![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রশ্ন: ‘তিতুমীর’ নামটি কেমন করে হলো? তার প্রকৃত নাম কী?
উত্তর: শিশুকালে তিতুমীরের একবার কঠিন অসুখ হয়েছিল। রোগ সারানোর জন্য তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ভীষণ তেতো ওষুধ। ওষুধটি এমন তেতো ছিল যে শিশু তো দূরের কথা, বুড়োদেরও ওই ওষুধ মুখে নেওয়ার কথা নয়। কিন্তু ছোট্ট শিশু তিতুমীর বেশ খুশিতেই সেই তেতো ওষুধ প্রায় ১০-১২ দিন খেল। তেতো খেতে তাঁর আনন্দ দেখে বাড়ির লোকজন সবাই অবাক হলো। এ জন্য তাঁর ডাকনাম রাখা হলো তেতো। এভাবে তেতো থেকে তিতু। এর সঙ্গে মীর লাগিয়ে হলো তিতুমীর। তাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী।
প্রশ্ন: তিতুমীরের যখন জন্ম, তখন এ দেশ কাদের অধীন ছিল?
উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার একটি গ্রাম চাঁদপুর। এই গ্রামের এক বুনিয়াদি মুসলিম পরিবার সৈয়দ বংশে ১৭৮২ সালে তিতুমীরের জন্ম। তিতুমীরের যখন জন্ম, তখন আমাদের বাংলাদেশসহ পুরো ভারতবর্ষ ছিল পরাধীন। ইংরেজ রাজত্ব আর অত্যাচারের পাশাপাশি এ দেশে চলছিল দেশি জমিদারদের জুলুম। ইংরেজ কর্মচারীরা এ দেশের সর্বত্র ঘোড়া ছুটিয়ে চলত দারুণ দাপটে। তখন এ দেশ পুরোপুরিভাবে ইংরেজদের অধীন ছিল।
প্রশ্ন: তিতুমীর ছোটবেলায় ডনকুস্তি আর ব্যায়াম শিখেছিলেন কেন?
উত্তর: তিতুমীরের জন্ম হয়েছিল পরাধীন ভারতবর্ষে। ছোটবেলা থেকেই তিনি দেখেছেন ইংরেজদের অত্যাচার, দেশি জমিদারদের জুলুম। তিতুমীর এসব দেখতেন আর ভাবতেন, এদের হাত থেকে কীভাবে মুক্তি পাবে এ দেশের মানুষ। ইংরেজ তাড়ানোর উদ্দেশ্যে গায়ে শক্তি সঞ্চয় করার জন্য সেকালে গ্রামে গ্রামে বুক ডনকুস্তি আর শরীরচর্চার ব্যায়াম হতো। শেখানো হতো মুষ্টিযুদ্ধ, লাঠিখেলা, তীর ছোড়া আর অসি চালনা। তিতুমীরও ছোটবেলায় ডনকুস্তি আর ব্যায়াম শিখেছিলেন ইংরেজ তাড়ানোর জন্য। এতে তিনি সফলতাও লাভ করেন। পরিচিতি পান পাহলোয়ান হিসেবে। পাশাপাশি লাঠিখেলা, তীর ছোড়া আর অসি চালনায়ও পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি।
প্রশ্ন: এ দেশকে ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করার চিন্তা কেন তাঁর মনে এল?
উত্তর: ছোটবেলা থেকেই তিতুমীর দেখে আসছেন ভারতবর্ষে ইংরেজদের অত্যাচার। তারপর একবার ওস্তাদের সঙ্গে তিনি বিহার সফরে বেরিয়েছিলেন। বিহার সফরের সময় তিনি মানুষের আরও দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। মানুষের দুরবস্থা স্বচক্ষে দেখার পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের তাড়াতে না পারলে এ দেশের মানুষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। তাই এ দেশকে ইংরেজদের হাত থেকে মুক্ত করার চিন্তা তাঁর মনে এল, তাঁর মনে দেশকে স্বাধীন করার চিন্তা এল।
প্রশ্ন: হিন্দু-মুসলমান সবাইকে তিনি কী বলে একতাবদ্ধ করতে চাইলেন?
উত্তর: তিতুমীর জানতেন এ দেশ থেকে ইংরেজদের তাড়াতে হলে সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে। ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে হিন্দু-মুসলমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তাই তিনি হিন্দু-মুসলমান সবাইকে একতাবদ্ধ করার জন্য মুসলমানদের সত্যিকার মুসলমান হতে আহ্বান জানালেন, আর হিন্দুদের বললেন অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তাঁর এই কথায় হিন্দু-মুসলমান সবাই সাড়া দিয়েছিল।
প্রশ্ন: ইংরেজদের পাশাপাশি কারা এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালাত?
উত্তর: একসময় আমাদের বাংলাদেশসহ পুরো ভারতবর্ষে ছিল ইংরেজ রাজত্ব। এ দেশের সর্বত্র ইংরেজ কর্মচারীরা দারুণ দাপটে ঘোড়া ছুটিয়ে চলত। আর চালাত অত্যাচার। ইংরেজদের পাশাপাশি দেশি জমিদাররা এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালাত। দেশি জমিদারদের জুলুম-নির্যাতন আর ইংরেজদের শোষণ-অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল এই দেশের জনজীবন।
প্রশ্ন: তিতুমীর কার শিষ্য হলেন?
উত্তর: ১৮২২ সালে ৪০ বছর বয়সে তিতুমীর হজ পালন করতে মক্কায় যান। সেখানে পরিচয় ঘটে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হজরত শাহ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর সঙ্গে। তিনি ছিলেন সংগ্রামী পুরুষ এবং ধর্মপ্রাণ। তিতুমীর তাঁরই শিষ্য হলেন।
প্রশ্ন: তিনি কাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে বললেন?
উত্তর: তিতুমীর ১৮২২ সালে মক্কায় হজ পালন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় ঘটে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হজরত শাহ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর। ধর্মপ্রাণ সংগ্রামী পুরুষ সৈয়দ আহমদ বেরলভীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দেশে ফিরে আসেন তিতুমীর। দেশে ফিরে তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে নীলকরদের রুখতে সবাইকে সংগঠিত হতে বললেন এবং স্বাধীনতার ডাক দেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:২২
ওয়াজীহ উদ্দীন বলেছেন: প্রশ্ন: নারকেলবাড়িয়া কোথায়? এখানে তিতুমীর কী তৈরি করলেন?
উত্তর: নারকেলবাড়িয়া বারাসাতে অবস্থিত। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের শুরুতে তিতুমীরের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। নিজ গ্রাম ছেড়ে তিনি বারাসাতের নারকেলবাড়িয়ায় চলে যান। নারকেলবাড়িয়ার লোকজন তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এখানে তিতুমীর এক দুর্ভেদ্য বাঁশের দুর্গ তৈরি করলেন। এই দুর্গ নারকেলবাড়িয়ার ‘বাঁশের কেল্লা’ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন: কত সালে তিতুমীরের কাছে ইংরেজ শক্তি পরাজিত হয়?
উত্তর: নারকেলবাড়িয়ায় তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা তৈরি এবং সেখানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করার কৌশল ও প্রস্তুতির খবর ইংরেজ শাসকেরা জেনে যায়। ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারকে পাঠানো হয় তিতুমীরকে দমন করার জন্য। ১৮৩০ সালে আলেকজান্ডার তাঁর সিপাহি বাহিনী নিয়ে তিতুমীরের কাছে পরাজিত হন। ১৮৩০ সালে তিতুমীরের কাছে ইংরেজ শক্তি পরাজিত হওয়ার পর তিতুমীর কয়েকটি নীলকুঠি দখল করে নেন।
প্রশ্ন: তিতুমীর কীভাবে শহীদ হলেন?
উত্তর: ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর ভারতবর্ষের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক তিতুমীরকে শায়েস্তা করার জন্য এক বিরাট সেনাবহর এবং গোলন্দাজ বাহিনী পাঠান। এর নেতৃত্বে ছিলেন সেনাপতি কর্নেল স্টুয়ার্ড। ভোর হওয়ার আগেই স্টুয়ার্ড বাহিনী তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করে। স্টুয়ার্ডের ছিল হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সৈন্য আর অজস্র গোলাবারুদ। তিতুমীরের ছিল মাত্র চার-পাঁচ হাজার স্বাধীনতাপ্রিয় সৈনিক। এঁদের কাছে কামান, গোলাবারুদ, বন্দুক কিছুই ছিল না। তবে মনে ছিল তাঁদের পরাধীন দেশকে স্বাধীন করার অমিত তেজ। তিতুমীর আর তাঁর বীর সৈনিকেরা প্রাণপণ যুদ্ধ করলেন। কিন্তু ইংরেজ বাহিনীর সামনে টিকতে পারলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইংরেজ সৈনিকদের গোলার আঘাতে ছারখার হয়ে গেল নারকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা। শহীদ হলেন অসংখ্য মুক্তিকামী বীর সৈনিক। শহীদ হলেন বীর তিতুমীর।
আজ থেকে প্রায় পৌনে দুশ বছর আগে তিতুমীর পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে। ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধে বীর তিতুমীরই হলেন বাংলার প্রথম শহীদ।