নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আই ভিজ্যুয়ালাইজ রিয়্যালিটি!

Lead us from the unreal to the real; From darkness into light; From death into immortality

ভিজ্যুয়ালাইজার

- হোঁচট খেয়েছি ঠিকই, কিন্তু থেমে যাইনি , হেরে যাব বলে তো, আর স্বপ্ন দেখিনি।

ভিজ্যুয়ালাইজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু পরিচয় থাক না গোপন।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৪:২০

; ঠিক কতক্ষণ ধরে গানটা চলছে বলতে পারব না। কেবল একটা লাইনই মাথায় ভাসছে,

'চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে।'

গানের কথাও অন্য কিছুও হতে পারে। ঠিক ভালভাবে বুঝতে পারি নাই। মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা গানের লাইন মাথায় ঢুকে যায়। কোনটার হয়ত কথা ঠিক থাকে না আবার কোনটার হয়ত সুর ঠিক থাকে না। কিন্তু একবার মাথায় ঢুকলে, আর বের হতে চায় না। বাজতেই থাকে, বাজতেই থাকে।



গানের এই লাইনটা মাথায় কেন ঢুকল বুঝতে পারছি না! এখন তো আর কেউ চিঠি লিখে প্রেম করেনা। এসএমএস থাকতে চিঠি! বললেই মানুষ 'গেঁয়ো' ভেবে বসবে। এখন তো আরও আধুনিক! ভিডিও কল করলেই কাহিনী শেষ। ভার্চুয়াল হয়ে যাবে সব। আনকোড়া কাগজে ইকনো ডিএক্স দিয়ে লেখার গন্ধ আর পাওয়া যাবে না! দেখা যাবে না সেই ক্যাটক্যাটে হলুদ চারকোনা খাম। অনেকদিন অপেক্ষার পরে আসা একটি চিঠি বারংবার পড়ার এখন আর কোন ক্রেজ নেই। ঠিক এই কারনে মাথায় গানের লাইনটা ঢুকল কি না কে জানে!



আমার মনোযোগ অন্য জায়গায়। এই মুহূর্তে একটা সেলুনে বসে শেভ করছি। সেলুনের নামটা কি জানা নেই। সবাই এইটাকে 'রঞ্জিতের দোকান' বলে চেনে। রঞ্জিত দাদা বেশ গান পাগল। তার দোকানে 'তেরি মেরি, মেরি তেরি' থেকে শুরু করে 'ভালবেসে সখি নিভৃতে যতনে' সব রকমের গানই চলে। বেশ ভাল মাপের 'মার্কেটিয়ার' লোকটা! দোকানে আসা মাত্রই একটা সিগারেট গুঁজে দেবে হাতে। তারপর শুরু হবে দলাই মলাই। আমার এই চর্বিযুক্ত শরীর এইরকম কড়া পরা হাতের ম্যাসাজই যেন চায়! বেশ একটা ম্যাজ ম্যাজ ভাব চলে আসে। তারপর শুরু হয় একে একে সব কাজ। চুল কাটা, শেভ তারপর আবার ম্যাসাজ। নিদেন পক্ষে শ'দুই টাকা চক্ষু লজ্জাতে হলেও দিতে হবে। এত্ত আজাইরা চিন্তা কেন মাথায় আসতেছে, বুঝতে পারছি না।



কয়েকদিন ধরেই এই সমস্যাটা হচ্ছে। রাতের বেলা ঘণ্টা দু'য়েক হাটা পড়ছে। একই জায়গায় প্রতিদিন ঘোরাঘুরিটা ভাল ব্যাপার না। তবুও আনমনেই একই কাজ প্রতিদিন করা হচ্ছে। ক্লান্ত লাগছে না। চোখের সামনের পৃথিবীটাকে ফেলে রেখে মাথার ভেতরে গোটা তিন চার নতুন পৃথিবীর জন্ম দিয়েছি। ঘটনার লক্ষণটা ভাল না। প্রেম, প্রেম টাইপ।



মানুষের সব থেকে সুন্দর কোন জিনিষটা? হাসি? চেহারা? উহু, আমার কাছে চোখটাকে সব থেকে বেশি ভাল লাগে। একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকার যে আনন্দ, তাতে কোন ক্লান্তি ধরে না। তাতে কোন কমতিও থাকে না। আমি তাই প্রেমে পড়েছি। সুন্দর এক জোড়া চোখের প্রেমে। সেই চোখ দেখতেই আমার হাটা লাগে। দীর্ঘ হাটা।



মেয়েটির সাথে আমার প্রতিদিন দেখা হয় রূপসী বাংলা'র সামনে। ঠিক সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মাঝে সে বাংলাদেশ বেতার অফিসটার সামনে গাড়ি থেকে নামে। তার কিছুক্ষণ পরেই একটা ছোকরা বয়সী ছেলে এসে তাকে রূপসী বাংলা হোটেলের গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। প্রতিদিন।



আমি জানিনা সে কে। আমি জানি না প্রতিদিন রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মাঝে সে কেন গাড়ি থেকে নেমে এক ছেলের অপেক্ষা করে। আমি জানি না সে নিজেই কেন গাড়িটা নিয়ে রূপসী বাংলা'র ভেতরে যায় না। আমি জানি না সে কি করে। আমি জানি না তার নাম কি। আমি শুধু জানি, তার অসম্ভব সুন্দর দুইটা চোখ আছে। আমি জানি আকাশে চাঁদ না থাকলেও সেই চোখ ঝলমল আলো ছড়ায়। আমি জানি সেই চোখের দিকে তাকিয়ে এক জীবন পার করে দেয়া যায়।



ঠিক এই কারনেই আজ শেভ করছি। আমি তার সাথে কথা বলতে চাই। আর কিছু না বলতে পারি কিন্তু নামটা তো জানতে চাইতেই পারি। সব সময় সব পরিচয়ের তো দরকার হয় না। কিছু পরিচয় জানা ছাড়াও একটা জীবন কাটিয়ে দেয়া সম্ভব। কিছু পরিচয় থাক না গোপন। তাকে আজ একটা গান শোনাব বলে ভাবছি। অমাবশ্যার রাতে এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু হতে পারে না। কোন গানটা শোনাব তা ভেবে রেখেছি।



'বিধি ডাগর ও আঁখি যদি দিয়েছিলো, সে তো আমারও পানে কেন পড়িল না।'



সেই ছোটবেলা থেকে এই গানটার প্রেমে পড়েছি। আজ রবিবার নাটকে জাহিদ হাসান একবার গেয়েছিল। সেই থেকে আমারও ইচ্ছা, আমি ও কাউকে গেয়ে শোনাব। আজকে গাইতেই হবে।



রাত ১০টা। আজকে তার আসতে একটু দেরিই হল। সবুজ আর হাল্কা হলুদের সেই শাড়িটায় তাকে অপূর্ব লাগছিল। আমার হাতের সিগারেট তখনও শেষ হয়নি। কিন্তু আমি পা বাড়ালাম। কথা আজ আমাকে বলতেই হবে।



এক্সকিউজ মি,আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?



ঝট করে ঘুরে গেল মেয়েটা। এত কাছে থেকে এর আগে কখনও তাকে দেখিনি । ঝট করে বুকে লাগল। নাহ, তার চোখ সুন্দর তবে সে তার থেকেও সুন্দর। খুবই নিপুণ করে বিধাতা তাকে বানিয়েছেন। অনেক সময় নিয়ে বানিয়েছেন। বিধাতার এই রকম সৃষ্টির দিকে অনেকটা সময় নিয়ে না তাকিয়ে থাকলে ব্যাপারটা অপরাধের পর্যায়ে পড়বে।



সরেন মিয়া। ফাইজলামির আর জায়গা পান না!



খুবই কর্কশ আওয়াজে চিৎকার করে কথাগুলো বলতে থাকল তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোকরাটা। আরও কি কি যেন বলতে বলতে মেয়েটাকে টানতে লাগল রূপসী বাংলা হোটেলের দিকে। কিন্তু মেয়েটা তখনও আমার দিকে তাকিয়ে। আমার মনে হতে লাগল আমরা চোখে চোখে কথা বলছি। আমার চোখে একটাই কথা একবার শুধু বল, ছিনিয়ে আনি তোমায়। কিন্তু মেয়েটার চোখ নির্লিপ্ত। কেবলই এগিয়ে যাচ্ছে রূপসী বাংলার গেটের দিকে।



ততক্ষণে আসেপাশের মানুষদের ভিড় কমতে শুরু করেছে। তারা বলাবলি করছে, 'আরে হোটেলের মেয়েছেলের কেস।'



আমার সামনের পৃথিবীটা ছাড়াও আমার মাথায় আরও অনেকগুলো পৃথিবী চলছে। সেইখানে এইসব কোন কথা পৌছাচ্ছে না। আমার চোখ রীতিমত ঝাপসা হয়ে গেছে। আমি শাহবাগের দিকে হাটা ধরেছি। কিছু পরিচয় আমরা জানি, তবুও গোপন থাকাই ভাল। নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করে চলেছি,



Somewhere beyond right and wrong,

there is a garden.

I will meet you there.

And I will meet you there....



__________________________________________________



নোটঃ এটা আমার লেখা প্রথম গল্প। রাত তিনটা বাজে যদি হটাত অকারণে লিখতে মন চায়, তখন তাকে আর যাই বলুক বিলাসিতা বলে না। এই গল্পটা যখন লিখছি তখন আমার তীব্র মাথা ব্যাথা। ব্যথার চোটে এক চোখ বন্ধ রেখে লিখেছি। লেখা শেষ হতেই কেমন জানি আরাম আরাম লাগল :) যাই হোক ঘটনাটা পুরাই কাল্পনিক। প্রথম তো, চেষ্টা করে দেখলাম আর কি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.