![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধ্যবয়সী মানুষটার সাথে আমার দেখা নদীর ও ধারে। কাঁচা পাকা চুল, শুভ্র দাড়ি, চেহারায় বেশ খানিকটা কৌতুকের হাসি লটকে আছে! আমি নদীর এ পাশ থেকে মঞ্চের আত্মহয়তারত শেষ অভিনেতার মত স্মৃতিগুলোকে ঝালিয়ে নেয়ায় ব্যাস্ত তখনই নজরে এল নদীর ও ধারেও কেউ একজন স্মৃতিগুলোকে ঝালিয়ে নিচ্ছে! এবং আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের দুজনের স্মৃতিই নদীর কালচে জলে মিলেমিশে একাকার হয়েছে! কোন একটা মাছ লাফ মেরে উঠে আবার তলিয়ে গেল। স্মৃতির কালচে জলে জীবিত ঢেউ খেলে গেল । এবং সেই চোর এবং ধার্মিকের সকালবেলায় গোসলের মত আমরা দুজনেই ধরে নিলাম আমরা আত্মহত্যা করতে চলেছি এবং পরস্পরকে বাঁচিয়ে তারপর নিজে মরাই ভালো বিবাচনায় একে অপরকে বাঁচানোর জন্যে ছোটলাম ।
এক বাঁশের সাঁকোটার অবস্থা ভালো ছিল না। তারুপর ধরুনি নেই । আমরা দুজনেই হন্তদন্ত হয়ে সাঁকোতে চড়ায় দুলুনিতে সাকোটা চড়চড় করে উপড়ে গেল!!
***** **** *****
সানুর হাতটা খুব জ্বলছে। সবে রুই মাছটা কড়াই এ ছেড়েছে অমনি তেল ছিটকে এসে হাতে লেগেছে । বাবা রাত্তিরভবেলা মাছ এনেই বললেন, বুঝলি মা, এই মাছটা সবে মাত্র মাঝি ব্যাটা ধরেছে! একটু আগেও লাফালাফি করে নদীর জল উত্তাল করে রেখেছিল! এক্ষুনি ভাজি করে নিয়ে আয়, তাজা মাছের স্বাদ ই আলাদা!
সানু সারাবাড়ি তন্নতন্ন করে খুজেও জ্বলা পড়ার ক্রিমটা খুঁজে পাচ্ছে না। বাবা বসে বসে টীভীটে খবর শুনছেন, এদিকে কোন খেয়াল নেই! হাতের জ্বলুনিতে সানুর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। সানুর বাবাকে ডাকতে ইচ্ছা করলো না। সে এক হাত দিয়ে আরেক হাত চেপে ধরে উঠোনের কোনায় বসে পড়ল । আকাশের কোনায় বেশ বড় একটা চাঁদ উঠেছে । চাঁদের আলোর উপশম খমতা আছে। তার কেন জানি সে উপশম ক্ষমতা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করছে না । ওর বাবা একটু পরপর ডেকে যাচ্ছেন, “কিরে মা? আর কতক্ষণ?? খিদেয় পেট চো চো করছে!” পৃথিবীর সব ডাকে সারা দিতে নেই!
***** **** *****
আমি আর মধ্যবয়স্ক মানুষটা ভিজে চুপচুপে হয়ে নদীর ধারে বসে আছি! উনার নাম মিফতাহ হোসেন । মাঝে মাঝে জানি কি হয় সব মানুষেরই কম আর বেশি , চেনা অচেনা গুলিয়ে ফেলে । চেনা মানুষের ডাক অগ্রাহ্য করে অচেনা মানুষের ডাকে হৃদয় মেলে দিয়ে বসে!
-কেন মরতে চাও?
ঃ বেঁচে থাকতে ভালো না বলে! কিংবা কিছুই ভালো লাগে না বলেই মরতে চাই!
-আরও স্পষ্ট করে বল! ভাবো...... ভেবে বল!
ঃ আসলে আমি আমাকে আলাদা করতে পারছি না! একদিন ঠিক এইখানটাতে বসে আমি ঘাসের সাথে শুয়ে ঘাস হয়ে গেলাম, তারপর আমি মাটির সাথে মিশে মাটি হয়েছি, নদীর সাথে মিশে নদী, মেঘের সাথে মিশে মেঘ, আকাশের সাথে মিশেমিশে একাকার হয়ে আকাশ, ফুলের সাথে ফুল আর প্রেম- অপ্রেম সবকিছুর সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে......... আমি এখন আর নিজেকেই খুঁজে পাচ্ছি না, আলাদা করতে পারছি না! আচ্ছা, আপনি কেন মরতে চান??
-আসলে জানো তো, প্রেমের মত ঘৃণাও অন্ধ! তোমার হৃদয়, আমার হৃদয় দুটো হৃদয়ই এখন কাঁটায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে । এ হৃদয়ের দিকে যেই তাকাবে সেই কষ্ট পাবে। আমি তোমার দিকে তাকিয়ে কষ্ট পাচ্ছি, তুমি আমার দিকে তাকিয়ে । এক কাজ করি চল, প্রত্যেকটা কাঁটায় একটা করে ফুল গুজে দিই! তাহলে বেশ একটা বাগান হবে, কাঁটাগুলো নাহয় আরালেই থাকুক!
***** **** *****
সানুর খুব বিরক্তি লাগছে । এতরাতে কে জেন দরজায় কড়া নাড়ছে । সে মাছটা উলটে দিয়ে দরজা খুলে আমাকে দেখেই বলল, এত রাতে তুই?? ভিতরে আয়?
ঃ না ভিতরে যাব না! আচ্ছা , তোদের হাস্নাহেনাটায় ফুল ফুটেছে না?
সানু এক রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে বলল, হ্যা... কেন?!
ঃ আমার কিছু হাস্নাহেনা লাগবে! এক্ষণ দিতে পারবি?
-এত রাতে তুই শুধু হাস্নাহেনা চাইতে এসেছিস?
ঃহু ।
_কিন্তু আমি তো আমার গাছে রাতের বেলায় ফুল তুলতে দিই না! কাল সকালে আসিস! এখন বিদেয় হ!
আমি বিদেয় হতে পারিনি। সানুর বাবা হট্টগোল শুনে বেরিয়ে এসে আমাকে জোর করে ধরে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিয়েছেন! “আরে খাও খাও! একদম জীবন্ত মাছ!”
ঃকিন্তু... চাচা... সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আমার ডান হাতের আঙুল মচকেছে! মাছ বাছতে পারবো না!
_সাঁকো থেকে পড়লা কেমনে?! তোমরা আজকালকাড় ছেলেমেয়েরা সাঁকোও চড়তে শিখলা না! সানু মা, ওর মাছটা বেছে দে তো!
সানু পোড়া হাতে আমার মাছ বেছে দিচ্ছে । আমার মনে হচ্ছে একটা করে হৃদয়ের কাঁটা বেছে দিচ্ছে! আমার ভালো লাগছে... বেশ ভালো লাগছে! এই ভালো লাগার কথা সানুকে বলা যাবে না! কালকে মিফতাহ সাহেব কে বলতে হবে!
***** **** *****
একটা সিগারেট ধরিয়ে হাইওয়ের পাশ দিয়ে হাঁটছি । শীতল একটা হাওয়া বইছে, হঠাত একটু দূরে মানুষের হাঊকাঊ দখে থমকে দাঁড়ালাম। এক লোককে সাপে কেটেছে । কেউ চিনতে পারছে না মানুষটাকে । কখন কেটেছে কেউ বলতে পারছে না, হাস্নাহেনার ঝোপে লোকটা কি করছিল তাও কেউ জানে না । রাতবীরেতে হাস্নাহেনার ঝোপে সাপ আসে। আমি আর একটু কাছে গিয়ে ভালো করে দেখলাম । মধ্যবয়স্ক, কাঁচা পাকা চুল, শুভ্র দাড়ি, চেহারায় বেশ খানিকটা কৌতুকের হাসি লটকে আছে!
***** **** *****
ইদানীং খুব সানুর কথা মনে পড়ে। সানুর হৃদয় তো হাস্নাহেনার ঝাড়। আচ্ছা , রাত বিরেতে কি সেখানে সাপ আসে? রাত বিরেতে কি ফুলের কাছে পাপ আসে? আমি ওর হৃদয়ে ফুল তুলতে গেলে আমাকে সাপে কাটবে নয়তো পাপে! তবু যেতে হবে...... কেন যেতে হবে??... জানা নেই!! মিফতাহ সাহেব বলেছিলেন, ভালোবাসা ঘৃণা দুটোই অন্ধ। শেষমেশ কার হাতে আমার মৃত্যু লেখা? সাপ না পাপ??
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৪৬
বৃত্তে বন্দী বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্যে
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১৮
মুনেম আহমেদ বলেছেন: বেশ ভাল লাগল।