![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুর্বকথাঃ
সেদিন রাতে খুব হাঁচি হচ্ছিলো। টানা আটটা দশটা করে। পড়তে না পেরে শেষমেষ একটা অ্যালাট্রল খেয়ে বিছানায় পড়ে থাকলাম। কিন্তু হাঁচি আর থামে না... আরেকটা খেলাম- তাও থামে না। শেষে বিরক্ত হয়ে পুরো পাতাটাই গিলে ফেললাম। একটু কমলো। কিন্তু ৫ মিনিটের মধ্যে আবার শুরু হল কাশি।
উইয়ার্ড না? হাঁচির ওষুধে কাশি কেন আসবে? যাই হোক, ঝামেলা না করে আমি কাশির ওষুধ খুঁজতে থাকলাম। ওদিকে এক পাতা অ্যালাট্রলের ইফেক্ট মোটামুটি শুরু হয়ে গেছে। আমি চোখ টেনে রেখে টলতে টলতে একটা সিরাপের বোতল খুঁজে পেলাম ওয়ারড্রবের উপর। কি জানি নাম জিনিসটার- দাদী ডেইলি হাফ বোতল করে খেয়ে পড়ে থাকে- ডেক্সপোর্ট না জানি অক্সফোর্ড। আম্মু বলছিল একদিন- এটা আসলে কাশির ওষুধ। কিন্তু দাদী চিল করার কাজে ইউজ করে। বয়স হয়ে গেছে- আলগা রিক্রিয়েশন দরকার আছে কিছুটা। আর তো কিছুই নেই তার জীবনে।
আমি কোনমতে কর্কটা খুলে আশপাশ দেখছি- চামচ দরকার একটা। বাল, এই অন্ধকার বাসায় এখন চামচ খুঁজতে পারবো না। কর্কটা উল্টো করে ধরে খুব সাবধানে ঢালতে থাকলাম। খুব সাবধানে.. খু...ব...
খুক খুক... হ্যাচ্চো...
বাল আমার। পুরো হাতটাই ভিজে গেল। এর থেকে হাল্কা করে ডিরেক্ট এক চুমুক খেয়ে নেই।
গলায় যেই না হাল্কা করে ঢালতে যাব- হঠাৎ আবছা কি যেন একটা কানে আসলো- অনেক দূর থেকে ভেসে আসছে কিছু একটা... খুব সুন্দর একটা শব্দ। শব্দই কি? নাকি কারো ডাক? আমি ওদিকটায় মনযোগ দিলাম... বাসার সামনের গলি পার হয়ে মেইন রোড পার হয়ে শহর পার হয়ে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে আমার কান চলছে- ওই শব্দের সন্ধানে। রাতের ঠান্ডা বাতাসে আমার কান ভেসে যাচ্ছে, আর পিছনে আমি। একটা গালিচায় চোখ বন্ধ করে আমি শুয়ে আছি আর মধু খাচ্ছি। সামনে আমার কান- সে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পথ দেখিয়ে....
"এইটা মধু না হালার বাই। এইটা ঔষধ। তাও আবার ডেক্সপোর্ট না জানি অক্সফোর্ড- দাদী যেটা খায়া চোদ হয়।"
শিট ম্যান। আমি ধুম করে আবার ওই অন্ধকার রুমে ফেরত আসলাম। ভুলে মধু ভেবে প্রায় পুরো বোতলটাই মেরে দিয়েছি। প্রবল বিতৃষ্ণা নিয়ে বোতলটার দিকে তাকালাম। একটা সিরাপ এতটা বাজে টেস্টের হয় ক্যামনে? পুরা মুখ বিষের মত হয়ে আছে...
এনিওয়ে, আমি ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষার্থী। কালকে সকালে কেমিস্ট্রি সেকেন্ড পার্ট পরীক্ষা। ভাবছিলাম হাল্কা করে একটা ওষুধ খেয়ে ছোট্টো একটা ঘুম দিয়ে নিব। তারপর পড়ব। ব্যাপারটা আর হইল না মনে হয়। এই কানের বাচ্চাটা উড়ে না গেলে এগুলা কিছুই হইত না। আমি সরু চোখে কানটার দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম- জিনিসটা বেশ পার্টের হত। কিন্তু কোনভাবেই কানটাকে খুঁজে পেলাম না। চারিদিকে তাকালাম- সামনে, পিছে, উপরে, নিচে - কোথাও দেখলাম না। গেল কই হালার পুতে?
যাই হোক, গেছে কোথাও। আসবে আবার কাজ শেষ হইলে। হুদাই রাতটা নষ্ট হইল এই হারামজাদাটার জন্য। এক বোতল অক্সফোর্ডের ইফেক্ট যে আবার কি হয় কে জানে। আমি তাড়াতাড়ি করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
প্রচন্ড আরাম নিয়ে চোখটা জাস্ট বন্ধ করেছি- আর জীবনের সবথেকে অদ্ভুত ফীলিংসটা পেলাম।
কে জানি আমাকে চুলকাচ্ছে। আমাকে চুলকাচ্ছে মানে এই না যে আমার কিছু একটা অন্য মানুষ চুলকিয়ে দিচ্ছে। মানে হল, আমি যদি আমার হাতটা চুলকাই, তাহলে আমার হাতের যেটা মনে হবে, সেটাই আমার মনে হচ্ছে। খুবই অদ্ভুত একটা অনুভূতি। আমি অনেক্ষণ ইগনোর করার চেষ্টা করেও পারলাম না। চোখ বন্ধ রেখেই চেঁচালাম - "কে? কে আমাকে চুলকায়?"
কোন সাড়াশব্দ নেই। আমি চোখ খুললাম। আর সাথে সাথে টাস্কি।
আমি একটা হাঁটু। যার হাঁটু সে-ই চুলকাচ্ছে। অনেক্ষণ ধরে বোঝার চেষ্টা করলাম হাঁটুটা কার। কিন্তু বুঝলাম না। ব্যাপারটা যথেষ্ট উইয়ার্ড। আমি আগে কখনো কল্পনাও করি নাই যে আমার কারো হাঁটু হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে।
যা বাল। স্বপ্ন দেখতেছি। আমি শিওর। আমি ক্যামনে হাঁটু হই? আমি হাতে চিমটি কাটলাম। নাহ কিছু টের পাই না। তবে যে পরিমান হাঁচি কাশির ওষুধ খাইসি আজকে- সেন্সেটিভিটি কমে যাওয়ার কথা। অনেক চিন্তা ভাবনা করে ট্রাউজারের ভিতরে হাত ঢুকালাম। শরীরের সবথেকে সেন্সেটিভ অংগটাতে দিলাম এক রাম চিমটি।
নাহ। ডাজেন্ট রিং এনি বেল। স্বপ্নই দেখছি আসলে...
আহ....আমি শান্তিতে চোখ বুজলাম।
.
- সিয়াম। একজন উৎপাদনশীল তরুন হুনুওলা।
...........................
...........................
...........................
...........................
শেষকথাঃ
সিয়াম সেদিন তার উৎসের কিছুটা কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই তার ফিজিক্যাল সীমাবধ্যতার কারনে তার নিজের অস্তিত্বের পুরোটা সে বুঝে উঠতে পারেনি। কেউ কখনো পারে না।
সমগ্র মহাবিশ্বকে আসলে অসংখ্য "বাস্তবতার" লেয়ার থেকে দেখা যায়। একেক লেয়ারে সৃষ্টির ব্যাপ্তি, কাঠামো, কার্যপ্রণালী আর উদ্দেশ্য ভিন্ন বলে মনে হতে থাকে। যেমন গল্পের এই ছেলেটা- সে মোটামুটি মাঝারি স্তরের একটা লেয়ার থেকে এই মহাবিশ্বটিকে দেখতে পায়। তার সীমিত চিন্তার পরিমন্ডলে সে মহাবিশ্বকে দেখে সসীম আর অসীমের এক অস্বস্তিকর ধোঁয়াটে যায়গায়। ছেলেটা যে প্রাণীকুলের সদস্য, তারা যতই দিন যাচ্ছে, ততই ধরতে পারছে নিজেদের চিন্তা আর অনুভূতির বাউন্ডারিগুলোকে। কিন্তু ধরতে পারলেই বা কি? বেশিরভাগ জিনিস আড়ালে থেকে যাবে সবার কাছ থেকেই। এই যেমন এই ছেলেটা- সে, তার সমগোত্রের কিছু বস্তুর মত নিজেকে নাম দিয়েছে "হুনুওলা"। তার "মহাবিশ্ব" বেশ ছোট। নিজের ছোট ঘরটাতে সে প্রতিদিন শক্তি তৈরী করে। তারপর তা বিক্রী করে দেশের অন্যান্য মানুষের কাছে। তার মত পেশার সবার কাজ একই। একটা সুশৃঙ্খল সমাজে থেকে তারা আরো বিগার এককটা সিস্টেমের অংশ। সেখানে দেশ থেকে দেশে খাদ্য পরিবহন হয়। মাঝে মাঝে এলিয়েন আসলে সবাই মিলে যুদ্ধ করে... ইত্যাদি। তাদের কাছে মহাবিশ্বটা এমনই। অনেকগুলো দেশ। সবাই মিলে একটা সিস্টেম। কোন গ্রহ ম্রহ নাই। মাঝে মাঝে যেহেতু বাইরে থেকে এলিয়েন আসে, তাই তারা জানে মহাবিশ্ব অনেকগুলো। কিন্তু অন্যগুলো কেমন- তা কেউ জানে না। হুনুওলা সমাজে প্রচলিতি অজস্র ধর্ম আর দর্শনের মাঝে উপরের লেয়ারের বাস্তবতার সবথেকে কাছাকাছি যায় খুব অখ্যাত এক দার্শনিক খুলালা এদ্দিনের একটা থিউরি। তার মতে হুনুওলারা যে মহাবিশ্বে বাস করে, সেগুলোও তাদের মত জীবন্ত। তাদেরও সমাজ আছে, সংসার আছে।
হুম। আসলেই তাই। সেই "জীবন্ত"রা নিজেদের ডাকে "মানুষ" নামে। এই মানুষেরা কিন্তু হুনুওলাদের দেশগুলোর কথা জানে। একেকটা করে দেশের নাম তারা রেখেছে "কোষ"। আলাদা করে হনুওলা প্রজাতির কথা বেশীরভাগ মানুষ জানেই না। কিছু বিজ্ঞানী গোছের বুদ্ধিমান মানুষ তাদের সম্পর্কে অবহিত। তাদেরকে তারা ডাকে- "মাইটোকন্ড্রিয়া"- কোষের পাওয়ার হাউজ। গল্পে সিয়াম নামে যে মাইটোকন্ড্রিয়ার কথা আমরা পড়লাম সে কিন্তু আসলেই একজন মানুষের "হাঁটুর" একটা কোষে থাকে। তবে দুজনের "হাঁটু"র সংজ্ঞা একেবারেই আলাদা।
হাহাহা। এই মানুষদের ট্যাঞ্জিবল জগৎ হল বাস্তবতার আরেকটা লেয়ার। তাদের কাছে মহাবিশ্বের গঠন, সাইজ, উদ্দেশ্য, বিধেয় সবই আলাদা। হুনুওলাদের দেশে এলিয়েন আক্রমন করে। কারন "মানুষের" রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাটা পারফেক্ট না। কিন্তু মানুষের কলোনী গুলো যে প্রজাতিদের বিল্ডিং ব্লক, তারা বেশ উন্নত। তাদের রোগ-বালাই বলে কিছু নাই। সব ধরনের "জীবানু" তারা নিশ্চিহ্ন করেছে অনেক আগেই। এমনকি ন্যাচারাল এনামলি টাইপ ব্যাপারগুলোকেও মোটামুটি কন্ট্রোলে নিয়ে এসেছে মানু্ষের হিসেবে ৮০০ সালের দিকে। আর তাই মানুষের দুনিয়াতে এখন আর কোন এলিয়েন আসে না, ঘটে না কোন অলৌকিক ঘটনা। আর তাই তারা ভাবে তারা নাকি উৎকর্ষের শিখড়ে।
হাহাহাহা...
হাঁটু... সবাই হাঁটু...
.
- দ্যি আর্কিটেক্ট। ( বাস্তবতার অনেকগুলো লেয়ারকে নিজের হাতে তৈরী করার পরেও যে কনফিউসড তার নিজের আর্কিটেক্টকে নিয়ে)
২| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:৪২
শেখক বলেছেন: মাথা কামড়াইতাছে। আপ্নের ল্যাখা খুব মনোযোগ দিয়া পড়ন লাগবো। পরে পড়ুমনে।
৩| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:৪৬
এফেমেরাল ইটার্নিটি বলেছেন: সারিয়েল
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:১৪
বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: ভালোই লাগছিলো পোস্টে। উড়াধুরা