নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সমাদৃত, মিথ্যা ধীকৃত

হলুদ মিডিয়ার অবাধ মিথ্যাচার প্লাবনে সত্যানুসন্ধানী অভিযাত্রী

ওয়ালী আশরাফ

ওয়ালী আশরাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

"মুখোশ উন্মোচন" কিন্তু....।

২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ১:২৭

"মুখোশ উন্মোচন" কিন্তু .... !
-আবু তাহের মিছবাহ

ইনকিলাবের মুক্তাঙ্গনে কিছুদিন আগে (মওলানা) মওদূদী ও জামাতের সমালোচনা করে একটা কড়া লেখা লিখেছিলেন সাইফুল আদল নামক জনৈক মুফতী সাহেব। সেই লেখার একটা চড়া জওয়াব দিয়েছেন গত ১৭ই মে ইনকিলাবের একই পাতায় জনৈক আব্দুল আযীয। তিনি অবশ্য মুফতী নন, কলেজ লেকচারার । লেকচারার সাহেব তার লেখাটার নাম দিয়েছেন মুখোশ উন্মোচন। তা মুখোশ তিনি ভালোই উন্মোচন করেছেন, তবে কিনা বেচারা মুফতী সাহেবের চেহারার ত্বকেরও যথেষ্ট ক্ষতি সাধন করেছেন । আমার এক দীনী ভাইয়ের অনুরোধে দুটো লেখাই পড়লাম, তিনি বলেছিলেন কষ্ট করে হলেও পড়তে। কষ্ট করেই পড়তে হলো। এত কষ্ট হলো যে, প্রথমে ঝরলো চোখের পানি, এখন ঝরছে কলমের কালি। দুঃখের বিষয়, মুফতী ও অমুফতী শালীনতা উভয়ের হাতছাড়া (কিংবা বলুন, কলমছাড়া) হয়ে গেছে। দু'জনেরই মনে রাখা উচিত ছিল, এটা চার দেয়ালের বাইরে মুক্তাঙ্গন এবং আমাদের কলম ঠোকাঠোকি হতে পারে অন্যদের পুলকের কারণ। লেকচারার সাহেবের ভাষায় মুফতী সাহেব না হয় অজ্ঞ, অপরিপক্ব, ঈর্ষাকাতর, ফতোয়াবাজ ইত্যাদি। কিন্তু তিনি নিজে তো কিঞ্চিৎ বিজ্ঞতা ও পক্বতার পরিচয় দিতে পারতেন! মুফতী সাহেবকে তিনি আসমানী আয়াত বিল্লাতি হিয়া আহসান (তর্ক করো সর্বোত্তম পন্থায়) এর যে তালীম দিয়েছেন, নিজের বেলায় কেন তিনি তা ভুলে গেলেন! ফতোয়াবাজি হলো বামপাড়ার খান্দানি গালি! এটা ব্যবহার না করেও তো মুফতী সাহেবকে হেদায়াত করা যেতো! একটা বিষয় আমার বড় অবাক লাগে; জামায়াতের দলীয় আকীদা হলো রাসূলে খোদা ছাড়া আর কাউকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করবে না, সেজন্য মওদূদী একেবারে কলজে পোড়ানো ভাষায় সাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা করে গেছেন। কিন্তু একই সূত্রে যখন মওদূদীর সামান্যতম সমালোচনাও করা হয় তখন জামাতী বন্ধুরা একেবারে কোরতার বাইরে এসে পড়েন এবং বেচারা সমালোচনাকারীকে তুলোধুনো করে ছাড়েন। তাহলে কি ধরে নেবো যে, তাদের মতে সাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা জায়িয আর মওদূদী সাহেবের সমালোচনা নাজায়িয! যাই হোক উভয় পক্ষকেই আমি অনুরোধ করবো, পত্রিকার পাতায় যা খুশি লিখুন এবং মুক্তাঙ্গনে যত ইচ্ছে বিতর্ক করুন, কিন্তু কলম যেন বেপর্দা না হয় এবং লেখা যেন শালীনতার সীমা অতিক্রম না করে, এ বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে।।
~~~ লেকচারার আব্দুল আযীয সাহেব যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি কিছু কথা বলতে চাই তার লেখার জবাবে। কাদিয়ানী প্রসঙ্গে নিযামী সাহেব কী বললেন, কেন বললেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের সাথে তার বক্তব্যের মিতালি কতটুক সে প্রসঙ্গে না-ই বা গেলাম, কিন্তু এটা তো পরিস্কার যে, নিযামী সাহেবের মন্তব্য অন্তত এ যাত্রা কাদিয়ানীদের শেষ রক্ষা করেছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এটাই চেয়েছিলেন। জামাত সব সময় গর্ব করে, কাদিয়ানী বিরোধী জিহাদে শরীক হয়ে মওদূদী সাহেব ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত গিয়েছিলেন। কিন্তু জামাত এ কথা কেন ভুলে যায় যে, কাদিয়ানী বিরোধী জিহাদে মওদূদী সাহেব যাদের কাতারে শামিল হয়েছিলেন সেই উলামায়ে কিরাম তাকে ফাঁসির মঞ্চ থেকে ছিনিয়ে এনেছিলেন? ফাঁসির রায় ঘোষণার মূল রহস্য অবশ্য এখনো অজ্ঞাত, তবে এটা তো ঠিক যে, এর ফলে আন্দোলন সেদিন ভিন্নপথে চলে গিয়েছিল এবং সে যাত্রা কাদিয়ানীদের শেষ রক্ষা হয়েছিল! জনৈক সাংবাদিক তাই মন্তব্য করেছিলেন, মওদূদী হলেন হিরো আর আন্দোলন হলো জিরো। এ বিষয়ে আমি নিজে অবশ্য কোন সিদ্ধান্তমূলক কথা বলছি না, আমি শুধু বলতে চাই, উলামায়ে কিরাম অকারণে ফতোয়ার তীর দ্বারা কাউকে বিদ্ধ করেন না। মওদূদী সাহেবের কলম যতদিন সংযত ছিল ততদিন তারা তার উদার প্রশংসা করেছেন এবং প্রয়োজনে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু যখনই তার অসংযত কলম সাহাবায়ে কিরামের সমালোচনায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তখন উম্মতের অভিভাবক হিসেবে উলামায়ে কিরামকে বাধ্য হয়েই তার প্রতিবাদ করতে হয়েছে। অথচ বিভেদ সৃষ্টির দায়ে উল্টো তাঁদেরকেই দায়ী করা হয়। বলুন তো, কে মওদূদী সাহেবকে মজবূর করেছিলো উম্মতের এমন নাযুক সময়ে এমন নাযুক বিষয়ে কলম ধরতে! তারপরও উলামায়ে কিরাম বিভিন্নভাবে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন বিষয়টির গুরুতরতা, কিন্তু তিনি কলম থামাতে রাজি হলেন না। তখন উম্মতকে গুমরাহী থেকে হেফাযত করতে প্রতিবাদ ছাড়া উলামায়ে কিরামের আর কী উপায় ছিলো ?
~~~ মওদূদীর ফয়সল পুরস্কার সম্পর্কে তার অনুসারীরা যেন একটু বেশী মাত্রায় উদ্বেলিত, আব্দুল আযীয সাহেবও ব্যতিক্রম নন। কিন্তু একজন বাদশাহর পুরস্কার তো আর হক নাহকের আলামত হতে পারে না, সুতরাং এ নিয়ে এত হৈ চৈ করার কী কারণ হলো! ফয়সাল পুরস্কার আরো অনেকেই পেয়েছেন। আমাদের মাওলানা সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-কে জোর অনুরোধ করা হয়েছিলো। প্রথমে তিনি সম্মত হননি, পরে আপন শায়খের আদেশে তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু এ নিয়ে তার ভক্তকুলের মাঝে কোন হৈ চৈ হয়নি। প্রসঙ্গত, আল্লামা নদভী রাহ. যিনি এক সময় আরব বিশ্বে মওদূদীকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন, পরবর্তী জীবনে কিন্তু তিনি শক্ত হাতে তার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। আল্লাম নদভীর বইটি (সম্ভবত বাংলায় অনুবাদ হয়েছে) প্রত্যেক চিন্তাশীল ব্যক্তিরই পড়ে দেখা উচিত। আরব বিশ্বে মওদূদীর গগণচুম্বী জনপ্রিয়তা সম্পর্কে সুপ্রিয় আব্দুল আযীয অনেক কথাই বলেছেন, কিন্তু আসল বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। মুফতী সাহেবের এ প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি যে, মওদূদীর এতো এতো বই আরবীতে তরজমা হলো খেলাফত ও রাজতন্ত্র বইটির তরজমা কেন হলো না? কিসের ভয়ে? আব্দুল আযীয সাহেবের ভাষায় আকীদাতুল উসতায আল মওদূদী কিতাবটি আলিমরা লিখেছিলেন সৌদি আরব তথা আরব বিশ্ব থেকে মওদূদীকে উৎখাত করার জন্য, কিন্তু তিনি নাকি যতই ভাবেন ততই অবাক হন যে, আলিমদের উদ্দেশ্য সফল না হওয়ার কারণ কী ?
~~ কারণ আমাদের আলিমগণ বুখারী মুসলিমের শায়খ হলেও আধুনিক প্রচারকৌশলের শায়খ নন। আপনাদের মুকাবেলায় এ ক্ষেত্রেও তারা বরং একেবারেই তিফলে মকতব। তাই বাজার থেকে বই উধাও করে ফেলার কৌশল আমাদের ভোলাভালা আলিমদের কল্পনায়ও আসে না। আপনাদের সংগঠন মযবূত, কম্যুনিস্টদের চেয়েও মযবূত, পক্ষান্তরে তখন এবং এখন সব সময় সংগঠনে আমরা আনাড়ী। নইলে আপনারা যেখানে এমন একাট্রা সেখানে আমাদের ঐক্য মাত্র তিন ভাগ। সুতরাং সৌদি আরব বা তাদের মুরব্বী আমেরিকা, কোথাও থেকে আপনাদের উৎখাত করা সম্ভব নয় । অবশ্য উলামায়ে কিরাম একবার যদি এক হতে পারতেন তাহলে বোঝা যেতো ইসলামী জনতা কদেরকে ইসলামী শক্তি মনে করে। তবে একটি কথা, শক্তি ও সংগঠন যতই মযবূত হউক, জামাতের সুদীর্ঘ কালের বিশাল আয়োজনপূর্ণ রাজনীতির খুলাসা কিন্তু একটাই, জোয়ারের তোড়ে এগিয়ে যাওয়া এবং ভাটের টানে পিছিয়ে আসা। এটা কিসের আলামত, জামাতীদের অবশ্যই তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। পক্ষান্তরে সমস্ত কমযোরী সত্ত্বও উলামায়ে কিরাম যে এখনো রাজনীতির ময়দানে বহাল আছেন সে শুধু এজন্যই যে, তারা রাজনীতির জন্য ইসলাম করেন না, ইসলামের জন্য রাজনীতি করেন।।
~~~ সুপ্রিয় আব্দুল আযীয গর্ব করে বলেছেন, বাতিলের মুকাবেলায় হকের প্রতিষ্ঠায় প্রায় দু'শতাধিক তেজোদীপ্ত যুবক অম্লান বদনে শীর দিয়েছে, আমামা দেয়নি।
~~আমার জানা মতে জামাতী বন্ধুদের মুখে কিঞ্চিৎ দাঁড়ি থাকলেও কখনো মাথায় তাদের আমামা থাকে না, সুতরাং আমামা দেয়া না দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আমামা তো থাকে আলিমদের মাথায়, তারা অবশ্য শীর দেয়, আমামা দেয় না এবং বিপদকালে লেবাসও বদল করে না। বেশী দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, মালিবাগে এবং শহীদ বাড়িয়ায় কারা শহীদ হলো? আফগানিস্তানে কারা জান দিলো? সর্বোপরি মার্কিন সরকার পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলো নিয়ে কেন এত চিন্তিত? ~ হল দখলের দাঙ্গায় মারা যাওয়া আর মসজিদ রক্ষার জন্য জান দেয়া কি এক হলো !
~~~ আব্দুল আযীয সাহেব লিখেছেন ঐক্যের বাণী নিয়ে প্রফেসর গুলাম আযমসহ জামাত নেতৃবৃন্দ মরহূম হাফেজ্জী হুযূর, শায়খুল হাদীস মাওলানা অযীযুল হক, চরমোনাইয়ের পীর সাহেব প্রমুখের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু .....
~~~ জ্বি, আমিও বলি, এখানে একটা কিন্তু আছে। ইতিহাস স্বাক্ষী, জামাতের বিভিন্ন দুঃসময়ে উলামায়ে কিরাম বার বার আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু প্রয়োজনে ব্যবহার, এটাই ছিল জামাতের ব্যবহার। একাত্তরের কিয়ামতের পর যার ছায়ায় জামাত আত্মপ্রকাশ করেছিলো তার নাম খতীবে আযম মাওলানা সিদ্দীক আহমদ। তিনি ভেবেছিলেন এত বড় কিয়ামত জামাতের চরিত্রে নিশ্চয় পরিপর্তন ঘটিয়েছে। না, যথারীতি সেখানেও বড় একটা কিন্তু এসে হাযির হয়েছিলো এবং খতীবে আযমের মত ব্যক্তিকেও ব্যবহৃত হওয়ার মধুর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়েছিল।।
মওদূদী ও তার অনুসারীদেরকে উলামায়ে কিরাম বার বার অনুরোধ করেছেন, মাকামে সাহাবা ও ইসমতে আম্বিয়া-এর মত নাযুক আকীদার বিষয়ে কলম বন্ধ রাখুন এবং ঐক্যের পথে আসুন। কিন্তু জামাতের এক কথা, মওদূদী যা খুশী লিখবেন, আমরা শুধু পড়বো, তিনি যা খুশী বলবেন আমরা শুধু শোনবো, প্রতিবাদ করলেই বলা হবে, আলিমরা ইসলামী ঐক্যের বিরোধী। তালগাছ আমার এমন ঐক্য তো হতে পারে শুধু ভারত- বাংলাদেশের মাঝে।
~ হযরত হাফেজ্জী হুজুর রাহ. এর দরবারে গুলাম আযমের ধর্ণা দেয়ার যে কথা আব্দুল আযীম সাহেব বলেছেন! আমি নিজেই তার সাক্ষী। গুলাম আযমের আবদার এবং হাফেজ্জী হুজুর রাহ. এর জবাব আমি নিজের কানে শুনেছি। আমার সৌভাগ্য, সেদিন আমি দেখেছিলাম, কেমন হয় মুমিনের ঈমানী ফেরাসাত! ধৈর্য ধরে গুলাম আযমের দীর্ঘ বয়ান শুনে হযরত শুধু দু'টি বাক্য বললেন, ইত্তিহাদুল উম্মা, ভালো কথা, তবে কিসের উপর ইত্তিহাদ? শাড়ী তো নয়া, কিন্তু দুলহান তো পুরানা। শুধু শাড়ী নয়, দুলহান বদল করুন। আকলমন্দের জন্য ইশারা কাফী, আর গুলাম আযমকে তার শত্রুরাও আকলমন্দ মনে করে। তাই বুঝতে তার বিলম্ব হলো না যে, ইনি খতীবে আযম নন, ইনি অন্য কিছু। সুতরাং আব্দুল আযীয সাহেবরা যা-ই করুন ঐক্যের মারসিয়া আর শোনাবেন না। আমি বলি না জামাত ও কাদিয়ানী একেবারে এক কাতারে। আমি শুধু বলতে চাই, কাদিয়ানীদের সাথে বিরোধের মূল বিষয় হলো খতমে নুবুওয়াত। এটা ঈমান ও কুফরের আকীদা। আর জামাতের সাথে বিরোধের মূল বিষয় হলো ইসমতে নবী ও আদালতে সাহাবা। এটা হক ও গুমরাহীর মাসআলা। ইসলামী উম্মাহর সর্বকালীন ও সার্বজনীন আকীদা এই যে, নবীগণ সকলেই মাসূম ও নিষ্পাপ, কিন্তু মওদূদী বলেন, নবীদের ইসমত কখনো কখনো তুলে নেয়া হতো। যাতে প্রমাণিত হয় যে, তারা মানব ছিলেন। এটা সত্য হলে নুবুওয়াত ও রিসালাতের গ্রহণযোগ্যতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তদ্রূপ নুবুওয়াতের সুহবতপ্রাপ্ত সাহাবায়ে কিরামের একক ও সামগ্রিক আদালত ও ন্যায়পরায়নতা স্বীকার না করলে দীনের বুনিয়াদই ধ্বসে যায়। সুতরাং এ বড় ভয়ংকর গুমরাহী। এটা ইসলামী ফিকহের মাযহাবী ইখতেলাফ নয়, এটা হক ও গুমরাহীর বিরোধ।
~~~আব্দুল আযীয বলতে চান যে, মওদূদী শত শত পৃষ্ঠা লিখেছেন সাহাবা প্রশস্তি'র উপর, তিনি কীভাবে হতে পারেন সাহাবার নিন্দাকারী! দেখুন কেউ যদি জেগে ঘুমুতে চান আমি তার নিদ্রায় ব্যঘাত ঘটাবো না। তবে সত্যি যারা নিদ্রিত শুধু তাদের জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, শত পৃষ্ঠার প্রশংসা এক পৃষ্ঠার নিন্দাকে বৈধতা দান করে না । এক মন দুধে এক ফোটা ...... এ তো আমাদেরই দেশের প্রবাদ। গুলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবী প্রশস্তি' শোনবার মত, যাকে বলে পাক্কা আশেকে রাসূল। তার একটি মশহূর কবিতাপংতি হলো—
মুহাম্মদ-প্রেম হয় যদি কুফরী,
কসম খোদার সেরা কাফির আমি দুনিয়ার।
গুলামের বাচ্চা ছোট্র একটা কাজ করেছে। নবীর শুরু থেকে আখেরী শব্দটি সরিয়ে দিয়েছে। মওদূদীর সাহাবা প্রশস্তিও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য হতো যদি তিনি ছোট্র একটা কাজ না করতেন, একটু একটু নিন্দা করে সাহাবায়ে কিরামের আদালত ভবনের ইট খুলে না ফেলতেন। অমুক সাহাবী ঘুষের লেনদেন করেছেন, তহবীল তসরুফ করেছেন, অমুক সাহাবী স্বৈরাচার ও স্বজনপ্রীতির পলিসি গ্রহণ করেছেন।
~~ আপনিই বলুন এই তবরুক বিতরণের পর প্রশস্তির কী মূল্য থাকে। তবু আমরা কৃতজ্ঞ, কারণ নামের আগে হযরত এবং পরে রাযিয়াল্লাহ টুকু তিনি বহাল রেখেছেন।
~~ লেকচারার আব্দুল আযীয সাহেবের একটি লেকচার শুনুন-- মওদূদীর সাহাবা সমালোচনা তো তার নিজস্ব নয়, আল বেদায়া, আল কামিল, তাবারী প্রভৃতি জগদ্বিখ্যাত সর্বজনস্বীকৃত ইতিহাসগ্রন্থ থেকে আহরিত। সুতরাং অপরাধ হলে ঐ ইতিহাস সংকলক জগদ্বরেণ্য ঐতিহাসিকদের হবে, মওদূদীর কেন হবে ?
~~ জ্বি, অতি সরল যুক্তি; এবং বহুবার ব্যবহৃত। কিন্তু স্বয়ং আল্লামা তাবারী যে তার কিতাবের ভূমিকায় সুস্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করে বলেছেন, এ সকল বর্ণনার সত্য-মিথ্যার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা শুধু সংগ্রহ ও সংকলন করেছি, পর্যালোচনা ও নির্বাচন করিনি, এ প্রশ্নের কী জবাব আছে বড় হুজুর এবং ছোট হুজুরদের কাছে? বস্তুত এ বিষয়ে শেষ কথা হলো দু'টি মাত্র শব্দ, কালেকশন ও সিলেকশন। ঐতিহাসিকগণ যা কিছু পেয়েছেন বিনাবিচারে তা সংগ্রহ করেছেন এবং সনদ ও সূত্র উল্লেখ করে দায়িত্বমুক্ত হয়েছেন। সেটাই ছিল তাদের তখনকার করণীয়। পরবর্তী কালের গবেষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো সনদ ও সূত্র এবং অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করে বর্ণনার সত্য-মিথ্যা নির্ধারণ করা এবং গ্রহণ- বর্জনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বড় হুজুর তা করেননি, তিনি শুধু পছন্দের বর্ণনাগুলো বর্ণনা করেছেন, আর অপছন্দেরগুলো বিসর্জন দিয়েছেন। আমাদের অপরাধ, আমরা জ্বি হুজুর বলতে পারিনি এবং বলতে পারবো না। আচ্ছা, এসব তত্ত্বকথা রাখুন এবং আজকের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি ভেবে দেখুন, মাত্র ত্রিশ বছরের ঘটনা। কে স্বাধীনতার ঘোষক, জিয়া না মুজীব? আজো ফায়সালা হলো না। তাহলে এবার অংক কষে বলুন, কয় ত্রিশে চৌদ্দশ বছর হয়! সেই চৌদ্দশ বছরের সুদূর অতীতে এবং প্রচারণার ধুম্রজালের অপরপারে সাহাবায়ে কিরামের কথা ও কর্মের সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের টেলিস্কোবিক দৃষ্টিশক্তি কি বড় হুজুর দাবী করতে পারেন? তারপরও যিনি ইতিহাস ইতিহাস বলে চেঁচাবেন অতি অবশ্যই তিনি পাতিহাঁস। ইমাম ইবনে তাইমিয়া, মুল্লা আলী কারী, শাহ ওয়ালীউল্লাহ ও শাহ ইসমাঈল শহীদ, এদের নাম নিয়েছেন (শাহ) আব্দুল আযীয। তিনি বলতে চান, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের এ সকল বরেণ্য ইমামের সাহাবা সম্পর্কিত বক্তব্যের মওদূদী সাহেব প্রতিধ্বনি করেছেন মাত্র। সুতরাং ইমামের নামায নষ্ট না হলে মুক্তাদির নামায কেন নষ্ট হবে ?
~~হয়, মুক্তাদি দুষ্ট হলে এমনও হয়। প্রথম কথা, সাহাবা নিন্দা সবার জন্য সমান অপরাধ। এখানে আগে- পিছে নেই, ইমাম-মুক্তাদি নেই। দ্বিতীয় কথা, সে যুগের ইমামদের বক্তব্যে ভুল কিছু থাকলে, তা কিতাবের পাতায় সীমাবদ্ধ ছিলো, তার প্রভাব সর্বপ্লাবী ছিলো না। পক্ষান্তরে প্রধানত বিশ শতকের একাডেমিক, সাংগঠনিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার সুবাদে মওদূদীর মতামত সর্বগ্রাসী রূপ ধারন করেছে, তাই তার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তৃতীয় কথা, পূর্ববর্তী কোন ইমাম কোন সাহাবীর শানে গুস্তাখী করেছেন এটা আসলেই মিথ্যা কথা।
আব্দুল আযীয সাহেব ইমামদের উদ্ধৃতি এনেছেন এবং সেগুলোর কুশলী তরজমা করেছেন । সময়ের অভাবে আমরা তার কৃত তারজমা মেনে নিয়েই বলছি, ইমামদের বক্তব্যের খুলাসা তো শুধু এই-
(ক) শক্তি, প্রজ্ঞা ও অন্যান্য গুনে হযরত উসমান হযরত ওমরের মত ছিলেন না। এ বক্তব্যে দোষের কিছু নেই। হযরত উসমানের স্তর ও মর্যাদা যে হযরত উমরের পরে ছিলো, সে তো জানা কথা, যেমন হযরত উমর রা.-এর স্তর হযরত আবু বকর রা.-এর পরে ছিলো। তবে তাঁরা সবাই আদর্শ খলীফা ছিলেন। নিজ নিজ সময় ও পরিস্হিতিতে তাঁদের নীতি ও পদক্ষেপ সঠিক ছিলো এবং পরবর্তী কালের উম্মতের জন্য তা আদর্শ।
(খ) হযরত উসমান রা.-এর স্বভাব প্রকৃতি হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর রা. থেকে ভিন্ন ছিলো। কেননা হযরত উসমান কখনো কঠোরতার পরিবর্তে নমনীয়তার (সঠিক তরজমা নম্রতার) আশ্রয় নিতেন। এ মন্তব্যেও আপত্তির কিছু নেই। কারণ আসলেই তিনি ছিলেন স্বভাবনম্র। এই স্বভাবনম্রতার কারণেই তো নিজের জীবনের বিনিময়েও তিনি মদীনায় রক্তপাতের অনুমতি দেননি।
(গ) তাঁর নিযুক্ত প্রশাসকদের মাঝে সিদ্দীকী ও ফারুকী যুগের প্রশাসকদের গুন ও বৈশিষ্ট্য ছিলো না। এটাও সত্য কথা। সিদ্দীকী, ফারুকী, উসমানী ও আলাবী এই চার যুগের শাসক ও শাসিতদের মাঝে পার্থক্য থাকাই তো স্বাভাবিক, তবে তা হলো ন্যায় ও কল্যাণের স্তর তারতম্য, ভালো ও মন্দের নয়। মওদূদী সাহেব যদি শুধু এইটুকু বলতেন তাহলে আমাদের নরম মাথা এত গরম হতো না। কিন্তূ মওদূদী সাহেব যা বলেছেন, তার একটি মাত্র নমুনা দেখুন- খলীফা উমর রা.-এর নির্দেশ ছিলো, পরবর্তী খলীফা এ বিষয়ে দায়বদ্ধ থাকবেন যে, তিনি আপন গোত্রের সাথে কোন সুবিধামূলক আচরণ করবেন না, কিন্তূ দুর্ভাগ্যক্রমে তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান এ ক্ষেত্রে কাঙ্খিত মানদণ্ড রক্ষা করতে পারেননি, তার আমলে বনূ উমাইয়াকে প্রচুর পরিমাণে বড় বড় পদ এবং বাইতুল মাল থেকে বড় বড় দান প্রদান করা হয়েছিলো, (খিঃ ওয়া মুঃ পৃঃ ৯৯) শব্দপ্রয়োগ কুশলী বটে, কিন্তু ফলাফল কী দাঁড়ায়। পূর্ববর্তী খলীফার আদেশ লঙ্ঘন, স্বজনপ্রীতি, বাইতুল মালের খেয়ানত এবং (আধুনিক যুগের) দলীয়করণ ও আত্মীয়করণ, এই নয় কি! সুতরাং হে সৈয়দ মওদূদী! এখন আপনি যেখানে আছেন, সেখানে আল্লাহ আপনাকে মাফ করুন। হাদীস শরীফে এসেছে- যে শাসক সরকারী পদ বণ্টনে স্বজনপ্রীতি করে তার উপর আল্লাহর লানত (তারগীব ওয়া তারহীব) এমনকি এ যুগের শাসকের জন্যও এটা অমার্জনীয় অপরাধ । তাহলে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত উম্মতের তৃতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, যার সম্পর্কে আল্লাহর নবীর ভবিষ্যদ্বাণী হলো-- ফেতনার সময় উসমান হেদায়াতের উপর সুদৃঢ় থাকবেন (তিরমিযী, আল বেদায়া)। একজন খলীফা নিহত হবেন এবং ফিতনা হবে, কিন্তু তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়নীতির উপর অবিচল থাকবেন। (আল বেদায়া-৭)
তাঁর সম্পর্কে এমন গুসতাখী কীভাবে বরদাশত করা যায়! আমাদের প্রশ্ন, নুবুওয়াতের সুহবতধন্য উম্মতের তৃতীয় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির খেলাফতের যদি এ অবস্থা হয় তাহলে এ যুগের মওদূদী যখন আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন কায়েম করবেন তখন কী অবস্থা হবে? শরীয়তী দৃষ্টিকোণ ছাড়া নিছক ইতিহাসের দৃষ্টিতেও এ জঘন্য অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। হযরত উসমান রা.- এর খেলাফত কালে ৪৭ জন প্রশাসক ছিলেন। ইতিহাসে তাঁদের নাম তালিকা রয়েছে। (আল কামিল, খঃ ৩ পৃঃ৫০-৫১)
আদমের বেটা হিসাবে অবশ্য এই সাতচল্লিশ জনের সবাই হযরত উসমানের আত্মীয়। তবে ঐতিহাসিকগণ এ দীর্ঘ তালিকা থেকে মাত্র পাঁচজনকে চিহ্নিত করেছেন, যারা দূর বা নিকট কোনভাবে তার আত্মীয় ছিলেন। যথা- মুআবিয়া রা.,ওয়ালীদ ইবনে উকবা রা., সাঈদ ইবনুল আস রা. এই তিনজন ছিলেন উমাইয়া বংশের। (তবে তাঁদের আত্মীয়তাও ঘরের আত্মীয়তা ছিলো না।) অন্য দু'জন হলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আমির রা. এবং আব্দুল্লাহ ইবনে সা'দ ইবনে আবী সারাহ। এই পাঁচ জনই ছিলেন আল্লাহর রাসূলের সাহাবী।
~~ ফিতনাকারীদের অভিযোগের জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে মযলূম খলীফা হযরত উসমান রা. যা বলেছিলেন এ যুগের ফিতনাকারীরাও তা শুনে রাখুন- তারা বলে আমি আমার খান্দানকে বেশী ভালোবাসি এবং তাদেরকে বেশী দান করি। কিন্তু সে ভালোবাসা অন্যায়কাজে তাদের সাহায্য করে না, শুধু তাদের হক তাদের কাছে পৌছে দেয়, আর তাদেরকে আমি শুধু নিজের মাল থেকে দান করি। মুসলমানদের মাল না আমি নিজের জন্য হালাল মনে করি না অন্য কারো জন্য। আমি তো আমার পূর্ববর্তী তিনযুগেও তাদেরকে দান করতাম। খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের সময় আমি আরবের শ্রেষ্ঠ ধনী ছিলাম। অথচ এখন আমার হজ্জের জন্য দু'টি উট ছাড়া কিছু নেই। (তারপর তিনি মদীনার হাযিরানদের জিজ্ঞাসা করলেন, আমার কথা সত্য নয়? তারা বললো, আল্লাহর কসম সত্য) মওদূদী সাহেব! আল্লাহর কসম সত্য! ইতিহাস যদি অন্য কিছু বলে তবে তা ছুঁড়ে ফেলুন এবং জান্নাতী খলীফার কথা সত্য বলে গ্রহণ করুন। অবশেষে এই বলে আমি আমার লেখার ইতি টানছি, মওদূদী ও তার জামাতের প্রতি উলামায়ে কিরামের ব্যক্তিগত কোন বিদ্বেষ তখনো ছিল না, এখনো নেই, কিন্তু সাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা ও দোষচর্চা তারা বরদাশত করতে পারেন না। সুতরাং সুপ্রিয় আব্দুল আযীয, আপনি আপনার লেখার সমাপ্তিতে ঐক্যের যে আহ্বান জানিয়েছেন তা যদি আন্তরিক হয় তাহলে দয়া করে সাহাবায়ে কিরামের সমালোচনার ফিতনা পরিত্যাগ করুন, তারপর ঐক্যের কথা বলুন। ইনশাআল্লাহ ইস্পাত কঠিন ঐক্যের জন্য আমরা প্রস্তুত। আল্লাহ কবূল করুন আমীন।। (সমাপ্ত)
{সংকলিত}

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.