্ষমা চাইতে আসছে তার কাছে। তার চোখে জল। ভেজা কণ্ঠে সে বলছে, “আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দাও আমাকে।”
কিন্তু এমনটা হয়নি কোনদিন। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল ইন্টার পরীক্ষার কিছুদিনের মধ্যেই। একটা আধবয়সী টাকওয়ালার সাথে। এতদিনে হয়তো বিধবা হয়েছে সে!
এসব দিনের কথা মনে আনতে চান না আর মোহাম্মদ মাসুদ রানা। তার ভালো লাগে না। তবে সেটাই ছিল তার জীবনের শেষ প্রেম- যদিও ছিল একপাক্ষিক। এরপর থেকে মেয়েদেরই এড়িয়ে চলেছেন তিনি। এই এখন অবধি।
তার বৌ নাইন পাস। প্রেম করার জন্য দুজনের মধ্যকার বোঝাপড়াটা ভালো হতে হয়। তার বেলা সেটুকুও হওয়ার উপায় নেই। তিনি যাই বলেন, সবই যায় বৌয়ের মাথার উপর দিয়ে। বৌ তখন গোলগোল চোখে তাকিয়ে থাকে।
তাই কল্পনাতেই প্রেম করেন তিনি। আর সে প্রেমের ফসল এই উপন্যাসগুলি।
মোহাম্মদ মাসুদ রানা এবারের উপন্যাসের নাম, “প্রিয়তমা, এককোটি লাইক তোমাকে”। বেশ ইউনিক নাম। এখনকার যুগের ফেসবুকে অর্ধেক দিন কাটানো পোলাপাইন ভালই খাবে বইটা- এমনটাই আশা করেন তিনি। যদিও তিনি জানেন, শেষ পর্যন্ত তার বই পরিবার-আত্মীয়-স্বজন ছাড়া আর কেউ কিনবে না।
মোহাম্মদ মাসুদ রানা তার শালাকে ফোন দেবেন বলে ঠিক করেন। একটাই শালা তার। কাঠ মিস্ত্রী। কাঠ মিস্ত্রী হলে কী হবে, মোহাম্মদ মাসুদ রানার বইয়ের একনিষ্ঠ পাঠক সে। এপর্যন্ত প্রকাশিত প্রত্যেকটা বই পড়েছে সে। পড়ে আলোচনা করেছে, প্রশংসা করেছে। কখনো বা করেছে সমালোচনা।
“কী ব্যাপার শামসু, কেমন আছো?”
“ভালো দুলাভাই। আপনার বইটাই পড়ছি এখন।”
“আচ্ছা? কেমন লাগছে?”
“জি ভালো লাগছে দুলাভাই। তবে কিছুকিছু জায়গা বুঝতেছি না।”
“কোন জায়গাটা?”
“দুলাভাই প্রথম পৃষ্ঠাটাই মাথার উপর দিয়া গেছে। ম্যাসেঞ্জার, ফেসবুক, নোটিফিকেশন, পোক- এগুলা তো বুঝি না কিছু। তবে ভালো লাগতেছে দুলাভাই। নায়িকার নামটা ভালো লাগছে। অনামিকা অনিদ্রা। তবে নায়কের নামটা কেমন যেন। লাইকার বয় রুবেল। নামের মানে তো বুঝি না দুলাভাই।”
মোহাম্মদ মাসুদ রানা ভালই দুশ্চিন্তায় পড়লেন। তিনি ভাবছেন কী জবাব দেবেন। এতকিছু বোঝাতে গেলে তার ফোনের টাকাই শেষ হয়ে যাবে!
শামসু কথা বলেই চলেছে, “দুলাভাই, আপনি লিখছেন, ঐ কি যেন নাম- হ্যাঁ অনামিকা অনিদ্রা, নায়িকা আরকি- মেলা ছেলের সাথে কথা কয়। নায়িকার তো দুলাভাই চরিত্র ভালো না। ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না? আর ব্লক করা কী এইটাও বুঝি নাই।”
তিনি বললেন, “তুমি বইটা শেষ করো, বুঝলা শামসু। তারপর সব বুঝায় দিবো আমি। পড়তে ভালো ভালো লাগছে তো?”
প্রকাশকের সাথে সকালে কথা হয়েছে তার। ৯ কপি বিক্রি হয়েছে নাকি। তার মধ্যে তার শালা শামসু কিনেছে এক কপি, তিনি নিজেই এক কপি কিনে গিফট করেছেন তার বসকে। আর ৭ কপি তবে কে কিনল?
মোহাম্মদ মাসুদ রানা তার বৌকে এককাপ চা দিতে বলেন। বৌ জবাব দিল, “একটু থামো না গো, ‘সখা তুমি সখি তুমি’র সখি জঙ্গলে হারায় গেছে। ঐ জঙ্গলে আবার ভাল্লুক আছে। এড শুরু হইলেই চা করে দিতেছি।”
মোহাম্মদ মাসুদ রানার মনটা বিতৃষ্ণায় ভারী হয়ে উঠল। এখন তার ইচ্ছা করছে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে দুচোখ যেদিকে যায় যেতে। সাথে কিচ্ছু থাকবে না। মানিব্যাগও না। এক কাপড়ে নিরুদ্দেশ হবেন তিনি।
কিন্তু এসব উপন্যাস কিংবা সিনেমাতেই হয় শুধু। তার নিজের লেখা তৃতীয় উপন্যাসেই তো নায়ক বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, কাউকে না বলে। বইটার নাম, ‘শুধু তুমি, তুমি এবং তুমি’। সেই গল্পে, নায়ক হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে আশ্রয় নেয় একটা বাড়িতে। সে বাড়িতেই নায়িকার সাক্ষাৎ পায় সে। নায়িকার নাম ছিল তৃণা। তৃণা সেই আশ্রয়দাতার নববিবাহিতা স্ত্রী। পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে তৃণা- এরপর ভালোবাসার টানে সেবাড়ি থেকে পালিয়ে যায় তারা দুজনে। নিরুদ্দেশে।
বইটার কথা মনে পড়তেই এক চিলতে হাসি এসে জমা হয় মোহাম্মদ মাসুদ রানার ঠোঁটে। এই বইটাই এখন পর্যন্ত প্রকাশিত তার সব উপন্যাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। মোট ৫৬ কপি।
মোহাম্মদ মাসুদ রানা ঠিক করেন, মেলার দিকে একবার যাবেন তিনি। গত দুদিনে একবারও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। মেলায় অবশ্য এখন পাঠক কম, লেখক বেশি। যার সাথেই দেখা হয়, দুএক মিনিটের মধ্যেই বুঝতে পারেন, একজন লেখকের সাথে কথা বলছেন তিনি। তখন তার বিরক্ত লাগে। ভাবতে থাকেন, সবাই যদি লেখক হন, পাঠক তবে কে?”
‘মেঘদূতের’ স্টলে বসে আছেন এখন মোহাম্মদ মাসুদ রানা। এখানে এসে বসার দশমিনিটের মধ্যেই তার বইয়ের দুই কপি বিক্রি হয়েছে। আগ্রহ ভরে অটোগ্রাফ দিয়েছেন তিনি। এক কপি কিনেছে ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া একটা ছেলে, আরেক কপি কিনেছে ক্লাস নাইনের একটা মেয়ে।
নবীন প্রজন্ম তার বই পড়ছে বলে আনন্দিত হন মোহাম্মদ মাসুদ রানা।
কিছুক্ষণ পর কয়েকজন টুপিপাঞ্জাবি পরিহিত হুজুর আসলো তাদের স্টলে। সাথে একটা বোরকা পরা মেয়ে। বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছে তারা। তিনি দেখেন, একজন হুজুর তার বই পড়ছে। বেশ কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে তার দিকে তাকিয়ে হুজুরটা জিজ্ঞেস করলো, “এই বইটা কে লিখছে, ভাই?”.
উত্তরে উঠে দাঁড়ালেন মোহাম্মদ মাসুদ রানা। সগর্বে জানালেন, “আমি লিখেছি। কেন? কিনবেন?”
“এগুলা কি প্রেমপিরিতি নিয়া বই লেখেন? আপনাদের জন্যই আজকালকার যুব সমাজ নষ্ট হই যাইতেছে। জানেন না আমাদের ধর্মে পিরিত হারাম? তাও লেখেন কী জন্যে?”
মোহাম্মদ মাসুদ রানা কিছু বলতে পারেন না। তার গলা রুদ্ধ হয়ে আসে। উঠে দাঁড়ান তিনি। বের হয়ে আসেন স্টল থেকে। তিনি শুনতে পান, পিছন থেকে বোরকা পরিহিত মহিলাটা বলছে, “সব কাফের নাস্তেক বই লেখে এখন। পুরা বইয়ে খালি জেনা আর জেনা।”
“ইসলামের শত্রু এই প্রেমপিরিতির উপন্যাস!”
মোহাম্মদ মাসুদ রানা হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে আসেন। তার মনে হয় পৃথিবীর ঘূর্ণন বুঝতে পারছেন তিনি। পা কাঁপছে তার। তবুও তিনি স্টলগুলো দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে পার হন। তিনি চারিদিকে শুধু টুপি আর বোরকা দেখতে পান। তারা বই দেখছে নেড়েচেড়ে। তিনি শোনেন, তারা বলছে, ‘পুরা বইয়ে খালি জেনা আর জেনা!”
লিটলম্যাগ চত্বরে এসে থমকে দাঁড়ান মোহাম্মদ মাসুদ রানা। তিনি দেখেন তার প্রকাশক টলতে টলতে আসছেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, “বড় ভাই, কী হয়েছে। আপনাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন?”
প্রকাশক খাবি খান একটুক্ষণ। জোরে জোরে নিশ্বাস নেন তিনি। তারপর ভাঙা কণ্ঠে বলেন, “আমার সব বই নিষিদ্ধ হইছে রে ভাই। আমি শেষ রে ভাই শেষ!”
মোহাম্মদ মাসুদ রানা বুঝতে পারে না কিছু। তিনি প্রকাশকে শক্ত করে ধরে থাকেন।
“আমার সব বইই নাকি ধর্মানুভূতিতে আঘাত করছে রে ভাই। প্রেমের উপন্যাসও ধর্মানুভুতিতে আঘাত করছে। সব বই নিষিদ্ধ আমার। শেষ হয়ে গেলাম রে ভাই!”
মোহাম্মদ মাসুদ রানা প্রকাশককে ছেড়ে দেন এবারে। প্রকাশক মাটিতে বসে পড়েন।
তিনি, ঔপন্যাসিক মোহাম্মদ মাসুদ রানা, এখন বাড়ি ফিরবেন বলে ঠিক করেন। তার মনে হয়, আবারও তার দেহ থেকে কাপড় এক এক করে খুলে নেয়া হচ্ছে। উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় হাঁটছেন তিনি। পুরুষাঙ্গটা অশ্লীল রকম ঝুলছে তার। তিনি দেখেন, একজন বোরকা তার দিকে আঙুল তাক করে বলছে, “লোকটা আমাদের দর্শনানুভূতিতে আঘাত হেনেছে। তার ** কেটে ফেলা হোক।”
মোহাম্মদ মাসুদ রানা, লেখক, তড়িঘড়ি করে দুই পায়ের মাঝে হাত দিয়ে তার পুরুষাঙ্গ ঢাকেন। তিনি বুঝতে পারেন গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট পরে আছেন তিনি। প্যান্টের কালার নেভি ব্লু।
১৯-২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

মন্তব্য ৩৫ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৩৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



সময় তার নিজের কাহিনী বলার সুযোগ পেয়েছে

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:২২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মাথার উপর দিয়া গেল!

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


চৌকিতে শু'য়ে থাকলে, মাথা মাটি থেকে ৩ ফুটের মাঝেই থাকে; উঠে বসেন, চা খান।

খুবই সমসাময়িক সামাজিক প্লটের উপর সাজানো হয়েছে গল্পটিকে

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৩৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চৌকিতে শু'য়ে থাকলে, মাথা মাটি থেকে ৩ ফুটের মাঝেই থাকে; উঠে বসেন, চা খান।
....
বুদ্ধি খারাপ না।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৪:২৬

জাহিদ অনিক বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে । হালচাল তুলে ধরেছেন । ভালো ফুটেছে ।
তবে সাবধানে থাইকেন, যুগ ভালা না । বই মেলায় এখন হুজুরেরা মৌলবাদের বইও খোঁজে !

আর উপরের অংশে যা লিখেছেন তা আর কি বলার আছে , এক লক্ষ লাইক প্রাপ্য আপনার আমার থেকে । B-)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মেলা মেলা ধন্যবাদ আপনাকে

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:২৬

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো গল্প পড়লাম, মাঝেমাঝে হাসছি, তাতে কি ভালো লাগছিল।
উপন্যাস পড়ে যদি কোনোকিছু লেখকের কাছ থেকে পরে জানতে হয়, সেই উপন্যাসে যারা প্রকাশক তারাও লেখক কেটাগরির প্রকাশক। হয় তো সমালোচনা করে ফেললাম।
উপন্যাসে যদি একটা শব্দের বর্ণনা অর্ধপৃষ্ঠা বা পাঠকের বোঝার সহজ করতে যতোটুকু লাগে সেটুকু না থাকে তাহলে সেটাতু টি২০ ম্যাচ হয়ে গেল, ছোট গল্প। উপন্যাস টেষ্ট ম্যাচের মতো হয়।

তবে গল্প চরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবো তার বইপ্রেমের জন্য, লেখাপ্রেমের জন্য। আপনার প্রতিও আন্তরিকতা, শুভকামনা সবসময়।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
হ্যাঁ, উপন্যাস তো এক ধরনের টেস্ট ম্যাচই।

৬| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৩১

সুমন কর বলেছেন: গল্পে সমসাময়িক বিষয়গুলো মজা করে তুলে ধরেছেন। ভালো লাগছে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

৭| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালোই।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: থ্যাঙকিউ

৮| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০১

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: মাসুদ সাহেব নিজে বই কিনে উপহার হয়েছে, তাহলে দু বছর পর মেলায় আসলেন কি করে? নাকি ২ বছর পর মেলায় গিয়ে বইটা কিনে উপহার দিয়েছে? আর হ্যাঁ, এবার আনিসুল হকের বই বেড়িয়েছে, "এক কোটি লাইক" :)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: দুই বছর না, দুই দিন পর
""গত দুদিনে একবারও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। """
ওনারে স্যাটায়ার করেই লিখছি। দুর্ভাগ্য তুমি ছাড়া কেউ বুঝে নাই

৯| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৫

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: এ্যাড মি আই অ্যাম ব্লক। B-)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এডাইলাম ;)

১০| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৪৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: সম সাময়িক বিষয়াবলী সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে ।
ভাল ডায়ালগ , পাঠিকার দারুন মুল্যায়ন
মহিলাটা বলছে, “সব কাফের নাস্তেক বই লেখে এখন। পুরা বইয়ে খালি জেনা আর জেনা।”
“ইসলামের শত্রু এই প্রেমপিরিতির উপন্যাস!”

শেষ টুক তো আরো সুন্দর
তিনি বুঝতে পারেন গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট পরে আছেন তিনি। প্যান্টের কালার নেভি ব্লু

ধন্যবাদ , শুভেচ্ছা রইল

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আপনার কাছে মূল্যায়নটা ভাল লেগেছে?
I'm shocked

১১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৪০

অপ্‌সরা বলেছেন: অনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া!

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: থ্যাঙকিউ থ্যাঙকিউ

১২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪০

কালীদাস বলেছেন:
“সব কাফের নাস্তেক বই লেখে এখন। পুরা বইয়ে খালি জেনা আর জেনা।”

=p~ =p~
মুটামুটি হর্ণি হয়া গেছিলাম এই লাইনটা পইড়া ;) সেই সাথে কিছু ইডিয়ট রাইটারের ইতর প্রাণী প্রজননের মত বই পয়দা করার জিনিষটাও কিছুটা হলেও আসছে।
ভাল লেখছেন আরণ্যক রাখাল :)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হাহাহা।
থ্যাঙকিউ

১৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:১৬

জুন বলেছেন: আরন্যক রাখাল আপনার অন্যান্য লেখার মত এই গল্পটিও চমৎকার । বর্তমান সমাজের চালচিত্র ফুটে উঠেছে । ভালোলাগলো ।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ

১৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৯

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
গল্প পড়ে ভালো লেগেছে +

শামসু
=p~

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: B-)
থ্যাঙকিউ

১৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


বইমেলায় গিয়েছিলেন?

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: না। তবে কিছু বই সংগ্রহ করেছি।

১৬| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:০৮

নীলপরি বলেছেন: দারুন লাগলো । ++

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ল্যাঙকিউ

১৭| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৩

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: চৌকিতে শু'য়ে থাকলে, মাথা মাটি থেকে ৩ ফুটের মাঝেই থাকে; উঠে বসেন, চা খান।
খুবই সমসাময়িক সামাজিক প্লটের উপর সাজানো হয়েছে গল্পটিকে
মন্তব্যটি অনেক ভাল লাগল।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৫:৩৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

১৮| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৫৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: আরণ্যক রাখাল ,



শুরু থেকে অনেকখানি , অনেকখানি কেন , প্রায় সবটাই সুন্দর লেগেছিলো । শেষের দিকে তাড়াহুড়ো করেছেন মনে হয় । কেন ? বলছি । বই মেলায় ওরকম করে কয়েকজন টুপিপাঞ্জাবি পরিহিত হুজুরের দল বোরকা পরা মেয়ে নিয়ে আসেনা, ধর্ম বিরোধী লেখা আছে কিনা যাচাই করতে । আরও বাস্তব কিছু আনা যেত । যেমন এবারে কথা ছিলো, ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ এসব বইয়ের লেখা তদারকি করবে । এটা হতে পারতো ।

এটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত মতামত ।
শুভেচ্ছান্তে ।

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: তদন্তের কথা বলিনি। তারা শুধু বলেছে। তদন্ত তারা করতে যাবে কেন!
আরেকটু মনযোগ হয়ত দেয়া দরকার ছিল। শেষটা আরও ভাল হয়তো করতে পারতাম

১৯| ১২ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:১৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: আমার ভাল লাগার মত মুল্যায়নটা পেলেন কোথায় ?, পাঠিকার মুল্যায়নটাই তো পিক আপ করে নেয়া হয়েছে যা পোষ্টের লিখাটিতে তুলে ধরা হয়েছে বোল্ড করে, নীজের লিখার বিষয়ে নীজেই shocked হলে করার কি আছে । shocked এর বিষয়টা বুঝা গেলনা মোটেও । মন্তব্যের ভাষাটুকু হৃদয়ঙ্গম না করে shocked এর কথা মালায় অামিও খানিকটা shocked হয়েছি বটে । বাংলা বাক্যের ভিতরে কথোপকথনকে ইংরেজীতে ডায়ালগ হিসাবে একটি নিগেটিভ অর্থ বুঝানোর জন্যই ব্যাহার করা হয়েছে । এটা হতেই বুঝা যেতো পারতো ডায়ালগ কথাটি দিয়ে কি বুঝানো হয়েছে । কারো পোষ্টের লিখা গল্পের সারবস্তুকে কপি করে এনে বোল্ড করে তুলে ধরা হলে লিখক shocked হয় এ কথা জানা হল নতুন করে ।

যাহোক ভাল থাকার শুভ কামনা রইল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.