| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফেসবুকে অনেকের সঙ্গেই পরিচয় হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের কয়েকজন এর সঙ্গেও কিছু চেনাজানা হয়েছিল। এমনি একজনের সঙ্গে একদিন আলাপচারিতায় বলেছিলাম, জামায়াতের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কিছু ভেবেছেন?
বাঁকা হাসি হেসে বলেছিলেন, কি যে বল? ওদের কোন খবর আছে না কি?
আমি বলেছিলাম, ওদের যতটা চিনি, ওরা আজ হোক কাল হোক একটা সমাবেশ করবেই।
কোনো সমাবেশ এর ডাক দিয়েছে না কি?
দেয় নি। তবে কাজটা বায়তুল মোকাররামে করবে এ ব্যাপারে সিওর থাকেন।
বলাই বাহুল্য, উনি সেদিন আমার কথা খুব একটা কানে তোলেন নি। গণজাগরণ মঞ্চের প্রথম দিকের কথা। উচ্ছাস তখন তুঙ্গে। দৃঢ় বিশ্বাস, জামায়াত রণে ভঙ্গ দিয়েছে। আমার তা মনে হয় নি। মনে মনে যা করছিলাম, তা হচ্ছে ওদের স্ট্র্যাটেজি বোঝার চেষ্টা। কিছুটা টের পাচ্ছিলাম ফেসবুকে। বিভিন্ন পোষ্টে ধর্মকে ঢোকানোর চেষ্টা। ‘আল্লাহ’ ‘নবী’ ‘কোরআন’ এসবের মহিমা বর্ণনা। জামায়াত যে এসব প্রতিষ্ঠার লড়াই করছে, এসব বোঝানোর চেষ্টা। স্ট্র্যাটেজিটা কাজে দিল না। জামায়াত যে ধর্ম ব্যবহার করে রাজনীতি করছে এই ধারণা তখন সবার ভেতর বদ্ধমুল হয়ে গেছে। ফলে খোঁজ শুরু হল দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজির।
দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজি হিসেবে চেষ্টা করা হল ‘গাঁজাখোর’ আর ‘পতিতা’ এই দুই গুজবের। কাজে দিল না। বরং উলটো আরও দলে দলে লোক জড়ো হতে লাগলো। সকল বয়সী নারী পুরুষ যোগ দিতে লাগলো। চেস্টা অব্যাহত থাকল মিথ্যা পোস্ট দেয়ার। ‘শাহবাগে কি হচ্ছে’ এমন শিরোনামে কিছু ছবি। খুব সযত্নে ছবির ভেতর কিছু পর্ণ ছবি ঢুকিয়ে দেয়া। এবারেও তেমন সাফল্য আসলো না। কারন ব্লগার রা এসব মিথ্যা পোস্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গে সবার সঙ্গে ব্যাপারটা শেয়ার করছিল। ফলে মুহূর্তেই সবাই জেনে যাচ্ছিল এই কাজ ব্লগার রা করছে না।
এবার এলো তৃতীয় স্ট্র্যাটেজি। ‘দেখুন এরা কি বলছে’ এমন শিরোনাম দিয়ে কিছু আজে বাজে লেখা, নবী সম্পর্কে কটুক্তি। কেউ ভাবে নি, ফেসবুক কমিউনিটি ছাড়াও বিশাল এক গ্রুপ আছে যাদের জন্য সত্য জানা জরুরী না। তাদের চাই একটা গুজব। বুদ্ধি যোগাতে এমন সময় বন্ধু হিসেবে পাশে দাঁড়ালেন আমার দেশ এর সম্পাদক। তিনি বিভিন্ন লেখালেখির ভিতর দিয়ে ব্লগার সম্পর্কে দুটি ধারণা তৈরির চেস্টা করলেন। ‘এরা নাস্তিক’ শুধু নাস্তিক তাও মেনে নেয়া যায় কিন্তু এরা ইসলাম বিদ্বেষী। মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে এরা কটুক্তি করেছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হল কিছু লিঙ্ক, যেখানে চাপ দিলে একটি পেজ খুলবে আর সেখানে লেখা থাকবে মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে প্রচুর কটুক্তি।
কাজে দিল। ব্লগার রা আপ্রাণ চেষ্টা করলেন বোঝানোর এই কাজ তাদের না। কটুক্তি গুলো যে পেজ এ আছে সেগুলো তৈরি হয়েছে ব্লগার রাজীবের মৃত্যুর পরে। বিভিন্ন প্রমান তারা পেশ করলেন। বোঝানোর চেষ্টা করলেন, এগুলো কারসাজি। তাদের আন্দোলন ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু তারা যাদের বোঝাতে ব্যস্ত ছিলেন তাদের বোঝানোর কোন প্রয়োজন ই ছিল না। তারা জানেন এইসব ব্লগারদের কাজ না। গুজবটা যাদের জন্য ছিল তাদের কাছে সযত্নে পৌঁছে দেয়া হল।
এই ফাঁকে আরও একটা কাজ সেরে ফেললেন আমার দেশ সম্পাদক। বিতর্কিত আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্লগারদের রাগিয়ে দিলেন। মঞ্চ থেকে বিষেদ্গার শুরু হল। এটাই তিনি চাইছিলেন। তার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ব্লগার রা মানবতা বিরোধী দের ছেড়ে তাঁর এবং তাঁর পত্রিকাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। পত্রিকার সারকুলেশান বেড়ে গেল, ‘দেখি তো কি লিখেছে ওদের সম্পর্কে?’ উৎসাহিত হয়ে তিনিও হুঙ্কার বাড়িয়ে দিলেন। মনে মনে চাইছিলেন, তাঁর নামে কেস হউক। সেটাও হল। এবার তিনি বাক স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। আর গ্রেফতার হলে তো কথাই নেই। এবার বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে আসার সুযোগ পেয়ে যাবেন। এখন পর্যন্ত তাঁর স্ট্র্যাটেজি খুব ভালো কাজে দিচ্ছে।
গুজব স্ট্র্যাটেজি তাঁর খেল দেখালো শুক্রবার জুম্মার নামাজের পরে। আদৌ কোনদিন ফেসবুক ব্যবহার করেনি এমন অনেকেই রাস্তায় নেমে পড়ল ‘মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে কটুক্তি কারীর’ বিরুদ্ধে মিছিল করতে। এরা অনেকে জানেও না কোথায়, কোন পেজে কি লেখা হয়েছে, কিংবা কবে লেখা হয়েছে। অন্যের নামে পেজ খুলে সেখানে যে কেউ যা খুশী লিখতে পারে। জামায়াত সুচারুভাবে নিজেদের কর্মী ছড়িয়ে দিল যেন দেশের অনেক জায়গা থেকে একসঙ্গে বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলের দৈর্ঘ্য দেখে সবাই তাদের শক্তি বুঝতে পারে। ফলে প্রতিটি মিছিল ই ছিল বিশালাকার।
এই যুদ্ধে স্ট্র্যাটেজি বোঝা খুব জরুরী। জানি না শাহবাগের উদ্যোক্তা রা পরবর্তী স্ট্র্যাটেজি কি হতে পারে ভেবে এগোচ্ছেন না আত্ম প্রসাদে ভুগছেন ‘তরুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠেছে, আমাদের আর কেউ রুখতে পারবে না’। ফেসবুকে অনেকেই আন্দাজ করছেন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে একদল লোক হঠাৎ একদিন কোরআন পোড়াবে। আর দায় চাপবে শাহবাগের ওপর। এবারো ব্লগার রা যা করছেন, ফেসবুকে সতর্ক বাণী দিচ্ছেন। কিন্তু সেই তথ্য কি দেশবাসীর কাছে যাচ্ছে? এই তথ্য গুলো কিংবা স্ট্র্যাটেজি গুলো পুরো দেশবাসীকে জানানো খুবই জরুরী। প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া যেভাবে সম্ভব। অন্যথায় নিজেরাই ধর্মকে অসম্মান করবে, দায় চাপাবে ব্লগারদের ঘাড়ে। এরপরে মুসল্লির ছদ্মবেশে আবার হামলা হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১৮
হাঁড় = ঘাঁড় বলেছেন: অত্যন্ত সুন্দর একটি লেখা।
নির্বাচিততে নেয়া হোক।
এই ধরনের বিশ্লেষণগুলো প্রয়োজন।
ডিভাইড এন্ড রুল পদ্ধতি কাজ করেছিল একবার।
ওরা থামবে না, একের পর এক পদ্ধতি নিতেই থাকবে।