নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার কিছু হিজিবিজি লেখা

লেখা

ভয়ংকর ডা:

লেখার সখ

ভয়ংকর ডা: › বিস্তারিত পোস্টঃ

এর পরে কি?

০১ লা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:২৫



এই মুহূর্তের সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন হচ্ছে, ‘এর পরে কি?’ দেশের কি অবস্থা হবে কিংবা কি অবস্থা করার চেষ্টা করা হবে? ‘দেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে’ এমনটা প্রমাণ করে যদি দেশ এবং বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। যদি তৃতীয় কোন শক্তিকে ক্ষমতায় আনা যায়। আর অন্য দিকে সরকার সেই অবস্থাকে কিভাবে মোকাবেলা করবে, তাঁর পরীক্ষা দিতে হবে। আজকে ছোট খাট একটা রিহারসেল হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত ৪৩ টা লাস জোগাড় হয়েছে জামায়াত শিবিরের খাতায়। সত্যিকারের তথ্যে হয়তো আরও কিছু যোগ হবে। আহতদের ভিতর হয়তো কিছু লাস হয়ে যাবে। এই দিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে মানবিক আবেদন জানাবে। আর সেটা নিজেরা বললে একটু বিচ্ছিরী শোনাবে, তাই হয়তো বিরোধী দলকে দিয়েই বলাবে।

তবে নিজেদের কর্মীদের জন্য বলা হবে এরা শহীদ হয়েছেন। দলীয় নেতা কর্মীদের আরও বেশী করে শহীদ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। আরও দুটো হরতাল দেয়া হল। আরও কিছু লাশ চাই। ধর্মীয় ভাষায় এদের ‘শহীদ’ উপাধিও দেয়া হবে। আর যারা এখনও বেঁচে আছেন তাঁদের ও ডাক দেয়া হবে, গাজী না হয়ে শহীদ হওয়ার জন্য। এরপরে চেষ্টা হবে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ব্যাপারটা করুন ভাবে উপস্থাপনের। বিরোধী দল সাহায্য করবে বলেই মনে হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়। দেশী মিডিয়া কাভারেজ এ। প্রায় পুরো ঘটনাই সরাসরি দেখতে পাচ্ছে দেশবাসী। কিভাবে ওরা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আক্রমণ করছে, কেন পুলিশ আকশানে যাচ্ছে সবই দেখতে পাচ্ছে। আর মতামত যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে।

৭১ এ একটা বিশেষ সুবিধা ছিল, যা খুশী বলে বুঝিয়ে রাখা যাচ্ছিল। কোন প্রচার মাধ্যম নেই, কি হচ্ছে বোঝার উপায় নেই। ভরসা কেবল রেডিও, তাও বাংলাদেশের পক্ষে আছে এমনদের সংখ্যা কম। রাজাকার বাহিনী বোঝানোর দ্বায়িত্ব নিল, ভারতের প্ররোচনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, অর্থাৎ একদিকে বিধর্মী আর অন্য দিকে মুসলমান দেশ। অতএব এটা একটা জিহাদ। এবং বিধর্মী দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মারা গেলে শহীদ। এবারও তাই সেই ফর্মুলার রিপিট টেলিকাস্ট করার প্ল্যান নিল। ব্লগার দের নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেষী বলা হল। তাই এই যুদ্ধও একটি জিহাদ। একাত্তরে করা কিছু অপরাধের জন্য যে তাঁদের নেতারা শাস্তি পাচ্ছে, এমন সব বক্তব্যের ধারে কাছে দিয়েও তাঁরা যাচ্ছেন না। একবারের জন্যও বলছেন না একাত্তরে তাঁদের ভুমিকা আসলে কি ছিল।

যুদ্ধ টা জিহাদ প্রমাণের জন্য আরেকটা ফন্দি আটলেন তাঁরা। হিন্দুদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে, লুটপাট শুরু করলেন। এতে দুটো সুবিধা। নিজেদের কর্মীদের বোঝালেন, এরা মালাউন, ভারতের দালাল, তাই এদের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়া পুন্যের কাজ, একটি জিহাদ। বোঝানো হচ্ছিল এই কাজগুলো আসলে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ। দ্বিতীয় যে ইচ্ছাটা মনে মনে কাজ করছে, তা হচ্ছে, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা লাগানো। হিন্দুদের যদি রাগিয়ে দেয়া যায় কিংবা হিন্দুরা যদি তাঁদের একজন কর্মীকেও মারে, তখন ব্যাখ্যা দেয়া সুবিধা হবে, ‘এই দেশে আজ মুসলমানরা আর নিরাপদ না। এখন হিন্দুরা মুসলমানদের কে মারছে। অতএব জিহাদ কর।‘

এবার কিঞ্চিৎ সমস্যা। মিডিয়ার কল্যাণে হিন্দুদের ওপর আক্রমনের ঘটনা মুহূর্তেই সবাই জেনে গেছে। সাইদি সাহেবের বিচারের সঙ্গে যাদের কোনই সম্পর্ক নেই এমন সব মানুষ জনের বাড়ী ভাংচুর কে কোনভাবেই কেউ জিহাদ হিসেবে মানছে না। মন্দির পোড়ানকে জিহাদ হিসেবে চালাতেও কিছুটা সমস্যায় পড়তে হতে হচ্ছে। সেই সব মানুষদের কষ্টের ছবি যখন প্রচার হবে, পুরো প্ল্যানটা ভেস্তে যেতে পারে। কিছু হিন্দুর বাড়ী পোড়ান ব্যপারাটা, কিছু বাঙ্গালীর বাড়ি পোড়ান হিসেবে রিপোর্ট হবে। যে কাজগুলোকে জিহাদ হিসেবে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে সেগুলো বরং একাত্তরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হিসেবে মানুষের মনে দাগ কাটবে।

সাহবাগের অহিংস অবস্থান দেখে ভাবা হয়েছিল হয়তো তাঁরা এর থেকে শিক্ষা নিবে। বুঝতে পারবে যৌক্তিক কোন দাবী হলে এদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা সেই দাবীতে অংশ নেয়। গত বিশ বছরের (নব্বই পরবর্তী) হরতাল, জ্বালাও পোড়াও যা করতে পারে নি, এই অহিংস অবস্থান কর্মসূচী তা করে দেখিয়েছে। ‘নেতাদের যেন শাস্তি না হয় তাঁর জন্য আন্দোলন’ এমনটা বললে খুব বেশী সুবিধা হবে না দেখে ‘নাস্তিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এই তত্ত্ব নিয়ে মাঠে নামবার সিদ্ধান্ত হয়। অহিংস ভাবে কেবল মিছিল কিংবা সমাবেশ করার অনুমুতিও বাইশ তারিখে দেয়া হয়েছিল, বেশ কিছুক্ষণ মিছিল করেও ছিল। এরপর সহিংস হয়ে উঠল। কেবল মিছিল কিংবা অবস্থান নেয়াকে ঠিক ‘জিহাদ’ হিসেবে মেনে নিতে ওদের একটু কষ্ট হয়। কিছু রক্তপাত কিংবা লাশ না হলে কেমন দেখায়।

প্রথম থেকেই বাইশ তারিখের মিছিলটা কে মুসল্লিদের বিক্ষোভ হিসেবে চালানোর চেষ্টা করেছিল। তাই মুসল্লির ব্যানারে দেয়া হয়েছিল আন্দোলনের ডাক। নিরীহ মুসল্লিদের গুলি করে মেরেছে এই জালিম সরকার—এমন একটা ধারণা তৈরির চেষ্টা ছিল। বাঁধ সাধল মিডিয়া। মসজিদে আগুন লাগানো আর ঢিল মারা সব কিছুই দেশবাসী দেখল। ফলে পুলিশের ঘাড়ে দোষ চাপানো খুব সহজ হল না। আজকের হরতালেও তাই হল। তাঁদের যেসব কর্মী মারা গেল, তাঁরা কেন মারা গেল, তাঁর ব্যাখ্যা দেশবাসীকে কি দেবে জানি না। তবে দেশবাসী পুরো ঘটনা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখেছে। তাই তাঁদের যা খুশী বললেই যে খুব একটা বিশ্বাস করবে, এমনটা মনে হয় না। একমাত্র ভরসা ‘একটি দৈনিক পত্রিকা’ এবং তাঁর ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’।

যে কাজটা তাঁরা করতে পারবে, তা হচ্ছে তাঁদের কর্মীদের কে বোঝানো, ‘জিহাদ শুরু হয়েছে। ‘শহীদ হলেই বেহেশত’। এই ফর্মুলা দিয়েই চলে তাঁদের সব আন্দোলন। এবারও সত্যিকার অর্থে তাঁদের হাতে আর কোন উপায় নাই। তাঁদের একজন নেতা কিছু অন্যায়ের শাস্তি পেয়েছেন, ‘তাই এই জিহাদ’, এমনটা বললে বেজায় পানসে শোনাবে। তাই নাস্তিক, বাকশাল, এসব মশলা যোগ হবে। আগামী কিছুদিন তাই তাঁরা লাশের রাজনীতি তেই ব্যস্ত থাকবে। যেসব কাজ করলে সরকার বাধ্য হবে বাঁধা দিতে, বেছে বেছে সেই কাজগুলোই করবে। ইচ্ছে করে, গাড়ী ভাংচুর করবে, আগুন দিবে। বাঁধা দিতে গেলে তখন পুলিশকে পেটাবে। আর পুলিশ অ্যাকশানে কেউ মারা গেলে, ‘শহীদ’ তকমা দিয়ে মনের খুশিতে লাশ নিয়ে রাজনীতি শুরু করে দিবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.