![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হযরত শাহ মখদুম রূপ (শাহ সুলতান মখদুম রূপস নামেও পরিচিত) একজন শ্রদ্ধেয় ইসলামিক পণ্ডিত এবং সাধক যিনি বাংলাদেশ এবং তার বাইরের মুসলমানদের দ্বারা অত্যন্ত সম্মানিত। তিনি বাংলায় ইসলামের বাণী প্রচারে এবং তার আধ্যাত্মিক শিক্ষার জন্য তার অবদানের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। এই নিবন্ধটির লক্ষ্য হজরত শাহ মখদুম রূপের একটি বিশদ জীবনী প্রদান করা, যার মধ্যে তার প্রাথমিক জীবন, শিক্ষা, আধ্যাত্মিক যাত্রা এবং ইসলামী বৃত্তিতে অবদান রয়েছে।
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা:
হযরত শাহ মখদুম রূপস ১২১৬ খ্রিস্টাব্দে ৬১৫ হিজরিতে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম আব্দুল কুদ্দুস। তিনি পণ্ডিত ও ধার্মিক ব্যক্তিদের পরিবারে বেড়ে ওঠেন এবং ছোটবেলা থেকেই তিনি ইসলামী জ্ঞান অধ্যয়নের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তিনি বাগদাদে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন, যেখানে তিনি তার সময়ের বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিতদের নির্দেশনায় অধ্যয়ন করেন।
অধ্যয়ন শেষ করে হযরত শাহ মখদুম রূপ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামের বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
আধ্যাত্মিক যাত্রা:
হযরত শাহ মখদুম রূপের আধ্যাত্মিক যাত্রা তাঁকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যায়। ইসলামের বাণী প্রচার করতে এবং ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র স্থাপনের জন্য তিনি ইরান, ভারত ও বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলায় অতিবাহিত করেন, যেখানে তিনি তাঁর আধ্যাত্মিক শিক্ষা এবং ইসলামী শিক্ষার প্রসারের জন্য তাঁর প্রচেষ্টার জন্য পরিচিত হন।
হযরত শাহ মখদুম রূপের আধ্যাত্মিক যাত্রার সাথে জড়িত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হল একটি কুমিরের সাথে তার মুখোমুখি হওয়া। কথিত আছে, তিনি কুমিরের পিঠে নদী পার হতেন। শুধু কুমির নয়, বনের বাঘরাও তার অলৌকিক ক্ষমতার আনুগত্য করত। যে কুমিরের উপর দিয়ে তিনি নদী পার হতেন তার কবরের পাশেই রয়েছে।
ইসলামিক স্কলারশিপে অবদান:
হজরত শাহ মখদুম রূপকে তার সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ইসলামী পণ্ডিতদের মধ্যে একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ইসলামী বৃত্তিতে বিশেষ করে সুফিবাদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি ইসলামী আধ্যাত্মিকতার উপর "তাওহিদ আল-হাকীকী," "তাফসির আল-ফাতিহা" এবং "মাকামাত আল-আরিফিন" সহ বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন।
ইসলামিক স্কলারশিপে হযরত শাহ মখদুম রূপের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল রাজশাহী শহরে খানকাহ (একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র) প্রতিষ্ঠা করা। খানকাহ ইসলামী শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করেছিল এবং এটি বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল এবং তার বাইরে থেকে অনেক ছাত্র এবং শিষ্যদের আকৃষ্ট করেছিল।
হজরত শাহ মখদুম রূপস সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যের প্রতি দায়বদ্ধতার জন্যও পরিচিত ছিলেন। তিনি দরিদ্র ও প্রান্তিকদের অধিকার প্রচারে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার:
হযরত শাহ মখদুম রূপস 697 হিজরীতে, 1298 খ্রিস্টাব্দের সাথে রাজশাহী শহরে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুতে তাঁর অনুসারীরা এবং শিষ্যরা গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছিলেন, যারা তাঁকে আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক এবং অনুপ্রেরণার উৎস হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন।
আজ, হযরত শাহ মখদুম রূপস এর উত্তরাধিকার শাহ মখদুম মাজারের আকারে বেঁচে আছে, যা প্রতি বছর হাজার হাজার তীর্থযাত্রী দ্বারা পরিদর্শন করা হয়। মাজারটি আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে এবং এটি জীবনের সর্বস্তরের মানুষকে আকর্ষণ করে চলেছে।
উপসংহার:
হযরত শাহ মখদুম রূপস ছিলেন একজন অসাধারণ ইসলামী পন্ডিত ও সাধক যিনি ইসলামী বৃত্তি ও আধ্যাত্মিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। সামাজিক ন্যায়বিচার, সমতা এবং ইসলামী শিক্ষার প্রসারের প্রতি তার অঙ্গীকার তাকে বাংলার ইসলামের ইতিহাসে সম্মানিত ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। তার উত্তরাধিকার মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। আপনি চাইলে এই মহান মনীষীর মাজার ভ্রমণ করে আসতে পারেন।
©somewhere in net ltd.