| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শাক দিয়ে মাছ ঢাকবার আপ্রাণ চেষ্টা প্রথম থেকেই চলছিল। বারবার বোঝানোর চেষ্টা চলছিল আসলে আমরা এক আছি। রাজনৈতিক আদর্শের পার্থক্য থাকতে পারে তবে আমাদের এবারের দাবী অভিন্ন। আর তাই আমরা নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে একসাথে একই দাবী নিয়ে শাহবাগে একত্রিত হয়েছি, ‘মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী নিয়ে’।
ছোট খাট অন্তর্কলহ থাকলেও সামনে আসতে দেয়া হয় নি সেগুলো। একজনকে আহত করার ব্যাপারটাও লুকিয়ে রাখবার চেষ্টা হল। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য দেয়ার ব্যাপারে যেসব বিধি নিষেধ ছিল সেগুলো ও ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। অয়াওয়ামীলিগের তাবৎ বড় নেতা এসে সংহতি প্রকাশ করলেন। ছাত্র নেতারা ব্লগারদের সরিয়ে মঞ্চে জায়গা দখল করলেন। বিভিন্ন ছাত্র নেতারা বক্তৃতা দিয়ে আন্দোলন গরম করবার চেষ্টা করলেন। সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে ঐক্য বজায় রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা হল। কোন কিছুতেই কিছু হল না। অতঃপর মাছ টা সবাই দেখতে পেল।
একটি দৈনিক পত্রিকার মিথ্যে খবর বা বি এন পি এর গালিগালাজ কিংবা হেফাজতে ইসলামের হুমকি যে কাজটা করতে পারে নি সে কাজটা করে দেখাল অন্তর্কলহ। বাম আর আওয়ামী লীগের প্রাধান্য বিস্তারের কলহ। দোষ কার বোঝার উপায় নেই। ব্লগে আর ফেসবুকে এই মুহূর্তে চলছে এক অপরকে দোষী সাব্যস্ত করার যুদ্ধ। দুই ঘরানার তাবৎ ঘাঘু ব্লগার রা শানিত তীক্ষ্ণ সব স্ট্যাটাস আর পোস্ট দিয়ে সাইবার যুদ্ধে নেমে পড়েছেন। একদল শহীদ রুমি স্কোয়াড কে তাচ্ছিল্য করছেন তো আরেক দল ইমরান এর আল্টিমেটাম এর পরে স্মারক লিপি দেয়া কে নখদন্ত হীন পদেক্ষেপ বলছে।
এই মুহূর্তে আনন্দে বগল বাজাচ্ছে জামায়াত আর বি এন পি। আগে দুটি ফ্রন্টে লড়তে হচ্ছিল। ব্যাখ্যা দিয়ে বেড়াতে হচ্ছিল শাহবাগ সম্পর্কে। এখন আর তা লাগবে না। কেবল তত্ত্ববধায়ক সরকার আর আওয়ামী দুঃশাসন নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করলেই চলবে। সঙ্গে থাকবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘেসে কিছু হরতাল। আর সেই হরতালে লাশ পড়লে কিংবা গ্রেফতার হলে আবার হরতাল। মনের কোনে ছোট একটা ইচ্ছে, যদি ১/১১ এর মত আবার সেনা শাসন আসে, আগের বারের মত হয়তে এবারও বিরোধী দলের পোয়া বারো অবস্থা হবে।
আওয়ামী লীগের চাল এখনও বোঝা যাচ্ছে না। হরতাল আর জ্বালাও পোড়াও ব্যাপারটায় বি এন পি জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে বলেই তাঁদের ধারণা। আর জামায়াত প্রশ্নে আরও আক্রমনাত্মক হওয়াতে তাঁদের আরও ভোট কমেছে বলেই ভাবছে সরকারী দল। এর সঙ্গে যদি এই আন্দোলনকে টেনে হিঁচড়ে নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া, তবে আর তাঁদের পায় কে। পুরো দেশবাসীর সেন্টিমেন্ট যুদ্ধাপরাধী প্রশ্নে বিভর থাকলে কেমন নির্বাচন হলো তা নিয়ে হয়তো কেউ মাথা ঘামাবে না।
জামায়াত নিষিদ্ধ কিংবা বিচারের রায় কার্যকর করা পুরো ব্যাপারটাই আগামী নির্বাচনের ইস্যু বানানোর মতলব করেছে বলেই মনে হচ্ছে। তবে তত্ত্ববধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে তাঁদের চিন্তা ভাবনা এখনও পরিষ্কার না। এর মাঝে আবার রাস্ট্রপতির মৃত্যু। নতুন রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তাঁর ওপর হয়তো নির্ভর করবে তাঁর মধ্যস্থতা বিরোধী দল মেনে নেবে কি না।
গণজাগরণ মঞ্চ দ্বিধা বিভক্ত আগে থেকেই ছিল। আল্টিমেটাম পার হওয়ার পরে করণীয় কি তা নিয়ে বোধ হয় টানা পোড়ন আরও বেড়েছে। শক্ত কিছুর পক্ষে বাম দল গুলো আর ধীরে চল নীতি কিংবা সরকারের বলে দেয়া নীতি তে চলতে আগ্রহী সরকারী দলের ছাত্র নেতারা। অন্ততঃ ব্লগ গুলো পড়ে সেই ধারণাই হচ্ছে সবার। তাই বাম দলের উদ্যোগে শুরু হয়েছে শহীদ রুমী স্কোয়াডের আমরণ অনশন। এবং ধারণা করা হচ্ছে সরকার পন্থী টিভি এবং পত্রিকা এই নিউজ কে খুব একটা কাভারেজ দিবে না।
উল্টো চেষ্টাও হচ্ছে। ‘বিভেদ হয় নি’ এমন কথা বলার চেষ্টাও হচ্ছে। বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে এটিও আন্দোলনের একটি অংশ। ডাঃ ইমরান যেয়ে সংহতি প্রকাশ করে এসেছে অনশনের সঙ্গে।
‘একতাই বল’, ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ এসব গল্প আসলে পরীক্ষায় পাশ করার জন্যই পড়েছিলাম। ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ কিংবা ‘রাজহাঁসের সব ডিম একদিনে পাওয়ার লোভ’ এই গল্প গুলো পড়ে আদৌ কিছু শিখেছি বলে মনে হচ্ছে না। দেশের লাখ লাখ মানুষ যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছিল কিংবা এই আন্দোলনের মাঝে একটা আলোর ঝলকানি দেখেছিল তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে এই নেতাদের একটুও দ্বিধা হল না।
কোন দল নেতৃত্ব দিবে কিংবা আন্দোলনের পথ কে বাতলে দিবে এইসব দ্বন্দে এই মহান আন্দোলনকে গলা টিপে মাতে উদ্যত হয়েছে দুই অংশ। খুব দ্রুত নিজেদের ভুল বুঝতে না পারলে অচিরেই মৃত্যু ঘটবে এই আন্দোলনের। রচিত হবে আরও একটি উপদেশমূলক গল্প—‘দ্যা ডেথ অফ শাহবাগ’।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০১
উড়োজাহাজ বলেছেন: এই জাতিটার লজ্জা বলে কোন জিনিস নাই। পারেও বটে!