![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম যেদিন আমি জানলাম যে টার্বুলেন্ট ফ্লুইড ফ্লো কে মানুষ এখনো পুরোপুরি প্রেডিক্ট করতে শেখেনি- আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম। সৌরজগতের বাইরে স্পেসশিপ পাঠায় দিচ্ছি আমরা কিন্তু সামান্য নদীর স্রোতের সমীকরণ নাই?
পরে জানলাম সমীকরণ আছে, কিন্তু সেটাকে সমাধান করার ক্ষমতা সোজাভাবে বললে আমাদের বর্তমান গণিতের নেই। নেভিয়ার স্টোকস ইকুয়েশনের সমাধান না থাকার সমস্যাটা আসলে ফিজিক্সের না, ম্যাথম্যাটিকস এর।
এই পয়েন্টে বিশাল আর্গুমেন্ট হতে পারে। ম্যাথ আর ফিজিক্স ব্যাবহারিক সেন্স থেকে ভাবলে অনেক ক্ষেত্রে একই। কিন্তু আমার কাছে দুইটা আলাদা। ম্যাথম্যাটিক্স হল সাইন্সের কাজে লাগে এমন একটা টুল। আমাদের এখনকার স্ট্রাকচারে ন্যাচারাল সাইন্স যেভাবে কাজ করে- ফিজিক্যাল অবজারভেশনের সাথে বিজ্ঞানের সূত্রগুলোকে মিশিয়ে আমরা একটা ম্যাথমেটিকাল মডেল দাঁড়া করাই। তারপর সেখান থেকে শুরু হয় অব্যাক্ত গণিতের নানা অপারেশন। শেষে একটা রেজাল্ট আসে। সেই রেজাল্টকে আবার ফিজিকাল ফেনোমেনার সাথে মিলিয়ে আমরা সেটার ফিজিক্যাল মিনিং ইন্টারপ্রেট করি।
মাঝের ওই কাজটাই ফ্লুইডের ক্ষেত্রে করা যাচ্ছে না। আর তাই পরের পার্ট আসার প্রশ্নই আসে না। ফলাফল- আমরা এখনো "টার্বুলেন্স" ব্যাপারটা বুঝি না।
.
ভার্সিটিতে ওঠার আগ পর্যন্ত আমার ধারনা ছিল মানুষ বিগ ব্যাং থেকে বর্তমান পর্যন্ত সবকিছুর ব্যাখ্যা আসলে জেনে গেছে। বাকি আছে শুধু চার বলের ইউনিফিকেশন। সেটা পাওয়ামাত্রই আমরা জাস্ট একটা থিউরি দিয়ে সবকিছু ব্যাখ্যা করতে পারবো। আমাদের এই ওয়ার্ল্ডের মূলে থাকবে তখন একটা মাত্র "নিয়ম"। যেখানে এখন কয়েকটা আছে। কিন্তু এগুলোও পুরোপুরি পার্ফেক্ট। আমার কাছে মনে হত বিজ্ঞান এতদূর এগিয়েছে- এখন আসলে সবকিছুই ডিটারমিনিস্টিক, যত সমীকরণ আমরা দেখি, সব এসেছে একদম রুট লেভেলের গুটি কয়েক থিউরি থেকে ডিরাইভ করে করে- পুরোপুরি যুক্তির উপর ভর দিয়ে। ইন ফ্যাক্ট এটাই ছিল আমার কাছে "পৃথিবীকে বোঝার" সংজ্ঞা।
ভার্সিটিতে উঠে আমার এই চিন্তা বিশাল একটা ধাক্কা খায়। একে তো ইঞ্জিনিয়ারিং, তথা "কাজ চালানোর সাইন্স", তার উপর বিজ্ঞানের অন্যতম ( হ্যা, এরকম আরো অনেক আছে) অমিমাংসীত রহস্য, মানে ওই ফ্লুইড নিয়েই আমার মেজর। তাই জিনিসটা আরো পরিষ্কারভাবে চোখে পড়েছে। বিজ্ঞানের সূত্রগুলোর একটা বিশাল অংশ এসেছে সরাসরি এক্সপেরিমেন্ট থেকে। ওগুলোর পেছনে কোন "ডিরাইভেশন" নেই, আছে "কার্ভ ফিটিং"।
আমার খারাপ লেগেছিল। ব্যাপারটাকে অন্যভাবে দেখে খুশী হওয়া যায় যে এখনো ডেভেলপমেন্টের অনেক স্কোপ আছে। বাট স্টিল- আমার পুরো দর্শনই তো মার খেয়ে গেল। তাহলে যতগুলো ইম্পিরিকাল ফর্মুলা আছে- কোনটারই কি কোন ব্যাখ্যা নেই আমাদের কাছে? তা হলে আমরা আসলে জানি টা কি? কোন রহস্যই তো ভেদ করা হয়নি।
এই প্রশ্নের উত্তর দেয় আরেকটা থিউরি এবং সেখান থেকে আসে একটা মজার ফিলোসফি।
থিউরিটার নাম "ক্যাওস থিউরি"। খুবই বিখ্যাত জিনিস। ইভেন পপ কালচারেও সে বিখ্যাত। ক্যাওস থিউরি দেখায় যে, একটা সিস্টেম যখন "কিছু ওয়েতে" কমপ্লেক্স হয়ে যায়, তখন এর আউটপুট বা "প্রোজেক্টাইল", ইনপুট বা আদি মানের সামান্য ভ্যারিয়েশনের জন্যও খুবই র্যাপিডলি চেঞ্জ হয়। ইনপুট বা আদিমানের এই সামান্য ভ্যারিয়েশন হল "দশমিকের পর কয় ঘর নিবো" রেঞ্জের ভ্যারিয়েশন। আর আউটপুটের চেঞ্জ হল আকাশ- পাতাল। তাই এগুলো তখন ওই ক্লাসিক "বিন্দু বসিয়ে গ্রাফ এঁকে" সলভ করা যায় না। আবার নিউমেরিকালিও সব সময় সম্ভব হয় না। কারন ব্যাপারটা "কনভার্জ"ই করে না। এই টাইপ ক্যাওটিক সিস্টেম কিন্তু অনেক সময়ই ফিজিক্যাল গঠনের দিক থেকে খুবই "সিম্পল" হয়। যেমন- "ডাবল রড পেন্ডুলাম"। অর্থাৎ একটা পেন্ডুলামের মাথায় আরেকটা লাগিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া। এটার ইকুয়েশন কিন্তু আমরা জানি। একটা পেন্ডুলামের ইকুয়েশনের সাথে আরেকটা জুড়ে দিলেই হল। অর্থাৎ এই সিস্টেম ডিটারমিনিস্টিক। কিন্তু তার সলুশ্যন খুবই ক্যাওটিক। টার্বুলেন্ট ফ্লুইড ফ্লো-ও একটা ক্যাওটিক সিস্টেম। তবে এটা মোটেও সিম্পল স্ট্রাকচারের না। আর আগেই বলেছি- এটার ইকুয়েশনও আমরা জানি। কিন্তু সলভ করতে পারি না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ডাবল পেন্ডুলামের মত এটাও আসলে "বেসিক" থেকেই পুরোপুরি সলভ করা যাবে কি না।
এই পর্যায়ে আসে ওই মজার ফিলোসফিটা। এর নাম "রিডাকশনিজম"। রিডাকশনিস্টদের মতে একটা সিস্টেমের কম্পলেক্সিটি যতই বাড়ুক না কেন, সেখানে নতুন কোন "নিয়ম" তৈরি হবে না। উপাদানগুলোকে যেই ফিজিক্স দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়, পুরো সিস্টেমকেও সেই ব্যাখ্যা করতে পারবে। খুবই সিম্পল। যারা রিডাকশনিস্ট না, তারা মনে করে যে কম্পলেক্সিটি বাড়ার সাথে সাথে নতুন নিয়ম তৈরী হতেই পারে। আমাদের স্বাভাবিক ইন্টিউশন বলে দুইটাই আসলে ঠিক- দুইটা আলাদা লেভেল থেকে। একটা সিস্টেম কম্পলেক্স হলে নতুন অনেক ভ্যারিবল সৃষ্ট হয়, সেগুলোকেও মাথায় আনা লাগে সিস্টেমের সলুশন করার জন্য। নতুন কি কি মাথায় রাখতে হবে তা সিস্টেমের স্ট্রাকচার দেখেই বের করা যাবে এবং তদুপরি ব্যাখ্যা করা যাবে কিছু এক্সট্রা থিউরি এনে- এতটাই সিম্পল মনে হয় ব্যাপারটা।
কিন্তু যদি এমন কিছু সৃষ্টি হয় যেটা প্রকৃতিতেই আগে ছিল না? বা যেটার আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই। কিছু কম্পলেক্স স্ট্রাকচারে যদি সৃষ্টি হয় একদম অন্যরকম কিছু? তাহলে অবাক লাগবে না খুব?
২+২=৫ হওয়াটা অবশ্যই অস্বাভাবিক এবং এখানেই রিডাকশনিজমের ইন্টারেস্টিং কনফ্লিক্টটা শুরু।
আমাদের শরীরের প্রত্যেকটা অংশ জড় পদার্থ দিয়ে তৈরী। কিন্তু তারপরও কিন্তু আমরা জীবন্ত। "জীবন" নামের এই জিনিসটা একমাত্র কিছু নির্দিষ্ট স্টাইলে তৈরী হওয়া নির্দিষ্ট কিছু স্ট্রাকচারেই পাওয়া যায়। যেমন একটা গর্ভ থেকে সিস্টেমেটিকালি তৈরী হওয়া একটা মানবদেহ। আবার সেখান থেকে কোনভাবে জীবনকে আলাদাও করা যায় না। এখানে "জীবন" না বলে "কনশাসনেস" বলাটা বেটার। "জীবন" শব্দটা দ্ব্যার্থক এবং নিচু শ্রেনীর (ব্যাক্টেরিয়ার) "জীবন" পরীক্ষাগারে তৈরী করা সম্ভব হয়েছে অনেক আগেই। (২০১০, ডক্টর সি জে ভেন্টর) কিন্তু উঁচু স্তরের প্রাণ- মানে গরু ছাগল মানুষ - এদের মাঝে যে আমিত্ব বা কনশাসনেস থাকে সেই ব্যাপারটার কোন ব্যাখ্যা বা এনালজি কিন্তু ফিজিক্সে নাই। মানুষের ব্রেন তন্য তন্য করে খুঁজেও এখনো ওই "আমিত্বের" কোন "ফিজিক্যাল" সন্ধান পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি মৃত্যুর পর ওজনের কোন তারতম্য ("২১ গ্রাম" থিউরিটা একটা হোক্স) ইভেন এটা মিলে না আমাদের "চেনা" কোন কিছুর সাথেই। রিডাকশনিস্ট দর্শন ঠিক হলে বলতে হবে- এখানে এক্সট্রা "আধ্যাত্মিক" কিছু নেই। জাস্ট কম্পলেক্সিটির একটা সাইড ইফেক্ট। আর না হলে তৈরী হবে আরো অনেকগুলো প্রশ্ন....
কনশাসনেস বা চেতনা নিয়ে গবেষণার ফলাফল দুই রকম হতে পারে-
এক. আমরা আমাদের জানা জড়বিজ্ঞান দিয়েই এর একটা ব্যাখ্যা দাঁড়া করাতে পারবো,
দুই. আমরা উত্তর খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করবো পদার্থের বা মহাবিশ্বের একদম নতুন কোন একটা ধর্ম যা এতদিন আমাদের চোখে আসেনি।
দুই নম্বরটা বেশী মজাদার কারন সেটা আমাদের পৃথিবীকে দেখার ভঙ্গীকে বদলে দেবে। যেমনটা বদলে দিয়েছিল আপেক্ষিক তত্ত্ব বা কোয়ান্টাম মেকানিক্স।
দ্বিতীয় ধারায় কিন্তু ইতিমধ্যে বেশ কাজ হয়েছে। নতুন এক তত্ত্ব অনুযায়ী প্রকৃতির প্রত্যেকটি পদার্থেরই কিছুটা করে "চেতনা" আছে। একটা নির্দিষ্ট রাস্তায় বস্তুর গঠন যখন জটিল হতে থাকে, এর "চেতনার" জটিলতা বা গভীরতাও তখন বাড়তে থাকে। এটার খুব সহজ দৃষ্টান্ত আমরা "জীবন্ত" সত্ত্বাদের মাঝেই দেখি। এক কোষী জীবের চেতনা অনেকাংশেই স্টিমুলেশন দ্বারা ডিটারমিনিস্টিক। ভাইরাস তো মোটামুটি ইকুয়েশন মেনেই চলে (ফিগারেটিভলি) "জীবনের" কম্পলেক্সিটির সাথে কম্পলেক্স হয় চেতনাও।
আবার সমাজ, প্রকৃতি - ইত্যাদি জটিল কাঠমোগুলোও যেন সচেতন কোন সত্ত্বার মতই আচরণ করে। কথাগুলো সহজ শোনালেও এর ফিলোসফিকাল দিক কিন্তু অনেক অনেক বিস্তৃত। এর মানে আমাদের "সচেতন" কোষগুলো নিয়ে যেমন এর থেকেও "সচেতন" আমরা তৈরী হয়েছি, তেমনি আমরাও হতে পারি আরো বিশাল কোন "উন্নত" চেতনাধারী সত্ত্বার বিল্ডিং ব্লক। আমার কোষ যেমন আমাকে চেনে না, আমিও চিনি না আমার উপরের স্তরের ওই চেতনাটাকে।
আরেকভাবে তাকানো যাক- আমার ক্ষুদ্রান্ত্রে যখন খাবার যায়, তখন সে খুব হিসাবনিকাশের সাথে মোটা-চিকন হয়ে, এনজাইম ক্ষরণ করে তা হজম করে। এই হিসাবনিকাশ কিন্তু "আমরা" করি না। তাহলে কে করে? সে-ও তো আমার এই শরীরেই বাস করে। তাই না?
আমরা কি তাকে চিনি?
আমাদের কনশাসনেস দিয়ে আমরা ১-২-৩-৪-F=ma এসব ধরতে পারি। কিন্তু অসীম ধরতে পারি না, কোয়ান্টাম মেকানিক্স ধরতে পারি না। শুনতে পারি না অতি উচ্চ কম্পন, দেখতে পারি না তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের বিশাল একটা অংশ। অনেকে পারে। মহাবিশ্বের ওই সব লেভেলে থাকা সত্ত্বাগুলোর চেতনা তাহলে কতই না আলাদা। আমরা কি ক্ষুদ্র একটা গন্ডীতেই না পড়ে আছি সারাটা জীবন ধরে.... এই ক্ষুদ্র গন্ডিতে, অপুর্নাংগ ইন্দ্রিয় দিয়ে, সীমিত চিন্তাশক্তি দিয়ে মহাবিশ্বের যে রূপটা আমরা দেখি- সেটা তাহলে কতটা পরিপুর্ণ? আর সেই দৃষ্টি দিয়ে তৈরী বিজ্ঞান-ই বা কতটা সঠিক?
চেতনা নিয়ে এইসব চিন্তার আরেকটা বড় দিক হল এটা আমাদেরকে উদারতা শেখায়। আমরা প্রকৃতিকে, সমগ্র বস্তুজগতকে, এমনকি অন্যান্য প্রাণীদেরকেও নিজেদের ইচ্ছামত ধংস করে যাচ্ছি দিনের পর দিন। যুক্তি একটাই - আমরা শ্রেষ্ঠ। কিন্তু একবার ভাবুন, একই কাজ যদি আমাদের থেকে উচ্চ চেতনার কোন সত্ত্বা আমাদের সাথে করে, তাহলে আমাদের কেমন লাগবে? তাদের অনুভূতিগুলোর তুলনায় হয়ত আমাদেরগুলো অনেক ক্ষুদ্র, কিন্তু আমাদের এই ক্ষুদ্র সুখ-দুঃখ- ভালবাসা গুলো তো মিথ্যা নয়, অর্থহীন নয়। বরং আমাদের কাছে এগুলোই সবকিছু। একই কথা আমাদের থেকে আপাতদৃষ্টিতে মনে হওয়া "নীচু" লাইফফর্মের জন্যও সত্যি। এমনকি সত্যি হতে পারে "জড়পদার্থের" জন্যও।
তাই শক্তির দাপটে এরকম শোষন করার কোন অধিকার আমাদের নেই। ইংরেজিতে একটা কথা আছে- " With great power, comes great responsibility"। মানুষ জাতিগতভাবে তার সেই দায়িত্ব পুরনের চেষ্টা কখনই করেনি। এটা লজ্জার। আমাদের জাতিগত দম্ভ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বুঝতে হবে যে আমরা খুব আলাদা কিছু নই। নই নিখুঁত সুপ্রীম কোন সত্ত্বা। আমরা অন্য সবার সাথে মিলে একটা বিশাল সিস্টেমের ছোট্ট একটা অংশ। এখানে কেউ কারো থেকে কম না।
২| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:৪৮
মহা সমন্বয় বলেছেন: আমাদের জাতিগত দম্ভ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বুঝতে হবে যে আমরা খুব আলাদা কিছু নই। নই নিখুঁত সুপ্রীম কোন সত্ত্বা। আমরা অন্য সবার সাথে মিলে একটা বিশাল সিস্টেমের ছোট্ট একটা অংশ। এখানে কেউ কারো থেকে কম না।
দারুণ বলেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:০৮
মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: মাথা আউলায়!