নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জুলকারনাইন নাঈম

জুলকারনাইন নাঈম › বিস্তারিত পোস্টঃ

যমুনা ফিউচার পার্কে একদিন

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:২২

গতকাল আমার এক বন্ধুকে সহ যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়েছিলাম। ভেতরটা আসলে বেশ বড় সড়। একেকটা দোকান অনেক জায়গা নিয়ে বানানো। মনে হয় বিদেশের কোন মার্কেটের চলে আসছি এমন। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স একরকম ঘিঞ্জির মত লাগে এখন, এত মানুষ শপিং করতে যায়, দেখতে বিশ্রি লাগে, কেনাকাটা করতে যেন হাঁসফাঁস ফিলিং হয় ওখানে গেলে। এছাড়া বিশাল একটা জায়গা পুড়ে যাবার পর মার্কেটটাকে কেন জানি আরও ছোট ছোট লাগে। রিপেয়ার করতে এতদিন লাগছে কেন, কে জানে! কিন্তু যমুনা ফিউচার পার্কে যে বিশাল জায়গা পড়ে আছে, ঢুকলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। এখনও প্রচুর জায়গা ভেতরে ফাঁকা পড়ে আছে, নিচের তালার সব গুলো দোকানই যেন দেখার সুযোগ হয়ে উঠছে না, এমনই বড় প্রেমিসেস। এখানে ঢুকে "বেটার কল সল"-এর সেই মল ওয়াকারদের কথা মনে পড়ে গেল, যেখানে বৃদ্ধা মহিলারা কেডস পরে এরকম শপিং মলের ভেতরে জগিং করতে থাকে। আসলেই, গরমকালে যমুনা ফিউচার পার্কে ঢুকে যখন সেন্ট্রাল এসি ভোগ করতাম, তখন বলতাম, বাইরে হাঁটাহাঁটি না করে ভেতরে দৈনিক আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টার হাঁটাহাঁটি করে নিলেই ভালো। পার্কের মত ইউজ করা যায় জায়গাটাকে।

আমার ওই বন্ধু বেশ চুজি। শার্ট দেখতেছিলো, বিভিন্ন শার্ট দেখতে গিয়ে বলতেছিলো আমাকে, এইটা ভালো না ওইটা। আমার এরকম চয়েস করতে দিলে মাথা খারাপ খারাপ লাগে। পারি না। কারণ এসব বুঝে মাথার মধ্যে এভালিউয়েট করে তারপর কিছু একটা বলা সহজ কোন কাজ না। আমার কাছে মনে হয়, ধুর, একটা শার্টই তো। কতই বা আর খারাপ হবে। বেস্ট না হলেও চলে, সমস্যা কি? একটা কিনলেই হলো। আমার প্ল্যান ছিল, একটু খয়েরি দেখে একটা বেল্ট কেনা, হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পেয়ে গেলাম, ব্যস। এরপর আরেকটা প্ল্যান ছিলো কালো জুতা কেনা, এপেক্সে ঘুরতে ঘুরতে একটা পছন্দ হলো, পরে দেখলাম, কিনে ফেললাম। ওয়ান টুর মধ্যে কেনা হয়ে গেলো। এত চয়েস করে কি আর হবে। ক্যাটস আই থেকে আমার বন্ধুটি শার্ট প্যান্ট কেনার পর কাউন্টারে একটা জিনিস দেখালো, রবি সিম থাকলে কিছু টাকা কম কাটবে। আমাকে একটা জায়গায় এসএমএস করতে বললো কোড দিয়ে, তারপর রবি থেকে আরেকটা কোড পাঠালো। ওভাবে ১০% কম টাকায় জামা কাপড় কেনা লাগলো। ভালোই লাগলো এই সুবিধা পেয়ে।

মোটামুটি কেনাকাটা শেষ হবার পরে গিয়েছিলেন নিচের কাবাব ফ্যাক্টরি দোকানটাতে। আমার বন্ধুটি হিন্দু হওয়ায় খাবারের দোকানে বিফ বাদ। আর মেনু থাকে মুরগি অথবা খাসীর। হিন্দুরা গরু খেতে না পারলেও খাসী খেতে পারে, কিন্তু খাসীর গোশতের দাম অনেক বেশি হওয়ায় সেটা বাসায় তেমন খাওয়াই হয় না। আমার বন্ধুটি বলছিলো, খাসীর গোশত শুধু হিন্দু বিয়েতেই খাওয়া হয় মূলত, টাকা দিয়ে খাসীর গোশত কিনে বাসায় সেটা রান্না হয় খুব কম। আমাদের বাসায় কিন্তু গরুর গোশত অনেক বেশি রান্না হয়। প্রায় প্রতি শুক্রবারেই দেখা যায় দুই আড়াই কেজি গরুর গোশত আনা হয়, আম্মু আবার কিছু গোশত আলাদা করে রাখে কাবাব বানানোর জন্য। আব্বু আম্মু আবার ফার্মের মুরগী খেতে চায় না, দেশী মুরগী আনে, কিন্তু আমার দেশী মুরগী তেমন ভালোই লাগে না। যাহোক, ওই বন্ধুটির সাথে বাইরে গেলে সবসময়ে চেষ্টা থাকে খাসীর মাংস টাইপ কোন মেনু খাওয়ার, কারণ ওর বাসায় মুরগীটাই প্রধানত রান্না করা হয়।

কাবাব ফ্যাক্টরির মেনুতে অনেক চিকেনের মেনু ছিল, কিন্তু আমার বন্ধুটি লাম্বের রিব অর্ডার করতে চাইলো। আমার মুরগী টাইপ কিছু অর্ডার করতে ইচ্ছে করলেও তার দিকে তাকিয়ে ল্যাম্বের মেনুতেই সায় দিলাম। নান নিতে চাইছিলাম, কিন্তু ওখানে লাচ্ছা পরোটা টাইপ কিছু ছিল, সে ওটা ট্রাই করতে চাইলো। পরে বিভিন্ন গবেষণা শেষে ভাবলাম, প্রথমে একটা নিই, এরপর না হয় ভালো লাগলে আরেকটা নিব। যাহোক, ল্যাম্ব রিব চলে আসলো। দেখে পুরো অবাক। ছয়টা রিব আসলো, প্রতিটা রিবের স্লাইসের সাথে খুবই অল্প পরিমাণে গোশত লাগানো, এক কামড় দিতেই শেষ। আমার বন্ধুটা খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। আসলে আমি নিজেও ল্যাম্ব রিব টাইপ মেনু কখনও ট্রাই করি নি। এরকম যে খুব অল্প মাংস থাকে, জানা ছিল না। হাড্ডিগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, একেবারে বাচ্চা কোন ভেড়ার হাড্ডি, একেবারে মুরগীর পাঁজরের সমান। আমি মজা করে বলতেছিলাম, হয়তো ভেড়া বেচারা হাড্ডিসার ছিল। কিন্তু আমার ওই বন্ধুর চোখ মুখ যেন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছিলো। ছয়টা রিব দেয়, বোধহয় দুইটা খাবার চেষ্টা করে রাগ করে বসে ছিল। আমি আস্তে বাকি চারটা খেলাম। রান্নাটা আসলে অত খারাপ ছিল না। কিন্তু কোয়ান্টিটি অনেক কম লাগছিলো।

তবে এবার আরও অবাক হবার পালা। ওরা হয়তো আমাদের খাবারের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি খেয়াল করছিলো। এজন্য হঠাৎ করে এক জন দুই জন করে এসে বার বার জিজ্ঞাসা করতেছিলো, সব ঠিক আছে কিনা। পরে হঠাৎ করে দেখি, দুইটা ছোট্ট চিকেন রোল টাইপ কিছু নিয়ে এসে বলছে, শেফ নাকি আমাদের জন্য পাঠাইছে, যেহেতু খাবারটা আমাদের পছন্দ হয় নি। খুবই অবাক হলাম। ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় তো খাই-ই, কিন্তু এরকম ব্যাপার আগে হতে দেখি নি, যে খাবার ভালো লাগে নি দেখে কোন কমপ্লিমেন্টারি কিছু দিবে। ওমা, এখানেই শেষ না। এরপর দেখি ভারতীয় একজন শেফ নিজে এসে আমাদের সাথে কথা বলছে, এবং আমাদের মশলা মাখানো আলু টাইপ কিছু নিয়ে এসে আমাদের সাথে কথা বলছিলো। আমি এবার সত্যি উল্টো লজ্জাই পেয়ে গেলাম। বললাম যে, এই মেনু কখনও আমরা ট্রাই করি নি, তাই আমাদের ধারণা ছিল না এখানে কেমন মাংস থাকতে পারে, এজন্যই মাংসের কোয়ান্টিটি দেখে হতাশ হয়েছি। কিন্তু কাস্টোমারকে সন্তুষ্ট করার জন্য ওদের এরকম চেষ্টা দেখে সত্যিই খুব অবাক লাগছিলো। ঢাকা শহরে আর কাউকে ওরকম করতে দেখি নি।

আরও বেশ কিছু ব্যাপার ভালো লাগলো। বিল দেওয়ার সময় বলছিলো, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড আমাদের আছে কিনা, তাহলে ১০-১৫% টাইপ ডিসকাউন্ট পাওয়া যাবে। ওখানকার পরিচারিকা দেরও অন্যরকম লাগছিলো। অনেক রেস্টুরেন্ট আছে, যেখানে মেয়েদের খুব টাইট ফিট এট্রাকটিভ জামা কাপড় পরিয়ে রাখে। দেখতে খুবই অস্বস্তিকর লাগে। এখানে খুব সুন্দর শাড়ী পরা, বুক পিঠ ঢাকা ফুল হাতা ব্লাউজ পরা এয়ার হোস্টেস টাইপ ড্রেসে মহিলারা ছিলেন, যাদের দেখতে অনেক শালীন লাগছিলো। আর বের হবার দিকে একটা কাউন্টারে তিন প্রকারের পান মসলা রেখে দেওয়া আছে একটা পাত্রে, একটা মসলা দেওয়া ক্রিসপি সুপারি খেলাম, বেশ ভালো লাগলো। এরপর বের হয়ে বলতেছিলাম, দারুন তো, এরপরে অন্য কোন রেস্টুরেন্টে ঢুকলে আরও কান্না কান্না ভাব করবা, তাইলে আরও এরকম কমপ্লিমেন্টারি জিনিসপত্র পাব। এক দোকানে গিয়ে তুমি কাঁদবা, আরেক দোকানে আমি কাঁদবো, পালাক্রমে। হাহাহা...

এরপর মনে হলো, উপরে বো'লিং খেলার জায়গাতে যাই। ওখানে ঢুকতেই ৫০ টাকা লাগে, এই একস্ট্রা টাকাটা দিতে আমার পেইন লাগে খুব। এছাড়া ভেতরে গিয়ে আরও হতাশ হতে হল। বো'লিং খেলার ওখানে আগে একটা সুযোগ ছিল যে দুইজন শেয়ার করে ২০ টা বল মারতে পারতো। কিন্তু এখন শেয়ারিং অপশন অফ করে দিসে, দুইজনকে খেলার জন্য আলাদাভাবে ৩৫০ টাকা করে টিকেট কিনতে হবে, শেয়ার করার সিস্টেম নেই, যেটা আগে ছিল। পরে ভাবলাম, ধুর, খেলমু না। বের হয়ে আসলাম। কিন্তু ওই ৫০ টাকা লস করে খারাপ লাগতেছিলো আরও। পরে মনে হলে, কফি খাই। তাবাকের একটা দোকান আছে, ভালোই হয়। ওখানে শেলফে বই থাকে, একবার "ফিলোসফি" লেখা বই নামিয়ে কফির টেবিলে নিয়ে কফি খাচ্ছিলাম। আজ ওখানে অনেক ভীড়। কফি এন্ড ডোনাটস নামে আরেকটা দোকান আছে, খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে পেয়ে গেলাম। ওখানকার সিনেমাহলে মুভি দেখে বেরোনোর পথেই পড়ে। ঢুকলাম। বিভিন্ন কফি আছে, আমি কফির স্বাদ অত বুঝি না, ক্যাপুচিনো নিলেও যেমন লাগে, ক্যারামেল, লেটে নিলেও একই রকম লাগে। হয়তো নিয়মিত খেলে বোঝা যায়, আমি এরকম হঠাৎ হঠাৎ খাই, তাই স্বাদের পার্থক্য বুঝি না, কফিই খাচ্ছি, এমনই লাগে।

দোকানটাতে বিভিন্ন রকম ডোনাট পাওয়া যায়। আমি বলছিলাম, একটা ডোনাট নিই, আরেকটা কফি নিই। কিন্তু শুনলাম আগের জনকে একটা অদ্ভূত অফার দিচ্ছে, ছয়টা ডোনাট নিলে ছয়টা ডোনাট ফ্রি দেওয়া হবে। আমি ভাবছিলাম জাস্ট একটা ডোনাট নিব, পরে আমাকে পুশ করে দুইটা ডোনাট নেওয়ালো। চারটা ডিফেরেন্ট স্বাদের। বলার চেষ্টা করছিলাম, এতো এতো স্বাদের ডোনাট নিয়ে কোনটারই স্বাদ পাওয়া যাবে না আসলে। এছাড়া ওনারা একটা ডোনাট ফ্রি দিলেন। এরকম পাঁচটা ডোনাট একের পর এক ছুরি দিয়ে কেটে অর্ধেক করার পর খেতে খেতে যখন পঞ্চমটায় এসে পৌছলাম, বেচারা আর খেতে পারছিলো। পরে পঞ্চম ডোনাট আমিই পুরোটা খেলাম। বুঝলাম, কখনই ডোনাট একটার বেশি নিতে হয় না। উচিৎ একটা শিক্ষা হল। পরে তিনটা ডোনাট আমার নিজেরও এত স্যাচুরেটেড লাগতেছিলো, রাতে বাসায় গিয়ে আর কিছু খাওয়া হয় নি।

এইতো। একটা দিনের ঘুরে আসা। এরকম লেখাকেই তো ব্লগ বলে, তাই না? এখন অবশ্য ভিডিও ব্লগ করে মানুষজন। প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার চেষ্টা। কেসি নাইস্টেট, লোগান পল, ওরা প্রতিদিন নতুন নতুন জিনিস ভ্লগিং করতে থাকে, এসবের প্রেশার খুব বেশি। এখন বিলবোর্ডে ১৯৮২ সালে, ১৯৮৩ সালে কোন গানগুলো ফেমাস ছিল, এগুলো দেখতেছি। ব্ল্যাক মিররে "এনিওয়ান" গানটা শুনে খুব ভালো লাগতেছে। এর আগে এক্স মেন-এ টাইম ইন আ বটল গানটা এভাবে মুগ্ধ করে। কত দারুন দারুন গান অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। নিজে একটা ডিসকভার করতে পারলে ভালো লাগতো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.