| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হঠাৎ করেই এলো মৃত্যুটা। হরতাল প্রত্যাহার করলেন বিরোধী দল। এরপর আরো কিছুদিন হরতাল না দেয়ার ভদ্রতা। তারপর একসময় অনুধাবন, অনেক ভদ্রতা দেখানো হয়েছে। আর কত? এবার স্বরূপে আসা জরুরী। আন্দোলনে একবার ভাটা পড়ে গেলে জোয়ার আনা কষ্টকর হয়ে যায়। বিশেষ করে সরকার যখন এলোমেলো আচরণ করছে। এখন হরতাল ভাংচুর থামানো মানে প্রায় হাতে এসে যাওয়া বিজয়টা হেলায় হারানো।
সরকারের কার্যক্রমেও কোন নতুনত্বের ছোঁয়া নেই। এর আগে ধর পাকড় আর কেস দেয়ায় আন্দোলনে কিছু ভাটা পড়েছিল। তাই এবারও সেই রাস্তায় পথচলা। আগে কেবল রাস্তা থেকে গ্রেফতার হত। এবার পার্টি অফিসে ঢুকে গ্রেফতার। বেশ আকর্ষণীয় নতুন পদক্ষেপ বলা যায়। কয়েকদিন পত্র পত্রিকা আর টিভি চ্যানেল মাতিয়ে রাখল খবরটা। সঙ্গে বোনাস হিসেবে যুক্ত হল ককটেল আবিস্কার।
কিছুক্ষণ আগেই মনে মনে ভাবছিলাম ছাব্বিশে মার্চ ছুটি। আবার ওদিকে ঊনত্রিশ তারিখ শুক্রবার। মাঝে দুইদিন হরতাল দিলে চারদিন (কোন অফিসের ক্ষেত্রে পাঁচদিন) এর একটা ছুটি জনগণকে উপহার দেয়া যায়। কাজটা কি করবে? যদিও সম্ভাবনা উজ্জ্বল ছিল, তবুও মনের কোণায় একটাই খটকা ছিল, এতো তাড়াতাড়ি হরতাল শুরু করবে? ছাব্বিশে মার্চের মত সংবেদনশীল একটা দিনের পরেই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে কোন কর্মসূচী দিবে কি না?
অবশেষে কাজটা সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিল বিরোধী দল। আবার কিছু যানবাহন পোড়ান। টিভি চ্যানেলে দেখানো হবে কিছু পিকেটিং এর দৃশ্য। সরাসরি ধারণ করতে পারলে বাজার ভালো পাওয়া যায়। রিপোর্টার গুলো তাই বেশ উৎসাহ নিয়ে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। যেসব এলাকায় ভাংচুর হয়েছে বা হচ্ছে সেখানে দ্রুত পৌঁছান চাই। অনেকে বলেন, পিকেটাররা নিজেরা স্টার হওয়ার আশায়, কখনও কখনও রিপোর্টারের পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
পত্রিকার জন্য কিছু সমস্যা হয়েছে। এতই ঘন ঘন হরতাল হচ্ছে যে এগুলো আর শিরোনামের যোগ্য নাই। কয়জন মারা গিয়েছে কিংবা কয়টা গাড়ী ভাংচুর হয়েছে এগুলো পত্রিকায় আজকাল আর শিরনাম হয়। হরতালের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে সরকার কিংবা বিরোধী দল কি বলবেন তা যেহেতু আমাদের মুখস্থ তাই ওদিকে সম্পাদক সাহেবদের খুব বেশী মনোযোগ থাকে না।
এই মুহূর্তের সবচেয়ে কনফিউজিং আইটেম হচ্ছে ‘গণজাগরণ মঞ্চ’। এদের কাভার করা উচিৎ কি না, কিংবা কাভার করলে কতটা ইম্পরটেন্স দিতে হবে, কোন পাতায় কিংবা কত কলামের রিপোর্ট। কনফিউশান অবশ্য সরকারী দলের ভেতরও কম না। ছাব্বিশে মার্চের আগে ওদের দাবী মানবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রথম প্রথম ভান দেখিয়েছিল জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করবার জন্য সরকার এক পায়ে খাঁড়া। ধীরে ধীরে বোধোদয় হল। বুঝতে পারলো, তাঁদের মেরুদণ্ড বলে তেমন কিছু নেই।
ওদিকে ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ ব্যস্ত নিজেদের আস্তিক প্রমাণ করতে। পুরোপুরি আস্তিক না হলেও কোন ধর্মের বিরুদ্ধে তাঁরা না, এটা বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টায় তাঁরা ফেসবুক আর ব্লগ ভরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কাদেরকে বলছে? দেশবাসীর কাছে কি এই ব্যাখ্যা দেয়া জরুরী? যাদের ভেতর নাস্তিক রটনা ছড়ানো হয়েছে তাঁরা কি ব্লগ পড়ে? নাকি ফেসবুক আই ডি খুলে বসে আছে? ওদের কাছে মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে চাঁদে কোন নেতার ছবি। গ্রাম বাংলার এই সব সহজ সরল মানুষকে রটনা দিয়ে যেভাবে বসে আনা হয়েছে, তাঁর মোকাবেলা এভাবে ব্লগে আর ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে সম্ভব না।
এই ফাঁকে কিছু অসহায় দরিদ্র হিন্দু পরিবারে লুটপাটের কাজ সেরে নিয়েছে কিছু মানুষ। এদের জন্য কি বিশেষণ ব্যবহার করব খুঁজে পাচ্ছি না। তাই মানুষ বললাম। কারণ ইদানীং গালি হিসেবে ‘মানুষ’ শব্দ টাকে আমার খারাপ লাগছে না। জানোয়ার অন্ততঃ অন্য ধর্মের লোকের বাড়ীতে আগুন দেয় না। ফলে এদের জানোয়ার বলতে পারছি না। হায়েনা কিংবা চিল, শকুন এগুলোও কেবল ক্ষুধার জ্বালায় আক্রমণ করে। পেট ভরে গেলে বেজায় শান্ত।
এই মানুষগুলো কাজটা কেন করলো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ওদের ভোট যেহেতু জামায়াত পাবে না, তাই ওদের বাড়ী ঘর পোড়ালে রাজনৈতিক ভাবে তেমন কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। একটা ভীতির পরিবেশও সৃষ্টি করা হল। সবচেয়ে বড় সুবিধা বোধহয়, এসব করলে ‘আন্টি ইন্ডিয়া’ একটা সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়। ‘শালা সব মালুর বাচ্চা আসলে ইন্ডিয়ার দালাল’ এমন একটা প্রচারণা তৈরি করতে বেশ কাজে দেয়।
‘ধর্মীয় অনুভুতি’ র বাজার ইদানীং বাজার বেশ গরম যাচ্ছে। কথাটা বোধহয় একটু শুদ্ধভাবে বলা উচিৎ, ‘মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভুতি’। অন্য ধর্মের মানুষের অনুভুতি বাড়ী ঘর, সহায়, সম্বল যেখানে খুশী আঘাত করা যেতে পারে। মন্দির, মূর্তি ভেঙ্গে গুড়া গুড়া করে ফেলা যেতে পারে। কেবল ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না। কথাটা বোধহয় ঠিক বললাম না। এক ধরণের মানুষ ছাড়া আর কেউ ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোন কথা বলতে পারবে না। তাঁরা যাই বলুক, তাতে ধর্মের যত অপমান ই হোক, তার সবই শুদ্ধ। ধর্মের নামে ‘জান মাল’ এর সাময়িক ক্ষতি ও করা যেতে পারে। তবে অন্য কেউ? সর্বনাশ। তিনশত তের জন তৈরি আছে। খুব সাবধান।
©somewhere in net ltd.