নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃত্তে বন্দী

বৃত্তে বন্দী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমার ঐ মনটাকে একটা ধুলমাখা পথ করে দাও, আমি পথিক হব

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৪

জীবন যাপনের কিছু স্বতঃসিদ্ধ ছক আছে। স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপারটাই এরকম কোথা থেকে কিভাবে কিভাবে এল কেউ বলতে পারে না, মেনে নিতে হয়! জীবনের উজান ভাঁটা সহ্য করা যায় না, কিন্তু মেনে নেয়া শিখতে হয়! এই শিক্ষা আবার কেউ কোনদিন হাতে কলমে শিখে দেয় না যে মার্জিন টানবা, উপরে দেড় ইঞ্চি, পাশে এক ইঞ্চি করে! তারপর গোটা গোটা হরফে লিখবা! ভুল হলে একটানে কেটে দিবা! ঘষা মাজা করবা না! এ শিক্ষা আমাদের একা একা শিখতে হয়! একা একা আসলে কোন কিছু শেখা যায় না! তাই সত্যিকার অর্থে এ শিক্ষা মানুষ শিখতে পারে না! মানবিক মানুষ অমানবিক শিক্ষা কিভাবে শিখে?!



ঊচ্ছ্বাসিত হওয়া মানবিক না অমানবিক গুন ব্যাপারটা আমি ধরতে পারছি না! তবে ঊচ্ছ্বাসিত হওয়া প্রয়োজন বুঝতে পারছি! আনন্দের সময়গুলা যেন দুহাত ভোরে স্বর্ণমুদ্রা কুরিয়ে রাজকোষ ভোরে নেওয়ার মত , তারপর দুঃখ আসবে, দুঃখের নাচন দেখে হাততালি দিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে হবে যেন রাজার জলসাঘরে এতক্ষণ আসর চলল এভাবে নাও হে দুঃখিনী! তোমার জন্য ১০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা!



**** **** ****



লিলুয়ার ছোটবোন ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল আপু ১ আর ১ যোগ করলে ২ কেন হয়?! লিলুয়া মেজাজ খারাপ করে বলল, এটা কোন কথা হল! ১ আর ১ যোগ করলে কি ১১ হবে?!! যা ভাগ!

তারপর থেকে ওর নিজের মনের ভেতরেও খচখচ করছে, আচ্ছা ১ আর ১ যোগ করলে ২ কেন হয়?!!



**** **** ****



ক্ষুধা ক্ষুধা টের পাচ্ছি, কিন্তু কিছু খাওয়ার রুচি পাচ্ছি না! ফুচকার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কতক্ষণ ভাবলাম খাব নাকি আধপ্লেট? পরখনেই ভাবনা বাতিল করে দিলাম! পাশের ফলের দোকান থেকে কমলালেবুর ঘ্রাণ আসতেছে! কমলালেবু খেতে ইচ্ছা হচ্ছে! পকেটে হাত দিয়ে বুঝলাম ইচ্ছাটাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না! অনেক মানুষ গোল হয়ে সাপের খেলা দেখছে, কতখন সাপের খেলা দেখলাম! সবাই কেমন উচ্ছ্বসিত হয়ে হাততালি দিচ্ছে, আমি মজা পাচ্ছি না!

-মামা, একটা কমালেবু চা দাও তো!

খালি লেবু চা খাইবাইন মামা না লেবু আদা মিশাইয়া দিমু?

-সর্দি লাগছে! কিছুই খেয়ে স্বাদ পাই না। যেটা ভালো লাগবে ঐটা দাও!

চা এর কাপ হাতে নিয়ে দুটো চুমুক দিয়েছি অমনি লিলুয়ার ফোন আসলো। আচ্ছা ১ আর ১ যোগ করলে ২ হয় কেন??!!

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম, মানে কি?!

ও গলার স্বর আরেকটু চড়া করে বলল, মানে ১ আর ১ যোগ করলে ২ হয় কেন??!!

-এটা স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম!

তোর মাথা!



রাস্তা দিয়ে মাইকিং করতে করতে যাচ্ছে “যাত্রা যাত্রা!” আমি মতিন মামাকে বললাম,

-মামা, যাত্রা দেখবা?

মতিন মামা জিভ কেটে বলল,

ছি ছি কি যে কন! বদ মাইয়াগো নাচানাচি! নাজায়েজ কাম!

আমি মতিন মামার হাতে একটা চিঠি আর একটা ঠিকানা গুঁজে দিয়ে বললাম, এই চিঠিটা এই ঠিকানায় পৌঁছে দিবা। তোমাকে পাঁচশ টাকা দেবে, তুমি ঐটা নিয়ে যাত্রা দেখতে যাবা! বুঝলা?!! তোমার দোকানের চাবি আমার কাছে রেখে যাও! আমার আজকে খুব চা বিক্রি করতে ইচ্ছা হচ্ছে!

মতিন মামা গাল লাল করে হাসিমুখে চিঠি নিয়ে উধাও হয়ে গেল! নাযায়েজ কাজের প্রতি তার আগ্রহ চোখে মুখে প্রতিফলিত হচ্ছে!



**** **** ****



চা বিক্রি করে বেশ আনন্দ পাচ্ছি! পাঁচ টাকার সস্তা চা খেতে এসে মানুষ এত সহজে অন্তরঙ্গ গল্পে মশগুল হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে তাদের জীবনে কন দুঃখ নেই! অথচ একটু মনযোগী দৃষ্টিতে দেখলেই বুঝা যায়, এই ছেলেটার মাকে হসপিটালে এইমাত্র রেখে সে এসেছে সারাদিন উপোষ শেষে এককাপ খেতে!কিংবা কেউ বাসায় ঝগরা করে বেড়িয়ে পড়েছে আর ফিরবে না বলে! ফেরা আর ফেরার মাঝে একটা চা খেতে বসে ভুলে গেছে আসলে তার হারিয়ে যাওয়ার যায়গা নেই! ভুলে যাওয়ার পর বাসায় ফিরে গেলে কিছু হয় না!

চা রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে । রাতের নির্জনতা চিরে হালকা নুপুরের শব্দ পাচ্ছি! ভুতের মত লিলুয়া আঁধার চিরে হাজির হয়ে বলল, এই যে! চা হবে?! একটা কমলালেবু চা বানান তো?!

-তুই এত রাতে?!! এখানে?! কিভাবে এলি?!

ও এক লাইনের একটা চিঠি আমার নাকের সামনে দুলিয়ে বলল এটা কি?!! তারপর টেনে টেনে পড়লো, কেন উল্লাসিত ছেলেগুলো এক্সসময় এত নিরব হয়ে যায়?! পরে ফিক করে হেসে দিল!

আমার রাগ লাগতে লাগল! আমি এত আবেগ নিয়ে একটা চিঠি লিখলাম তা নিয়ে মজা করা হচ্ছে! ধুর একে লিখাই ভুল হইছে! ও এসবের কি বুঝবে! আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল!

লিলুয়া এসে হাত ধরে বলল, রাগ?! হু?! চল আজকে সারারাত রাস্তায় হাঁটবো! উল্লাসিত ছেলেটাও নিরব থাকবে, বিষণ্ণ মেয়েটাও নিরব থাকবে! কিন্তু কথা হবে! ঠিক আছে?!

আমি লিলুয়ার হাত ধরে হাঁটছি, দুজনেই চুপচাপ কিন্তু কথা হচ্ছে! আমার একটা গান গাইতে ইচ্ছা করছে! কিন্তু পাছে লিলুয়া ফিক করে এসে ফেলে তাই গাইতে পারছি না!!



মতিন মামা ফোন ফেলে রেখে চলে গেছে, রাতের নিস্তব্ধতা চিরে দিয়ে সি ফোন বেজে উঠলো! আমি চমকে উঠলাম! স্ক্রিনে সুন্দর গোটা গোটা হরফে লিখা উঠেছে , বউ! ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশের কণ্ঠ কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, রাজিয়ার খুব জ্বর! তুমি আসতেছ না কেন?! হাসপাতালে না নিলে মনে হয় বাঁচবো না!



**** **** ****



ভোর হচ্ছে। আমি আর লিলুয়া একটা বাঁশের মাচার উপর বসে আছি। রাজিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করে ডাক্তার দেখিয়ে এইমাত্র দুজন দুকাপ চা হাতে নিয়ে চুমুক দিচ্ছি। আমি চুমক থামিয়ে যেন লিলুয়া সব কিছু জানে এইভাবে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, আচ্ছা এই রাত গুলো এমন কেন?! কেন আমরা একসাথে একটা রাত হাঁটতে পারলাম না?!

লিলুয়া অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল! একরাতেই ওকে কেমন মলিন লাগছে! তারপর আস্তে করে হাত ধরে বলল, চল হাঁটি!

পাখির কিচির মিচির বাড়ছে! আমি বিড়বিড় করে বললাম , কেন উল্লাসসিত ছেলেগুলো এত নিরব হয়ে যায়?!

সম্ভবত ভোরবেলার কোন পাখি উত্তর দিল, স্বতঃসিদ্ধ ! অথবা লিলুয়াও হতে পারে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.