নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কলকাতার বই, একুশে বই মেলা, আহমদ ছফা ও পাইরেসি

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ২:১৪

এক জিগরি বন্ধুর পাল্লায় পড়ে, তার জন্য বিভিন্ন সাইটের আর্টিকেল লিখতে হয়েছিল আমাকে। এমন সব বিষয় নিয়ে লিখতে হয়েছিল যেসবের নাম পর্যন্ত শুনিনি, দেখা তো দূরে থাক। তাদের মধ্যে একটি বেবিস্ট্রোলার। এ জিনিস মুভিতেই দেখেছি শুধু- দেখতাম, মা তার বাচ্চাকে একটা চাকা লাগানো চেয়ারের মত কিছুতে বসিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে- শপিং’এ যাচ্ছে, একাজ সেকাজ করছে। শুধু শিশুটির দেখাশুনার কাজেই মাকে আর আবদ্ধ থাকতে হচ্ছে না। শিশুটিকে সাথে নিয়ে করতে পারছে নিত্যদিনের কাজ। এদিকে আমার মা আমাকে কোলে করেই মানুষ করেছেন, শুনেছি। আমার বেবি স্ট্রোলার ছিলেন বুয়া- সেই আমাকে কোলে করে এবাড়ি ওবাড়ি করে বেড়াত।
আর আমিই কিনা লিখলাম ‘বেবিস্ট্রোলারের’ রিভিউ!
সেই বেবিস্ট্রোলারের কত কত ‘ভ্যারাইটি’, কত কত স্টাইল। আমব্রেলা স্ট্রোলার, জগিং স্ট্রোলার, ডাবল স্ট্রোলার, ট্রাভেল স্ট্রোলার ইত্যাদি ইত্যাদি। শিশুদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাল্টে যায় সেসবের সাইজ, স্টাইল, সুবিধা। শুনেছি রিমোট কন্ট্রোল ‘বেবি স্ট্রোলারও’ আসছে বাজারে। কর্মব্যস্ত মায়েদের জন্য এ এক আশির্বাদ। কিছু ‘বেবি স্ট্রোলার’ এতো বেশি সুবিধা দেয় যে, চাইলে বাচ্চাকে নিয়ে এভারেস্টও জয় করা যেতে পারে অনায়াসে।
আমেরিকানেরা নিজেদের কাজ নিয়ে খুব বেশিই ব্যস্ত থাকে বুঝি। এতোটা ব্যস্ত যে বাড়ির কার্পেট পর্যন্ত নিজের হাতে পরিষ্কার করে না। কার্পেট পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য সেদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে। তারা সপ্তাহে কিংবা মাসে একদিন শতশত ডলারের বিনিময়ে এসে কার্পেট পরিষ্কার করে দিয়ে যায়। আমি এই ‘কার্পেট ক্লিনিং’ নিয়েও লিখেছি বিস্তর। লিখেছি ফিডার, ‘ডায়পার’- এমনকি ‘সেক্সটয়ের’ও রিভিউ। আমার নিজের চুলে গত পাঁচ বছরে একবারও চিরুনির দাঁত লাগতে দেইনি। ইচ্ছে করেই। সবসময় এলোমেলো থাকে। কিন্তু গুগোল ঘেঁটে, বিভিন্ন সাইটের আর্টিকেল পড়ে ‘হেয়ারকেয়ার’ নিয়ে আর্টিকেল লিখতে একটুও প্রবলেম হয়নি।
মাছের তেলেই তো মাছ ভেজেছি, এ আর কী এমন কঠিন কাজ।
এসব লিখতে গিয়ে দুটো জিনিস শিখেছি ভাল করে। প্রথমটা হলো, অনলাইনের সব সাইটকে বিশ্বাস করতে নেই। এমনকি অনেকক্ষেত্রে উইকিপিডিয়াকেও না। কারণ হেঁজিপেঁজি সাইটগুলোয় আমার মত বিশেষ অজ্ঞরাও বিশেষজ্ঞ সেজে ক্যানসারের অবধি পথ্য বাতলে দিতে দ্বিধা করে না। আর উইকিপিডিয়া তো সবার জন্য উন্মুক্ত। যেকেউ গিয়ে যেকোন প্রবন্ধ এডিট করে আসতে পারে ইচ্ছামতো।
আর ২য়টি হলো, কপিরাইটের প্রতি শ্রদ্ধা। যে বন্ধু কাজটা দিয়েছিল, সে জানত, সেসব ব্যাপারে আমার জ্ঞান শূন্যেরও নিচে, ঋণাত্মকের ঘরে। সেই বলেছিল গুগোলের সাহায্য নিতে- দেদারছে। কিন্তু সাথে ল্যাজুর জুড়ে দেয়ার মত করে বলেছিল, “খবর্দার কপি করবি না। আর্টিকেল সেন্ট পার্সেন্ট ইউনিক হওয়া চাই। একটা লাইন কপি করলেও ধরা খেয়ে যাবি। বিভিন্ন সাইটের লেখা পড়বি কিন্তু লিখবি নিজের ভাষায়।”
সেই প্রথম আমি plagiarism শব্দটার সাথে পরিচিত হই। বন্ধুটির কাছ থেকেই। যার সহজ সরল অর্থ ‘চুরি’। কিন্তু ব্যাপারটা এতো সহজ সরল নয়। Plagiarism.org এর মতে, কোন আইডিয়া চুরি করা কিংবা চুরি করে ব্যবহার করা; বৃহৎ লেখার কোন অংশ লেখকের অনুমতি না নিয়ে প্রকাশ করা বা প্রকাশ করে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া; কপিরাইট ওয়ালা কোন বইয়ের কোন পৃষ্ঠার ছবি তোলা বা ফটোকপি করা অথবা লেখার কোন অংশ বা পুরোটা অনুবাদ করা; কোন ব্যক্তি’র অনুমতি না নিয়ে তার সম্পর্কে বই লেখা, সিনেমা অথবা ডুকুমেন্টারি তৈরি করা (মৃত হলে, পরিবারের কাছে অনুমতি না নিয়ে এসব করা); কোন লেখকের কোন বাক্য ধার করে শব্দ পরিবর্তন করা বা বাক্যের গঠন পরিবর্তন করা; কোন উদ্ধৃতি সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রদান করা; কোন ওয়েবসাইটের ছবি নিজের ওয়েবসাইট বা অন্য ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা ইত্যাদি plagiarism এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ কপিরাইট ভঙ্গ করাই হচ্ছে plagiarism। এ এক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আজ এই plagiarism, ‘পাইরেসি’- সোজা বাংলায় চুরিচামারি নিয়েই কথা বলবো। হয়তো প্রসঙ্গত চলে আসবে সমসাময়িক কিংবা অন্যান্য বিষয়াবলী।
বই নিষিদ্ধ করা, কিংবা বইয়ের কেনাবেচা বন্ধ করে দেয়াটা একধরণের মূর্খতা। এসব সাময়িক বাঁধার সৃষ্টি করে বটে কিন্তু চিন্তার স্বাধীনতার পথ আটকাতে পারে না কোনভাবেই। আমাদের দেশে একজন সর্বজন স্বীকৃত বুদ্ধিজীবী আহমদ ছফা। তিনি বেশ আলোচিত- কখনো কখনো বিতর্কিতও। কিন্তু তার রচনা, তার সাক্ষাৎকার পড়ে যতটুকু বুঝেছি, জেনেছি, তাতে তাকে স্রেফ ভ্রষ্ট বুদ্ধির সাম্প্রদায়িক মানুষই মনে হয়েছে। পশ্চিম বঙ্গের লেখকদের বই এদেশে প্রকাশ বন্ধ করার পেছনে তার হাত ছিল সবচেয়ে বেশি।
৪৭ এ ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের পর, ঢাকায় আলাদা একটা সাহিত্য গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। গড়ে ওঠে ঢাকাই প্রকাশনা শিল্প। প্রকাশিত হতে থাকে তরুণ লেখকদের অজস্র বই- কবিতা, গল্প, নাটক। শামসুর রাহমান হয়তো ঢাকাই প্রকাশকদের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার।
দেশভাগের আগে পুব বাঙলার পাঠকদের মনের খোরাক মেটাত কোলকাতা হতে প্রকাশিত বইগুলিই। দেশভাগের পরও বাঙালি পাঠকদের কোলকাতার বইয়ের প্রতি ভালবাসা কিংবা টান কমে যায়নি। যাওয়ার কথাও নয়। সুন্দর প্রচ্ছদ, ভাল বাঁধাই- আর সবচেয়ে বড় কথা ভাল মানের বই- পাঠক আচমকা সে বই পড়া ছেড়ে দেবে কেন? আমাদের লেখক সমাজও সেসময় হাপিত্যেশ করে বসে থাকত কোলকাতার বইয়ের জন্য। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর থেকে বই আসা বন্ধ হলো। কিন্তু চোরা পথে বই আসা বন্ধ হয়নি। একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের পর আবার মুক্ত করা হয় কোলকাতার বই এদেশের বাজারে। এদেশের লেখকদের সাথে সাথে বইয়ের দোকানগুলোয় জায়গা করে নেয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রকাশনীর বই। সেসব বইয়ের পাঠক তৈরিই ছিল এদেশে- পাঠকেরা সেসব বই লুফে নিতে দ্বিধা করেনি একটুও।
এই জায়গায় লেগেছে গেরোটা। আমাদের সাহিত্যিকেরা দেখলেন, তারা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তাদের সাথে। তাদের লেখা বইয়ের চাইতে মানুষ পশ্মিমবঙ্গের লেখকদের বই পড়ছেন অধিক। হারিয়ে যাচ্ছেন তারা। নিজেদের বইয়ের বাজারে টিকিয়ে রাখার প্রবল ইচ্ছাই জন্ম দিল ক্ষোভের। এই ক্ষোভকেই আন্দোলনে রুপান্তরিত করলেন আহমদ ছফা। ক্ষোভটা এখনও লক্ষ করা যায় বিভিন্ন লেখকের কর্মকান্ডে। (নাম উল্লেখ করে তাদের আর হাইলাইট করতে চাই না। তারা এসব করে স্টান্টবাজি হিসেবে- এক আধটু আলোচিত হওয়ার জন্য) আহমদ ছফা ১৯৯৪ সাল থেকে এদেশে পশ্মিম বঙ্গের লেখকদের বই প্রকাশের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানো শুরু করলেন। তার ও আর কিছু সাহিত্যিকের কর্মতৎপরতায় ১৯৯৮ সাল থেকে বন্ধ হলো কোলকাতা’র বইয়ের একুশে বইমেলায় প্রকাশ।
সাহিত্য অথবা শিল্প কোন প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। সাহিত্য মান ও উৎকর্ষতাই মুখ্য। বই বিক্রির হিসেবে কিংবা জনপ্রিয়তায় বিচার হয়না কিছুই। তাই যদি হয় তাহলে ড্যান ব্রাউন কিংবা সিডনি শেলডনই বিশ্বসেরা লেখক। ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের মত অনেকেই শুনেছি একসময় তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। এখন তাদের নাম কেউ মুখেও নেয় না। এর বহুবিধ কারণের একটা হলো, সেসব সাহিত্য সুপাঠ্য হলেও মানহীন- একটা নির্দিষ্ট সময় পর তারা আবেদন হারিয়েছে পাঠকের কাছে। আমাদের সাহিত্যিকেরা এই সামান্য জিনিসটি বুঝতে পারেননি। বই বিক্রির তাগিদে, আরও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছনোর নেশায় কোলকাতার প্রকাশনীর বই এদেশে আমদানি নিষিদ্ধ হলে, কোন লেখকের কাছ থেকে তাই কোনরূপ প্রতিবাদ আসেনি। তারা যে একজন পাঠকের অধিকারে হাত দিয়েছে সে ব্যাপারেও একবার নজর দেয়নি। ভাবেনি। হয়তো ভাবার মত মানসিক শক্তি তাদের নেই।
৯৮ সালে কোলকাতার বই নিষিদ্ধ হওয়ার আগে বাংলাদেশের লেখকদের বই যে বিক্রি হয়নি তা তো নয়। হুমায়ূন আহমেদ তার অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়। কাজী আনোয়ার হোসেন জনপ্রিয় ‘ধ্বংস পাহাড়’ থেকেই। কোলকাতার বই নিষিদ্ধের পিছনে আহমদ ছফার প্রথম ও প্রধান যুক্তিটি ছিল, পাঠকেরা বাংলাদেশী সাহিত্যিকদের বই না কিনে পশ্চিম বঙ্গের লেখকদের বই কিনছে। তার এই খোরা যুক্তির সবচেয়ে বড় উত্তর হুমায়ূন আহমেদ, কাজী আনোয়ার হোসেন ও ইমদাদুল হক মিলন।
আসলে ‘পপুলার ফিকশন’ বলে একটা টার্ম আছে- যার ধর্ম সাধারণ পাঠককে আকর্ষণ করা। সে সাহিত্য কাহিনী নির্ভর, চমকপ্রদ ও স্টান্টবাজ। যে পাঠকেরা হুমড়ি খেয়ে পশ্চিম বঙ্গের লেখকদের দিকে ঝুঁকে গিয়েছিল, তাদের পনেরো আনাই ‘পপুলার ফিকশন’ খোর। তারা যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্য পড়েছে, তেমনি পড়েছে হুমায়ূন আহমেদকে। কিন্তু ভুল করেও এক্সপেরিমেন্টাল কিছুতে হাত দেয়নি। স্বভাবতই, পপুলার ফিকশনের বাইরের বইয়ের বিক্রি বাড়েনি- আগেও শতকরা আড়াইজন পাঠক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বা সন্দীপন কিনত, এখনও তাই কেনে।
আহমদ ছফা উদাহরণ হিসেবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে শওকত ওসমানের বই বিক্রির তুলনা করে দেখিয়েছিলেন- সুনীলের বই শওকত ওসমানের চাইতে অনেক বেশি বিক্রি হয়/ হতো। ‘মৌলবি’ আহমদ ছফা বেঁচে থাকলে হয়তো জিজ্ঞেস করতাম, “কোলকাতার বই নিষিদ্ধের পর শওকত ওসমান কি তবে বেস্ট সেলার হয়ে গিয়েছিলেন? তার বই কি লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল?”
সে নতিজা তো দেখা যাচ্ছে না।
বইয়ের আমদানি বন্ধ করে তারা পাঠকের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন মাত্র। পাঠক কোলকাতার, বটতলার, আমেরিকার, ঢাকার যে কোন স্থানের বই পড়ে মানসিক চাহিদা মেটাতে পারে- সে একান্ত তার ব্যাপার। পাঠকের চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের লেখকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়নি। কোন ভূখণ্ডের লেখকের দ্বারা সম্ভবও নয় সে দায়িত্ব নেয়া।
প্রকাশকের দিকটা এখানে উঠে আসতে পারে। বলা হতে পারে, তারা মার খেয়ে যাচ্ছে, ব্যবসা হচ্ছে না। এসব লেইম যুক্তি। প্রকাশকেরা প্রচার ভাল ভাবে করলে, বই-প্রকাশেচ্ছু লেখকের পকেট না দেখে পাঠকের পকেটের দিকে নজর দিলে এসমস্যা হত না।
বই আমদানি বন্ধের ফলে অপর যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, সেটা হলো পাইরেসি। কিছু প্রকাশক দেদারছে ওপার বাঙলার বই নিজের মনে করে ছেপে চলেছেন। সে বইয়ের পৃষ্ঠার মান খারাপ, প্রচ্ছদ ও বাঁধাই নিম্নমানের; দাম কম। এর ফলে বাঙালি পাঠকেরা লেখকের পেটে লাথি মেরে সেসব বইই কিনছেন বেশি, দাম হাতের নাগালে বলে। এতে দেশিও প্রকাশনা শিল্প তো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেই- বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পেশাদার লেখকেরা। সবাই তো আর শখের বসে সাহিত্য রচনা করে না। নেশাকে পেশা হিসেবে নেয় অনেকে- তাদের পেট শুকচ্ছে। কোলকাতার বই এদেশে প্রকাশের অনুমতি থাকলে হয়তো কমত এই পাইরেসি। পাঠকেরা অন্তত পাইরেটেড বইয়ের বিকল্প পেত খুঁজে- এখন তো সে উপায়ও নেই।
এসব ব্যাপারে কাউকে নজর দিতে দেখা যায় না। মাঝেসাঝে প্রতিবাদ হলেও কার্যকর কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। অবশ্য আমাদের নামীদামী প্রকাশকেরাও চুরি চামারি করতে অভ্যস্ত। কিছুদিন আগে মার্কিন থ্রিলার লেখক নিক পিরগ এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, তার যেসব বইয়ের বাংলা অনুবাদ আমাদের একুশে বইমেলায় এসেছে (3 am, 3.10 am, 3.21 am, 3.46 am), তার একটির জন্যও অনুমতি নেয়নি ‘বাতিঘর’। বাতিঘর অনেক অনেক অনুবাদ প্রকাশ করে, এখন তো সন্দেহ হয় তারা হয়তো কোনটার জন্যই অনুমতি নেয় না।
বই পাইরেসিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন রিটন খান- আমার বই ডট কমের অ্যাডমিন। তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে খ্যাত অখ্যাত সব লেখকের বই স্ক্যান করে পিডিএফ বানিয়ে আপলোড করছেন নিজের সাইটে। লেখকের বা প্রকাশকের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই। তার সাইটের বদৌলতে এপারের ওপারের যেকোন লেখকের বই পাচ্ছেন বিনামূল্যে। তবে আপনি আর টাকা দিয়ে বই কিনবেন কেন? শুধু আমার বই ডট কম নয়, এমন বেশ কয়েকটি সাইট আছে যারা বিনামূল্যে ইবুক দিয়ে যাচ্ছে। ‘মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়......” সুতরাং এসব সাইটও ‘আমার বইয়ের’ মত কপি রাইটের তোয়াক্কা করছে না।
আমাদের সাহিত্যে ঈদ সংখ্যা, পূজা সংখ্যা- এসব উৎসব ভিত্তিক সংকলনগুলোর একটা বিশেষ মর্যাদা আছে। সাধারণত এই সংখ্যাগুলোয় প্রকাশিত লেখাগুলো সেবছর বই আঁকারে প্রকাশিত হয়। রিটন খান সাহেবের বদৌলতে আপনি সেই ঈদ বা পূজা সংখ্যাগুলোকেও পাচ্ছেন বিনামূল্যে, মাত্র কয়েক এমবি খরচ করে!
আর তবে টাকা দিয়ে বই বা পত্রিকা কেনা কেন?
ভাগ্যিস দৈনিক পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণ আছে। নাহলে হয়তো এতদিনে দেখতাম, তারা প্রতিদিন পত্রিকাগুলোও স্ক্যান করে আপ করা শুরু করে দিয়েছে!
পিডিএফের মাধ্যমে আপনি বইগুলো পাচ্ছেন বটে পড়ার জন্য, হয়তো সেসব আপনার চিন্তাধারাকেও করছে উন্নত- কিন্তু সবই হচ্ছে পাইরেসির মাধ্যমে; লেখকের মেধার মূল্য না দিয়ে। লেখক-প্রকাশক বইটা পকেটের টাকা খরচ করে ছেপেছেন, আপনি সেটা পাবেন নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে। অন্যথা হলে, আপনি চুরি করছেন। এখানে বইয়ের দামের কথা উঠতে পারে। সত্যি বলতে, এ এক অজুহাত। এক জিবি ইন্টারনেটের দাম এখন ৯৪ টাকা, গোল্ডলিফের একটা শলাকার দাম ৮ টাকা- সে হিসেবে একশ পৃষ্ঠার একটা বইয়ের দাম ১৫০ টাকা হওয়া খুব বেশি কি? তারপরও দামে না কুলালে পাবলিক লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়তে পারেন। আপনাকে তো বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে না।
একটা পরিসখ্যানে* দেখা গেছে, ৪৪.৬% জার্মান সপ্তাহে অন্তত একটা বই পড়ে। আর ৫৮.৩% জার্মান অন্তত একটা বই কিনে থাকে। তাহলে তারা সপ্তাহে একটা করে বই পড়ে কোথা থেকে? উত্তরটা হলো লাইব্রেরী। উইকিপিডিয়া বলছে জার্মানিতে পাবলিক লাইব্রেরীই আছে ৬৩১৩টি! স্কুলের, কলেজের লাইব্রেরী, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক লাইব্রেরী তো আছেই। সৈয়দ আবুল মকসুদের ইউরোপ ভ্রমণবৃত্তান্তে পড়েছিলাম, প্রতিটি নতুন বইয়ের একটা করে কপি প্রত্যেকটা লাইব্রেরীতে পাঠানো হয়। সরকার এসব বই কেনে। তারমানে যে কোন প্রকাশক ও লেখক নির্ভয়ে বই প্রকাশ করতে পারে এটা ভেবে যে, অন্তত ৬০০০ বই সরকার থেকে কেনা হবেই!
আমরা গরীব দেশের মানুষ। আমাদের সরকার জার্মান সরকারের মত এমন কাজ করতে পারবে না অর্থনৈতিক কারণে। তার উপর ৫% লোকও পাওয়া যাবে না যারা সপ্তাহে অন্তত একটা করে বই পড়ে। কেনে তো আরও কম।
এই নড়বড়ে অবস্থায় যদি পাইরেটেড ইবুক এসে বইয়ের ক্রেতা ১%-ও কমিয়ে দেয়, সেটাই অনেক ক্ষতি। আমার বই ডট কমের মত সাইটগুলো বাংলা সাহিত্যের জন্য, প্রকাশনার জন্য কতোটা ক্ষতিকর সেটা বোঝার জন্য এর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করছি না।
এবারে আবার সেই আমেরিকার কিচ্ছায় চলে যাই। সেখানে কপিরাইটের অবস্থা কেমন? কেউ যদি কোন লেখার কোন অংশ লেখকের অনুমতি ব্যতিত কপি করে নিজ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে, তবে লেখক তাকে প্রথমে একটা লেটার বা মেইল পাঠাবেন, লেখাটা রিমুভ করে দেয়ার জন্য। এরপর রিমুভ করলে ভাল, না করলে দোষী প্রমাণিত হলে তাকে গুনতে হবে এক লক্ষ ডলার জরিমানা। কোন লেখা পুরো কপি করলে, মূল লেখক DMCA এর কাছে অভিযোগ দাখিল করতে পারে। DMCA সেই সাইটের মালিকের সাথে সাথে যোগাযোগ করে লেখাটা রিমুভ করতে বলে। যদি রিমুভ না করে তবে তাদের সুপার ইন্টেলিজেন্ট কম্পিউটার এক্সপার্টদের দ্বারা সাইটটি ডাউন করে দেবে!
আর এদিকে আমারবই.কম কপিরাইট আইনের বারোটা বাজিয়েও টিকে আছে বহাল তবিয়তে। পর্ন আমাদের জন্য ক্ষতিকর অবশ্যই, তার চাইতে বেশি ক্ষতিকর এধরনের ইবুক সাইট। এই সাইটগুলো বন্ধেও তাই অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
বইয়ের গুরুত্ব কত বেশি সেটা বুঝতে কিংবা বোঝাতে মহাপুরুষের বানী উদ্ধৃত করতে হয় না। এই বইকে জীবন্ত রাখতেই আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে প্রকাশনীগুলোকে। আমাদের দেশে কপিরাইট আইন প্রয়োগের অভাবে নষ্ট হচ্ছে বইয়ের বাজার, কমে যাচ্ছে পাঠক। আবার এমন সব হতচ্ছাড়া বিধান তৈরি হচ্ছে যাতে করে নষ্ট হচ্ছে পাঠকের স্বাধীনতা। এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তির পথ সরকার কতৃক নির্দেশিত হবে না। সচেতন হতে হবে আমাদেরই। সরকারকে বাধ্য করতে হবে সকল মতের, সকল দেশের বই এদেশে প্রকাশিত হতে দেয়ার অনুমতির জন্য। পাইরেসির বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে, কথা বলতে হবে মুক্তমত ও পাঠকের স্বাধীনতার জন্য।
২৮ ফেব্রুয়ারি- ১লা মার্চ, ২০১৭
তথ্যসূত্র- Click This Link

মন্তব্য ৫২ টি রেটিং +১৭/-০

মন্তব্য (৫২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৪২

শিখণ্ডী বলেছেন: আমাদের টিভিওয়ালা আর বইওয়ালারা শুধু নিজের ধান্দায় ব্যস্ত। পাঠকের কথা ভাবেন না, পাঠকেরা যা ইচ্ছে তাই পড়বে, সেটাই তো স্বভাবিক। যারা বইকে দেশি বা বিদেশি ট্যাগ লাগায় তারা কোনো দিন মনে হয় বিদেশি বই পড়েননি?

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৪৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব সুন্দর বলেছেন।
ওরা নিজেরাও পড়ে। আর সাধারণ পাঠকের পায়ে দড়ি।
টিভিওয়ালাদের কথা নাই বা বললাম। এরা পারছে না কোনমতেই কুলোতে। তাই এভাবে ব্লেইম করে দোষ ঢাকতে চাচ্ছে। মাথা না ঘামিয়ে কাজ করলে এমন কাজই উপহার দেবে ওরা। চর্বিতচর্বন।

২| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:০৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি তো আমাদের বই সম্পর্কে সান্দিহান করে তুললেন! আমি তো ভাবছিলাম, দাদারা এখন হিন্দিতে বই লেখে!

আমার বই ডট কমের অ্যাডমিন কোন আড়তের চালের ভাত খায়? উহার তো লাল দালানে থাকার কথা। লেখকেরা উহার মাথার চুল কেটে, ঘোলা ঢেলে, শহরের রাস্তায় ল্যাংটা করে হাঁটায় না কেন? আগামী বছর বাবুর খবর আছে!

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:০৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: দাদারা বাংলাতেও লেখে :)
আসলেই লাল দালানে থাকার কথা। চুরি করছে আবার সেটা প্রকাশও করছে বীরের মত।
দেশে আইন কানুন নাই বলে হেসে খেলে বেড়াচ্ছে এখনও

৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:১০

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: আকাশের চাঁদকে মেঘেও লুকিয়ে রাখতে পারেনা বেশিক্ষণ। চাঁদের উপস্থিতি ঠিকই টের পায় পৃথিবী।

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:২৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কথা সত্য।
তবে আকাশ বেশি মেঘলা থাকলে দেখা তো যাবেই না। অমাবস্যা তখন

৪| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:১৪

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: পোষ্টের শুরুতে আপনার চেষ্টা ও সফলতা গুলো জেনে ভালো লাগলো। আসলে চেষ্টা করলে উপায় বের হয়ই। ইচ্ছা থাকলেই পারা যায়।

শুভকামনা থাকলো, যেনো আরও নতুন নতুন বিষয়ে আমাদের জানাতে পারেন।

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:২৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৫| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:৩৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: লেখককে আরো মূল্যহীন করে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ভালো বিশ্লেষণ

০১ লা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৩১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: :)

৬| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:০৯

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: এই ডা তো বেশ চরম লিখেছেন!

০১ লা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৩১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ওহহো।
থ্যাঙকিউ

৭| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:১৭

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: যে যেভাবে পারছে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করে চলছে। উচু গলায় দর্প প্রকাশ করতে পারলেই সাত খুন মাফ। এত সমস্যার ভীড়ে কোন সমস্যাই আর সমস্যা মনে হচ্ছে না। হয়তো আসছে দিনে আবার হবে..............

০১ লা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আবার তো হবেই।
আমরা উইন্ডোস পর্যন্ত পাইরেটেড চালাই।
এ আর এমন কি

৮| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৫২

টারজান০০০০৭ বলেছেন: সম্ভবত সুনীলেরই কথা , বাংলা শুধু বাংলাদেশেই বেঁচে থাকবে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে তো হারিয়ে যেতে বসেছে। তা দাদাদের মার্কেট সংকুচিত কইরা ছফা বিরাট গোনাহ করছিলো দেখা যায়! আপনার লেখা পইড়া সরকার বাহাদুরের কাছে অনুরোধ করতাছি , দয়া কইরা দাদাদের অসুবিধা দূর করুন ! আমিও তাহাদের লেখার বিরাট ভক্ত। বিশেষ কইরা শিবরাম, ঘনাদা , টেনিদা, নীললোহিত , শঙ্কু ভালো লাগে। পাইরেছি খারাপ জিনিসই। তবে টাকার অভাবে কাউরে পড়া থেকে বঞ্চিত করতে খারাপই লাগে।মেধাস্বত্বের বিকল্প কিছু করা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে।নাহলে আমার মতো বুক ওয়ার্ম ভাতে না মরলেও বইতে মরে যাবে ! বিভিন্ন দেশে ই জার্নালের ন্যাশনাল লাইসেন্সিং আছে। বইয়েরও করা যায় কিনা ? তাহলে লেখক ও পাঠক উভয়েরই স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। টাকার অভাবে বই পড়াও বন্ধ হয়না।

০১ লা মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৩০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অসুবিধা দাদাদের না ভাই সাব। তাদের বই এইদেশে বিক্রি হয় না লে তারা মরে যায়নি। বরং আমরা চুরি করতেছি। আমাদের বই তো তাদের দেশে যায়। তারা বাঁধা দেয় না। তারা পাঠকের স্বাধীনতার ব্যাপারটা মাথায় রাখছে, এদেশের বই ওইখানে পাইরেটেড হয়ে বিক্রিও হয় না।
আমাদের এখন লিগাল ইবুকের দিকে ঝোকা উচিৎ। ইবুক কিনার ব্যবস্থা থাকবে, টাকা পে করারও উপায় থাকবে। এটা তো ইংরেজি বইয়ের বেলা হয়নি। মুদ্রণ খরচ কমে যাবে বলে বইয়ের দাম খুব কম হবে। লেখকও তার মেধার মূল্য পাবে। পাঠক লেখক দুইই বাঁচবে। তবে প্রকাশকেরা একটু সমস্যায় পড়বে। তবে গাইড বই বেচেই চলে যাবে তাদের। তারা এখন খুব ভাল কোন কাজও করছে না যে কারণে তারক না থাকলে মরে যাবে আমাদের সাহিত্য

৯| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:০৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: Good article

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৩৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: :)

১০| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৫২

নিষ বলেছেন: লেখা পাইরেসি, কপি করা এইসকল বিষয় নিয়ে চিন্তিত হবার মত মন-মানসিকতা বাঙালিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত হয়ে ওঠেছে বলে বুঝি না। আপনার টপিকটা ভাল। এটা নিয়ে চিন্তা করা সবার কর্ম নয় বলেই মনে হবে কারণ চারপাশে যা দেখছি তাতে উপায় নেই সটা না ভেবে।

আহমদ ছফার ওপর আপনার একটা বিদ্বেষিভাব পোষণ করতে দেখলাম। উনার লেখা জাতিয়তা ভিত্তিক আর্টিকেল পড়ে দেখার অনুরোধ রইল। উনার বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ করেছেন সেটা নিয়ে খোঁজ করে দেখব।

০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৪৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আহমদ ছফার প্রতি আমার বিদ্বেষ নেই। তার লেখা পড়েছি আমি। প্রবন্ধ সাক্ষাৎকার, উপন্যাস।অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী গোটা পুরুষতান্ত্রীক মনোভাবের ফসল। তিনি রবীন্দ্র বিদ্বেষীও।
তিনি কলকাতার লেখকদের বিরোধী ছিলেন, অথচ নিজেও এমন কিছু লিখতে পারেননি যেটা তাদের লেখার চাইতে ভাল।

১১| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ২:০৩

কালীদাস বলেছেন: একথা অনস্বীকার্য যে হার্ড কপি বইয়ের মজাটাই আলাদা। তবে যুগের চাহিদার কথা ভেবে আমাদের প্রকাশকদেরও ধীরে ধীরে ই-বুকের কথা চিন্তা শুরু করা উচিত, দরকার হয় পাবলিক কিন্ডল রিডার কিনবে হার্ডকপির স্বাদ স্কিনে মেটানোর জন্য :P "ডিজিটাল বাংলাদেশে" এখনও লিগালি ই-বুক বেচাকেনার কথা কেউ ভাবছে না ভাবতেই অবাক লাগে।

০২ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:৫০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সেটাই তো। ই-বুক কেনাবেচা শুরু হলেই কিন্তু সেই পাইরেটেড পিডিএফ ফ্রি দেয়া ওয়েবসাইটগুলোর বারোটা বাজবে

১২| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:০৫

উম্মে সায়মা বলেছেন: খুব ভালো একটা ব্যাপার তুলে ধরেছেন আরণ্যক রাখাল ভাই।
তবে এদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। অনেকে জানেই না এগুলো যে অনৈতিক। চোখে আঙ্গুল দিয়ে না দেখিয়ে দিলে বুঝবেও না। আর এ কাজ আইন এবং সুশীল সমাজকে করতে হবে।
না জানিয়ে অনুবাদ করা ও যে plagiarism এটা আমি নিজে ব্লগে এসে জেনেছি। আর এ কাজ তো মানুষ অহরহ করছে!

১৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:৫৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: রহস্য পত্রিকা কাজটা খুব বেশি করে। এখন না জানিয়ে অনুবাদ ট্রেন্ড হয়ে গেছে। সেটা মানা যায় তবুও। পশ্চিমা লেখকেরা অনেক আয় করে বই বেচে, কিন্তু চোরা ইবুক ও চোরা বইগুলো তো বাঙালি লেখকদের মেরে দিচ্ছে

১৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:১০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: পাইরেসি একটি শাস্তি যোগ্য অপরাধ। বাট কারো শাস্তি হয়েছে বলে শুনিনি।

০২ রা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:২৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: শাস্তি হয়েছে তো অবশ্যই। তবে আমাদের দেশে না। ফেসবুককেও এর জন্য জরিমানা গুনতে হয়েছিল, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি চুরি করার অপরাধে।
আমাদের দেশে শাস্তি কবে থেকে দেয়া শুরু হবে, জানা নেই। হয়ত যখন চুরি করার মত কিছু থাকবে না তখন

১৫| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৭

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ছাগলে ভরে গেছে দেশ। আহমদ ছফা তাদের মধ্যে অন্যতম। B:-)

০২ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ছাগল হয়তো ছিলেন না। তবে কিছুটা সাম্প্রদায়িক ছিলেন

১৬| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:৩৯

দেশী পোলা বলেছেন: লোকজন তো শুনলাম, নিজের গাটের পয়সা খরচ করে বই ছাপায়, পাবলিকে না কিনলে সেই প্রডাক্টের কোন ভ্যালু নাই

০৩ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:৫২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সেইটাই

১৭| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:৩২

পথে-ঘাটে বলেছেন: আমার ধারণা আহমদ ছফা একজন খাঁটি জাতীয়তাবাদী ছিলেন। তিনি কলকাতার বই প্রকাশনার বিরোধিতা করতেন না বরং ভারতীয় সামগ্রিক আগ্রাসনের বিরোধী ছিলেন। বই প্রকাশনার ব্যাপারটি ছিল সেগুলোর একটি।

সংগত কারণে ভারত বিরোধিতা মানেই কি সাম্প্রদায়িকতা কিনা বুঝতে পারছি না।

০৩ রা মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:১৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাই, শিল্প সংস্কৃতিতে জাতীয়তার জায়গা নেই। আপনি খাঁটি জাতীয়তাবাদী হলে ইউরোপের লেখকদেরও বাতিল করবেন। গুন্টার গ্রাস বা হেমিংওয়েও আপনার নিজ জাতির না। এটা সিম্পল একটা ব্যাপার।
ভারতীয় আগ্রাসন ব্যাপারটা এই জাতীয়তাবাদীদেরই বানানো। ভারত আগ্রাসী হয়ে আক্রমণ তো করেনি। আমাদের পাবলিক ভারতীয় অনেক কিছু ভালবাসে, এর কারণ, সেসব ব্যাপারে আমরা লবডঙ্কা আর ওরা ভাল কাজ করছে, উৎপাদন করছে।
আহমদ ছফা ফ্রড ছিলেন। শিল্প সাহিত্যের ধব্জা ঠিকই ঢাল হিসেবে ছিল, তবে মনে দুর্গন্ধ দূর করবেন কীকরে

১৮| ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:৫৮

জুন বলেছেন: আমি কিন্ত ই বুকের চেয়ে কাগজে ছাপা বই পড়তেই অসম্ভব ভালোবাসি । আমার খাটের মাথার কাছে পাশে সাইড ড্রয়ারের ছাড়াও বিছানার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে কিছু বই । যে জায়গাগুলো ভালোলাগে তা বারবার পড়ি ।
সিডি পাইরেসি, ম্যুভি পাইরেসি, কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম পাইরেসি কোনটা আর বন্ধ করবেন আরন্যক রাখাল :(

১০ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:৫৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বন্ধ করা যে কবে সম্ভব জানি না। তবে বন্ধ হবে একদিন বলে মনে করি।
আমরা পিসিতে যে windows ব্যবহার করি সেগুলার আসল দাম ১০০ ডলারের উপরে, আর আমরা ৪০ টাকা দিয়ে সিডি কিনে ব্যবহার করি!!!! বাঙলি ১১৯ ডলার খরচ করে windows 10 কিনবে না। আসলে টেকনোলজির দিকে তাকালে সবদিক থেকে পাইরেসিতে আমরা ডুবে আছি।

১৯| ১০ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৩৪

প্রামানিক বলেছেন: আমাদের দেশে কপিরাইট আইন প্রয়োগের অভাবে নষ্ট হচ্ছে বইয়ের বাজার, কমে যাচ্ছে পাঠক। আবার এমন সব হতচ্ছাড়া বিধান তৈরি হচ্ছে যাতে করে নষ্ট হচ্ছে পাঠকের স্বাধীনতা।

আপনার সথাগুলোর সাথে সহমত।

১০ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:৫৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ

২০| ১৩ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৫৬

নীলপরি বলেছেন: আপনি খুব ভালো বিষয় নিয়ে লিখছেন । লেখাটা ও ৮নং এর প্রতিউত্তরটা ভালো লাগলো ।

শুভকামনা ।

অ । ট ;- আমি , আপনার আগের পোষ্টের মন্তব্যের কোনো প্রতিউত্তর পাইনি ।

১৩ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:২৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ওহহো।
আমি খুব অনিয়মিত। সরি!
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। পাইরেসি আরও গ্রাস করার আগে কিছু করা উচিৎ সরকারের

২১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৪৮

মানবী বলেছেন: "সাহিত্য অথবা শিল্প কোন প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। সাহিত্য মান ও উৎকর্ষতাই মুখ্য।"
- সত্যকথা তবে এই নিষিদ্ধকরনের চর্চা প্রথমে ভারতেরই শুরু করা মনে হয়।
ভারত সরকার আমাদের দেশের শিল্প তাদের দেশে নিষিদ্ধ করে রেখেছে। কয়েক বছর আগেই দিল্লীতে বাস করছেন এমন একজন বন্ধুর কাছে জেনেছি কি প্রচন্ড চেষ্টা, সাধ্য সাধনার পর তারা বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলের ঝাপসা ঝাপসা ছবি দেখার সুযোগ পায়, আর তা নিয়ে সন্তোষ্ট থাকে!
আমাদের দেশের জেমস সেখানে জনপ্রিয় হবার পর ভারত সরকার তার প্রবেশাধিকার ছিনিয়ে নেয়। নিজেদের এমন সব বিশ্বমানের শিল্পীদের পাশেও বাংলাদেশের একজন জেমসকে তারা হুমকী মনে করে। সাম্প্রতিক সময় পাকিস্তানি শিল্পীদের নিষিদ্ধ করে তারা আরেকটি বদ্ধ মনের পরিচয় দিয়েছে। ভারত দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোতে শুধু নিজেদের একছত্র আধিপত্য বিস্তারে বিশ্বাসী বলেই তাদের মাঝে মাঝে নিজেদের ওষুধটাও আমরা পরখ করে দেখাতে পারি।

যদিও ভারতে সাহিত্য শিল্পের বিশাল পাঠক/ভোক্তার কাছে বাংলাদেশের এই বর্জন তেমন কিছু নয়, তারপরও নিজেদের পিঠ সোজা করে উঠে দাঁড়ানোটাও জরুরী! তাই সুনিল, শির্ষেন্দুর ভক্ত পাঠক হওয়া সত্ত্বেও আহমেদ ছফার অতীত আন্দোলনে সমর্থন জানাই!


পোস্টের প্রধমাংশ আগেই পড়েছিলাম, পাইরেসী নিয়ে আপনার বন্ধুর (?)সততা আর সচতনতাটা মজার নিঃসন্দেহে।
আজ বাকি অংশ পড়ে মন্তব্য করা।

পোস্টের জন্য ধন্যবাদ আরণ্যক রাখাল।

১৪ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সরকার তো অনেক কিছুই করে। ব্যাপারটা হলো, বুদ্ধিজীবিরা প্রতিবাদ করছে কিনা। পাকিস্তানি শিল্পিদের বর্জনের প্রতিবাদ কিন্তু সর্বস্তর থেকে এসেছে। তারা বাধ্যও হয়েছে নিষেধাক্কা খুলে দিতে। জেমস কিন্তু এখন গাইতে পারে ভারতে।
আমরা ভারতীয় লেখকদের এদেশে প্রকাশ বন্ধ করে কিন্তু আমাদেরই ক্ষতি করছি। কোন দেশ কী করছে সেটা বড় ব্যাপার নয় অবশ্যই

২২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:১৭

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: এখনকার বেশীরভাগ লেখকরা বই লেখে টাকা কামানোর জন্য; এতে কোন সন্দেহ নেই। বললে অনেক বলা যায়; থাক না বলি আর।

১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:০৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এটা করুক, সমস্যা নেই। পেট চালাতে হবে তো, না?

২৩| ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:০২

কানিজ ফাতেমা বলেছেন: ই-বুক বিষয়টা খারাপ না । বই পড়া বিষয়টাকে সমৃদ্ধ করতে এটি আমার কাছে যথেষ্ট ভাল উদ্যোগ বলে মনে হয় তবে, এখানে ন্যূনতম পে সিষ্টেম থাকা উচিৎ । তাতে যারা মূল বইয়ের স্বত্তাধিকারী তারা সানন্দে ই-পাবলিশ করবে, স্বাভাবিকভাবে পাইরেসি কমে আসবে এবং ভাল মানের লেখাগুলো অনলাইন সংস্করনের মাধ্যমে পাঠক সহজেই খুঁজে পাবে । যদিও একটি চমৎকার বইয়ের মূল্যায়ন হয় উপলব্ধিতে, হৃদয়ে ধারনে নির্দিষ্ট পেয়িং এর মাধ্যমে নয় । কিন্তু শিল্পটা টেকাতে হলে অর্থের বিনিময় অবশ্যই প্রয়োজন।

১৬ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব ভাল বলেছেন।
ইংরেজি প্রতিটা বইয়ের তিনটা ভার্সন থাকে। হার্ড কভার, পেপারব্যাক, ইবুক। আপনি যেটা কিনতে চান কিনবেন। ইবই তৈরীতে খরচ হয় না বললেই চলে। যে কেউ ওয়ার্ড ফাইলে ইবইতে নিয়ে যেতে পারবে। এটার প্রচারণটাও হবে অনলাইনভিত্তিক। তাই খুব বেশি দাম রাখবেন না লেখকেরা। এটা পাইরেসিকে বহুগুন আটকাবে

২৪| ১৬ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২০

জেন রসি বলেছেন: ছফা কিছুটা অদ্ভুত চরিত্র ছিলেন। যা মনে আসত তাই করতেন। তাকে নিয়ে অনেক রকম গল্পই বাজারে চালু আছে। তবে তিনি যতটা না ছিলেন সাম্প্রদায়িক, তার চেয়ে বেশী ছিলেন জাতীয়তাবাদী। আর একজন লেখক সব দিক থেকেই তার প্রাপ্যটুকো পাক। এটাই কামনা। বেশ ভালো লিখেছেন।

১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:০৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: তার মত একজন মানুষ জাতিয়াবাদী হবেন, এটা কেন জানি মানতে পারি না। তিনি রবীন্দ্রনাথকে নিয়েও উল্টাপাল্টা বলেছেন।

২৫| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৩

কামরাঙ্গীরচরের মাসুক জনতা বলেছেন: :)

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ;)

২৬| ২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:০৮

দীপংকর চন্দ বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। সুন্দর উপস্থাপন। তথ্যবহুলও।

প্রিয়তে থাক।

শুভকামনা অনেক।

২৩ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা

২৭| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩২

সোহানী বলেছেন: অনেকগুলো গুড়ুত্বপূর্ন এবং নিজস্ব অভিজ্ঞতা তুলে ধরলে। ভারেঅ লাগলো কিন্তু লিখাটা যদি একটু ভাগে দিতে তাহলে কনসেনট্রেট করতে সুবিধা হয়।

ভারত সবদিক থেকেই আমাদের ঘোল খাওয়াতে চায়... কি বই, কি চ্যানেল বা অন্য কিছু। তারপরও আহমেদ ছফার মতো কয়েকজন আছেন বলেই আমরা হয়তো এগুচ্ছি।...........

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:১৫

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: শেষ লাইনের সাথে দ্বিমত পোষণ করছি।
ওরা জোর করে কিছু করছে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.