![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
- হোঁচট খেয়েছি ঠিকই, কিন্তু থেমে যাইনি , হেরে যাব বলে তো, আর স্বপ্ন দেখিনি।
; বয়সটা তখনও বেশি না তার। ৪০ এর কোঠায়, কিংবা কিছু বেশি। হুম, সে। নাম তার হোসেন সাহেব। এখনকার দিনে আর মানুষ এরকম নাম রাখে না। নতুন নতুন নামের ভিড়ে এইসব 'সেকেলে' নাম হারিয়ে যাচ্ছে। অথবা মানুষ বদলে যাচ্ছে। এখন তো মোকসেদ নামের লোক নাম পাল্টে দিব্যি 'ম্যাক্স' হয়ে যাচ্ছে! কি আসে যায়!
হোসেন সাহেব স্কুল শিক্ষক। প্রায় ১০ বছর ধরেই পড়াচ্ছেন। বেশ নাম ডাক আছে তার। পড়া থেকে শুরু করে আদব কায়দা পর্যন্ত, সব বিষয়েই তিনি ছেলেপেলেদের 'বিশেষ টাইট' দেন। আর এই সময়ে মা-বাবা'রাও একটু টাইট দেয়া শিক্ষক বেশ পচ্ছন্দ করেন। আল্লাহর রহমতে তাই স্কুলের পাশা-পাশি নিজের বাসার 'ব্যাচেও' ছাত্র-ছাত্রী থাকে কানায় কানায়। দিনকাল এভাবেই বেশ চলে যাচ্ছিল, কিন্তু দিন বদলাতে সময় লাগে না।
রাতটা ছিল শীতের। বিয়ের দাওয়াত খেয়ে পরিবার নিয়ে সবে বাসায় ফিরেছেন তিনি। স্ত্রী-সন্তানদের বাসায় তুলে দিয়ে একটু হাঁটতে বেড়িয়েছেন একা। মাঝে মাঝে প্রবল সিগারেটের নেশা চাপে তার। এই সময়টা বেশ ভাল লাগে তার, একা একা। কেবল মাত্র এক টান কি দুই টান দিয়েছেন সিগারেটে। তার সামনে এক ছেলে এসে দাঁড়াল। হাতে সিগারেট। আগুন চাইল। তিনি ও অস্বস্তিতে পড়ে আগুন দিলেন। বেশ জুনিয়র। এত ছোট মানুষকে সিগারেটের আগুন দিতে বেশ খারাপ লাগে। অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। তার সামনে আরও কয়েকজন এসে দাঁড়াল। একই বয়সী। একটু দেরীতে হলেও বুঝলেন ওরা 'ছিনতাইকারী।' ভাগ্যের পরিহাস নিশ্চয়! হাতে ওদের অস্ত্র। এই বয়সে! যাক ঝামেলায় গিয়ে লাভ নেই ভেবে, সাথে থাকা মোবাইল, মানিব্যাগ বের করে দিলেন। ছেলেগুলোও সাথে সাথে নিয়ে চলে যাচ্ছিল, কিন্তু কি মনে করে যেন হোসেন সাহেব বলে উঠলেন,
-তোমরা কি পড়াশোনা করনা?
সাথে সাথে বেশ মোটাসোটা একজন ছেলে ঠাশ করে থাপ্পড় মেরে বসল হোসেন সাহেব কে। হোসেন সাহেব বেশ হতবাক হলেন। মানুষ হতবাক হলে কি করে তিনি জানেন না। কিন্তু তার চোখে পানি আসল। তিনি ঝাপসা চোখে দেখলেন ছেলেগুলো চলে যাচ্ছে। তিনি কেন কাঁদছেন তিনি জানেন না। হয়ত বা এই ভেবে যে এদের বয়সী ছেলেদের তিনি 'পিটিয়ে তক্তা' বানান ক্লাসে। যেখানে 'টেন্স' না পারলেই তিনি 'কড়া মাইর' দেন সেখানে সেই বয়সী কিছু ছেলে তাকে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করে নিয়ে গেল! তিনি ক্লাসে কত যে শিখিয়েছেন 'পিতা-মাতার মর্যাদা' 'বড়দের শ্রদ্ধা' 'বিনম্র আচরণ' তার কোন ইয়ত্তা নেই। কেউ ভুল করলে পিটিয়ে, পিটিয়ে শিখিয়েছেন। কিন্তু আজ? এদের নিশ্চয় 'হোসেন স্যার' এর মত শিক্ষক নেই। থাকলেই বা কি লাভ? সব কিছু কি বাসা থেকে বা শিক্ষকের পক্ষে শিখানো সম্ভব? কিছু বিষয় মানুষের ভেতর থেকে আসে। এই কারনেই তো আমরা মানুষ। আশরাফুল মাখলুকাত।
সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত, যদি রাতে রাস্তার পাশে কখনও পথশিশুদেরকে পড়াতে কোন ভদ্রলোককে দেখতে পান তাহলে বুঝে নেবেন তিনি হোসেন সাহেব। কখনও বস্তির ছেলে, কখনও টোকাই, কখনও নেশাখোর, কখনও কোন 'খারাপ মেয়েছেলেকে' তিনি শিখিয়ে চলেছেনই। তিনি কি শিক্ষা তাদের দেন তা জানা যায়নি তবে তার এই স্কুলিং এর একটা নাম আছে, 'এবার তোরা মানুষ হ।' আমি জানিনা কি লাভ হচ্ছে, আমাদের সমাজ উদ্ধার হচ্ছে কি না! তবে কেউ যদি আপনাকে ছিনতাই এর পরে তার সহবন্ধুটিকে আপনাকে না মারতে অনুরোধ করে তবে বুঝে নেবেন সে 'হোসেন স্যারের' ছাত্র। ভাল কাজ করতে হলে, সমাজকে উদ্ধার করা লাগে না।
©somewhere in net ltd.