নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল

মাতাল ঋত্বিক আমি, প্রেমকথা আমার ঋগ্বেদ

আরণ্যক রাখাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কয়েকটি সোভিয়েত কৌতুক ও কিছু কথা

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৫

আমি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করিনি কোনদিন। মাঝেমাঝে দেশের অনাচার অজাচার দেখে 'দেশে কমিউনিজম প্রয়োজন' বলেছি বটে, তবে সবদিক ভেবে বুঝতে পেরেছি, কোন স্বাধীন আত্মসম্মানের অধিকারী মানুষ সমাজতান্ত্রিক দেশে বাস করতে পারে না। জেনেছি, 'বন্দুকের নল ক্ষমতার উত্স' হতে পারে শুধু- স্বাধীনতা আছে গণতন্ত্রেই। সমাজতান্ত্রিক বুলি আমার রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দিয়েছিল ঠিকই , রক্ত হিমও করিয়ে দিয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আর বর্তমান চিনে ও উত্তর কোরিয়ার শাসন ব্যাবস্থা। চিন বিশ্বের সর্ববৃহত অর্থনীতি- এ নিয়ে সংশয় নেই কোন- তবে সন্দেহ আছে সেদেশের মানুষের স্বাধীনতা নিয়ে। সেখানে ফেবুর মত যেকোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে হলে আপনাকে রীতিমত ট্যাক্স দিতে হবে। অবশ্য নিজেস্ব কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে চিনের, যেগুলোর সবগুলোই সরকার নিয়ন্ত্রিত। এমনকি ম্যাসেজিং app গুলোতেও আপনি সরকারের সমালোচনা করে কিছু বলতে পারবেন না। এমন কিছু থাকলে সে ম্যাসেজ সেন্ডই হবে না। খুব গুরুতরো সমালোচনা হলে, হতে পারে আপনার বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্ত।
ওমন প্রচুর দানা-ওয়ালা খাঁচায় বন্দী থেকে কী লাভ?
আর নর্থ কোরিয়াকে নিয়ে আলোচনা করার কিছু নেই। সেখানকার ৫% রাস্তা শুধু পাকা করা। এখনো চলে গরু- ঘোড়ার শকট। নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরীতে যেটুকু সাফল্য পেয়েছে, তার সিকিভাগও পারেনি দেশের মানুষের ক্ষুধা মেটাতে। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ চেষ্টা করে সীমানাপুলিশের রাইফেলের তলা দিয়ে পালিয়ে যেতে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সৌভাগ্যবান হলে পৌঁছে যায় মুক্তি উদার প্রান্তরে। নাহলে বরণ করে নিতে হয় মৃত্যু। নর্থ কোরিয়ায় খাদ্য সংকট এতো বেশি যে, দেশভাগের মাত্র অর্ধশতাব্দী পরই, সেদেশে মানুষের উচ্চতা কমে গিয়েছে কয়েক ইঞ্চি! দক্ষিনীরা তাদের চেয়ে লম্বা খানিকটা! অথচ তারা একই ভাষায়, একই আবহাওয়ায় লালিত পালিত। আদর্শ, কিছু মানুষের ক্ষমতার লড়াই আর রাজায় রাজায় যুদ্ধে বদলে গেল কত কোটি মানুষের জীবন!
সমাজতান্ত্রিক দেশে যা আছে, তা হলো আদর্শ। আছে কিছু সম্মান আর বইপত্র জুড়ে বিপ্লবের ইতিহাস। জননন্দিত বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার ক্ষমতায় ছিলেন ৪৯ বছর! এখন কিউবার ক্ষমতায় তার ভাই রাউল কাস্ত্রো। একেই বুঝি, দলিত-শ্রমিক সম্প্রদায়ের ক্ষমতা বলে?
সমাজতান্ত্রিক দেশে কী আছে কী নেই, তা ধরা পরে একটা ছোট্ট গল্পে। আজ সুনীলের "ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ" আরেকবার পড়তে গিয়ে চোখে পড়ল। সেটাই শোনাই।
জার্মানি পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হওয়ার পর, দেখা গেল ধনতান্ত্রিক পশ্চিম এগিয়ে গেল সবদিক থেকেই। পূর্বে- সমাজতান্ত্রিক জার্মানিতে দেখা দিল খাদ্য সংকট। সামান্য ফুলকপি কিনতে গিয়েও সেখানে লাইন দিতে হয়। বাচ্চাদের জন্য পাওয়া যায় না দুধ। কলা পর্যন্ত অনেক শিশু চোখে দেখেনি।
জার্মানি ভাগ হওয়ার পর, বার্লিন দেয়ালের দুই পাশে বাড়ি বানালো দুই পরিবার। দুটো বাড়িতেই একটা করে ছোট মেয়ে আছে। তারা জানলা দিয়ে কথা বলে একে অন্যের সাথে।
একদিন পশ্চিমের মেয়েটি বললো, "আমার সুন্দর একটা পুতুল আছে। তোর আছে?" সমাজতান্ত্রিক জার্মানির মেয়েটি বললো, "থাকবে না কেন? আছে তো।"
এভাবে মেয়েদুইটি নিজেদের সম্পদের তুলনা করতে লাগলো। কেউই কারো চাইতে কম যায় না। তাদের দুজনেরই নতুন পুতুল, নতুন জামা, নতুন খেলনা আছে।
আচমকা ধনতান্ত্রিক জার্মানিরর মেয়েটি একটা কলা পূর্বের মেয়েটিকে দেখিয়ে বললো, "আমার কলা আছে। আছে তোর?"
পূর্বের মেয়েটির কলা থাকবে কি, সে দেখেইনি কোনদিন। সে তার মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তার কলা না থাকার কারণ। মা তাকে বললো, "তুই ওকে গিয়ে বল, 'আমাদের কলা নেই তো কী হয়েছে। আমাদের কমিউনিজম আছে!' "
পশ্চিমের মেয়েটিকে এই কথাটা শোনালে সেও ধন্দে পড়ে গেল। ছোট বাচ্চা সে- জানে না সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজম কী! কিন্তু সে কম যায় না। সে বললো, "নেই তো কী হয়েছে? আমি বাবাকে বলবো আমাকে যেন 'কমিউনিজম' কিনে এনে দেয়।"
পূর্বের মেয়েটির মা এই কথাটি শুনতেই ওকে চিল্লিয়ে বলে দিল, "কমিউনিজম কিনবে? কেন। কিন্তু জেনে রাখো, কমিউনিজম কিনলে কিন্তু কলা পাবে না!"

যাক গে, আমি আজ সমাজতন্ত্র, ধন ও গণতন্ত্রের তুলনা করতে আসিনি। এসেছি, সোভিয়েত ইউনিয়ন রিলেটেড কিছু কৌতুক শোনাতে। কিন্তু সমস্যা হলো, সেসব কৌতুক এতোটাই রাজনীতি ঘেষা যে, এটিকে বাদ দেয়া রীতিমত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এসবে উঠে এসেছে সেদেশের সমস্যা, দারিদ্র, ক্ষমতা ও সাধারণ মানুষের মনোভাব। অক্টোবর বিপ্লবের (নভেম্বর বিপ্লব) পূর্বের কৌতুকগুলোতে যে রাজনীতি ছিল না, তা নয়। বরং সেগুলো ছিল আরো কড়া। জারদের (রাশান সম্রাটদের উপাধি জার) সমালোচনা ছিল ব্লাশফেমি। মানুষ তাই কৌতুকের মাধ্যমেই জারতন্ত্রকে করেছিল ঝাঝড়া। একটি উদাহরণ দেই-
"জার নিকোলাসের আমলে একজন রাশান বলেছিল, "নিকোলাস একটা শুয়োরের বাচ্চা!"
আর এই কথার দরুন পুলিশ ধরতে আসে তাকে। সে তখন বলে, "হে ঈশ্বর! আমি অন্য নিকোলাসের কথা বলছিলাম!"
পুলিশওয়ালারা তাকে গ্রেফতার করতে করতে বলেছিল, "তুমি কি পাগল ভাবছো আমাদের? তুমি "শুয়োরের বাচ্চা" জার নিকোলাসকে ছাড়া আর কাকে বলবে! তুমি শুয়োরের বাচ্চা বললে, জার নিকোলাসকেই বলেছো!"
দেখা যায়, রাজনীতি ছাড়া রাশিয়ান কৌতুক জমে না খুব একটা। তাই রাজনীতি নিয়ে বলতে হলো এতো কথা।
এবারে কৌতুকে যাই-


একদিন একটা চিত্রপ্রদর্শনীতে একজন ব্রিটিশ, একজন ফরাসী ও একজন রাশিয়ান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আদম ও ইভের ছবি দেখছিল।
হঠাত করে ব্রিটিশটি বলে বসলো, "আদম ও ইভ নির্ঘাত ব্রিটিশ। দেখছো না ওরা কত সৌম?ব্রিটিশ ছাড়া ওরা অন্যকোন জাতির হতেই পারে না!"
তাই শুনে ফরাসী ভদ্রলোকটি গেল ক্ষেপে। তিনি বললেন, "এক্কেবারে বানোয়াট একটা কথা। আদম ইভ কত সুন্দর! তারা ফরাসী না হয়ে পারেই না!"
ওদের বাকবিতণ্ডা শেষ হলে, রাশিয়ান লোকটি বললো, "দেখছো না, ওদের গায়ে কোন কাপড় নেই? থাকার নেই জায়গাও। দুজনের খাওয়ার জন্য আছে মাত্র একটা আপেল! অথচ ওদের বলা হচ্ছে, ওরা স্বর্গে আছে! ওরা অবশ্যই রাশিয়ান!"


দুই বন্ধু- জন ও বব। আমেরিকার বাসিন্দা। চরম ধনতান্ত্রিক দেশে থেকে থেকে তাদের বিতৃষ্ণা ধরে গিয়েছে সে সমাজব্যবস্থার উপর। এরপর তারা দীক্ষা নেয় সমাজতন্ত্রের।
তারা একদিন ঠিক করেই ফেলে- চলে যাবে তাদের জন্মভূমি আমেরিকা ছেড়ে। গন্তব্য সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু সেসময় সোভিয়েত বিরোধী নানা অকথা কুকথা উড়ে বেড়াচ্ছিল দুনিয়াজুড়ে। কেউ বলছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষের পুষ্টিচাহিদা পূরণ হচ্ছে না। সবার চাকুরি নিশ্চিত করতে গিয়ে, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছি না লোকে। প্রশাসন তথা রাজনৈতিক দলের সামান্য সমালোচনা করলেই যেতে হচ্ছে দ্বীপান্তরে। এমনকি সামান্য রাজনৈতিক কৌতুক পর্যন্ত হতে পারে সেখানে জেলে যাওয়ার কারণ।
কিন্তু জন ও বব এসব এক্কেবারে চোখ বন্ধ করে মানতে নারাজ। তাদের মতে, এসব হতে পারে সিআইএ এর চক্রান্ত। তারা হয়তো ধনতন্ত্রের স্বার্থে, সমাজতন্ত্রের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই রটিয়ে বেড়াচ্ছে এসব। তাই তারা ঠিক করলো, তাদের মধ্যে একজন- বব, যাবে সোভিয়েতে। গিয়ে দেখবে নিজের চোখে সেখানকার সব রকম ব্যবস্থা।
বব যদি গিয়ে দেখে, অবস্থা অনুকূলে তবে সে লিখবে কালো কালিতে চিঠি। তার তেমনটা হলে জন তলপিতলপা গুটিয়ে রওনা দেবে সোভিয়েতে। আর যদি অবস্থা সত্যিই খারাপ হয়, যেমনটা বলছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম ও ধাড়ীবুড়ো পান্ডারা- তবে চিঠি লিখবে লাল কালিতে।
পরিকল্পনামাফিক বব গেল সোভিয়েত রাশিয়ায়। তার চিঠি এলো দেড় মাস পর। কালো কালিতে। সেখানে লেখা-
প্রিয় জন,
আমি এখানে ভালোভাবেই এসে পৌঁছেছি। শরীর, মন দুইই সুস্থ্য। এখানে এসে যা দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছে, পশ্চিমা দুনিয়ায় যা যা রটানো হয়েছে, সবই মিথ্যে। এখানে লোকেরা স্বাধীন - রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত- দুই দিক থেকেই। সবাই নিজ নিজ যোগ্যতা মত চাকরি করছে। অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের। কাঁচাবাজার- তরিতরকারি সব বেশ ভালো মানের। লোকে কিনছে খুশী মনে। দামও সস্তা, আমাদের তুলনায়। কোন কিছুরই অভাব নেই এখানে। শুধু একটা জিনিস গত একমাস খুব করে খুঁজেও পেলাম না। সেটা হলো লাল কালির কলম!
কেমন আছো, জানিও।
বব


একটা পার্টি মিটিং এ, কমিউনিস্ট পার্টির একজন অফিসার একজন সাধারণ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন।
"কমরেড, আপনার যদি দুইটা বাড়ি থাকত, তার মধ্যে একটা আপনি পার্টিকে দিতেন না?"
সদস্য জবাবে বলল, "অবশ্যই, কমরেড। আমার দুইটা বাড়ি থাকলে একটা আমি কমিউনিস্ট পার্টিকে নিশ্চয়ই দিয়ে দিতাম।"
"আর যদি আপনার দুইটা গাড়ি থাকত? সেক্ষেত্রে?"
"অবশ্যই একটা আমি কমিউনিস্ট পার্টিকে দিতাম।"
এবারে অফিসার সদস্যকে জজ্ঞেস করলেন, "আপনার যদি শার্ট থাকত দুটো- তবে একটা শার্ত দিতেন না কমিউনিস্ট পার্টিকে?"
জবাব এলো, "না! কমেরেড। দিতাম না"
অফিসার জিজ্ঞেস করলেন, "কেন, কমরেড, কেন? কেন দিতেন না আপনার দুটো শার্টের মধ্যে একটি?"
সদস্যের কাছ থেকে জবাব এলো, "কারণ আমার দুটো শার্ট আছে!"


একজন সোভিয়েত নাগরিক ভদকা কেনার জন্য শুঁড়িখানায় এলেন। এসে দেখলেন, বিশাল বড় লাইন। গর্বাচেভ প্রশাসনের কড়া নির্দেশ, লাইনে না দাঁড়িয়ে কেউ কুটোটি পর্যন্ত কিনতে পারবে না!
ভদকার জন্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন তার পালা এলো, ততোক্ষণে ভদকার ভাণ্ডার শেষ! তলানি পর্যন্ত বাকি নেই!
লোকটি তখন চিৎকার করে উঠলেন, "সত্যি আর সহ্য হচ্ছে না এসব। আজই ক্রিমলিন যাচ্ছি আমি। গর্বাচেভকে সামনে পেলেই ধর থেকে আলাদা করে দেব ওর মুন্ডুটা।"
কয়েকদিন পর ঐ একই লোককে দেখা গেল, ভদকার লাইনে দাঁড়াতে।
একজন লোক তাকে জিজ্ঞেস করে, "কী ব্যাপার? গর্বাচেভের মুন্ডু কাটলেন?"
লোকটি দুঃখ করে বললো, "কাটবো আর কী করে। ওর মুন্ডু কাটার জন্যও লাইন পড়ে গিয়েছে। লাইনটা আরো লম্বা!"


একজন সোভিয়েত নাগরিক প্রতিদিন একজন পেপারওয়ালার কাছে পেপার কিনতেন। কিন্তু কোনদিনই তিনি পুরো পেপারটা পড়তেন না। প্রথম পৃষ্ঠাটা পড়েই ফেলে দিতেন।
এমনি করেই একদিন কাগজওয়ালারর কাছ থেকে খবরের কাগজ কিনে প্রথম পৃষ্ঠা দেখেই ফেলে দিচ্ছিলেন তিনি। তখন কাগজওয়ালাটা বলল, "কমরেড, আপনি প্রতিদিন পেপার কিনে প্রথম পৃষ্ঠাটা পড়েই ফেলে দেন। এর কারণটা কী বলুন তো!"
লোকটি বিষণ্ণ গলায় জবাব দিল, "আসলে আমি প্রতিদিন একজনের মৃত্যু সংবাদ খুঁজি। কিন্তু কাগজে তার মৃত্যু সংবাদ থাকে না। তাই আর বাকি কাগজটা পড়ার ইচ্ছে থাকে না। ফেলে দেই।"
কাগজওয়ালাটা বললো, "এমনও তো হতে পারে, তার মৃত্যু সংবাদটা প্রথমের পৃষ্ঠায় না থেকে মাঝখানের কোন পৃষ্ঠায় আছে। আপনি তো সেসব পৃষ্ঠা দেখেনই না!"
লোকটি আবার হতাশ গলায় জবাব দিল, "আমি যার মৃত্যু সংবাদ খুঁজি, ও মরলে সে খবর প্রথম পৃষ্ঠাতেই থাকবে!"
[আমি যতটুকু জানি, এই সংবাদটা রাশিয়ার ততকালীন শাসক পড়ে এতোটাই ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি সব ধরনের রাজনৈতিক কৌতুক নিষিদ্ধ করেছিলেন। তবে সব সোভিয়েত প্রধানই যে এমন রাজনৈতিক কৌতুক বিরোধী, তা নয়। লিওনড ইলিচ ব্রেঝনেভ ছিলেন প্রচন্ড পুরষ্কারলোভী। (অনেকটা আমাদের দিনরাত লাল-সেলাম-ঠুকা কবি নির্মলেন্দু গুণের মত)। তিনি সোভিয়েত প্রধান হয়ে আসার পর নিজেই নিজেকে বিভিন্ন পুরষ্কারে ভূষিত করা শুরু করেন। শোনা যায়, তার মোট পুরষ্কার শতাধিক। একবার তিনি একটি বই লিখেছিলেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে। বইটি ছিল খুব নিম্ন মানের। সমালোচকেরা ধুয়ে দেন তাকে। কিন্তু এতো সমালোচনার পরও তিনি পেয়ে যান রাশিয়ান সাহিত্যের অন্যতম সম্মানজনক পুরষ্কার 'লেনিন সাহিত্য সম্মাননা" (lenin prize for literature)!
তার এই পুরষ্কারের প্রতি অদম্য লোভকে নিয়ে প্রচলিত ছিল অগুনতি কৌতুক ও ছড়া। বেশ জনপ্রিয়ও ছিল সেসব। নিকোলাই পোদগর্নি তাকে নিয়ে চলমান সেই হাসাহাসি নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, "লোকে কাউকে নিয়ে কৌতুক করছে মানে, তারা তাকে ভালোবেসে ফেলেছে!"
এই নিওনড ইলিচকে নিয়েই বলি একটা কৌতুক-
একদিন একটা সভায় ভাষণপ্রদান শেষে, তিনি তার স্পিচরাইটারকে ডেকে বলেছিলেন, "ব্যাটা উজবুক, তোকে আমি পনেরো মিনিটের ভাষণ লিখতে বলেছিলাম। কিন্তু তুই এমন ভাষণ লিখলি, যেটা দিতে আমার ৪৫ মিনিট লেগে গেল!
স্পিচরাইটার জবাবে বলল, "আমি আপনাকে গতদিন একটা খাতায় স্পিচ লিখে দিয়েছিলাম। আপনি সেটা হারিয়ে ফেলেছিলেন। আজ যদি হারিয়ে যায়, তাহলে যেন আপনাকে হয়রান হতে না হয়, সেটা ভেবে, আপনাকে একটা ভাষণেরই তিনটা কপি দিয়েছিলাম আমি!"]


একদিন গর্বাচেভ ও তার স্ত্রী পূর্ব জার্মানি ভ্রমণ শেষে ট্রেনে চেপে ফিরছিলেন রাশিয়ায়। একটা ইস্টিসনে ট্রেনটি দাঁড়ালে, তার স্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করলে, "আমরা কী রাশিয়া পৌঁচেছি?"
গর্বাচেভ একটা হাত বাড়িয়ে দিলে ট্রেনের জানালা দিয়ে। তারপর হাতটা টেনে ভেতরে নিয়ে বললেন, "না। আমরা এখনো পূর্ব জার্মানিতেই আছি।"
এরপর আরেকটা ইস্টিসন এলো। আবারো একই প্রশ্ন করলো তার স্ত্রী।
জবাব দেয়ার আগে, হাতটা জানালা দিয়ে বাইরে বের করে কছুক্ষণ রেখে আবার ফিরিয়ে আনলেন তিনি। বললেন, "না। এখনো আছি পোল্যান্ডেই।"
এরপর আরেকটা ইস্টিসনে থামলো ট্রেন। আবারো তার স্ত্রী জানতে চাইলেন, তারা রাশিয়া এসে পৌঁচেছেন কিনা।
এবারেও জবাব দেয়ার আগে হাতটা জানালার বাইরে কিছুক্ষণ রাখলেন তিনি। তারপর ফিরিয়ে এনে বললেন, "হ্যাঁ। এখন আমরা রাশিয়ায়!"
এসব দেখে গর্বাচেভের স্ত্রী কৌতুহলী হয়ে পড়লেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "কীভাবে তুমি হাত বাড়িয়ে দিয়েই বলে দিলে এসব?"
গর্বাচেভ হেসে জবাব দিলেন, "আমি যখন প্রথমবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম, তখন কেউ একজন আমার হাতে চুম্বন করেছিল। তাতেই বুঝেছিলাম এটা পূর্ব জার্মানি। যখন ২য় বার হাত বাড়িয়েছিলাম, তখন কেউ একজন আমার হাত একটা বাড়ি মেরেছিল। বুঝেছিলাম, এসেছি গিয়েছি পোল্যান্ডে। আর যখন ৩য় বার হাত বাড়ালাম, তখন একজন আমার ঘড়িটা চুরি করে ফেললো। বুঝতে আর বাকি রইল না যে, আমি রাশিয়ায়!"


সোভিয়েত ইউনিয়নে টয়লেট টিসুর অভাব ছিল খুব। লোকে টিসুর বদলে খবরের কাগজ ব্যবহার করতো।
এমন সময়ে, একজন বুদ্ধিজীবীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, "টিভি আর খবরের কাগজ- এ দুটোর মধ্যে তুলনা করতে বলা হলে, কোনটা আপনি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে অবিহিত করবেন? কোনটি বেশি উপকারী?"
জবাবে বুদ্ধিজীবী বলেছিলেন, "অবশ্যই খবরের কাগজ! আপনি টিভিকে তো আর টয়লেট টিসু হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না!"


রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অক্টোবর বিপ্লবের মাধ্যমে। সেই বিপ্লবের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায়, এক রাজনৈতিক কর্মি বক্তৃতা দিচ্ছেন-
"কমরেডস, দেখুন আজ আমরা আমাদের প্রিয় দেশকে কোথায় নিয়ে এসেছি। কত উন্নতি করেছি আমরা। এই যে বসে আছে মেয়েটি, মিভানা- সে একসময় ছাগল চড়াতো। আর আজ, বিপ্লবের মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই, তার কত উন্নতি হয়েছে। তার একটা নিজেস্ব খামার আছে। তার আর খাদ্যবস্ত্রের চিন্তা নেই। কমরেডস, ভ্লাদিমির নিরোস্লাভের কথা ভাবুন! তিনি একসময় ছিলেন সামান্য এক কৃষক। খাবার জুটত নানা প্রতিদিন। আর সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত।
আর আমাদের নিকোলাই তান্দ্রার কথাই ভাবুন। তিনি একটা সময় মাতলামি করেই দিন কাটাতেন। চুরি করতেন। ছিনতাই করতেন। মদ খেতেন লোকের টাকা ধার করে। ধারের টাকা শোধ করতে না পারায় তার কয়েকবার জেল পর্যন্ত হয়েছে। লোকে তাকে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করত না। আর আজ দেখুন! সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছরের মাথায়, তিনি হয়ে গেছেন দেশের একজন স্বনামধন্য মন্ত্রী। তিনি আজ দায়িত্বপালন করছেন অর্থমন্ত্রী হিসেবে!"

*****
এমন প্রচুর কৌতুক প্রচলিত আছে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে। এদের মধ্যে কিছু কৌতুককে নেয়া যায় শুধু হাস্যরসের খোরাক হিসেবেই। আবার কিছু প্রকাশ করে চরম সত্য কিছু কথা। হাস্যরস ও কৌতুক সবসময়ই ব্যবহৃত হয়ে আসছে সাধারণ মানুষের হাতিয়ার হিসেবে।
বেঁচে থাক কৌতুকেরা। বেঁচে থাক কৌতুকপ্রিয় মানুষেরাও।

তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া
বিবিসি

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:৫৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সবগুলোই তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক কৌতুক ও এখনো সমসাময়িক...
কালেকশান ভালো।
উত্তর কোরিয়া গোঁয়ার্তুমির কারণে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে কিউবা সম্পর্কে কম জানি। ওখানের মানুষ কি সুখে নেই?

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আমার জানা মতে সুখে নেই। আপনি গুগোল করলেই সব পেয়ে যাবেন।

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি বসবাস করছেন বাংলাদেশে, এদেশের নাগরিক হয়ে গণতণ্ত্রের ভালো বলছেন; আপনি এদেশে থাকার ফলে গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র কোনটার প্রত্যক্ষ রূপ দেখেননি; আপনি নিজ ভাষায় গণতন্ত্রের ডেফিনেশনটা দেন, আমরা বুঝার চেষ্টা করি, আপনি আসলে কি বস্তুকে গণতন্ত্র বলছেন; ইহা অর্ডার নয়, সহব্লগার হিসেবে অনুরোধ।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: এতদিন পর জবাব দিচ্ছি বলে দুঃখিত।
অনেক প্যারার মধ্যে ছিলাম। সামুতে ঢু মেরে দেখবো সে সুযোগও হয়নি।
আমার কাছে গণতন্ত্র মানে সবার সমান অধিকার। সে অধিকার মতপ্রকাশ থেকে ভোট প্রদান থেকে রেশনের লাইন পর্যন্ত বিস্তৃত।
আমরা সে পর্যন্ত যেতে পারিনি এখনো। হয়তো পিওর গণতন্ত্র আমাদের জন্য ইউটোপিয়া। তবে পশ্চিমারা সেটাকেই বাস্তবে রুপ দিতে পেরেছে

৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: এত বড় লেখা পড়ছি তো পড়ছি---শেষ আর হয় না।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লেখা পড়তে ক্লান্ত লাগে না। আমার লেখা পড়ে ক্লান্ত আপনি।
বুঝে নিচ্ছি, আপনার ভাল লাগেনি লেখাটা

৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৫৯

টারজান০০০০৭ বলেছেন:
সোভিয়েতের পতনে এমনিতেই বামাতিরা আশ্রয়হারা হইয়াছে ! চীন তাহাদের গনে না ! পূর্ব জার্মানি , যুগোস্লাভিয়া গেছে ! কিউবায় সমাজতন্ত্র খোলস বদল করিয়া চীনের পথ ধরিতেছে ! ছাল নাই কুত্তার বাঘা তার নাম উত্তর কোরিয়া ঘেউ ঘেউ করতাছে ! দেশে বারোজনে তের দল করিয়া একে অন্যের ইয়ে মারিয়া অনেক আগেই পাতাল রেল চলার ব্যবস্থা করিয়াছে ! এরই মধ্যে আফনে তাহাদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিলেন !!!! আফনে তো লোক ভালো নহে !

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হা হা আপনার কমেন্টটা সেই।

৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৪

সুমন কর বলেছেন: আগে শুধু একটি পড়া ছিল। বাকিগুলো আজ পড়লাম, চমৎকার শেয়ার।

শুরুর কথাগুলো ভালো লিখেছ। +।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা।
ভালো থাকবেন

৬| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৮

জাহিদ অনিক বলেছেন:

সবগুলো রাজনৈতিক কৌতুকই ভালো লাগলো।

কলা ও কম্যুনিজমের কৌতুকটা বেশিই জোশ !


ধন্যবাদ

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও

৭| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:০৮

তরুন ইউসুফ বলেছেন: ভাল লাগল।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: thank you

৮| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০০

আবু তালেব শেখ বলেছেন: কৌতুক গুলো দারুন। এগুলোর কি কোন সত্যতা আছে?

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সত্যতা আছে বৈকি। কৌতুকে সমাজের চিত্রটা চলে আসে। আক্ষরিক অর্থে না নিলেই হলো

৯| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৪৭

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: ৭ নং পড়ে হাসতেই আছি। =p~
চমৎকার সংগ্রহ।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মজা পেয়েছিলাম খুব আমিও, প্রথমবার পড়ে

১০| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:৫৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক কৌতুকগুলো বেশ উপভোগ করলাম। লেখার স্টাইলটাও ভাল লেগেছে।
পোস্টে প্লাস + +

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.