| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘ছাগু’ বলে ওদেরকে যতই বোকা প্রমাণ করার চেষ্টা হউক না কেন এখন পর্যন্ত ওরা এক ধাপ এগিয়েই আছে। প্রতিটা পদক্ষেপে তাঁরা দারুণ প্ল্যান করে এগুচ্ছে। ফেসবুক এখন ভর্তি সাঈদী এবং চাঁদ সম্বলিত বিভিন্ন ধরনের ছবি প্রকাশে। বিভিন্ন ধরণের কৌতুক, রসিকতা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কত বোকা ওরা। আসলেই কি তাই? ওরা যে চালাকিটা করতে চেয়েছিল, তা তো ঠিকই করে ফেলেছে। ঐ গুজব রটিয়ে একরাশ ধর্মপ্রাণ মানুষ কে তাঁরা রাস্তায় নামাতে পেরেছে। এরপর থানা ঘেরাও। পরিণামে গুলি চালাতে বাধ্য পুলিশ। এবং বেশ কিছু লাশ যার ভিতর নারী এবং শিশু রয়েছে। ওদের আর কি চাই? বিদেশী মিডিয়ার জন্য দারুণ উপাদেয় একটা খবর। ‘এই নারী আর শিশুরা তো আর শিবির করে না, তবে এদের মারল কেন?’
ফেসবুকে বিভিন্ন আলাপচারিতায় একটা বক্তব্য বেশ অহংকারের সঙ্গে উচ্চারিত হয়, ‘অমুক কে ব্লক করে দিসি, ব্যাটা ছাগু’। বেশ কিছু পেজ আছে যেখান থেকে প্রচারের চেষ্টা হচ্ছে বর্তমান সহিংসতার বর্ণনা। বেছে বেছে এমন সব ছবি ছাপা হচ্ছে যেখানে দেখানো হচ্ছে করুণভাবে কিছু লাশ পরে আছে। কথাও পুলিশ পেটাচ্ছে কিংবা গুলি চালাচ্ছে। যখন কোন সহিংসতা থাকে না তখন ধর্মের মহিমা বর্ণনা করা হয়। কে কবে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাঁর ছবি। আপ্রাণ বোঝানোর চেষ্টা চলছে এই যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে।
আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরাই ঠিক করছে পরবর্তী চাল কি হবে। এই আন্দোলন নাস্তিকদের অন্দোলন, ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু কটাক্ষ কারীর আন্দোলন। এই প্রচার যেমন ফেসবুকে শুরু হল তেমনি কিছু দৈনিক পত্রিকায় ও শুরু হল। সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের কর্মীরা নিজেদের আস্তিক প্রমাণে লেগে পড়ল। আন্দোলন কেন চলছে তাঁর চেয়ে বড় হয়ে গেল, এই আস্তিক নাস্তিক বিতর্ক। এটাই ওরা চাচ্ছিল। ওদের পাতা ফাঁদে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আর তখন নিভৃতে দ্বিতীয় প্ল্যানিং শুরু করল তাঁরা। ‘চাঁদ’ ফর্মুলা।
এই মুহূর্তে জানা জরুরী তাঁদের পরবর্তী ফর্মুলা কি? ইমরান সরকার কে যেভাবে চতুর্দিক থেকে আক্রমণ করা হচ্ছে, মনে হচ্ছে নেতৃত্বে একটা ফাটল কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। বি এন পি এর নেতারাও যেভাবে এই বিষয়ে কথা বলা শুরু করেছে তাতে মনে হচ্ছে এই ইস্যু কিছুদিন তাঁরা জিইয়ে রাখতে চাইছে। শাহবাগ কর্মী রাও যেন একজন সমন্বয়কের অতীত সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে ব্যস্ত হয়ে পরে। মুল আলোচনা যেন পিছিয়ে পরে। এই ‘গুজব ফর্মুলা’ বা ‘শোনা যায়’ ফর্মুলা দিয়েই তাঁরা এগুচ্ছে। আর শাহবাগের মঞ্চ বুঝে কিংবা না বুঝে ওদের সেই সব গুজবের জবাব দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
সাঈদী কে ঘিরে তাঁদের প্ল্যানিং কি শেষ? এবার কি তাঁরা পরবর্তী রায়ের প্ল্যানিং শুরু করে দিয়েছে? জানবার জন্য সবচেয়ে বেশী জরুরী ওদের তৈরি পেজগুলোতে নজর রাখা। কিছু না কিছু ক্লু পাওয়া যাবে। ওরা একই ফর্মুলা রিপিট করছে না। ‘চাঁদ’ ফর্মুলাতে ওরা আর যাবে না (সম্ভবতঃ)। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলকে ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করার একটা চেষ্টা হয়তো হতে পারে। সেই প্ল্যানিং এর অংশ হিসেবেই হয়তো চলছে ট্রেনে আগুন দেয়া। রেল লাইন উপড়ানো। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য জরুরী জেলা হচ্ছে বগুড়া। তাই সমস্ত শক্তি তাঁরা ওখানে নিয়ে গেছে। সঙ্গে বি এন পি যদি যোগ দেয়, মন্দ কি।
ফেসবুকে একটা ছবি দেখে একটু অবাক হলাম। বেশ কিছু মহিলা মিছিল করছে তাঁদের একজনের সিঁথিতে সিদুর। বোঝানোর চেষ্টা, হিন্দুরা বিএনপির হয়ে মিছিল করছে, কারণ বর্তমান সরকার তাঁদেরকে জামায়াতের তান্ডব থেকে বাঁচাতে পারে নি তাই তাঁরা বিএনপি কে চায়। কিংবা বি এনপি ই একমাত্র পারে জামায়াতকে শান্ত রাখতে। এই বোঝানোটা দেশের মানুষের জন্য না বিদেশিদের জন্য কে জানে? তবে আরেকটা ফন্দি ও হতে পারে, কিছু মানুষকে হিন্দু সাজিয়ে মসজিদ ভাঙ্গা। সিদুর পরা কিছু মহিলা সামনে থাকলো। দাঙ্গা বাঁধানোর কাজে দিতে পারে।
সম্প্রতি কিছু আলেম কে হত্যার পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে। একটা উদ্দেশ্য হতে পারে এই হত্যার দায় শাহবাগের ওপর চাপানো। ‘নাস্তিকরা এখন আলেমদের হত্যা করছে’। কিছু আলেম যেহেতু জামায়াতের বিরোধিতা করছেন, তাই এমন কিছু আলেমকে মেরে ফেলা গেলে তাঁরাও হয়তো আর জামায়াতের বিরোধিতা করবেন না। আসলে নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য দাঙ্গা বাঁধানো থেকে মন্দির মসজিদ ভাঙ্গা কিছুতেই তাঁদের আপত্তি নেই। শুধু চাই নিজেদের সুবিধা।
আজকের বিএনপি এর হরতালে যেমন ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেল তাতে মনে হচ্ছে বিএনপি অন্ততঃ ভাংচুর লাইন থেকে সরে আসতে চাইছে। কিংবা হতে পারে সরকারের হার্ড লাইন দেখে দ্বিধায় আছে। জামায়াত শিবিরের জন্য আন্দোলন করে জান খোয়াতে বিএনপি মনে হয় না রাজী হবে। ‘গনহত্যা’ আর ‘ইমরান এর দাদার জীবন কাহিনী’ নিয়েই আপাতত একাত্মতা দেখাবে। তাই এই মুহূর্তে তাঁরা উঠে পরে লেগেছে এই শুক্রবারে আবার একটা বাইশ তারিখ তৈরির চেষ্টা। বাইতুল মোকাররামের উত্তর গেট খলার জন্য ততপর হয়ে উঠেছে।
যে কয়টা লাশ জুটেছে তা নিয়েই এগোবে না আরও লাশ চাই তা নির্ভর করছে আগামী শুক্রবারে তাঁদের কারজক্রমের ওপর। গত কয়েকদিনে জঙ্গি ভাব তাঁরা কমিয়ে এনেছে। বিদেশী মিডিয়ায় যে ছবি তাঁরা দিতে চেয়েছিল তা পারে নি। তাঁদের লাশের চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে তাঁদের নাশকতা। দশ হাজার গাছ কেটে ফেলা। লবিস্ট নিয়োগে ব্যায় করা কোটি কোটি ডলার প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছে। এই মুহূর্তে তাই তাঁরা কিছুটা চাপে রয়েছে।
পরিস্থিতি বুঝে খুব ঠাণ্ডা মাথায় আন্দোলন পরিচালনা করা জরুরী। উস্কানিমুলক বক্তব্যে রেগে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে অযথা বিতর্ক পরিহার করা জরুরী। আক্রমণ এখন আন্দোলনকে করা হচ্ছে না, করা হচ্ছে ব্যক্তিকে। অর্থাৎ তাঁরা বুঝে গেছে এই আন্দোলনের ভিত খুব শক্ত, একে উপড়ানো যাবে না। তাই এখন চেষ্টা দু একজন নেতার চরিত্র হনন। যা বেশ শুভ লক্ষণ। ওদের হতাশার লক্ষণ। এখন চাই শুধু ধৈর্য, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতা।
©somewhere in net ltd.