নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগার পাঠক হিসেবেই বেশী আনন্দে আছি।

তৌহিদ আল-বিরুনী

তৌহিদ আল-বিরুনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র শবে বরাত’ ‘শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও নেই’ এরূপ বক্তব্য চরম জিহালতি ও মূর্খতাসূচক

২০ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:১২



হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কোন এক রাত্রি যাপন করছিলাম। এক সময় উনাকে বিছানা মুবারকে না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, উনি হয়তো অন্য কোন হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে উনাকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফ-এ ফিরে আসলাম। উনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন হুজরা শরীফ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন। অর্থাৎ খাছ রহমত নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী ক্বলবের মেষের গায়ে যত পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, রযীন) অতএব, সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ ‘শবে বরাত’-এর কথা উল্লেখ আছে। তবে কুরআন শরীফ-এ শবে বরাত-এর রাত্রকে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ আর হাদীছ শরীফ-এ ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বলা হয়েছে। যারা বলে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ শবে বরাত-এর উল্লেখ নেই তাদের এরূপ বক্তব্য জিহালতপূর্ণ, মূর্খতাসূচক। আর এ সমস্ত বক্তব্য যারা দিয়ে থাকে তারা নিশ্চয়ই বদ মাযহাব বদ আক্বীদা ও দাজ্জালের কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত হবে। কাজেই এ সমস্ত বদ মাযহাব, বদ আক্বীদাভুক্ত ওহাবী, খারিজী, লা-মাযহাবী ইত্যাদি গুমরাহ লোকদের থেকে ঈমানকে হিফাজত করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয-ওয়াজিব।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:৫৮

চোখ কান খোলা বলেছেন: আসসালামু আলাইকুম।
আমাদের সামনে এসে গেছে অতি ফজিলতের একটি মাস মাহে শা’বান। প্রিয় নবীজী(সাঃ) এমাসেও দু’আ করতেন যেভাবে রজব মাসেও দু’আ করতেনঃ “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রজব ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা রামাযান।” অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শা’বান মাসকে বরকতময় করে দিন এবং আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌছেঁ দিন। আমীন।” শা’বান মাসে তিনি অকনকগুলো নফল রোজা রাখতেন।

আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ “আমি প্রিয় নবী (সাঃ) কে রমজান ছাড়া আর কোন পূর্ণ মাসের রোজা রাখতে দেখিনি। আর শা’বান মাস ছাড়া আর কোন মাসে এত অধিক পরিমাণ নফল রোজা রাখতে দেখিনি।” (বোখারি ও মুসলিম)।
গাহাবী উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) বর্ণন করেনঃ আমি প্রিয় নবীজী (সাঃ) কে বললামঃ “ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ)! শা’বান মাসে আপনি যত নফল রোজা রাখেন অন্য কোন মাসে আপনাকে এত নফল রোযা রাখতে দেখিনা।” প্রিয় নবী (সাঃ) এরশাদ করলেনঃ “রজব ও রমজান – এ দুটো মাসের মঝখানের এ মাসটি সম্পর্কে অনেকেই আসলে গাফেল হয়ে থাকে। এ মাসে মানুষের আমল (-এর বার্ষিক রিপোর্ট) আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই আমার আমল যখন পেশ করা হয়, আমি যেন তখন রোযা অবস্থায় থকি।” (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে খোযাইমা)।

তবে শা’বান মাসের ১৫ তারিখে শুধু একটি রোযা রাখার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না। আর আমাদের সামনে আসছে মধ্য শা’বানের রাতটি যা অনেক দেশে শবে বরাত নামে পরিচিত। এ রাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে অন্যান্য বৎসরের মত এবারও আপনাদের খেদমতে কিছু বিস্তারিত আলোচনা পেশ করতে চাই। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দিন। আমীন।

প্রত্যেক মুসলমানই অবগত আছেন, ইসলামী শরীয়তের মূল উৎস দু’টি – কুরআন ও হাদিস। কুরআন ও হাদিসে যে ইবাদতের যতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তার চেয়ে একটু বেশী বা কম গুরুত্ব দেয়ার অধিকার কেন মুসলিমের নেই। শবে বরাত নামক বিষয়টি কুরআন-হাদিসে আদৌ উল্লেখ করা হয়নি। এটাই হচ্ছে উম্মতের মুহাক্বিক আলিম ও ইমামদের মতামত।

কেউ কেউ দাবী করে থাকেন সুরা আদ-দুখানে “লাইলাতুম মুবারাকাহ” অর্থাৎ বরকতময় রাত বলতে শবে বরাতকেই বোঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তাফসীরে ইবনে কাসীর, কুরতুবী, ইত্যাদি রেফারেন্স দেয়া হয়। আসুন আমরা চেক করে দেখি নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহে এ ব্যাপারে কি বলা হয়েছে। লিখার কলেবর যাতে বৃদ্ধি না হয়ে যায়, সেজন্য যথাসম্ভব তাফসীরের সার-সংক্ষেপ পেশ করা হচ্ছে।

ইমাম ইবনে কাসীর (রাহঃ)বলেনঃ বরকতময় রাত বলতে সুরা আদ-দুখানে শবে ক্বদর-কে বোঝানো হয়েছে। কারণ, এখানে কুরআন নাযিলের কথা বলা হয়েছে। আর সেটাতো সূরা ক্বদর-এ স্পস্ট করেই বলা আছে। আর কুরআন যে রমজান মাসেই নাযিল হয়েছে সেটাও সুস্পস্ট করে বলা হয়েছে সূরা বাক্বারায়।

তিনি আরও বলেনঃ কেউ যদি বলে যে বরকতময় রাত বলতে মধ্য শা’বানের রাত-কে বোঝানে হয়েছে – যেমনটি ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে – তাহলে সে প্রকৃত সত্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করল।
শবে বরাতে মনুষের হায়াত, মউত ও রিযকের বার্ষিক ফয়সালা হওয়া সংক্রান্ত যে হাদিসটি উসমান বিন মোহাম্মদ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি বলেছেন, হাদিসটি মুরসাল। অর্থাৎ, হাদিসের প্রথম বর্ণনাকারী হিসাবে যে সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে হাদিসটি শুনেছেন, তার কোন উল্লেখ নেই। ফলে এমন দূর্বল হাদিস দিয়ে কুরআন ও সহীহ হাদিসের অকাট্য বক্তব্যকে খণ্ডন করা যায়না। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ তাফসীর ইবনে কাসীর, খণ্ডঃ ৭, পৃষ্ঠা ৩১৬১)।

ইমাম কুরতুবী বলেনঃ “বরকতময় রাত্রি বলতে ক্বুদরতের রাতকে বোঝানো হয়েছে, যদিও কেউবা বলেছেন সেটা মধ্য শা’বানের রাত। ইকরামাও বলেছেন সেটি হচ্ছে মধ্য শা’বানের রাত। তবে প্রথম মতটি অধিকতর শুদ্ধ। কেননা আল্লাহ বলেছেনঃ ‘আমি এই কুরআনকে লাইলাতুল ক্বদর-এ নাযিল করেছি।’” এ প্রসঙ্গে মানুষের হায়াত, মউত, রিযক, ইত্যাদির ফয়সালা শবে বরাতে সম্পন্ন হয় বলে যে রেওয়ায়েত এসেছে, সেটাকে তিনি অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করেন। তিনি পূণরায় উল্লেখ করেনঃ “সহীহ-শুদ্ধ কথা হচ্ছে, এ রাতটি লাইলাতুল ক্বদর।”

অতঃপর তিনি প্রখ্যাত ফকীহ কাযী আবু বকর ইবনুল আরাবীর উদ্ধৃতি পেশ করেনঃ জমহুর আলীমদের মতামত হচ্ছে, এ রাতটি লাইলাতুল ক্বদর। কেউ কেউ বলতে চেয়েছেন এটা মধ্য শা’বানের রাত। এ কথাটি একেবারেই বাতিল। কারণ, আল্লাহ স্বয়ং তাঁর অকাট্য বাণী কুরআনে বলেছেনঃ “রমজান হচ্ছে ঐ মাস যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে।” এখানে তিনি মাস উল্লেখ করে দিয়েছেন। আর বরকতময় রাত বলে লাইলাতুল ক্বদরকে উল্লেখ করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এ মাসটিকে রমজান থেকে সরিয়ে অন্য মাসে নিয়ে যায়, সে মূলতঃ আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে বসে। মধ্য শা’বানের রাতটির ফজিলত এবং এ রাতে হায়াত-মউতের ফয়সালা সংক্রান্ত কোন একটি হাদিসও সহীহ এবং নির্ভরযোগ্য নয়। কাজেই কেউ যেন সেগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত না করে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ডঃ ১৬, পৃষ্ঠাঃ ১২৬-১২৮)।

ইমাম তাবারী তাফসীরে তাবারীতে বরকতময় রাতের ব্যাখায় উল্লেখ করেনঃ কাতাদাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত এ রাতাট লাইলাতুল ক্বদর-এর রাত। প্রতি বৎসরের যাবতীয় কিছুর ফায়সালা এ রাতেই সম্পন্ন করা হয়। অতঃপর ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত মধ্য শা’বানের মতামতটিও উল্লেখ করেন। পরিশেষে তিনি মন্তব্য করেনঃ লাইলাতুল ক্বদর-এর মতটাই সহীহ। কারণ, এখানে কুরআন নাযিলের কথা বলা হয়েছে।(বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ তাফসীরে তাবারী, খণ্ডঃ ১১, পৃষ্ঠা ২১২-২২৩)।

আল্লামা মুহাম্মদ আল আমীন আশ-শিনকীতী (রাহঃ) সূরা আদ-দুখানের বরকতময় রাতের তাফসীরে বলেনঃ এটি হচ্ছে রমজান মাসের ক্বদরের রাত। মধ্য শা’বানের রাত হিসাবে সেটিকে বুঝানো হয়েছে মনে করা – যেমনটি ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে – মিথ্যা দাবী ছাড়া আর কিছু নয়। এ দাবীটি কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধী । নিঃসন্দেহে হকের বিপরীত যে কোন কথাই বাতিল।

কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্যের বিরোধী যে হাদিসগুলো কেউ কেউ বর্ণনা করে থাকেন, যাতে বলা হয় এ রাতটি হচ্ছে মধ্য শা’বানের রাত, সেই হাদিসগুলোর কোন ভিত্তি নেই। সেগুলোর কোনটার সনদই সহীহ নয়। ইবনুল আরাবী সহ মুহাক্বীক আ’ইম্মায়ে কেরাম এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বলেছেন, বরই আফসোস ঐসব মুসলমানদের জন্য যারা কুরআনের সুস্পষ্ট বিরোধিতা করে কুরআন ও সহীহ হাদিসের দলীল ছাড়াই।(বিস্তারিত দেখুনঃ আদওয়াউল বায়ান, খণ্ডঃ ৭, পৃষ্ঠাঃ ৩১৯)।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মুফতী শফী (রাহঃ) এ বিষয়ে মা’আরেফুল কুরআনে বলেনঃ বরকতময় রাত বলতে অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে এখানে শবে ক্বদর বুঝানো হয়েছে যা রমজান মাসের শেষ দশকে হয়। কেউ কেউ আলোচ্য আয়াতে বরকতের রাত্রির অর্থ নিয়েছেন শবে বরাত। কিন্তু এটা শুদ্ধ নয়। কেননা, এখানে সর্বাগ্রে কুরআন অবতরনের কথা বলা হয়েছে। আর কুরআন যে রমজান মাসে নাযিল হয়েছে, তা কুরআন দ্বারাই প্রমাণিত। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুনঃ মা’আরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ১২৩৫)।

প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন, প্রতিটি তাফসীরেই ইকরামা কর্তৃক বর্ণিত শবে বরাতের বর্ণনাটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আর কুরআনের অন্যান্য আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, এটি হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর। কুরআন দিয়েই কুরআনের তাফসীর গ্রহণ করার সুযোগ থাকলে সেটাই গ্রহণ করতে হবে। এটাই উলামায়ে উম্মতের ইজমাহ। তারপর কি আর এ বিষয়ে কোন বিতর্কের অবকাশ থাকে?

কুরআনে শবে বরাতের কোন উল্লেখ নেই, এ বক্তব্যটি সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এবার আমরা দেখি হাদিস শরীফে কী আছে।
শবে বরাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসগুলো দু প্রকারঃ

প্রথমত, শবে বরাতে কতো রাকাত নামায পড়তে হবে, সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসী প্রতি রাকাতে কতবার করে পড়তে হবে, ইত্যাদি এবং সে আমলগুলোর বিস্তারিত সওয়াবের ফিরিস্তি সংক্রান্ত হাদিসগুলো একেবারেই জাল এবং বানোয়াট।

আর দ্বিতীয় প্রকার হাদিসগুলো, এ রাতের ফযীলত, ইবাদতের গুরুত্ব, ইত্যাদি বিষয়ক। এ সব হাদিসের কোনটাই সহীহ হিসাবে প্রমাণিত হয়নি। বরং সবগুলোই যইফ (দুর্বল)। তবে, মউজু (জাল বা বানোয়াট)নয়। এখানে একটি বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার। সিহাহ সিত্তার (ছয়টি গ্রন্থের)সবগুলো হাদিসই কি সহীহ? হাদিস বিশারদগণ প্রায় একমত যে, বুখারী ও মসলিম – এ দুটো গ্রন্হের সবগুলো হাদিসই সহীহ পর্যায়ের। কোন যইফ (দুর্বল) হাদিসের অবকাশ নেই এ দুটো গ্রন্থে।

আর বাকী ৪টি গ্রন্থের অধিকাংশ হাদিস সহীহ। তবে, বেশ কিছু সংখ্যক যইফ (দুর্বল) হাদিসও রয়েছে সেগুলোর মধ্যে। শবে বরাত সংক্রান্ত কোন একটি হাদিসও বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থদ্বয়ে আসেনি। আর বাকি ৪টি গ্রন্থে বা অন্যান্য আরও কিছু গ্রন্থে এ সংক্রান্ত যে হাদিসগুলো এসেছে, তার একটিও সহীহ হাদিসের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। শবে বরাত সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস, হাদিস বিশারদগণের মন্তব্য সহকারে উল্লেখ করা হলঃ

১. আলী (রাঃ)-এর বরাত দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেনঃ “১৫ শা’বানের রাতে তোমরা বেশী বেশী করে ইবাদত কর, এবং দিনের বেলায় রোযা রাখ। এ রাতে আল্লাহ তা’আলা সূর্যাস্তের সাথে সাথেই দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেনঃ ‘কে আছ আমার কাছে গুনাহ মাফ চাইতে? আমি তাকে মাফ করতে প্রস্তুত। কে আছ রিযক চাইতে? আমি তাকে রিযক দিতে প্রস্তুত। কে আছ বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করতে প্রস্তুত। কে আছ …’ এভাবে (বিভিন্ন প্রয়োজনের নাম নিয়ে) ডাকা হতে থাকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত”। (ইবনে মাজাহ কর্তৃক হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে)।

এ হাদিসটি যে আদৌ সহীহ নয়, সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম হাফেজ শিহাব উদ্দিন তাঁর যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হাদিসটির সনদ যইফ (দুর্বল), কারণ হাদিসটির সনদের মাঝখানে আবু বকর বিন আবু সাবরা নামে একজন রাবী (বর্ণনাকারী) অনির্ভরযোগ্য। এমনকি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এবং প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনু মাইন তার ব্যাপারে মন্তব্য করেছেনঃ “লোকটি মিথ্যা হাদিস রচনা করে থাকে।” (দেখুনঃ সুনান ইবনে মাজাহ, মন্তব্য ও সম্পাদনাঃ মুহাম্মদ ফুয়াদ আব্দুল বারী, পৃষ্ঠা ৪৪৪)।

২. আয়েশা (রাঃ)-এর বরাত দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ “আমি এক রাতে দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার পাশে নেই। আমি উনার সন্ধানে বের হলাম। দেখি যে তিনি জান্নাতুল বাকী (কবর স্থানে)অবস্থান করছেন। ঊর্ধ্বাকাশপানে তাঁর মস্তক ফেরানো। আমাকে দেখে বললেন, ‘আয়েশা, তুমি কি আশঙ্কা করেছিলে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) তোমার প্রতি অবিচার করেছেন?’ আমি বললাম, ‘এমন ধারণা করিনি, তবে মনে করেছিলাম, আপনার অন্য কোন বিবির সান্নিধ্যে গিয়েছেন কিনা।’

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘আল্লাহ তা’আলা ১৫ই শা’বানের রাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং কালব গোত্রের সমুদয় বকরীর সকল পশমের পরিমাণ মানুষকে মাফ করে দেন।’” (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)। ইমাম তিরমিজি হাদিসটি বর্ণনা করে নিজেই মন্তব্য করেছেনঃ আয়েশা (রাঃ)-এর বরাত দিয়ে বর্ণিত এই হাদিসটি হাজ্জাজ বিন আয়তাআহ্ ছাড়া আর কেউ বর্ণনা করেছেন বলে জানা নেই।

ইমাম বোখারী বলেছেনঃ এ হাদিসটি যইফ (দুর্বল)। হাজ্জাজ বিন আয়তাআহ্ বর্ণনা করেছেন ইয়াহ্ইয়া বিন আবি কাসির থেকে। অথচ হাজ্জাজ ইয়াহ্তইয়া থেকে আদৌ কোন হাদিস শুনেননি। ইমাম বোখারী আরও বলেছেনঃ এমনকি ইয়াহ্ইয়া বিন আবি কাসিরও রাবী ওরওয়া থেকে আদৌ কোন হাদিস শুনেননি। (দেখুনঃ জামে’ তিরমিজী, সাওম অধ্যায়, মধ্য শা’বানের রাত, পৃষ্ঠা ১৬৫-১৬৮)।

৩. আবু মুসা আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “১৫-ই শা’বানের রাতে আল্লাহ তা’আলা নিচে নেমে আসেন এবং সকল মানুষকেই মাফ করে দেন। তবে মুশরিককে এবং মানুষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টিকারীকে মাফ করেন না” (ইবনে মাজাহ)। এ হাদিসটির ব্যাপারে হাফেজ শিহাব উদ্দিন তাঁর যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেনঃ এর সনদ যইফ (দুর্বল)। একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আব্দুল্লাহ বিন লাহইয়াহ্ নির্ভরযোগ্য নন। আরেকজন রাবী ওয়ালিদ বিন মুসলিম তাফলীসকারী (সনদের মাধ্যে হেরফের করেতে অভ্যস্ত) হিসেবে পরিচিত।

প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আসসিন্দী বলেছেনঃ আরেকজন রাবী আদদাহহাক কখনও আবু মুসা থেকে হাদিস শুনেননি। শবে বরাত সংক্রান্ত বর্ণিত সবগুলো হাদিসের সনদের মধ্যেই এ জাতীয় দুর্বলতা বিদ্যমান থাকার কারণে একটি হাদিসও সহীহ’র মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
লিখার কলেবর বৃদ্ধি হওয়ার আশংকায় আমরা বাকী হাদিসগুলো বা তদসংক্রান্ত মন্তব্য উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকছি। এবার প্রশ্ন আসে যইফ (দুর্বল) হাদিসের ভিত্তিতে কোন আমল করা যায় কি-না।
অধিকাংশ মুহাদ্দেসীনের মতে যইফ হাদিসের উপর কোন আমল করা শরীয়তে জায়েয নেই।

অধিকাংশ ফুকাহা আইম্মায়ে কেরাম যইফ (দুর্বল) হাদিস দ্বারা শর্ত সাপেক্ষে আমল করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন। শর্তগুলো নিম্নরূপঃ
• ১।খুব বেশী যইফ (দুর্বল) পর্যায়ের না হওয়া।
•২। শুধুমাত্র ফাযায়েল অধ্যায়ের হওয়া। অর্থাৎ ফাজায়েল অধ্যায় ব্যতীত অন্য কোন অধ্যায়ের যইফ হাদিসের ভিত্তিতে কোন প্রকার আমল করা যাবে না।
•৩। আমল করার সময় সহীহভাবে প্রমাণীত হওয়ার ধারনা না রাখা। অর্থাৎ, এ ধারণা রাখতে হবে যে হাদিসটি সহীহভাবে প্রমাণীত নয়।
• ৪। কুরআন ও সহীহ হাদিসের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট যইফ হাদিসটি কুরআন বা সহীহ হাদিসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
উক্ত মূলনীতিগুলোর আলোকে শবে বরাতের আমল করা যেতে পারে বলে অনেক ওলামায়ে কেরাম মতামত দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন আসে আমল করতে হলে কিভাবে করা যাবে।

প্রথমতঃ ব্যক্তিগতভাবে বিছু ইবাদত বন্দেগী করা যেতে পারে। সে জন্যে মসজিদে সমবেত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করার জন্য ওয়াজ নসীহত, যিকির ইত্যাদির আয়োজন করা যাবেনা। (দেখুনঃ ফাতাওয়া শামীয়া, ইমাম বিন আবেদীন, পৃষ্ঠা ৬৪২)। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কিরামগণ এমনটি করেননি। তাই সে ত্বরিকার বাইরে ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতা আবিষ্কার করলে সেটা হয়ে যাবে বিদ’আত।

দ্বিতীয়তঃ হায়াত, মউত, রিযক ইত্যাদির ফয়সালা এ রাতে হয়, এটা বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ, এসব ফয়সালা যে লাইলাতুল ক্বদরে হয়, তা সুস্পষ্টভাবে কুরআন ও সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণীত।

তৃতীয়তঃ আমাদের দেশে (বাংলাদেশে) আলোকসজ্জা ও আতশবজির যে তামাশা করা হয়, তা প্রকাশ্যে বিদ’আত। সে ধারণা থেকে কোন এলাকায় এ রাতের নাম হচ্ছে বাতির রাত। এ সব ধারণা ইসলামী শরীয়তে হিন্দুদের দিওয়ালী অনুষ্ঠান থেকে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রাহঃ)। হালুয়া-রুটি বিলি-বণ্টনের কার্যক্রমও বিদ’আত। (দেখুনঃ ফাতাওয়া শামীয়া, ইমাম বিন আবেদীন, পৃষ্ঠা ৬৪২)। ইবাদতের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এসব অনেক আমল শিয়াদের কাছ থেকে উপ-মহাদেশের মুসলমানরা গ্রহণ করেছেন বলে মুফতী রশীদ আহমদ লুদিয়ানী উল্লেখ করেছেন। (দেখুনঃ সাত মাসায়েলঃ শবে বরাতে শিয়াদের ভ্রষ্টতা, পৃষ্ঠা ৩৯-৪২)।

চতুর্থতঃ নফল ইবাদতের জন্য সারা রাত মসজিদে এসে জেগে থাকা রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নত বিরোধী। তিনি নফল ইবাদত ঘরে করতে এবং ফরয ইবাদত জামা’আতের সাথে মসজিদে আদায় করতে তাগিদ করেছেন। আর সারা রাত জেগে থেকে ইবাদত করাটাও সুন্নত বিরোধী। প্রিয় নবীজী (সাঃ) সব রাতেরই কিছু অংশ ইবাদত করতেন, আর কিছু অংশ ঘুমাতেন। উনার জীবনে এমন কোন রাতের খবর পাওয়া যায়না, যাতে তিনি একদম না ঘুমিয়ে সারা রাত জেগে ইবাদত করেছেন।

পঞ্চমতঃ শবে বরাতের দিনের বেলায় রোযা রাখার হাদিস একেবারেই দুর্বল। এর ভিত্তিতে আমল করা যায়না বলে পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম ও ফকীহ মুফতী মাওলানা তাকী উসমানী সাহেবের সুস্টষ্ট ফাতাওয়া রয়েছে। শবে বরাত, কবর যিয়ারত, ইত্যাদি অনেক আমলেরই কোন সহীহ দলিল না থাকার কারণে উপমহাদেশর প্রখ্যাত আলেম ও ফকীহ মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়নবী, হাক্বীকুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রাহঃ)-এর সাথে বহু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রাহঃ) শেষের দিকে কিছু কিছু বিষয় অবশ্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

ষষ্ঠতঃ শবে বরাতের রোযার পক্ষে যেহেতু কোন মজবুত দলিল নেই, তাই যারা নফল রোযা রাখতে চান, তারা আইয়ামে বীজের তিনটি রোযা – ১৩, ১৪, ১৫ – রাখতে পারেন। এর পক্ষে সহীহ হাদিসের দলিল রয়েছে। শুধু একটি না রেখে এ তিনটি বা তার চেয়েও বেশী রোযা রাখতে পারলে আরও ভাল। কারণ, শা’বান মাসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সবচেয়ে বেশী পরিমাণ নফল রোযা রেখেছেন।
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদিসের উপর আমল করার তাওফীক দান করুণ। আমীন।

নোট: লেখাটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ, ইষ্ট লন্ডন মসজিদের সম্মানিত খতিব, মাওলানা আব্দুল কাইউম লিখেছিলেন ২০০৮ সালে।

২| ২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৫

টম. বলেছেন: মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে কতিপয় মূলনীতি উল্লেখ করছি যা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমার বিশ্বাস।

(এক) যদি কোন একটা প্রথা যুগ যুগ ধরে কোন অঞ্চলের মুসলিম সমাজে চলে আসে, তাহলে তা শরীয়ত সম্মত হওয়ার প্রমাণ বহন করেনা। এটা বলা ঠিক হবে না যে, শত শত বছর ধরে যা পালন করে আসছি তা না জায়েয হয় কিভাবে? বরং তা শরীয়ত সম্মত হওয়ার জন্য অবশ্যই শর’য়ী দলীল থাকতে হবে।

(দুই) ইসলামের যাবতীয় বিষয়াবলী দু’ প্রকার (ক) আকীদাহ বা বিশ্বাস (খ) ‘আমল বা কাজ। কোন ‘আমল বা কাজ ইসলামের শরীয়ত সম্মত হওয়ার জন্য অবশ্যই কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস এই চারটির যে কোন একটি দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। কিন' আকীদাগত কোন বিষয় অবশ্যই কুরআন অথবা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। ইজমা অথবা কিয়াস দ্বারা আকীদাহর কোন বিষয় প্রমাণ করা যাবে না।

(তিন) যে সকল হাদীস কিতাব আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লিখিত সবগুলো হাদীস বিশুদ্ধ বা সহীহ নয়। হাদীস বিশারদগণ যুগ যুগ ধরে গবেষণা করে নির্ধারণ করেছেন কোনটি সহীহ, কোনটি যয়ীফ (দুর্বল সূত্র), কোনটি মওজু (জাল বা বানোয়াট)। তাই সব ধরনের হাদীস মোতাবেক ‘আমল করা ঠিক নয়। হাদীসসমূহ থেকে শুধু সহীহগুলি ‘আমলে নেয়া হবে। যদি সব ধরনের হাদীস ‘আমলে নেয়া হয় তাহলে শত শত বছর ধরে এ বিষয় গবেষণা ও তা চর্চার সার্থকতা কি?
(চার) দুর্বল বা জাল হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইসলামী শরীয়তে কোন আকীদাহ ও ‘আমল চালু করা যায় না। তবে কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কোন ‘আমলের ফাযীলাতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস গ্রহণ করা যায়।

(পাঁচ) কোন স্থান বা সময়ের ফযীলাত কুরআন বা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হলে তা দ্বারা সে স্থানে বা সে সময়ে ‘আমল (ইবাদাত-বন্দেগী) করার ফযীলাত প্রমাণিত হয়না। যদি ‘আমল করার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র শরয়ী দলীল থাকে তাহলেই ‘আমল করা যায়।

‘শবে বরাত’ এর অর্থ
‘শব’ একটি ফারসী শব্দ এর অর্থ রাত। ‘বারায়াত'কে যদি আরবী শব্দ ধরা হয় তাহলে এর অর্থ হচ্ছে সম্পর্কচ্ছেদ, পরোক্ষ অর্থে মুক্তি। যেমন কুরআন মাজীদে সূরা বারায়াত রয়েছে যা সূরা তাওবা নামেও পরিচিত। ইরশাদ হয়েছেঃ
অর্থঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা। (সূরা তাওবা, ১)
এখানে বারায়াতের অর্থ হল সম্পর্ক ছিন্ন করা। ‘বারায়াত’ মুক্তি অর্থেও আল-কুরআনে এসেছে যেমনঃ
অর্থঃ তোমাদের মধ্যকার কাফিররা কি তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ? না কি তোমাদের মুক্তির সনদ রয়েছে কিতাবসমূহে? (সূরা কামার, ৩৪)

আর ‘বারায়াত’ শব্দক যদি ফারসী শব্দ ধরা হয় তাহলে উহার অর্থ হবে সৌভাগ্য। অতএব শবে বরাত শব্দটার অর্থ দাড়ায় মুক্তির রজনী, সম্পর্ক ছিন্ন করার রজনী। অথবা সৌভাগ্যের রাত, যদি ‘বরাত’ শব্দটিকে ফার্সী শব্দ ধরা হয়।
শবে বরাত শব্দটাকে যদি আরবীতে তর্জমা করতে চান তাহলে বলতে হবে ‘লাইলাতুল বারায়াত’। এখানে বলে রাখা ভাল যে এমন অনেক শব্দ আছে যার রূপ বা উচ্চারণ আরবী ও ফারসী ভাষায় একই রকম, কিন্তু অর্থ ভিন্ন।
যেমন ‘গোলাম’ শব্দটি আরবী ও ফারসী উভয় ভাষায় একই রকম লেখা হয় এবং একইভাবে উচ্চারণ করা হয়। কিন্তু আরবীতে এর অর্থ হল কিশোর আর ফারসীতে এর অর্থ হল দাস।
সার কথা হল ‘বারায়াত’ শব্দটিকে আরবী শব্দ ধরা হলে উহার অর্থ সম্পর্কচ্ছেদ বা মুক্তি। আর ফারসী শব্দ ধরা হলে উহার অর্থ সৌভাগ্য।


৩| ২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৫

টম. বলেছেন: আল-কুরআনে শবে বরাতের কোন উল্লেখ নেই

শবে বরাত বলুন আর লাইলাতুল বারায়াত বলুন কোন আকৃতিতে শব্দটি কুরআন মাজীদে খুজে পাবেন না। সত্য কথাটাকে সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায় পবিত্র কুরআন মাজীদে শবে বরাতের কোন আলোচনা নেই। সরাসরি তো দূরের কথা আকার ইংগিতেও নেই।
অনেককে দেখা যায় শবে বরাতের গুরুত্ব আলোচনা করতে যেয়ে সূরা দুখানের প্রথম চারটি আয়াত পাঠ করেন। আয়াতসমূহ হলঃ

অর্থঃ হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমিতো এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় সি'রকৃত হয়। (সূরা দুখান, ১-৪)
শবে বরাত পন্থী আলেম উলামারা এখানে বরকতময় রাত বলতে ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন। আমি এখানে স্পষ্টভাবেই বলব যে, যারা এখানে বরকতময় রাতের অর্থ ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন তারা এমন বড় ভুল করেন যা আল্লাহর কালাম বিকৃত করার মত অপরাধ। কারণঃ
(এক) কুরআন মাজীদের এ আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যা সূরা আল-কদর দ্বারা করা হয়। সেই সূরায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
অর্থঃ আমি এই কুরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য মালাইকা (ফেরেশ্‌তাগণ) ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশে। এই শানি- ও নিরাপত্তা ফজর পর্যন- অব্যাহত থাকে। (সূরা কাদর, ১-৫)
অতএব বরকতময় রাত হল লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল বারায়াত নয়। সূরা দুখানের প্রথম সাত আয়াতের ব্যাখ্যা হল এই সূরা আল-কদর। আর এ ধরনের ব্যাখ্যা অর্থাৎ আল-কুরআনের এক আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য আয়াত দ্বারা করা হল সর্বোত্তম ব্যাখ্যা।
(দুই) সূরা দুখানের লাইলাতুল মুবারাকার অর্থ যদি শবে বরাত হয় তাহলে এ আয়াতের অর্থ দাড়ায় আল কুরআন শাবান মাসের শবে বরাতে নাযিল হয়েছে। অথচ আমরা সকলে জানি আল-কুরআন নাযিল হয়েছে রামাযান মাসের লাইলাতুল কদরে।
যেমন সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
অর্থঃ রামাযান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল-কুরআন।
(তিন) অধিকাংশ মুফাচ্ছিরে কিরামের মত হল উক্ত আয়াতে বরকতময় রাত বলতে লাইলাতুল কদরকেই বুঝানো হয়েছে। শুধু মাত্র তাবেয়ী ইকরামা রহ. এর একটা মত উল্লেখ করে বলা হয় যে, তিনি বলেছেন বরকতময় রাত বলতে শাবান মাসের পনের তারিখের রাতকেও বুঝানো যেতে পারে।
তিনি যদি এটা বলে থাকেন তাহলে এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। যা কুরআন ও হাদীসের বিরোধী হওয়ার কারণে পরিত্যাজ্য। এ বরকতময় রাতের দ্বারা উদ্দেশ্য যদি শবে বরাত হয় তাহলে শবে কদর অর্থ নেয়া চলবেনা।
(চার) উক্ত আয়াতে বরকতময় রাতের ব্যাখ্যা শবে বরাত করা হল তাফসীর বির-রায় (মনগড়া ব্যাখ্যা), আর বরকতময় রাতের ব্যাখ্যা লাইলাতুল কদর দ্বারা করা হল কুরআন ও হাদীস সম্মত তাফসীর। সকলেই জানেন কুরআন ও হাদীস সম্মত ব্যাখ্যার উপসি'তিতে মনগড়া ব্যাখ্যা (তাফসীর বির-রায়) গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই।
(পাচ) সূরা দুখানের ৪ নং আয়াত ও সূরা কদরের ৪ নং আয়াত মিলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বরকতময় রাত বলতে লাইলাতুল কদরকেই বুঝানো হয়েছে। সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাঃ), ইবনে কাসীর, কুরতুবী প্রমুখ মুফাচ্ছিরে কিরাম এ কথাই জোর দিয়ে বলেছেন এবং সূরা দুখানের ‘লাইলাতুম মুবারাকা’র অর্থ শবে বরাত নেয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। (তাফসীরে মায়ারেফুল কুরআন দ্রষ্টব্য)
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) তাঁর তাফসীরে বলেছেনঃ “কোন কোন আলেমের মতে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল মধ্য শাবানের রাত (শবে বরাত)। কিন' এটা একটা বাতিল ধারণা।”
অতএব এ আয়াতে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ এর অর্থ লাইলাতুল কদর। শাবান মাসের পনের তারিখের রাত নয়।
(ছয়) ইকরামা (রঃ) বরকতময় রজনীর যে ব্যাখ্যা শাবানের ১৫ তারিখ দ্বারা করেছেন তা ভুল হওয়া সত্ত্বেও প্রচার করতে হবে এমন কোন নিয়ম-কানুন নেই। বরং তা প্রত্যাখ্যান করাই হল হকের দাবী। তিনি যেমন ভুলের উর্ধ্বে নন, তেমনি যারা তার থেকে বর্ণনা করেছেন তারা ভুল শুনে থাকতে পারেন অথবা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে বানোয়াট বর্ণনা দেয়াও অসম্ভব নয়।
(সাত) শবে বরাতের গুরুত্ব বর্ণনায় সূরা দুখানের উক্ত আয়াত উল্লেখ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এ আকীদাহ বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, শবে বরাতে সৃষ্টিকূলের হায়াত-মাউত, রিয্‌ক-দৌলত সম্পর্কে সিদ্ধান- নেয়া হয় ও লিপিবদ্ধ করা হয়। আর শবে বরাত উদযাপনকারীদের শতকরা নিরানব্বই জনের বেশী এ ধারণাই পোষণ করেন। তারা এর উপর ভিত্তি করে লাইলাতুল কদরের চেয়ে ১৫ শাবানের রাতকে বেশী গুরুত্ব দেয়। অথচ কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ বিষয়গুলি লাইলাতুল কদরের সাথে সম্পর্কিত। তাই যারা শবে বরাতের গুরুত্ব বুঝাতে উক্ত আয়াত উপস্থাপন করেন তারা মানুষকে সঠিক ইসলামী আকীদাহ থেকে দূরে সরানোর কাজে লিপ্ত, যদিও মনে-প্রাণে তারা তা ইচ্ছা করেন না।
(আট) ইমাম আবু বকর আল জাসসাস তার আল-জামে লি আহকামিল কুরআন তাফসীর গ্রনে' লাইলালাতুন মুবারাকা দ্বারা মধ্য শাবানের রাত উদ্দেশ্য করা ঠিক নয় বলে বিস্তারিত আলোচনা করার পর বলেনঃ লাইলাতুল কদরের চারটি নাম রয়েছে, তা হলঃ লাইলাতুল কদর, লাইলাতু মুবারাকাহ, লাইলাতুল বারাআত ও লাইলাতুস সিক।
(আল জামে লি আহকামিল কুরআন, সূরা আদ-দুখানের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
লাইলাতুল বারাআত হল লাইলাতুল কদরের একটি নাম। শাবান মাসের পনের তারিখের রাতের নাম নয়
ইমাম শাওকানী (রহ.) তার তাফসীর ফতহুল কাদীরে একই কথাই লিখেছেন।
(তাফসীর ফাতহুল কাদীরঃ ইমাম শাওকানী দ্রষ্টব্য)
এ সকল বিষয় জেনে বুঝেও যারা ‘লাইলাতুম মুবারাকা’র অর্থ করবেন শবে বরাত, তারা সাধারণ মানুষদের গোমরাহ করা এবং আল্লাহর কালামের অপব্যাখ্যা করার দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না।

৪| ২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৯

টম. বলেছেন: শবে বরাত নামটি হাদীসের কোথাও উল্লেখ হয়নি

প্রশ্ন থেকে যায় হাদীসে কি লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত নেই? সত্যিই হাদীসের কোথাও আপনি শবে বরাত বা লাইলাতুল বারায়াত নামের কোন রাতের নাম খু্‌জে পাবেন না। যে সকল হাদীসে এ রাতের কথা বলা হয়েছে তার ভাষা হল ‘লাইলাতুন নিস্‌ফ মিন শাবান’ অর্থাৎ মধ্য শাবানের রাত্রি। শবে বরাত বা লাইলাতুল বারায়াত শব্দ আল-কুরআনে নেই, হাদীসে রাসূলেও নেই। এটা মানুষের বানানো একটা শব্দ। ভাবলে অবাক লাগে যে, একটি প্রথা ইসলামের নামে শত শত বছর ধরে পালন করা হচ্ছে অথচ এর আলোচনা আল-কুরআনে নেই। সহীহ হাদীসেও নেই। অথচ আপনি দেখতে পাবেন যে, সামান্য নফল ‘আমলের ব্যাপারেও হাদীসের কিতাবে এক একটি অধ্যায় বা শিরোনাম লেখা হয়েছে।
ফিকহের কিতাবে শবে বরাত
শুধু আল-কুরআনে কিংবা সহীহ হাদীসে নেই, বরং আপনি ফিক্‌হের নির্ভরযোগ্য কিতাবগুলো পড়ে দেখুন, কোথাও শবে বরাত নামের কিছু পাবেন না। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বীনি মাদ্রাসাগুলিতে ফিক্‌হের যে সিলেবাস রয়েছে যেমন মালাবুদ্দা মিনহু, নুরুল ইজাহ, কদুরী, কানযুদ্‌ দাকায়েক, শরহে বিকায়া ও হিদায়াহ খুলে দেখুন না! কোথাও শবে বরাত নামের কিছু পাওয়া যায় কিনা! অথচ আমাদের পূর্বসূরী ফিকাহবিদগণ ইসলামের অতি সামান্য বিষয়গুলো আলোচনা করতেও কোন ধরনের কার্পণ্যতা দেখাননি। তারা সূর্যগ্রহণ, চন্দ্রগ্রহণের সালাত সম্পর্কেও অধ্যায় রচনা করেছেন। অনুচ্ছেদ তৈরী করেছেন কবর যিয়ারতের মত বিষয়েরও। শবে বরাতের ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর সামান্যতম ইশারা থাকলেও ফিকাহবিদগণ এর আলোচনা মাসয়ালা-মাসায়েল অবশ্যই বর্ণনা করতেন।
অতএব এ রাতকে শবে বরাত বা লাইলাতুল বারায়াত অভিহিত করা মানুষের মনগড়া বানানো একটি বিদ‘আত যা কুরআন বা হাদীস দ্বারা সমর্থিত নয়।

৫| ২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪২

টম. বলেছেন: শবে বরাত সম্পর্কিত প্রচলিত আকীদাহ বিশ্বাস ও ‘আমল

শবে বরাত যারা পালন করেন তারা শবে বরাত সম্পর্কে যে সকল ধারণা পোষণ করেন ও উহাকে উপলক্ষ করে যে সকল কাজ করে থাকেন তার কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হল।
তারা বিশ্বাস করে যে, শবে বরাতে আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রাণীর এক বছরের খাওয়া দাওয়া বরাদ্দ করে থাকেন। এই বছর যারা মারা যাবে ও যারা জন্ম নিবে তাদের তালিকা তৈরী করা হয়। এ রাতে বান্দার পাপ ক্ষমা করা হয়। এ রাতে ইবাদাত-বন্দেগী করলে সৌভাগ্য অর্জিত হয়। এ রাতে কুরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ হতে প্রথম আকাশে নাযিল করা হয়েছে। এ রাতে গোসল করাকে সওয়াবের কাজ মনে করা হয়। মৃত ব্যক্তিদের রূহ এ রাতে দুনিয়ায় তাদের সাবেক গৃহে আসে। এ রাতে হালুয়া রুটি তৈরী করে নিজেরা খায় ও অন্যকে দেয়া হয়। বাড়ীতে বাড়ীতে মীলাদ পড়া হয়। আতশবাযী করা হয়। সরকারী- বেসরকারী ভবনে আলোক সজ্জা করা হয়। সরকারী ছুটি পালিত হয়। পরের দিন সিয়াম (রোযা) পালন করা হয় । কবরস্থানগুলো আগরবাতি ও মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করা হয়। লোকজন দলে দলে কবরস্থানে যায়। মাগরিবের পর থেকে মাসজিদগুলি লোকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে ও জুমু‘আয় মাসজিদে আসেনা তারাও এ রাতে মাসজিদে আসে। মাসজিদগুলিতে মাইক চালু করে ওয়াজ নাসীহাত করা হয়। শেষ রাতে সমবেত হয়ে দু‘আ-মুনাজাত করা হয়। বহু লোক এ রাতে ঘুমানোকে অন্যায় মনে করে থাকে। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে একশত রাকাত, হাজার রাকাত ইত্যাদি সালাত আদায় করা হয়।
লোকজন ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করে ‘হুজুর! শবে বরাতের সালাতের নিয়ম ও নিয়্যতটা একটু বলে দিন।’ ইমাম সাহেব আরবী ও বাংলায় নিয়্যাত বলে দেন। কিভাবে সালাত আদায় করবে, কোন্‌ রাকা‘আতে কোন্‌ সূরা তিলাওয়াত করবে তাও বলে দিতে কৃপণতা করেননা।
যদি এ রাতে ইমাম সাহেব বা মুয়াজ্জিন সাহেব মাসজিদে অনুপসি'ত থাকেন তাহলে তাদের চাকুরী যাওয়ার উপক্রম হয়।

৬| ২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৬

টম. বলেছেন: শবে বরাতের সম্পর্ক শুধু ‘আমলের সাথে নয়
শবে বরাত সম্পর্কে উপরোল্লিখিত কাজ ও আকীদাহসমূহ শবে বরাত উদযাপনকারীরা সকলেই করেন তা কিন' নয়। কেহ আছেন উল্লিখিত সকল কাজের সাথে একমত পোষণ করেন। আবার কেহ আতশবাযী, আলোক সজ্জা পছন্দ করেন না, কিন' কবরস্থানে যাওয়া, হালুয়া-রুটি, ইবাদাত-বন্দেগী করে থাকেন। আবার অনেক আছেন যারা এ রাতে শুধু সালাত আদায় করেন ও পরের দিন সিয়াম (রোযা) পালন করেন। এ ছাড়া অন্য কোন ‘আমল করেন না। আবার অঞ্চল ভেদে ‘আমলের পার্থক্য দেখা যায়।
কিন' একটি বিষয় হল, শবে বরাত সম্পর্কে যে সকল ধর্ম বিশ্বাস বা আকীদাহ পোষণ করা হয় তা কিন' কোন দুর্বল হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত হয় না। যেমন ভাগ্যলিপি ও বাজেট প্রনয়নের বিষয়টি। যারা বলেনঃ ‘‘আমলের ফাযীলাতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস গ্রহণ করা যায়, অতএব এর উপর ভিত্তি করে শবে বরাতে ‘আমল করা যায়, তাদের কাছে আমার প্রশ্নঃ তাহলে শবে বরাতের আকীদাহ সম্পর্কে কি দুর্বল হাদীসেরও দরকার নেই?
অথবা এ সকল প্রচলিত আকীদাহর ক্ষেত্রে যদি কোন দুর্বল হাদীস পাওয়াও যায় তাহলে তা দিয়ে কি আকীদাহগত কোন মাসয়ালা প্রমাণ করা যায়? আপনারা শবে বরাতের ‘আমলের পক্ষ সমর্থন করলেন কিন' আকীদাহর ব্যাপারে কি জবাব দিবেন?
কাজেই শবে বরাত শুধু ‘আমলের বিষয় নয়, আকীদাহরও বিষয়। তাই এ ব্যাপারে ইসলামের দা’য়ীদের সতর্ক হওয়ার দাওয়াত দিচ্ছি।
শবে বরাত সম্পর্কে এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তা‘আলা এ রাতে আল-কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, তিনি এ রাতে মানুষের হায়াত, রিয্‌ক ও ভাগ্যের ফায়সালা করে থাকেন, এ রাতে ইবাদাত-বন্দেগীতে লিপ্ত হলে আল্লাহ হায়াত ও রিয্‌ক বাড়িয়ে সৌভাগ্যশালী করেন ইত্যাদি আকীদা কি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি মিথ্যা আরোপ করার মত অন্যায় নয়?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ
অর্থঃ তার চেয়ে বড় যালিম আর কে যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে? (সূরা সাফ, ৭)

৭| ২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৮

টম. বলেছেন: শাবানের মধ্যরজনীর ফযীলত সম্পর্কিত হাদীসসমূহের পর্যালোচনা

১ নং হাদীস
ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কাছে আহমাদ ইবনে মুনী’ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে তিনি ইয়াযীদ ইবনে হারূন থেকে, তিনি হাজ্জাজ ইবনে আরতাহ থেকে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির থেকে, তিনি উরওয়াহ থেকে, তিনি উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেনঃ আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিছানায় পেলাম না তাই আমি তাকে খুঁজতে বের হলাম, ‘বাকী’ নামক কবরস্থানে তাকে পেলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি আশংকা করেছো যে আল্লাহ ও তার রাসূল তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করবেন?
আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি মনে করেছি আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন, অতঃপর কালব গোত্রের পালিত বকরীর পশমের পরিমানের চেয়েও অধিক পরিমান লোকদের ক্ষমা করেন।
ইমাম তিরমিযী বলেনঃ আয়িশা (রাঃ) এর এই হাদীস আমি হাজ্জাজের বর্ণিত সনদ (সূত্র) ছাড়া অন্য কোনভাবে চিনি না। আমি মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারী) বলতে শুনেছি যে, তিনি হাদীসটিকে দুর্বল বলতেন। তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনে কাসীর উরওয়াহ থেকে হাদীস শুনেননি। এবং মুহাম্মদ (ইমাম বুখারী) বলেছেনঃ হাজ্জাজ ইয়াহ্‌ইয়াহ ইবনে কাসীর থেকে শুনেননি।
এ হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম বুখারী ও ইমাম তিরমিযীর মন্তব্যে প্রমাণিত হয় যে, হাদীসটি দুটো দিক থেকে মুনকাতি অর্থাৎ উহার সূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন।
অপর দিকে এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হাজ্জাজ ইবনে আরতাহ মুহাদ্দিসীনদের নিকট দুর্বল বলে পরিচিত।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! যারা শবে বরাতের বেশী বেশী ফাযীলাত বয়ান করতে অভ্যস- তারা তিরমিযী বর্ণিত এ হাদীসটি খুব গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করেন অথচ যারা হাদীসটির অবস্থা সম্পর্কে ভাল জানেন তাদের এ মন-ব্যটুকু গ্রহণ করতে চাননা। এ হাদীসটি ‘আমলের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য হওয়ার জন্য ইমাম তিরমিযীর এ মন্তব্যটুকু কি যথেষ্ট নয়? যদি তর্কের খাতিরে এ হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে ধরে নেয়া হয় তাহলে কি প্রমাণিত হয়? আমরা যারা ঢাকঢোল পিটিয়ে মাসজিদে একত্র হয়ে যেভাবে শবে বরাত উদযাপন করি তাদের ‘আমলের সাথে এ হাদীসটির মিল কোথায়?
বরং এ হাদীসে দেখা গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছানা ছেড়ে চলে গেলেন, আর পাশে শায়িত আয়িশা (রাঃ) কে ডাকলেন না। ডাকলেন না অন্য কাউকে। তাকে জাগালেন না বা সালাত আদায় করতে বললেন না। অথচ আমরা দেখতে পাই যে, রামাযানের শেষ দশকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। বেশী পরিমাণে ইবাদাত-বন্দেগী করতে বলতেন। যদি ১৫ শাবানের রাতে কোন ইবাদাত করার ফাযীলাত থাকত তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন আয়িশাকে (রাঃ) বললেন না? কেন রামাযানের শেষ দশকের মত সকলকে জাগিয়ে দিলেন না, তিনি তো নেক কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে আমাদের সকলের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি তো কোন অলসতা বা কৃপণতা করেননি।

২ নং হাদীস

অর্থঃ আলা ইবনে হারিস থেকে বর্ণিত, আয়িশা (রাঃ) বলেনঃ এক রাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। সিজদাহ এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ধারণা করলাম তিনি ইনে-কাল করেছেন। আমি এ অবস্থা দেখে দাড়িয়ে তার বৃদ্ধাঙ্গুল ধরে নাড়া দিলাম, আঙ্গুলটি নড়ে উঠল। আমি চলে এলাম। সালাত শেষ করে তিনি বললেনঃ হে আয়িশা অথবা বললেন হে হুমায়রা! তুমি কি মনে করেছ আল্লাহর নবী তোমার সাথে বিশ্বাস ভংগ করেছেন? আমি বললামঃ আল্লাহর কসম হে রাসূল! আমি এমন ধারণা করিনি। বরং আমি ধারণা করেছি আপনি না জানি ইন্তেকাল করলেন! অতঃপর তিনি বললেনঃ তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললামঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এটা মধ্য শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তা’আলা তার বান্দাদের প্রতি মনোনিবেশ করেন। ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং রাহমাত প্রার্থনাকারীদের রহম করেন। আর হিংসুকদেরকে তাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দেন। (বাইহাকী তার শুয়াবুল ঈমান কিতাবে বর্ণনা করেছেন)
হাদীসটি মুরসাল। সহীহ বা বিশুদ্ধ নয় । কেননা বর্ননাকারী ‘আলা' আয়িশা (রাঃ) থেকে শুনেননি।

৮| ২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৭

টম. বলেছেন: ৩ নং হাদীস

অর্থঃ আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে আর দিবসে সিয়াম পালন করবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সূর্যাসে-র পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেনঃ আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিয্‌ক প্রার্থনাকারী আমি রিয্‌ক দান করব। আছে কি কোন বিপদে নিপতিত ব্যক্তি আমি তাকে সুস্থ্যতা দান করব। এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ ও বাইহাকী)
প্রথমতঃ এ হাদীসটি দুর্বল। কেননা এ হাদীসের সনদে (সূত্রে) ইবনে আবি সাবুরাহ নামে এক ব্যক্তি আছেন, যিনি অধিকাংশ হাদীস বিশারদের নিকট হাদীস জালকারী হিসাবে পরিচিত। এ যুগের বিখ্যাত মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আল-বানী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে একেবারেই দুর্বল।
দ্বিতীয়তঃ অপর একটি সহীহ হাদীসের বিরোধী হওয়ার কারণে এ হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয়। সে সহীহ হাদীসটি হাদীসে নুযুল নামে পরিচিত, যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাদের কিতাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হলঃ
অর্থঃ আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমাদের রব আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন ও বলতে থাকেনঃ কে আছ আমার কাছে দু‘আ করবে আমি কবুল করব। কে আছ আমার কাছে চাইবে আমি দান করব। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারী ও মুসলিম)
আর উল্লিখিত ৩ নং হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তা‘আলা মধ্য শাবানের রাতে নিকটতম আকাশে আসেন ও বান্দাদের দু‘আ কবুলের ঘোষণা দিতে থাকেন। কিন' বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত এই সহীহ হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের শেষের দিকে নিকটতম আকাশে অবতরণ করে দু‘আ কবুলের ঘোষণা দিতে থাকেন। আর এ হাদীসটি সর্বমোট ৩০ জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন এবং বুখারী এবং মুসলিম ও সুনানের প্রায় সকল কিতাবে এসেছে। তাই হাদীসটি প্রসিদ্ধ। অতএব এই মশহুর হাদীসের বিরোধী হওয়ার কারণে ৩ নং হাদীসটি পরিত্যাজ্য হবে।
কেহ বলতে পারেন যে, এই দু হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ ৩ নং হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন মধ্য শাবানের রাতের শুরু থেকে। আর এ হাদীসের বক্তব্য হল প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন। অতএব দু হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই যে কারণে ৩ নং হাদীসকে পরিত্যাগ করতে হবে।
আমি বলব আসলেই এ দু হাদীসের মধ্যে বিরোধ আছে। কেননা আবূ হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত বুখারী ও মুসলিমের হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের শেষ অংশে দুনিয়ার আকাশে আসেন। আর প্রতি রাতের মধ্যে শাবান মাসের পনের তারিখের রাতও অন-র্ভুক্ত। অতএব এ হাদীস মতে অন্যান্য রাতের মত শাবান মাসের পনের তারিখের রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে আসেন। কিন্তু ৩ নং হাদীসের বক্তব্য হল শাবান মাসের পনের তারিখের রাতের প্রথম প্রহর থেকে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন।

৪ নং হাদীস

অর্থঃ উসমান ইবনে আবিল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেয়ঃআছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কেহ কিছু চাইবার আমি তাকে তা দিয়ে দিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ মুশরিক ও ব্যভিচারী বাদে সকল প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হয়। (বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান)
বিখ্যাত মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আল-বানী (রহঃ) হাদীসটিকে তার সংকলন ‘যয়ীফ আল-জামে’ নামক কিতাবের ৬৫২ নং ক্রমিকে দুর্বল প্রমাণ করেছেন।
শবে বরাত সম্পর্কে এ ছাড়া বর্ণিত অন্যান্য সকল হাদীস সম্পর্কে ইবনে রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেনঃ এ মর্মে বর্ণিত অন্য সকল হাদীসই দুর্বল।

৯| ২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১০

টম. বলেছেন: শাবানের মধ্যরজনীর সম্পর্কিত হাদীসসমূহ পর্যালোচনার সারকথা
শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীসগুলো উল্লেখ করা হল। আমি মনে করি এ সম্পর্কে যত হাদীস আছে তা এখানে এসেছে। বাকী যা আছে সেগুলোর অর্থ বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত। এ সকল হাদীসের দিকে লক্ষ্য করে আমরা কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবেই বুঝে নিতে পারি।
(১) এ সকল হাদীসের কোন একটি দ্বারাও প্রমাণিত হয়নি যে, ১৫ শাবানের রাতে আল্লাহ তা’আলা আগামী এক বছরে যারা ইনে-কাল করবে, যারা জন্ম গ্রহণ করবে, কে কি খাবে সেই ব্যাপারে ফায়সালা করেন। যদি থাকেও তাহলে তা আল-কুরআনের বক্তব্যের বিরোধী হওয়ায় তা গ্রহণ করা যাবে না। কারণ আল-কুরআনের স্পষ্ট কথা হল এ বিষয়গুলির ফায়সালা হয় লাইলাতুল কদরে।
(২) এ সকল হাদীসের কোথাও বলা হয়নি যে, এ রাতে মৃত ব্যক্তিদের আত্মা তাদের গৃহে আসে। বরং এটি একটি প্রচলিত বানোয়াট কথা। মৃত ব্যক্তির আত্মা কোন কোন সময় গৃহে ফিরে আসার ধারণাটা হিন্দুদের ধর্ম-বিশ্বাস।
(৩) এ সকল হাদীসের কোথাও এ কথা নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম এ রাতে গোসল করেছেন, মাসজিদে উপসি'ত হয়ে নফল সালাত আদায় করেছেন, যিক্‌র-আযকার করেছেন, কুরআন তিলাওয়াত করেছেন, সারারাত জাগ্রত থেকেছেন, ওয়াজ নাসীহাত করেছেন কিংবা অন্যদের এ রাতে ইবাদাত বন্দেগীতে উৎসাহিত করেছেন অথবা শেষ রাতে জামাতের সাথে দু’আ-মুনাজাত করেছেন।
(৪) এ হাদীসসমূহের কোথাও এ কথা নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এ রাতের সাহরী খেয়ে পরের দিন সিয়াম (রোযা) পালন করেছেন।
(৫) আলোচিত হাদীসসমূহে কোথাও এ কথা নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে কিরাম এ রাতে হালুয়া-রুটি বা ভাল খানা তৈরী করে বিলিয়েছেন, বাড়ীতে বাড়ীতে যেয়ে মীলাদ পড়েছেন।
(৬) এ সকল হাদীসের কোথাও নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে' কিরাম (রাঃ) এ রাতে দলে দলে কবরস'ানে গিয়ে কবর যিয়ারত করেছেন কিংবা কবরে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন।
এমনকি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ বাদ দিলে খুলাফায়ে রাশেদীনের ত্রিশ বছরের ইতিহাসেও কি এর কোন একটা ‘আমল পাওয়া যাবে?
যদি না যায় তাহলে শবে বরাত সম্পর্কিত এ সকল ‘আমল ও আকীদা কি বিদ’আত নয়? এ বিদ’আত সম্পর্কে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করার দায়িত্ব কারা পালন করবেন? এ দায়িত্ব পালন করতে হবে আলেম-উলামাদের, দ্বীন প্রচারক, মাসজিদের ইমাম ও খতীবদের। যে সকল বিষয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের ইশারা নেই সে সকল ‘আমল থেকে সাধারণ মুসলিম সমাজকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করতে হবে নবী-রাসূলগণের উত্তরসূরীদের।

১০| ২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১০

টম. বলেছেন: শাবানের মধ্যরজনীর সম্পর্কিত হাদীসসমূহ পর্যালোচনার সারকথা
শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীসগুলো উল্লেখ করা হল। আমি মনে করি এ সম্পর্কে যত হাদীস আছে তা এখানে এসেছে। বাকী যা আছে সেগুলোর অর্থ বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত। এ সকল হাদীসের দিকে লক্ষ্য করে আমরা কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবেই বুঝে নিতে পারি।
(১) এ সকল হাদীসের কোন একটি দ্বারাও প্রমাণিত হয়নি যে, ১৫ শাবানের রাতে আল্লাহ তা’আলা আগামী এক বছরে যারা ইনে-কাল করবে, যারা জন্ম গ্রহণ করবে, কে কি খাবে সেই ব্যাপারে ফায়সালা করেন। যদি থাকেও তাহলে তা আল-কুরআনের বক্তব্যের বিরোধী হওয়ায় তা গ্রহণ করা যাবে না। কারণ আল-কুরআনের স্পষ্ট কথা হল এ বিষয়গুলির ফায়সালা হয় লাইলাতুল কদরে।
(২) এ সকল হাদীসের কোথাও বলা হয়নি যে, এ রাতে মৃত ব্যক্তিদের আত্মা তাদের গৃহে আসে। বরং এটি একটি প্রচলিত বানোয়াট কথা। মৃত ব্যক্তির আত্মা কোন কোন সময় গৃহে ফিরে আসার ধারণাটা হিন্দুদের ধর্ম-বিশ্বাস।
(৩) এ সকল হাদীসের কোথাও এ কথা নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম এ রাতে গোসল করেছেন, মাসজিদে উপসি'ত হয়ে নফল সালাত আদায় করেছেন, যিক্‌র-আযকার করেছেন, কুরআন তিলাওয়াত করেছেন, সারারাত জাগ্রত থেকেছেন, ওয়াজ নাসীহাত করেছেন কিংবা অন্যদের এ রাতে ইবাদাত বন্দেগীতে উৎসাহিত করেছেন অথবা শেষ রাতে জামাতের সাথে দু’আ-মুনাজাত করেছেন।
(৪) এ হাদীসসমূহের কোথাও এ কথা নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এ রাতের সাহরী খেয়ে পরের দিন সিয়াম (রোযা) পালন করেছেন।
(৫) আলোচিত হাদীসসমূহে কোথাও এ কথা নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে কিরাম এ রাতে হালুয়া-রুটি বা ভাল খানা তৈরী করে বিলিয়েছেন, বাড়ীতে বাড়ীতে যেয়ে মীলাদ পড়েছেন।
(৬) এ সকল হাদীসের কোথাও নেই যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা সাহাবায়ে' কিরাম (রাঃ) এ রাতে দলে দলে কবরস্থানে গিয়ে কবর যিয়ারত করেছেন কিংবা কবরে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন।
এমনকি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ বাদ দিলে খুলাফায়ে রাশেদীনের ত্রিশ বছরের ইতিহাসেও কি এর কোন একটা ‘আমল পাওয়া যাবে?
যদি না যায় তাহলে শবে বরাত সম্পর্কিত এ সকল ‘আমল ও আকীদা কি বিদ’আত নয়? এ বিদ’আত সম্পর্কে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করার দায়িত্ব কারা পালন করবেন? এ দায়িত্ব পালন করতে হবে আলেম-উলামাদের, দ্বীন প্রচারক, মাসজিদের ইমাম ও খতীবদের। যে সকল বিষয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের ইশারা নেই সে সকল ‘আমল থেকে সাধারণ মুসলিম সমাজকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করতে হবে নবী-রাসূলগণের উত্তরসূরীদের।

১১| ২০ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:২১

টম. বলেছেন: শবে বরাত সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর অবস্থান
শবে বরাত উদযাপন করা ও না করার ক্ষেত্রে বিশ্বের মুসলিমদেরকে চার ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমতঃ যারা কোনভাবেই শবে বরাত উদযাপন করেন না ও উদযাপন করাকে ইসলাম সম্মত মনে করেন না।
দ্বিতীয়তঃ যারা সম্মিলিতভাবে শবে বরাত উদযাপন করেন না ঠিকই, কিন' এ রাতে ব্যক্তিগতভাবে চুপে চুপে ‘আমল করা ফাযীলাতপূর্ণ মনে করেন, দিবসে সিয়াম পালন করেন ও রাত্রি জাগরণ করেন।
তৃতীয়তঃ যারা ১৫ শাবানের রাতে মাসজিদে জমায়েত হয়ে ইবাদাত-বন্দেগী করেন, কবর যিয়ারত করেন, মাসজিদে ওয়াজ-নাসীহাতে শরীক হন, পরের দিন সিয়াম পালন করেন, এই রাতে হায়াত-মউত, রিয্‌ক-দৌলত সম্পর্কে আল্লাহ সিদ্ধান- নেন বলে বিশ্বাস করেন। সারা রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী করেন। তবে আতশ-বাযি, মোমবাতি জ্বালানো ও আলোকসজ্জা ইত্যাদিকে নাজায়েয বলে জানেন।
চতুর্থতঃ যারা ১৫ শাবানের রাতে আতশবাজি, আলোক সজ্জা ও আমোদ ফুর্তি করেন ও সময় সুযোগ মত ইবাদাত-বন্দেগীও করেন।
এ চার প্রকার লোকদের মধ্যে প্রথম প্রকারের মানুষের সংখ্যাই বেশী। আমি কিন' এ কথা বলতে চাচ্ছিনা যে, অধিকাংশ মুসলিম শবে বরাত পালন করেন না বলে তা করা ঠিক নয়। বরং আমি বলতে চাচ্ছি যে, শবে বরাত সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহর এ বিভক্তি শবে বরাত উদযাপন বিদ‘আত হওয়ার একটা স্পষ্ট আলামত। এ ক্ষেত্রে আমি বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ) এর কিতাব ‘শির্‌ক ও বিদয়াত’ থেকে একটি উদ্ধৃতি দেয়া যথার্থ মনে করছি। তিনি লিখেছেনঃ “আল্লাহর দ্বীন ও শরীয়তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো বিশ্বব্যাপী সম-আদর্শতা। এই সমাদর্শ ও স্বাদৃশ্যতা যেমন কাল ও সময়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় তেমনি সন্তানের ক্ষেত্রেও। আল্লাহ হচ্ছেন রাব্বুল মাশরিকাইন ওয়া রাব্বুল মাগরিবাইন; পূর্ব-পশ্চিম সকল কিছুর রব ও মালিক। তিনি স্থান ও কালের সীমা ও বাধার উর্দ্ধে। তাই তাঁর শরীয়াত ও তাঁর দ্বীনে এক অত্যাশ্চর্য সমতা ও সমাদর্শ বিদ্যমান। তাঁর আখিরী শরীয়াত ও আখিরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শে এসে যা হয়েছে তাকমীল -পূর্ণতা প্রদীপ্ত সূর্যের মতই সকলের জন্য সমান এবং আকাশ ও মাটির মত সকলের জন্য সম উপযোগীতাপূর্ণ। প্রথম যুগে এর যে রূপ ও আকৃতি ছিল হিজরী পনের শতকেও উহার রূপ ও আকৃতি সেই একই। প্রাচ্যবাসীদের জন্য এটি যেমন ও যতটুকু, ঠিক তেমন ও ততটুকুই প্রতীচ্যের জন্য। যে সমস- নীতি ও নির্দেশ, ইবাদাতের যে রূপ ও আকৃতি, আল্লাহর নৈকট্য লাভের যে সমস্ত সুনির্ধারিত পন্থা ও উপায় আরবদের জন্য ছিল ঠিক তদ্রূপ আছে তা ভারতবাসীর জন্যও। তাই দুনিয়ার যে কোন অংশের একজন মুসলিম অধিবাসী অপর কোন অংশে যদি চলে যায় তাহলে ইসলামী ফরয আদায় এবং ইবাদাত-বন্দেগী করার ক্ষেত্রে তার কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় না। তার জন্য কোন স্থানীয় গাইডের প্রয়োজন পড়ে না। তিনি যদি আলিম হন, শরীয়ত সম্পর্কে বিজ্ঞ হন তাহলে কেবল মুক্তাদীই নয় অধিকন' যে কোন স্থানে তিনি ইমামও হতে পারেন।
বিদ‘আতের অবস্থা এর বিপরীত। এতে সমদৃশ্যতা ও একত্বতা নেই। স্থান ও কালের প্রভাব এতে পরিস্ফুট থাকে। গোটা মুসলিম বিশ্বে এর একটিমাত্র রূপে প্রচলনও হয়ে ওঠে না।”
সকল ধরনের বিদ‘আতের ক্ষেত্রে উপরোক্ত কথা প্রযোজ্য। শবে বরাত এমনি একটা বিষয় যা আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের লোকেরা মহা ধুমধামে উদযাপন করছি, কিন' অন্য এলাকার মুসলিমদের কাছে এ সম্পর্কে কোন খবর নেই। কি আশ্চর্য! এমন এক মহা-নিয়ামাত যা মক্কা-মদীনার লোকেরা পেলনা, অন্যান্য আরবরা পেলনা, আফ্রিকানরা পেলনা, ইন্দোনেশীয়, মালয়েশীয়রা পেলনা, ইউরোপ-আমেরিকা-অষ্ট্রেলিয়া মহাদেশের লোকেরা পেলনা; অথচ ভাগ্যক্রমে সৌভাগ্যের মহান রাত পেয়ে গেলাম আমরা উপ-মহাদেশের কিছু লোকেরা ও শিয়া মতাবলম্বীরা!

১২| ২০ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৮:৩৫

তৌহিদ আল-বিরুনী বলেছেন: এসকল ওহাবী গবেষনা নিবন্ধ বহু আগেই বর্জ্য বস্তুতে পরিনত হয়েছে। চোখ কান খোলা থাকলে খুব সহজেই আল্লাহতা'লা এ সকল বাতিল বর্জ্যের অনিষ্ট হতে নিষ্কৃতি পাওয়ার তওফিক প্রদান করেন। যে সকল কিতাব ও প্রসিদ্ধ আলেমগণ শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে আমাদের নিশ্চিত করেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম নিম্নে উল্লেখ করলামঃ

১। পীরে দস্তগীর, মাহবুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী গাউসে সামদানী সুলতানুল আরেফিন হজরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) তার গুনিয়াতুত তালেবিন কেতাবে শবে বরাতের ফজিলতের কথা নিশ্চিত করেছ্নে।

২। প্রসিদ্ধ আলেম শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলবী (রঃ) তার অবিশ্মরনীয় কিতাবে মাদারেজুন নবুওয়্যাত -এ বিস্তৃত আলোচনার মাধ্যমে শবে বরাতের ফজিলতের কথা নিশ্চিত করেছ্নে।

৩। কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী (রঃ) তার অক্ষয় কীর্তি ৪০০ বছরের অধিক কাল হতে সর্বমহলে সমাদৃত তাফসীর কিতাব ' তাফসীরে মাজহারী' -এ শবে বরাতের ফজিলতের কথা নিশ্চিত করেছ্নে।


আপনার উল্লেখিত ওহাবী মতাদর্শী ব্যক্তিবর্গ শাইখ আব্দুল আজীজ ইবনে বায অথবা ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
এমএম (ঢাকা), লিসান্স, এমএ, এম-ফিল, পিএইচ ডি (মদীনা)
সহকারী অধ্যাপক, আল-ফিকহ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ --- উপরোক্ত বুজুর্গগনের সামনে কথা বলার মত কোন যোগ্যতাই রাখেন না। এরা নিজেরাও পথভ্রষ্ট আর অন্যকেও পথভ্রষ্ট করতে চায়। এখনও সময় আছে চোখ কান খুলুন আল্লাহতায়লার কাছে বিনয়ের সাথে সঙ্গোপনে কান্নাকাটি করুন আর প্রার্থণা করুন ,

اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ", صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। "

১৩| ২১ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:৪৯

টম. বলেছেন: তৌহিদ আল-বিরুনী ভাই আপনি যে কথা বলেছেন তার কোন কোরআন ও সহি হাদিসের আলোকে কোন প্রমাণ আপনি দেখতে পারেন নি ।

এসকল ওহাবী গবেষনা নিবন্ধ বহু আগেই বর্জ্য বস্তুতে পরিনত হয়েছে।

আপনার এ কথার প্রমান দেখাতে পারেন নি । সৌদি আরবের মত দেশে শবে বরাত পালন করা হয় না । সৌদি আরবে কি শাইখ আব্দুল আজীজ ইবনে বায অথবা ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
এমএম (ঢাকা), লিসান্স, এমএ, এম-ফিল, পিএইচ ডি (মদীনা)
সহকারী অধ্যাপক, আল-ফিকহ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ
এর চেয়ে ভাল আলেম নাই । তার কেন শবে বরাত পালন করে না । আপনি কোন প্রমান না দিয়ে ব্যক্তির উদাহরন তুলে কি প্রমাণ করতে চান ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.